somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ ব্লাইন্ড ডেট (১৮+)

২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সফিক বার বার ঘড়ি দেখছে। ঠিক সাড়ে চারটায় সে আসবে। বনানী এগারো নম্বর রাস্তার এই অভিজাত রেস্তোরাঁটিতে এই মুহূর্তে ভিড় অনেক কম। নিরিবিলি কথা বলার জন্য আদর্শ।

আসল নামটা জানা হয়নি, ফেসবুকে নাম ‘প্রিন্সেস অ্যাঞ্জেল’। প্রোফাইলের ছবিটা একটা উড়ে যাওয়া কবুতরের। নীল আকাশে ছেঁড়া তুলোর মতন ছড়িয়ে থাকা মেঘ, তার মাঝে আত্মঅহংকারে গ্রীবা উঁচু করে ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে চলা ধবধবে সাদা কবুতর। মুক্তির প্রতীক। মুক্তচিন্তার প্রতীক। কথা বার্তায় যা কিছু সন্দেহ ছিলো, ছবিটা দেখার পর তাও দূর হয়ে যায়।

‘প্রিন্সেস অ্যাঞ্জেল’-এর সাথে পরিচয় হয়েছে আজ একমাস হলো। ক্ল্যাসিকাল মিউজিক পছন্দ করে সে, পড়তে ভালোবাসে সমরেশের উপন্যাস, পছন্দের তালিকায় আরো আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসি ক্যাম্পে চলা অত্যাচার নিয়ে বানানো ছায়াছবিগুলো। সফিকের পছন্দের কাছাকাছি মিলে যায়।
ভালবাসা শুধু শরীরে শরীরে মাখামাখি - চরম মুহূর্তের উত্তেজনাই নয়, ভালবাসা দু’টি মনেরও। মনের মিল না হলে ভালবাসা হয় না। হোক না মাস দু’য়েকের জন্য, তাতে কী? এক সাথে কাটানো কিছু অপূর্ব মুহূর্ত স্মৃতির অ্যালবামে সাজিয়েই তো গড়ে ওঠে একটা জীবনের গল্প।

কথা দিয়েছিল সাড়ে চারটায় আসবে। সফিক চারটাতেই চলে এসেছে। দোতলায় মূল দরজার পাশে জানালার ধারে সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা টেবিল গুলোর একটায় বসেছে। এই জায়গাটা তার খুব পছন্দ। এখান থেকে নিচের রাস্তাটা দেখা যায়, রাস্তার মানুষদেরকেও। অথচ কেউ কখনো উপরের দিকে তাকায় না। না জানি কী ব্যস্ততায় সবাই ছুটে চলেছে, কারো সময় নেই একমুহূর্ত দাঁড়াবার।

চিনতে পারবে তো? ফেসবুকে যে আই,ডি থেকে ‘প্রিন্সেস অ্যাঞ্জেল’-এর সাথে বন্ধুত্ব তার নাম হচ্ছে ‘হ্যান্ডসাম হাল্ক’। একবার ঘনিষ্ঠ হতে পারলেই হল, ‘হাল্ক’ নামের সার্থকতা বুঝিয়ে দেয়া যাবে। প্রোফাইলের ছবিতে একটা একটা বেলুন – রংধনুর সাতটি রঙে রাঙা। গাঢ় সবুজ রঙের শার্ট, মোটা কালো ফ্রেমের চশমা, হালকা শ্যামলা, পেশীবহুল দেহ, উচ্চতা মাঝারী, ছোট ছোট করে কাটা চুল, ক্লীন শেভ্‌ড – একজন মানুষকে চেনার জন্য এইই কি যথেষ্ট?

আসে পাশে তাকিয়ে স্বস্তি বোধ করে সফিক। আর যাই হোক, অন্তত সবুজ রঙের শার্ট পড়া কেউ আপাতত এই রেস্তোরাঁতে নেই।

চারটা পঁচিশ। প্রিন্সেস দেরী করবে না তো? ঠিক সাড়ে চারটায় আসবে তো? শেষবার শরীর দেয়া নেয়ার পর তিনমাস পার হয়ে গেছে, আর পারছে না সফিক। আজকে তার চাইই চাই। এতদিন অপেক্ষার পর নতুন একটা শরীরে প্রথম স্পর্শ প্রতিবারই নতুন লাগে।

এই নিয়ে তিনবার হল। সফিকের ফ্ল্যাট আজকে রাতে খালি – সে যাবে কি? হঠাৎ করে বেঁকে বসবে না তো? আগের দু’বার অবশ্য কোন ঝামেলা হয়নি। সবাইই অপেক্ষা করে এরকম একটা সুযোগের। সহজে হাতছাড়া করতে চায় না। হাজার বছরের সভ্যতা দু’জন মানুষের মাঝে দেয়াল তুলে রাখে – সে দেয়ালটা একবার ভেঙে দিতে পারলে সত্যিকারের চেহারাটা বের হয়ে আসে।

মৃদু শব্দ করে দোতলার মূল দরজাটা খুলে গেলো। সফিক তাকিয়ে আছে, সে এসেছে কি?

দরজার হাতল ধরে দাঁড়িয়ে আছে এক তরুণী। বয়স ষোল থেকে পঁচিশের মধ্যে যে কোনটা হতে পারে। চট করে একটা মেয়েকে দেখে বয়স বুঝে ফেলা সহজ নয়। গড়পরতা হিসেবে সুন্দরী বলে চালিয়ে দেয়া যায়। মেয়েটার চোখে দ্বিধা, ইতিউতি তাকাচ্ছে, কাউকে খুঁজছে। চোখ নামিয়ে ফেলে সফিক। ঘড়ির দিকে তাকায়। চারটা ছত্রিশ। এখনও এল না।

“এক্সকিউজ মি, আপনি কি সেই?”

সেই মেয়েটা। হঠাৎ করে সফিকের মাথায় একটা সম্ভাবনা উঁকি দিয়ে যায়। পূর্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকায়। “প্রিন্সেস অ্যাঞ্জেল” তাহলে সত্যি সত্যিই মেয়ে? একেবারে জ্বলজ্যান্ত একজন যুবতী? তার ওপর আবার ফিটফাট সুন্দরী! বলেছিল একবার, ঠাট্টা ভেবে এড়িয়ে গিয়েছিল সফিক। কিভাবে সম্ভব? সত্যি সত্যি একটা মেয়ে কেন অপরিচিত একটা লোকের সাথে অনলাইনে কথা বলবে? কেন হঠাৎ অনুরোধে দেখা করতে আসবে? এরা তো বাস্তব জীবনে ছেলেদের লাইন সামলাতেই ব্যস্ত থাকে। ভালবাসা দিবসে এদের মুঠোফোন ভরে যায় ক্ষুদে প্রেম পত্রের মিছিলে। ফেসবুকে ছোঁক ছোঁক করা অনুসরণকারীদের পাঠানো প্রেমের আহবান মুছতে মুছতে দিন চলে যায়। মাসে মাসে ফোন নম্বর বদলাতে হয়। এরা সবাইকে মূলো দেখিয়ে বেছে নেয় আমেরিকা প্রবাসী কোন প্রতিষ্ঠিত রাজপুত্রকে। এরা কেন অপরিচিত একজন মানুষের আহবানে সারা দিয়ে ব্লাইন্ড ডেটে আসবে?

“জ্বী? মানে ঠিক বুঝলাম না।”

“আমি প্রিন্সেস অ্যাঞ্জেল। আপনি কি…?”

হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বাইরে থেকে বোঝা যায় না। বোঝা গেলে জীবনযাপনই দায় হয়ে যেত।

মুখে কোন কথা আসে না। কী বলবে সে? কেনই বা বলবে? তার অবস্থাটা তো ঠিক অল্প কথায় বুঝিয়ে বলার মত না। মাথাটা আপনা থেকেই নিচু হয়ে আসে। “চলে যাও। চলে যাও।” – মনে মনে বলতে থাকে – “প্লীজ চলে যাও।”

‘কুইন অব ক্লাবস’ এমন ছিলো না। ‘মিস্টিরিয়াস ওম্যান’-ও না। তারা ছিল তার লাইনের লোক, লুকিয়ে থাকা পুরুষ – যাদের এই সমাজ আজও জায়গা দেয়নি। রংধনু আঁকা ছবি, আকাশ চিরে উড়ন্ত সাদা পায়রা, শ্বেতপদ্ম – তাদের প্রতীক। অনলাইনেই তাদের বিচরণ। একে অন্যের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে একটু খানি ভালবাসার খোঁজে।

প্রিন্সেসকে সে বোঝাবে কিভাবে?

*********************************************

প্রচুর রোদ বাইরে। কান্না চাপতে চাপতে জয়িতা বের হয়ে এসে দাঁড়ালো। জীবনে এই প্রথম নিজের জন্য কাঁদছে না সে। কাঁদছে অন্য কারুর জন্য। অপরিচিত কেউ। আহারে বেচারা!

(সমাপ্ত)
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×