somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন রাস্তা বন্ধ কইরা, অফিসে যাইবো, আরেকজন এক মাইল ফাও হাটাইবো। আর এইসব কারনে দেরি কইরা অফিসে গেলে মালিক আমারে চুমাইবো? /:)/:)/:)

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বন্ধি হাতেও প্রতিবাদের শেষ আশা আর আমাদের উনাকে নিয়ে হাসাহাসি, হীনমন্যতা




আমেনা বেগমের মাথায় একটা চিন্তাই কেবল ঘুরছে।
৩৮০ টাকা।

এই তিনশ আশি টাকা দিয়ে সে অনেক কিছু করতে পারবে। সামনে শীত আসছে। তার ছেলেটার এমনিতেই ঠান্ডার বাতিক আছে। এই টাকা দিয়ে সে তার তিন বছরের বাচ্চার জন্য ঢাকা কলেজের সামনে থেকে অন্তত দুই সেট শীতের জামা কিনতে পারবে। যখন এক টানা অনেক দিন কুয়াশা থাকবে, তখন বাচ্চাদের কয়েক সেট শীতের জামা লাগে। কারন বাচ্চারা বড্ড তাড়াতাড়ি কাপড় নোংরা করে। রোদের দেখা থাকে না বলে, ধুয়ে দিলেও সহজে শুকাতে চায় না। তখন বাড়তি এক সেট জামা অনেক উপকারে দেয়।

কিন্ত সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই তিনশ আশি টাকার ভরসায়, সে অনেকগুলি বাড়তি খরচ করে ফেলেছে। তার এমনিতেই স্বামীবিহীন টানাটানির সংসার, একটা টাকা বাড়তি খরচ করার উপায় নাই।

যেমন প্রথমবার অফিস থেকে ফেরার পথে ফার্মগেইটে সুন্দর সুন্দর লাইট-জ্বলা প্লাস্টিকের খেলনা বল দেখে পছন্দ হয়ে যায় এবং বাচ্চার জন্য একটা কিনেও ফেলে। ভাবে, হাজিরা বোনাস ৩৮০ টাকা তো আছে।
দ্বিতীয়বার লাল বুড়িকে একটা কাপড় কিনে দেয় ২০০ টাকা দিয়ে, ফেরিওয়ালা বাসার সামনে নিয়ে আসছিলো। বুড়ির এমনিতেই ভালো কোন কাপড় নেই, তার উপর কাপড়টা বুড়ির অনেক পছন্দ হয়ে গেছে। কিন্তু টাকার অভাবে বুড়ি কিনতে পারছিল না বলেই সেই কিনে দেয়।
কারন সে যখন অফিসে চলে যায়, পিচ্চিটাকে তো এই বুড়িই দেখে রাখে, এই বুড়ির জন্যই তো সে চাকুরিটা করে খাচ্ছে। না হলে এই অপরিচিত ঢাকায় সে কার কাছে তার তিন বছরের বাচ্চটাকে রেখে চাকুরি করত? রক্তের সম্পর্কহীন এই বুড়ি যে যত্নের সাথে গত একটা বছর ধরে এই পিচ্চিটাকে দেখে রাখছে, সেই ঋণ কোনভাবেই শোধ করার না।

এইসব সাত পাচ ভেবে সে, বুড়িকে কাপড়টা কিনে দেয়। হাজিরা বোনাস থেকে শোধ করে দেয়া যাবে এই ভরসায়।

কিন্তু আজকে মনে হয়, ওর হাজিরা বোনাসটা মিস হবে। বিজয়-সরণির মোড়ে জ্যামে আটকে আছে দশ মিনিট ধরে। কি ঢঙ্গের ভিআইপি যাবে সে জন্য রাস্তা বন্ধ। এইসব ভিআইপি-রা জন দুর্ভোগ বাড়াতে পারে কিন্তু কমাতে পারে না। মাসে ত্রিশ দিনের মধ্যে একদিন এক মিনিট লেইট হলেই হাজিরা বোনাস পুরাটা মাইর।

সবাই আছে খালি গরীম মারার ধান্ধায়।

সার্ক ফোয়ারার সামনে বাস থেকে নেমেই আমেনা বেগমের মনে হলো, সে বড় একটা ভুল করে ফেলেছে। কিন্তু এত টুকু পিছনে গিয়ে ঘুরে আসতে গেলে দেরী হয়ে যাবে।

হাজিরা বোনাস মিস করা যাবে না, মনে মনে এইটা বলেই, আমেনা বেগম দৌড়ে রাস্তা পার হতে শুরু করলো। হঠাত কোথা থেকে যেন দুইজন পুলিশ এসে ওকে থামতে বলে। ও না থেমে দৌড় শুরু করে, অফিসে লেইট হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু একজন মহিলা পুলিশ ওকে ঝাপটে ধরে। সে প্রাণপনে ছোটার চেস্ট্রা করে।হাত আটকে থাকার জন্য তার সব চেস্টা ব্যর্থ হয়। শেষে সে পুলিশের হাত কামড়ে দেয়।

পুলিশের বড়কর্তা আমেনা বেগমের এহেন সাহস দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়।
- এই মহিলা তুমি মানুষ না, বিচ্ছু? ওভার ব্রীজ দিয়ে পার হউ নাই। আবার পুলিশের হাতে কামড়? সাহস তো কম না!
- এখানে কি ওভার ব্রীজ আছে?? কী দিয়ে পার হব??
- কেন এটিএন এর সামনে আন্ডার পাশ আছে না?
সার্ক ফোয়ারার এখানে থেকে আধা মাইলে পিছে গিয়ে, আন্ডার পাশ দিয়ে রাস্তা পার হয়ে আধা মাইল আবার সামনে আসব? মজা করেন? একজন রাস্তা বন্ধ কইরা, অফিসে যাইবো, আরেকজন এক মাইল ফাও হাটাইবো। আর এইসব কারনে দেরি কইরা অফিসে গেলে মালিক আমারে চুমাইবো? আমি কি আপনের বাপের অফিসে চাকুরী করি?

মহিলার এমন কথায় এএসপি সাহেব, বাকরুদ্ধ হয়ে যান। তাদের ভয়ে যেখানে বিএনপির বড় বড় নেতারা এক ঘাটে পানি খায়। সেখানে কিনা এই মহিলা এমন করে কথা বলার সাহস পায়? মহিলার কথা শুনে উনার প্রায় স্ট্রোক হয়েই যাচ্ছিল। অনেক কস্টে স্ট্রোকটা আটকেছেন।

আইন অমান্য, সরকারী কাজে বাধা, দ্বায়িত্বরত পুলিশকে কামড়ানোর অপরাধে তার এক মাস বিনাশ্রম জেল হয়।

এদিকে সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হয়ে যাচ্ছে। মাকে না পেয়ে আমেনা বেগমে ছেলেটার কাদতে কাদতে গলা ভেংগে গেছে।






--
বিঃদ্রঃ ঘটনাটা ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন । পুলিশের হাত কামড়ে এক মধ্যবয়স্ক নারী জেলে গিয়েছেন।
এই খবরটা দেখেই গল্পটা লিখতে ইচ্ছা হলো।বাস্তবটা এতটা খারাপ না হক, এমনটাই আশা করবো।
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×