somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চৈত্রের ব্ল্যাকহোলে: নবজীবন অথবা মৃত্যু !!!

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আকাঙ্খিতভাবেই ছিড়ে গেল অতীত জীবনের শেষ বন্ধন।

দীর্ঘসময় ধরে খুঁজে খুঁজে নানা উপায়ে যাচাই শেষে, একটার পর একটা ভাবনা মিলিয়ে, প্রতিটি পরতে কারুকার্য এঁকে সাজিয়েছিলাম যেই জীবন। যাযাবর সব ফ্যান্টাসীতে ভরা ছিল, সেইসব ফ্যান্টাসীগুলোর সাথে তুলনা হতে পারে শুধুই কলম্বাসের যাত্রাপূর্ব ফ্যান্টাসী।

সকল সুহৃদের আহাজারি উপেক্ষা করেই নব জীবনের খোঁজে অভিযানে নেমেছিলাম। পথে প্রচন্ড নেতিবাচক সময়ের সাথে লড়াই করে তিলে তিলে সামলে উঠতেও শিখছিলাম। সেই সাথে ছোট ছোট ঝড়ে বিপন্নবোধ করাও চলছিল। একলা সেই অভিযান কখনো কখনো বড়ই রুক্ষ ঠেকেছিল। অতি কোমল স্বত্ত্বাটা ছিল প্রত্যক্ষ মায়াহীন। সেই আপাত যাযাবর আসলে ছিল অবাল্য চর্চা'র ফলে তৈরী এক নিখুত অভিমানী মানুষ, তাই পূবের মেঘ দেখে অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিত সে। পরক্ষনেই মেঘটিকে ব্যাথা দেয়ার অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে, তার ভেঙে যাবার আগেই হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাতো।

এমনই একদিন, একখন্ড পূবালী মেঘের সাথে অভিমান করে, নীল সাগরের আভায় রাঙা মুখ ফিরিয়ে নিতেই মনে রহস্যময় ব্যথা মুচড়ে উঠলো। তাকিয়ে দেখলাম মুহুর্তেই মেঘটি ভেঙে গেছে,
যেন আজ সে অভিমান করলো।

সেই রহস্য ভেদ হলো এর কিছুদিন পর।

এক সন্ধ্যায় নিখুত অন্ধকার আকাশের পূব কোণে, এক বিশাল পূবালী মেঘখন্ড টুকরো টুকরো হয়ে যায় আমার দৃষ্টি'র বাইরেই। শুধুমাত্র বজ্রপাতটিই শুনেছিলাম। আতংকিত চোখে সকালের ছিন্নবিচ্ছিন্ন মেঘখন্ড দেখলেও তা অনুভব করতে পারি নাই। শুধু অনুভবেই ব্যার্থ হইনি বরং সেই তখন অনুভুতিই হারিয়ে ফেলেছিলাম। শুধু বুঝেছি রাতের আঁধারে বাংলার বর্ষা এল বলে।

এল সেই বর্ষা। রইলো বহুদিন, অবশেষে চলেও গেল।

কিন্তু হারিয়ে ফেললাম অন্যান্য সকল ঋতু!

শরৎ ও হেমন্ত সদ্য সমাপ্ত বর্ষার বিষাদময়তার কথা জানতো বলেই আমাকে নব্য উদ্যোমে মেতে উঠার জন্য তাড়া দেয়নি। শীতটা ছিল প্রচন্ড ঠান্ডা এ্যাসিডের মতই শীতল।

এরপর বসন্ত এলো। চারদিকে রঙ মাখিয়ে নবজাতক পত্র-পল্লবের মতই কোমল হয়ে, কিন্তু বর্ষার বিষাদ আমার গেল না!
বসন্ত এবার কলকাকলী মুখর হলো, বর্ষায় আক্রান্ত বিষন্ন আমার মোটেও ভাল লাগলো না সেই কোলাহল!

ব্যর্থতাজনিত একটু ব্যাথা পেলেও হাল না ছেড়ে বসন্ত এবার এলো তার রেনু উড়ানো যৌবনের মাদকতা সহ, আমি শুধু মাদকটুকুই গ্রহন করলাম, নতুন করে আসক্তিটুকু গ্রহন করলাম কিন্তু বর্ষার বিষাদটুকু তাড়ালাম না।

সময়ের নিয়মে এবং ঋতুগত "মানবিক" সীমাবদ্ধতায় বসন্তে ভাটা এলো, নিয়মিত অবহেলা ও অনাদরে, উপযুক্ত কদরের অভাবে এবং আমার অভিশপ্ত ছোঁয়ায়, আমাকে নবজীবন দিতে আসা বসন্ত নিজেই আক্রান্ত হলো প্রকৃতি'র অভিশপ্ত রোগে।

তবুও দুর্বার চেষ্টা করে গেল বসন্ত, বর্ষাক্রান্ত আমাকে সারিয়ে তুলতে নিজের সিনায় ঠাঁই দিল আমায়। কিন্তু ময়লা ও পুরনো যাযাবর বেশভুষা'র সাথে বর্ষার বিরামহীন বর্ষনে পুরোপুরি পঁচে যাওয়া আমি তার সিনা ক্ষয় করে ফেললাম!!!

এরপর একদিন নিজের শেষ বিন্দু পর্যন্ত উজার করে দিয়ে, ব্যর্থ হয়ে, আমাকে নবজীবন দিতে আসা সেই মহৎ ঋতুটি, সর্বোচ্চ আঘাত সয়ে, মহাকালের বেঁধে দেয়া নিয়মে, সময়ের সাথে সাথে বিদায় নিল!

প্রচন্ড অকৃতজ্ঞের মত বিদায় দিলাম বসন্ত'কে।

আর আমি প্রবেশ করলাম চৈত্রের প্রখর রূদ্র পরিবেশে।

বর্ষা'র প্রভাব কেটে গেছে অবশেষে। ভরদুপুরের প্রচন্ড তাপে, চারদিক যখন ফেটে চৌচির হয়ে গেল, তখন পরনের সেই পুরানো যাযাবরের পোষাক ছাড়তে বাধ্য হলাম। ধীরে ধীরে বুঝলাম কিভাবে পরপর ৩টি ঋতুকে অস্বীকার করেছি। হ্যা, উপলব্ধি করলাম কিভাবে বসন্তের মত একটি ঋতুকে চিরতরে কলুষিত করে দিয়েছি। এই আমি পর্যন্ত পৌছানোর সকল পথ রুদ্ধ করে দিয়েছি অন্য সব ঋতু'র জন্যও!

একটু আগে, শূন্য ভর দুপুরে, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। যাযাবরের শখের পোষাক ছেড়ে, যাযাবরের আদিম চামড়া গায়ে, চৈত্র মাসের ব্ল্যাকহোলে, আমার নবজনম হয়ে গেছে।


চির আকাঙ্খিত নবজীবনটাই পেলাম, সর্বোচ্চ অনাকাঙ্খিত রূপে!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৫:০৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×