রাস্তার মোড়ের ঘোড়সওয়ারের ভাস্কর্যটার দিকে চেয়ে পকেটের শেষ সম্বল পাঁচটা টাকা চায়ের পেছনে বরাদ্দ করে ফেলে শহরের ক্লান্ত পথিক। ধীর পায়ে রাস্তার ওপারে শুক্কুর মিয়ার চায়ের দোকানের দিকে এগিয়ে যায় সে। শুক্কুর ভাই একটা চা। দুধ চিনি বেশি দিও।এট্টু জিরাইয়া লন বাই, দিতাছি।এইবার আরাম করে টুলে বসে ভালো করে ঘোড়সওয়ারের দিকে তাকায় ক্লান্ত পথিক। এইপথে নিয়মিতই আসে সে। কিন্তু আজকের সন্ধ্যায় মায়াবী নীল আলোয় মূর্তিটাকে কেমন যেন জাদুবাস্তবতাময় মনে হয় তার কাছে। হঠাৎ করেই যেন পাথরের বিশাল কাঠামোটায় প্রাণ খুঁজে পায় সে। কল্পনায় দেখে সওয়ারির ভূমিকায় যেন সে নিজেই! টগবগিয়ে তেপান্তরের মাঠের ধূলোয় ঘোড়া ছুটায় ক্লান্ত পথিক। চলতে চলতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় পঙ্খীরাজ ঘোড়া। কপালে হাত ঠেকিয়ে সামনে তাকায় পথিক। দিগন্তের সীমানায় মোহনীয় ভঙ্গিমায় নারীর অবয়ব দেখে পুলকিত হয়ে ওঠে শহরের ক্লান্ত পথিকের মন। জোরসে ছুটে যায় দিগন্তের পানে। ছুটতে থাকে, ছুটতেই থাকে সে। তার শরীর ভেঙে ঘুম আসতে চায়। পথের জুজু তাকে ভয় দেখায়। তৃষ্ণায় ফেটে যেতে থাকে বুকের ছাতি। তবুও থামেনা পথিক। তাকে দিগন্তের সীমানায় পৌঁছাতেই হবে। কিন্তু হায়! বহুদূর গিয়েও কাঙ্ক্ষিত নারীর দেখা পায় না পথিক। বুঝল তেপান্তরের মরীচিকা তাকে ধোঁকা দিয়েছে! “বাই আফনের চা” শুক্কুর মিয়ার ডাকে কল্পনা ভাঙ্গে পথিকের। আয়েস করে চায়ে চুমুক দেয় সে। হঠাৎ শত কণ্ঠের ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে চমকে উঠে ক্লান্ত পথিক। রাস্তার মোড়ে উঁকি মারে সে। দেখে শত শত সাদা টুপিতে ছেয়ে গেছে পুরো রাস্তা। তাদের মধ্য থেকে সফেদ দাড়িওয়ালা একজন উঠে দাঁড়ায় ঘোড়সওয়ারের বেদীতে। নিয়ন আলোয় তার সাদা দাড়ি চকচক করতে থাকে। হাত পা নেড়ে নেড়ে উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথা বলতে থাকে দাড়িওয়ালা লোকটা। আর রাস্তায় দাঁড়ানো লোকগুলো একটু পর পর চিৎকার করতে থাকে। তারপর যেন চোখের পলকে কয়েকশ লোক হাতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘোড়সওয়ারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাতুড়ী আর ছেনীর ঠুকঠুকের মাঝে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে অসহায়ভাবে ঘোড়সওয়ারের মৃত্যুর সাক্ষী হয় শহরের ক্লান্ত পথিক।
******************************************
''ঘোড়সওয়ারের মৃত্যু'' লিখেছেন অটল ভৌমিক (চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ থেকে)
ম্যাগাজিন লিংকঃ জার্মান প্রবাসে - নভেম্বর - যেমন খুশি তেমন - http://www.germanprobashe.com/archives/2149
লেখা/ছবি পাঠানঃ [email protected]
অথবা পেজের ইনবক্সে পাঠানঃ Click This Link
-------------------------------------------
# কারা লিখতে পারবেনঃ শুধু জার্মানি বা বাংলাদেশ থেকেই নয়, যেকোন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাদর আমন্ত্রন আমাদের ম্যাগাজিনে! তাই আমাদের ম্যাগাজিনে লিখতে হলে আপনাকে বাংলাদেশ বা জার্মানিতেই থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই!
ছবির জন্য বিস্তারিতঃ http://goo.gl/90IVlk
জার্মান প্রবাসে আড্ডা দিতে চাইলেঃ https://www.facebook.com/groups/BSAAG/ (৩৭,০০০+ মেম্বার্স)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৩