somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন সাধারণ মানুষ এর অসাধারন কাহানী

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাকিস্তান আমলের কথা--একজন ১৪ -১৫ বৎসরের বালক সিনেমাতে অভিনয় করবে এই স্বপ্ন নিয়ে বাড়ী (চাঁদপুর) থেকে পালিয়ে ঢাকার FDC এর গেইটে দাড়িয়ে আছে , সুযোগ খুজছে ভিতরে ঢুকার জন্য , কিন্ত্তু কিছুতেই গেইটের দাড়োয়ানের মন গলানো যাচ্ছে না, অনেক আকুতি মিনতি করার পর ও কাজ হলো না।এই সময় গেইট দিয়ে একজন ভদ্রমহিলা ঢুকার সময় দাড়োয়ন তাকে বললো , “ম্যাডাম দেখেন তো , এই ছেলে বলে সিনেমা করবে , ভিতরে ঢুকতে চায়” ।তখন ভদ্রমহিলা ছেলেটিকে সাথে নিয়ে FDC তে ঢুকলো , তার কাছ থেকে সব শুনে বললো , “আমি একজন অভিনেত্রি, আমার নাম আনোয়ারা ,তুমিতো এখনো ছোট , মেট্রিক পাশের পর আমার সাথে দেখা করো , আমি তোমাকে সিনেমায় চান্স দিব” ।

তিন বছর পর, মেট্রিকের সার্টিফিকেট সহ FDC র গেইটে দাড়িয়ে আছে এক কিশোর , কিন্ত্তু অভিনেত্রি আনোয়ারার আর দেখা নেই , দাড়োয়ান ভিতরে ঢুকতেই দিলোনা। এভাবে প্রতিদিন সকালে FDC র গেইটে দাড়িয়ে থাকে , দু তিন এর মধ্যে বোডিং এ থাকার পয়সা ও প্রায় শেষ । তারপর বিনে পয়সায় রাতে থাকার জন্য বেছে নিল নির্মানধীন মধুমিতা সিনেমা হলের ছাঁদ । রাত ১০টার পর চুপি চুপি গিয়ে সেখানে ঘুমিয়ে থাকতো। তার মত আরো কয়েকজন ও রাতে এখানে থাকতো। এভাবে কিছুদিন থাকার পর খাওয়ার টাকা পয়সাও শেষ পর্যায় ।
একদিন FDC এর গেইটে দাড়িয়ে থাকা মানুষের আলাপ আলোচনা থেকে শুনলো, সিনেমার সাথে জড়িত লোকজন তখনকার নামকরা হোটেল পূর্বানী তে আড্ডা মারতে যায়। তখনই ঠিক করলো হোটেল পূর্বানী তে চাকরি নিবে। খুজে বের করলো দেশী একজন , যার সুপারিশে চাকরিটা হয়ে গেল ওয়েটার হিসাবে। প্রতিদিন সিনেমার পর্দার মানুষজনকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেতো ,আর স্বপ্নোটা আরো বড় হতে লাগলো।

কয়েক বৎসর পর একদিন হোটেল পূর্বানীর বার্ষিক মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পেলো।এভাবে আরো কয়েক বৎসর গেল । বিয়ে করে সংসার ও শুরু করলো। ভাগ্যক্রমে একদিন হোটেল পূর্বানীর বার্ষিক মঞ্চ নাটকের দর্শকের সারিতে চলচ্চিত্র পরিচালক অমল বোস ছিলেন, সেই নাটকে দিলদার সাহেব একটি কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন । নাটক শেষ হওয়ার পর তিনি তাকে ডেকে পাঠালেন, বললেন , “তুই সিনেমায় অভিনয় করবি” সাথে সাথেই উত্তর , জি স্যার , প্রথম ছবি “ কেন এমন হয় “ ছোট্ট একটি চরিত্র—প্রানবন্ত অভিনয়ের জন্য সবার নজড়ে পড়ে গেলেন । তাকে আর কখনোই পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।আমি এতক্ষন যার কথা বললাম উনি আমাদের সবার প্রিয় কৌতুক অভিনেতা “দিলদার”।

মানুষ যদি সৎভাবে , পরিশ্রম করে তার স্বপ্নের পিছনে ছুটে , স্বপ্ন ধরা দিবেই , তার বাস্তব উদাহারন হচ্ছে জনাব দিলদার।

এই জুলাই মাসের ১৩ তারিখ ছিল উনার ১৩তম মৃত্যু বার্ষীকি।

উনি ছিলেন আমার শ্রদ্বেয় শ্বশুড় এবং ফুফা। তাই উনাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি । খুবই সাধারন জীবন যাপন করতেন, নির্লোভী মানুষ ছিলেন ।

জনাব দিলদার জীবনে প্রায় ৬০০ এর অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ।ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ।দেশের সীমানা পেরিয়ে কলকাতায় ও উনি সমান জনপ্রিয় ছিলেন ।বাংলাদেশের একমাত্র কৌতুক অভিনেতা ছিলেন যার প্রারিশ্রমিক কোন কোন ক্ষেত্রে নায়কদের চেয়েও বেশি ছিল। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে মোট চলচ্চিত্র নির্মান হয় ৬৩ টি, যার মধ্যে ৫৭টিতেই দিলদার সাহেব অভিনয় করেন । পরিচালকদের অনুরোধে উনাকে একটা গানের জন্য হলেও অভিনয় করতে হয়েছে অনেক চলচ্চিত্রে।
জনাব দিলদার এমন একজন গুনি ,জনপ্রিয় কৌতুক শিল্পী ছিলেন যার মৃত্যূতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র , কৌতুক শিল্পে বিশাল পিছিয়ে পরেছে , যার অভাব দীর্ঘ ১৩ বৎসরে ও পূরন হয়নি।

সবাই উনার জন্য দোয়া করবেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:২৬
১৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×