somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম যে কারনে তার উপর ন্যাস্ত দায়িত্বে থাকবেন ও থাকা উচিৎঃ একটি আইনী বিশ্লেষন

১১ ই নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে বর্তমান চলা যুদ্ধাপরাধী বিচারের ট্রাইবুনাল নিয়ে শুধু “নাসিম বিতর্ক” নয়, গত ২৫ শে মার্চ ২০১০ সালে এই ট্রাইবুনাল গঠিত হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত কয়েকশত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এই অভিযোগ প্রথম দিকে উত্থাপিত হয়েছে জামাত-শিবিরের দেশীয় এক্টিভিস্ট এবং বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে। পরবর্তীতে বিশেষ সুবিধা না করতে পেরে তারা ইংল্যান্ড, আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশ থেকে লবিস্ট নিয়োগ করে। যেই লবিস্টদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ইংল্যান্ডের আইনজীবি স্টিভেন কে কিউসি এবং টবি ক্যাডম্যান।

এছাড়াও কিছু তথাকথিত বিদেশী অর্গানাইজেশন-হিউম্যান-রাইটস ওয়াচ,অ্যামনেস্টি,ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রানজিশনাল জাস্টিস,ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রাষ্ট্রদূত মিস্টার স্টিফেন জে.র‍্যাপ।


এছাড়াও জামাতে ইসলামী বিভিন্ন ভুয়া মানবাধিকার সংস্থা বানিয়ে এই বিচারের বিপক্ষে একটা আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া দেবার প্রচেষ্টা করেছিলো এবং সেই অনুযায়ী তারা ইংল্যান্ডের জামাত সমর্থিত বাংলা পত্রিকার “ইউরো বাংলার” আরেকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাস্টিস কন্সার্ন নামক একটি ভুয়া ওয়েব সাইট খোলে। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্রিকা, ব্লগে আলোচিত হয়। এই জাস্টিস কনসার্নের কেলেঙ্কারী ধরা খেয়ে যাবার পর আজকে তারা আরেকটি ভুয়া মানবাধিকার সংস্থা সেইভ বাংলাদেশের ব্যানারে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচারের ট্রাইবুনালের বিচারপতি জনাব নিজামুল হক নাসিমের অপসারণ দাবী করেছেন।

বর্তমানে জামাতের সকল লবিস্ট, সংস্থা, আইনজীবি, কর্মী একটিমাত্র ইস্যুতে মুখর। সেটি হচ্ছে ট্রাইবুনালের বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের অপসারণ।




যে কারনে এই অপসারণের দাবী করছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তরাঃ


প্রথমেই কয়েকটি তথ্য দিয়ে নেয়া ভালো হবে। পাঠকরা তাহলে মূল ব্যাপারটি সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের আইনজীবিরা সেই ট্রাইবুনাল গঠনের পর থেকেই প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন এই বলে যে- সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদের সাথে এই আইনের কার্যক্রম তথা বিচারপতি নিয়োগ সাংঘর্ষিক। কোনো ভাবেই হাইকোর্টের একজন সিটিং জাস্টিস এই ট্রাইবুনালের বিচারপতি হতে পারেন না। কারন তা অসাংবিধানিক।

এই বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে জামাতী আইনজীবি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক একটি রিট আবেদন দাখিল করেন। রিট পিটিশান নাম্বার হচ্ছেঃ 5391 0f 2010. এই মামলায় সংবিধানের যে যে অনুচ্ছেদের সাহায্যে আবেদনটি করা হয়েছিলো , তা হলো –

অনুচ্ছেদ 102(2)(b)(ii) . এবং যেই যেই অনুচ্ছেদ গুলো ভায়োলেটেড হচ্ছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো- অনুচ্ছেদ ৯৪, ৯৪(৩),৯৯,১০৯, এবং ১৪৭(৩)।


হাই হোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে উপস্থিত থাকেন বিচারপতি মামনুন রহমান এবং বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহান ।


এই রিটের ক্ষেত্রে রায় প্রদান করা হয় , জুলাই এর ২৭ তারিখ ২০১০ সালে । শুনানী হয় দুই দিন । জুলাইয়ের ১৯ তারিখ ও ২৬ তারিখ ২০১০। এই রিটে বিবাদী বা রেস্পন্ডেন্ট যারা ছিলেন তারা হলেন ,

১) বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির

২) বিচারপতি নিজামুল হক ।

বাদীর পক্ষের আইনজীবি ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং বিবাদীর পক্ষে আইনজীবি ছিলেন এটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম।কিন্তু জামাতীদের জন্য কষ্টকর ও দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, মহামান্য আদালত এই আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন আইনের বিভিন্ন প্রভিশন এবং সঠিক রেফারেন্সের মাধ্যমে। মহামান্য বিচারপতিদ্বয় রায়ে বলেন-



১) বাদী পক্ষের রেফারেন্স হিসেবে ব্যাবহার করা Ruhul Kuddus and others VS M A Aziz মামলাটির রায় এখানে ব্যাবহার করা যাবে না । কেননা নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ এক্সিকিউটিভ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে উক্ত মামলায় অভিহিত করা হয়েছে । কিন্তু এই ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনের মাধ্যকে গঠিত ট্রাইবুনাল সম্পূর্ণ জুডিশিয়াল ।


২) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৯ এর মাধ্যমে QUASI Judicial (আধা-বিচারিক) বা fully judicial কোনো বিচার ব্যাবস্থায় হাইকোর্টের বিচারপতি দায়িত্বপালিন করতে পারেন ।


৩) সংবিধানের ১৪৭(৩) অনুচ্ছেদ এই আবেদনে ব্যাবহার হবে না ।


৪)এই নিয়োগ অস্থায়ী । ট্রাইবুনালের দায়িত্ব পালন শেষে বিচারক দ্বয় তাদের পূর্ব অবস্থানে ফেরত আসবেন ।


৫) এই নিয়োগ সংবিধান সম্মত । সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ সম্পূর্ন ভাবে এই আইন প্রণয়ন করবার ক্ষমতা দিয়েছে । সুতরাং এই আইনের বিভিন্ন প্রভিশন গুলোও সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদ দ্বারা রক্ষিত ।


৬)আমাদের সংবিধান কারো অনুগ্রহে কিংবা কারো সাথে আলোচনার ফল হিসেবে প্রাপ্ত নয় । ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণ-ই শুধু নয় , তাদের উপর অত্যাচার ও তাদের আত্নত্যাগে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে । এই কথা মাথায় রেখে ও আইনের শাষন প্রতিষ্ঠা করবার জন্যই ১৯৭৩ সালের আইন প্রণীত হয়েছে ।


৭) 1 BLC(1996) 229, এ রিপোর্টকৃত ডিসিশান এই রায়ের ক্ষেত্রে রেফারেন্স হিসেবে ব্যাবহার হয়েছে ।


লক্ষ্য করে দেখেন, এই জামাত কিন্তু প্রথমেই চেষ্টা করলো ট্রাইবুনালের বিচারপতিদেরকে আইনগত এক ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি করবার এবং ব্যাপারটিকে অবৈধ হিসেবে দেখাবার। সে সময়ে আইনগতভাবে ব্যার্থ জামাত ও তার আইনজীবিরা আইনী দিক থেকে হেরে গিয়ে এখন নতুন সুর ধরেছে এই বলে যে, ট্রাইবুনালের বিচারপতি জনাব নিজামুল হক নাসিম ১৯৯২ সালে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত গোলাম আজমের বিচারে গঠিত গণআদালতের একজন সমর্থক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে গোলাম আজমের বিরুদ্ধে যে গনতদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিলো, তার সদস্য ছিলেন। সুতরাং বর্তমান ট্রাইবুনালে তার বিচার করবার অধিকার নেই, যেহেতু এতে করে বিচার কার্যক্রমে নিজামুল হক নাসিমের যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে আগের মনোভাব প্রতিফলিত হতে পারে তথা বিচার প্রভাবিত হতে পারে।


দেখুন, জামাত কি করে মুখের ভেতর থু থু জমিয়ে ধীরে ধীরে সেটি মানুষের দিকে অল্প অল্প করে ছুঁড়ে মারছে। এই অভিযোগটি তারা প্রথমবার যখন আদালতে গেলো, এই ইস্যু নিয়ে তারা একটি শব্দ উচ্চারন করেনি। জমিয়ে রেখেছিলো গোপন করে। বিচারকে বাঁধাগ্রস্থ করবার জন্য এমন কয়েকশত ছুঁতো তারা জমা করে রেখেছে যা সামনের সময় গুলোতে তারা একে একে এসব ছুঁতো দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইবে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাঁধা গ্রস্থ করবে।

ট্রাইবুনালকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে যতটা প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, ততটাতেই লাভ যুদ্ধাপরাধীদের। কেননা এতে করে এই আওয়ামীলীগ আমলটা পার করে দেয়ার স্ট্র্যাটেজিটিই জয় লাভ করবে। গত কয়েকদিন আগে, এই স্ট্র্যাটেজির আরেকটা অংশ হিসেবে আল জাজিরা চ্যানেলে জামাতের ভাড়া করা লবিস্ট স্টিভেন কে কিউসি মাননীয় বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং সম্পূর্ন ভাবে হাস্যকর সব প্রশ্ন উত্থাপিত করেন। যেসব কথার উওর আমি আমার এই লেখাতে দিয়েছি অনেক আগেই।

বিচারপতি নাসিম কি তাহলে বিচারকের পদে যোগ্য নন কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ?

সহজ ভাষায় ও এক কথায় উত্তর হচ্ছে, “না”।

কেননা, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ও তার পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের বিপক্ষে যারা দালালী করেছে তাদের ঘৃণা ভ’রে প্রত্যাখান করেছে। এইসব দালাল তথা যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি একটি সদ্য জন্মানো শিশু থেকে শুরু করে একজন ১০০ বয়ষ্ক প্রবীন সমভাবে ঘৃণা ও নিন্দা জানিয়ে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই। নিজামুল হক নাসিম ১৯৯৩ সালে গন তদন্ত কমিশনের সদস্য ছিলেন বলে যদি ট্রাইবুনালে তার ভুমিকাটুকু আজকে প্রশ্ন বিদ্ধ হয় তবে নিজামুল হক নাসিম যদি আজকে এ পদ থেকে সরেও দাঁড়ায়, তবে এই পদে যিনি আসবেন তিনিও তো প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারেন।

কেননা, ১৯৭১ সালের আমাদের এই মহান মুক্তিযুদ্ধের শত্রুদের বাংলাদেশের কোন মানুষ ঘৃণা করে না? তাহলে সেক্ষেত্রেও কি বিচার প্রভাবিত হবার কথা উঠাবে না যুদ্ধাপরাধীরা?

আজকে ধরা যাক, বিচারপতি নাসিম কে সরিয়ে অন্য একজন বিচারপতিকে সেই পদে বসানো হলো কিংবা অন্য কোনো ব্যাক্তিকে। এখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শুধু গুটি কয়েক ব্যাক্তি ছাড়া যেহেতু সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, সেক্ষেত্রে কি আদতে এই নতুন ব্যাক্তিটিও যুদ্ধাপরাধীদের সন্দেহের কিংবা প্রশ্নের উর্ধে থাকবেন? বিচারপতি নাসিম বিচারপতি হবার আগেই শপথ করেছিলেন যে, তিনি সকল ধরনের আবেগের উর্ধে থেকে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। সুতরাং আমরা তার সেই শপথকে বিশ্বাস করব। এবং এটি করতেই হবে।

গণ আদালতের ইতিহাস সম্পর্কে যারা আরো জানতে আগ্রহী তারা নজরুল ভাইয়ের এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।

আসলে কি চান যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তরা ও তাদের আইনজীবি? আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার? বিদেশের আদালতের বিচার? এই কি তাদের মূল ফন্দি আর ফিকির?


কিন্তু সেটিতো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কেননা যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনে। যা আমাদের সংবিধানের মাধ্যমে প্রটেক্টেড ৪৭(৩) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে, এবং মামলাও দায়ের করা হয়েছে দেশীয় বিশেষ আদালতে যা সম্পূর্ণ ভাবে আন্তর্জাতিক মান ও রোম স্ট্যাটিউট কে পালন করে গঠিত হয়েছে।

তাহলে কি কথা দাঁড়াচ্ছে এই যে, একজন লোক ডাকাতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে আদালতে উপস্থিত হলে সে বলতে পারে যে, আমি এই বিচারককে মানিনা, কেননা গত মাসে এই বিচারক “ডাকাত বিরোধী” সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন!!! আমাদের আলোচ্য ট্রাইবুনালের ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের করা অভিযোগ থেকে কি ব্যাপারটি তাই দাঁড়াচ্ছে না?


বিশেষজ্ঞদের মতামতঃ

এই প্রসংগে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত নুরেম্বার্গ ট্রায়ালের ক্ষেত্রেও অভিযুক্তরা নানান অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। তাদের আইনজীবিরা বলেছিলো যে, এই বিচার, বিচারের কাঠামো, বিচারিক সমগ্র উপাদানই গঠিত হয়েছে জয়ীদের মাধ্যমে। এটা বিজয়ীর বিচার (Victors Trial), সুতরাং আমরা ন্যায় বিচার পাব না।

ঠিক এই প্রসঙ্গে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাব এ এল গুডহার্ট বলেছেন-

“তত্ত্বগতভাবে এই যুক্তি আকর্ষনীয় হতে পারে, তবে তা যে কোনো দেশের বিচার ব্যাবস্থার পরিপন্থী। এই যুক্তি মানতে হলে কোন দেশ গুপ্তচরদের বিচার করতে পারবে না। কারন যে দেশের আদালতে সেই গুপ্তচরের বিচার হবে, সেখানকার বিচারক তার শত্রু দেশের। এই ক্ষেত্রে কেউ নিরপেক্ষতার কথা বলতে পারবে না। বন্দি গুপ্তচর বিচারকদের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতে পারে, কিন্তু কোনো অবস্থায় তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে না।"



আবার ঠিক একই প্রসংগে লর্ড রীট বলেছেন,

“ একজন চোর নিশ্চই অভিযোগ করতে পারেনা যে, কেন তার বিচার সৎ লোকেরা করছে”



নুরেম্বার্গ ট্রাইবুনালের উদ্বোধনী ভাষনে বিচারপতি জ্যাক্সন এই বিষয়ে বলেছিলেন,

“ দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আদালত গঠন সহ আইনজীবি ও বিচারক সবই নিয়োগ করতে হয়েছে যুদ্ধে বিজয়ী মিত্র শক্তিকে পরাজিত অক্ষশক্তির অপরাধ বিচারের জন্য। অভিযুক্তদের বিশ্বব্যাপী আগ্রাসনের কারনে সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ কেউ নেই বললেই চলে, যারা এই বিচারে আগ্রহী হতে পারে। এ ক্ষেত্রে হয় পরাজিতদের বিচার করতে হবে বিজয়ীদের, নয়তো পরাজিতদের বিচারের ভার তাদের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। ২য় টির অকার্যকারিতা আমরা প্রত্যক্ষ্য করেছি ১ম বিশ্বযুদ্ধের অপরাধীদের বিচারিক কার্যক্রম থেকে”

শেষ কথাঃ

বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম আসলে যুদ্ধাপরাধীদের জন্য মূল কনসার্ন নয়। মূল কনসার্ন বা স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক কার্যক্রম বিলম্বিত, প্রশ্নবিদ্ধ এবং অসাড় প্রমাণ করা। আজকে ইস্যু হয়েছে নাসিম। কালকে হবে কাছিম, পরশু হবে গোপাল, তরশু হবে ভোপাল। আজকে নাসিমের পর যদি যুদ্ধাপরাধীরা এই অভিযোগ তোলে যে, অমুক বিচারপতি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাঁর বায়াসড হবার আশংকা প্রবল, তাহলে কি আমরা একজন রাজাকার ধরে এনে এই বিচার কার্যক্রম চালাবো?

জামাত-বিএনপি তথা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের মিত্রদের কার্যক্রমের ও কথার প্রমাণ আমরা তো সব সময়ই পাচ্ছি যখন হাটে, মাঠে, ঘাটে, রাস্তায় তারা বলছেন দেশে যুদ্ধপরাধী বলে কিছুই নেই, ছিলো না। অথচ ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত অসমাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ৭৫২ জনের বিপক্ষে চূড়ান্ত রায় দেয়া হয়েছিলো। সেটি তো আমরা এখনো ভুলিনি। সুতরাং ১৯৭২ সাল থেকে চলে আসা সেই বিচারেরই একটি অংশ বা ধারা আজকের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল। আজ থেকে ৪০ বছর আগেও বিচারকে বাঁধাগ্রস্থ করবার জন্য শত শত গুজব, প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিলো। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। বিচার চলেছে এবং হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষায় আজকে চলমান ট্রাইবুনালো সফল ভাবে শেষ হবে ইনশাল্লাহ।


চলার পথে অসংখ্য ইট, কাঁকড়, নূড়ি পথের মাঝে থাকে। পেছন থেকে ডেকে উঠে ক্ষুধার্থ কুকুর। এইসব ইট, কাঁকড়,নূড়ি কে পা দিয়ে সরিয়ে আর কুকুরের পাছায় কষে লাত্থি দিয়েই আমরা আগাই আমাদের লক্ষ্যে। আমরা থেমে থাকিনা। থামিনি কখনো।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:৪৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×