তসলিমা নাসরিন আজকে আমাদের সময়ে একটা লেখা লিখেছে । লেখার নাম " হুমায়ুনঃ পুরুষতন্ত্রের সম্রাট", যেন নদী নিয়ে রচনা লিখতে গিয়ে গরু রচনা লিখে ফেলেছে। ওই যে অমন...আমাদের দেশে অনেক নদী আছে। তার পাশে অনেক গরু চরে বেড়ায়। সেসব গরু নদীতে গোসল করতে নামে। গরুর আছে চারটি পা, একটি লেজ, দুইটি চোখ... বেচারা তসলিমা। অশিক্ষিত পত্রিকাগুলো তাকে নারীবাদী বানিয়েছে তাই যেখানে সেখানে এই নারীবাদীতার চর্চা করতে হবেই। নিজেকে নারীবাদী হিসেবে প্রকাশ করবার কি আপ্রাণ চেষ্টা!!
আসুন দেখে নেই তনা কিরকম করে নির্বোধীয় কথা লিখেছেঃ
তসলিমা নাসরিনের পুরো লেখাটিই আপত্তির। খামাখাই নিজেকে নারীবাদী করে ফুটে তোলাবার ব্যার্থ প্রচেষ্টা অন্যকে ছোট করবার মধ্য দিয়ে। আসুন কয়েকটি অংশ দেখে নেই-
(১) সে তার ওই ভয়ানক ছাগলামী লেখাতে লিখেছে, "হুমায়ুন আহমেদকে ভুগতে হয়নি, কারন তিনি পুরুষ", অথচ তার এই অখাদ্য লেখাটির ওই লাইনের কিছু আগেই সে লিখেছে যে হুমায়ুনের অর্থ আছে, তাই এত ভালো চিকিৎসা করাতে পেরেছে। তাহলে পরের লাইনে "হুমায়ুন পুরুষ বলে তাকে ভুগতে হয়নি" এই কথা কেন লিখতে হোলো? তাহলে যেসব ভদ্রমহিলার সামর্থ আছে ক্যান্সারের চিকিৎসা করাবার তার ক্ষেত্রে তসলিমা কি বলবে?
(২) নেই শব্দটিকে নাই বলা কেন অপরাধ তা যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলতে পারেন নি এবং এটির উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে চলে যাওয়া ও ইন্ডিকেটিভ বক্তব্য
(৩) হুমায়ুনের পাঠক অর্ধ শিক্ষিত, কেন অর্ধ শিক্ষিত তা বলেন নি। অথচ যেই কলাকাতার কথা বললেন সেখানে দেশ পত্রিকার পুজা সংখ্যায় পর পর ৭ বার তার উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। অসংখ্য মানুষ তার লেখার ভক্ত।
কম শিক্ষিত লোক বলতে আসলে কি বোঝায়? এটা কি পাঠ্যবই জাতীয় শিক্ষিত নাকি জীবন মূল্যবোধের, দার্শনিক, চিন্তার এগেইন্সটে শিক্ষিত? যদি পাঠ্যসূচী অনুযায়ী ব্যাপারটি বিবেচ্য হয় তাহলে আপনাকে নিশ্চই আর বলে দিতে হবে না যে বাংলাদেশের কত লক্ষ শিক্ষিত মানুষ হুমায়ুনের বই পড়ে। আর জীবনবোধ বা দর্শনের আলোকে ব্যাপারটি বিবেচ্যহলে তা নির্ধারণ করা অসম্ভব। এই জাতীয় সিদ্ধান্তে আসতে হলে মানুষের দর্শন, চিন্তা ও মূল্যবোধ ও তার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে হবে। যেটা কোনো নির্দিষ্ট বলয় যেমন শিক্ষিত ও অশিক্ষিত নামক প্যারামিটার দিয়ে মাপা অসম্ভব বলেই আমি মনে করি।
লালন অনেক উচ্চ স্তরের দার্শনিক, আরজ আলী মাতুব্বরও খুব একটা খারাপ লেখেন না। কিন্তু অসংখ্য পুঁথিগত বিদ্যায় অনগ্রসর মানুষেরা এই লেখা গুলো ও দর্শন গুলো পড়েছে, জেনেছে। আবার পুঁথিগত বিদ্যায় মাপা প্যারামিটারে শিক্ষিত মানুষেরাও পড়ে একই ব্যাপার বুঝেছেন। এখন প্রশ্ন আসবে, তাহলে এইখানে ব্যাপারটি কি দাঁড়ালো। শিক্ষার বিভিন্ন স্তরীভূত মানুষ কোন দর্শনকে গ্রহন করছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ ? নাকি মানুষ সেই দর্শনের সাথে নিজেকে কতটুকু রিলেট করতে পারছে এবং সেই দর্শনের কতটুকু ভেতরে মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে সেটি গুরুত্বপূর্ণ?
(৪) স্ত্রী পূত্র কন্যা ফেলে হুমায়ুন গোঁড়ালির মত একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে বলে অভিযোগ করলেন কিন্তু নিজে কায়সার ও মিলনের সাথে যৌন সম্পর্ক করেছে তাদের স্ত্রী থাকা সত্বেও। কায়সারের বঊ তনার কাছে অনুনয় বিনয় করে সাহায্য করলেও তনা সাহায্য করেনি। (রেফারেন্সঃ বই-ক, পৃঃ৪০৯-৪১০)
(৫) পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নাকি তার বেশী আদর ছিলো অথচ গুলতেকিন ও শাওন দুইজনেই তার লেখার প্রেমে পড়েছিলো ও হুমায়ুনের লক্ষ নারী ভক্ত, নারীদের নিয়ে অনেক লেখাও তার রয়েছে। তাদের সমস্যা, তাদের নির্যাতনের গল্প নিয়ে।
৬)শাওনকে বিয়ে করাতে হুমায়ুনকে কেউ কিছু বলেনি পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে অথচ তার এই অব্জার্ভেশন ভুল। সুবর্না মুস্তাফা ও তারানা হালিমও তাদের থেকে বয়সে অনেক ছোটকে বিয়ে করেছে, কিন্তু তাদের নিয়ে কেউ কখনো কিছু বলেনি। আসলে সমস্যাটা যে হুমায়ুনের কাছে মানুষের প্রত্যাশার সেটা এড়িয়ে গিয়ে নারীবাদ নিয়ে ফ্যাচর ফ্যাচর করেছে, কারন সে নারীবাদী, এইজন্য গু রচনা লিখতে হলেও নারীবাদ আনতে হবে।
(৭) পিতার মৃত্যুর সংবাদে মেয়েরা দেখতে এসেছে, এটাও নাকি পুরুষের জয়, পুরুষ জাতির জয় এবং এটা মিডিয়া ফলাও করেছে বলে নাকি এটাও নাকি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দোষ। অথচ শাওনকে বিয়ে করাতে যে হুমায়ুনকে সবাই গালাগাল করলো গত ৭ বছর ধরে এটি সম্পূর্ণ উপেক্ষিত থাকলো তার বক্তব্যে। কারন এটি যদি বলে তাহলে তার লেখাটা আর নারীবাদী হবে না, এমনটাই তার ধারনা। বাবা মারা যাওয়াতে সন্তানরা দেখতে আসাতেও মনুষ্যত্বের জয় ও একজন পিতা কিংবা পিতা নামক ব্যাপারটির বা সম্পর্কের জয় না ধরে তনা এটাকে পুরুষের জয় ধরে নিয়েছে।
(৮) তনা বলেছে অশিক্ষা দূর করার জন্য তিনি কি করেছেন? অথচ হুমায়ুন আহমেদের নির্মিত একটি স্কুল আছে নেত্রোকোনায়, সম্পূর্ণ নিজের টাকায়। কোনো সরকারী অনুদান পাননি তিনি এই স্কুলের জন্য। এই দিন দিন নার মত জনপ্রিয় গান যা শিক্ষা সম্পর্কিত, সেটাও হুমায়ুনের রচিত ও পরিবেশিত, সবুজ সাথী নামের সামাজিক সচেতনতা মূলক নাটক যেখানে মেয়েদের মাতৃকালীন বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধানের কথা বলা হয়েছিলো, তাও এই কলামে উপেক্ষিত।
(৯) হুমায়ুনের ক্যান্সার হয়েছে বলে হুমায়ুন ক্যান্সার হাসপাতাল বানাবার কথা ও সেই সংকল্পের কথা বলেছিলেন সবাইকে। এটাও নাকি অপরাধ। কেননা তিনি আগে কেন এটি মনে করেন নি। এই একই প্রশ্ন আমি তসলিমাকে করতে চাই, এই হাসপাতাল তৈরী করার দায়টা হুমায়ুনের শুধু একার কেন? এইটা নিয়ে সে কেন কোনো পরিকল্পনা করেনি? এইযে দেশের দূর্নাম করে আর আলতু ফালতু লেখা লিখে যে এত রোজগার করে, এই অর্থ দিয়ে কি করে তসলিমা? কি করেছে সে দেশের জন্য এই পর্যন্ত? এখন হুমায়ুন হাসপাতাল করতে চেয়েছে, তাও দোষ? এই দোষের মধ্যে আবার পুরুষ তান্ত্রিকতার ছোঁয়াও পেয়েছে তসলিমা!!! সেলুকাস!!!!
আরো কিছু প্রাসঙ্গিক কথা
তসলিমা বিভিন্ন বিবাহিত ছেলেদের সাথে যৌন সম্পর্ক চালিয়ে গিয়েছে। (রেফারেন্সঃ বই-ক, পৃঃ৪০৯-৪১০) সেই ছেলেদের স্ত্রীরা তাদের স্বামীকে সামলাতে না পেরে তসলিমাকে হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করেছিলো। এর একটা উদাহরন হচ্ছে কায়সার নামে এক ছেলের সাথে তনার সম্পর্কের কথা আপনি দেখবেন। কায়সারের বউ হেনু অনেক অনুনয় বিনয় করেছিলো তনার কাছে যেন তনা এই সম্পর্ক্টি না চালায়। কিন্তু তনা তা শোনেনি। বরং একবার হেনুর সাথে খারাপ ব্যাবহারও করেছিলো। তার শরীর চাহিদার কথা বলে কায়সারের এই অন্যায় কাজের একজন সাহায্যকারী হয়ে সে দিনের পর দিন সম্পর্ক চালিয়ে গিয়েছে। অথচ এই মহিলাই নারীদের সাথে পুরুষদের এমন আচরণ নিয়ে ওই বইতেই অসংখ্যবার লিখেছে।
প্রগতী নারীবাদ আর অস্তিত্ববাদী নারীবাদের মিকচার নিজের মধ্যে নেয়ার থেকে এই দুইটি ধারনা মানুষকে তার ভেতরে আছে বা এইটা জাহির করতে ও এটি বুঝিয়ে বলতে পারাতেই তনার যাবতীয় স্বার্থকতা। এই দুইটি ধারনার কোনোটিই মূলত তস্লিমা ধারন করেনা। এই অসভ্য মহিলাটিকে নারীবাদী বলতে আমার আপত্তি আছে এবং তা যুক্তি সহকারে।
কায়সার যদি তনার সাথে না শুতে পারত তাহলে অন্য কারো কাছে যেতো। কায়সার খারাপ এবং এবগ সে এটি করত আমার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তনা যেহেতু এই ব্যাপারগুলো নিয়েই উচ্চকিত এবং ছেলেদের এই আচরনে সে অপরাধ খুঁজে পেয়ে তা নিয়ে লিখেছে নারীদের উপর নির্যাতনের একটা অংশ হিসেবে, তখন একই ব্যাক্তি যখন ঐ একই অপরাধের টুলস হিসেবে কাজ করে, তখন কি ব্যাপারটি কন্ট্রাডিক্টরী নয়? ভন্ডামী নয়? সেটি কি নারীকে নির্যাতনের একটা প্রক্রিয়াতে অংশীদারিত্ব নেয়া নয়? এই দায়ভার তনার উপরে এ কারনেই সম্ভবত বর্তায় কারন, সে নিজে যেই ব্যাপারটিকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে সেটি যখন অন্য একজন করে সেটিকে বাঁধা না দেয়া ও তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা না নেয়ায়। এবং ব্যবস্থা নেবার ক্ষেত্রে ও সেই পুরুষটিকে শাস্তি দেবার অনেক সুযোগ থাকা সত্বেও। আজকে আমি যদি বলি খুন করা খারাপ এবং একদিন যদি একজন খুনীর খুনের সাথে সহযোগিতা করি এবং ডিফেন্স দেই এই বলে যে, আমি সাহায্য না করলে অন্য একজন করত কিংবা এও বলি যে, আমার পরিবারের সকলে খুন হয়েছে। আমি আসলে মানসিক ভাবে নির্যাতিত, তাই আমিএকজন খুনীকে সাহায্য করে এই সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাই, তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ায়?
এটা ভেবে দেখুন যে, সেই পুরুষটির বিরুদ্ধে তনা কি কি ব্যাবস্থা নিতে পারত, কি ব্যাবস্থা নিলে সেই পুরুষটির একটা শিক্ষা হোতো। শুধু তাই নয়, তনা অসংখ্যবার তার বইয়ের মধ্যে মানুষের বাহ্যিক অবস্থানকে খুবই কুৎসিত ভাবে উপস্থাপন করেছে বিশেষ করে মেয়েদের। যেমন সুইডেনে তারা যে নিরাপত্তা কর্মী যে মেয়েটি ছিলো, তাকে হাড় গিলে, বক্ষ ছোট, সরু ইত্যাদি নামে ট্যাগায়িত করেছে, বিভিন্ন মানুষদের নানান রকম বাজে নামে আখ্যায়িত করেছে। ইমদাদুল হক মিলনের স্ত্রী থাকা সত্বেও তার সাথে কাশ্মীরে গিয়েছে এবং শারিরীক সম্পর্ক করেছে। অথচ ইচ্ছা করলেই তনা তখন ব্যাপারটি তার স্ত্রীকে জানিয়ে দিতে পারত, মিডিয়াকে জানিয়ে দিতে পারত। এসব তখন না করে এখন এসে নারীবাদের ভড়ং ধরেছে। কারন নারীবাদ, ধর্ম, এসব নিয়ে ভড়ং ধরলে খুব সহজেই ডিফেন্স পাওয়া যায়।
একটা উন্মাদ কাকের সাথে তসলিমা নাসরিনের একটা মিল ও অমিল রয়েছে। একটি উন্মাদ কাক নিজেকে ময়ুর ভেবে তার পুচ্ছ দেশ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বুঝাবার চেষ্টা করে যে তার কুৎসিত কালো পালক গুলো হচ্ছে ময়ুরের পেখম। বার বার যখন সেই কাকটি এই কাজ করতে থাকে তখন যদি কেউ কাকটিকে কষে একটি লাথি দেয়, কাকটি তখন সটকে পড়ে। তার উন্মাদনা থেমে যায় এবং ময়ূরগিরি ফেলে আবার গাছের মগডালে বসে কা কা করতে থাকে। কারন সে বুঝতে পয়ারে সে কাক, ময়ূর না।
তসলিমা নাসরিনের সাথে কাকের মিলের যায়গা হচ্ছে তসলিমাও নিজেকে নারীবাদী ভেবে বসে আছে এবং প্রায়ই বিভিন্ন চটি পত্রিকাগুলোতে "নারীবাদী" রূপ ধারন করে তার কলাম নামের বিভৎস লেখাগুলো প্রকাশ করতে থাকে। কিন্তু ভয়ংকর সংবাদ হচ্ছে উন্মাদ কাককে যেমন কষে লাথি দিলে পালিয়ে যায় তসলিমা লাথি খেয়ে আরো কুৎসিত সব লেখা নিয়ে হাজির হয়।
আফসোস, একটা উন্মাদ কাকের মত বিবেচনা বোধটুকুও এই নির্বোধটির নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৪০