স্যার আমি জি, এম , হারুন – অর- রশিদ , শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ১ম ব্যাচের ছাত্র ছিলাম, আমি আপনার সরাসরি ছাত্র না হলেও আমি আমাকে আপনার ছাত্র মনে করি। আমার কাছে আপনার লেখা সকল বই আছে এবং তা সবগুলোই একের অধিকবার আমি পড়েছি। এছাড়া আপনার লেখা কলাম এবং মিডিয়া ইন্টারভিউ সব সময় পড়া ও দেখার চেষ্টা করি, ।এই কাজটা করি খুব আগ্রহ সহকারে।আপনার লেখা ও কথা থেকে- জীবন সম্পর্কে , মানুষ সম্পর্কে জানি এবং শিখি ।এই জন্যই আমি আমাকে আপনার ছাত্র দাবী করতে পারি ।
স্যার আপনি আমার মতো নগন্য ছাত্রকে ভুলে গেছেন কিনত্তু আমাদের SUST সম্পর্কে যে কোন জায়গায় আলোচনা উঠলেই একেবারে অপ্রাসংঙ্গিক ভাবে বলে ফেলি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল কিনত্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।বলার পর খুব আনন্দ ও গর্ব হয়। এই অনুভূতি আপনি বুঝবেন না।একবার ঢাকা থেকে সপরিবারে SUST গিয়েছিলাম আমার সন্তানকে দেখানোর জন্য যে , এত বড় একজন মানুষ আমাদের শিক্ষক। আপনি খুব আন্তরিকতার সাথে আমার দুই সন্তানকে অটোগ্রাফ সহ বই উপহার দিয়েছিলেন। বইগুলো খুবই যত্ন করে রেখে দিয়েছি । আমার বাসায় কেউ বেড়াতে আসলে যে কোন ছুতোয় আমার সন্তান আপনার অটোগ্রাফ সবাইকে দেখিয়ে বলে- মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমাকে চনে , এই জন্যই এই বইয়ে আমার নাম লিখে অটোগ্রাফ দিয়েছে।
স্যার , আপনার একটা টিভি ইন্টারভিউ ও পত্রিকার লেখা পড়ে মনে খুব কষ্ট পেয়েছি , আপনি বলেছেন “ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের টাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে বন্টন হয়। এভাবে শিক্ষকদের অধিক আয় করার ইচ্ছার কারণে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উপর বড় ধরনের আর্থিক চাপ সৃষ্টি হয়”।
অবশ্যই সত্যি কথা , কিনত্তু একথা প্রকাশ্যে বলে কি আপনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সমাজকে ছোট করলে না এবং নিজেও ছোট হলেন না।
আপনিই বলেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বিরোধী আন্দোলন এর সময় –কাক কাকের মাংস খায়না, কিন্ত্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের সগত্রীয়দের মাংস খায়, আমার এখন মনে হচ্ছে শুধু মাংস না হাড্ডি সহ সবই চিবিয়ে খায়।
স্যার আপনিতো অনেকদিন এই ভর্তি প্রক্রিয়ার কমিটির সাথে যুক্ত ছিলেন , শধু মাত্র শেষ দু বছর আপনি নাই । প্রতি বৎসর ই কিন্ত্তু এই “ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের ফি” বেড়েছে তখন কি শিক্ষকরা এই টাকা বন্টন করে নাই ? ,
আমার বিশ্বাস আপনার এই সামান্য টাকার প্রয়োজন নেই বিধায় আপনি কখনোই এই বাড়তি রোজগারের টাকা নেননি, ফিরিয়ে দিয়েছেন, কিনত্তু তখন কোন প্রতিবাদ করেন নি ।
স্যার ,আপনি অনেক জনপ্রিয় লেখক , আপনার বই অনেটা মুড়ির মত বিক্রি হয় । বইমেলায় অনেকগুলো মুদ্রন শেষ হয়ে যায় , বছর শেষে অনেকগুলো টাকা রয়েলিটি বাবদ আপনার ব্যাংক একাউন্টে ঢুকে , এই সামান্য টাকা ( সর্বনিন্ম
৬০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০০০ টাকা) আপনার কাছে কিছুই না ।
সবাইকে সৃষ্টিকর্তা, আপনার মত গল্প লেখার প্রতিভা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠায় নাই , তাই এই টাকাটা তাদের স্ত্রী , সন্তানদের জন্য একট বড় আনন্দের ব্যাপর।
এখন কথা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই টাকাটা নেওয়ার নৈতিকতা নিয়ে ,
পৃথিবীর কোথায় ও এই যুগে কেউ বিনা মুজুরিতে কাজ করে না , বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষকদের চাকুরির নিয়োগের শর্তে যদি উল্লেখ থাকে যদি ছাত্র পড়ানো ছাড়া ও বিশ্ববিদ্যলয়ের অন্য যে কোন কাজে ,কেউ অতিরিক্ত কোন অর্থ পাবে না , তা হলে ব্যাপারটা সম্পূর্ন অনৈতিক , কিন্তু যদি বলা হয়ে থাকে অতিরিক্ত দ্ধায়িত্ব ও পরিশ্রমের জন্য UGC এর নিয়মনুযায়ী ঐ শিক্ষক টাকা পাবে তা হলে অবশ্যই তা দিতে হবে , আর কেউ না নিলে তা অবশ্যই বিলাসিতা এবং একাধারে মহানূভুতা।
স্যার এখন বিশ্বিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির বেশীর ভাগ শিক্ষকই আমাদের SUST এর প্রাক্তন ছাত্র এবং আপনার ছাত্র। তারা যেহেতু ভর্তি কমিটিতে থেকে টাকার ভাগ নিচ্ছে তাহলে কি ধরে নেওয়া যায়না , উনারা আপনার সঠিক শিক্ষা নেয়নি অথবা আপনি দিতে পারেন নাই।
স্যার ,বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কমিটি UGC এর নিয়মের বাইরে কিছুই করার ক্ষমতা নাই , এটা পাগলেও বুঝে। আপনি বাংলাদেশের শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন শক্তিশালী কমিটির পরামর্শ দাতা হিসাবে ছিলেন , কখনো কি এই টাকার ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছেন , আমার মনে হয় দেন নাই । আপনি প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে বলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ছোট করে একধরনের তৃপ্তিবোধ করেছেন , অনেকটা হাড্ডি চিবিয়ে খাবার মত।আপনি ভর্তির আবেদনের টাকা কম করার জন্য UGC এবং সরকার কাউকেই বলেন নাই । আপনার মত ব্যাক্তিত্ব ,যখনই কোন পরামর্শ দেয় তা সরকার অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে নেয়।
স্যার . আপনার মত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার পর , বিদেশের আধুনিক বিলাসী জীবন যাত্রা ও অধিক অর্থের মায়া ত্যাগ করে শুধু দেশকে ভালোবাসে বিধায় এই দেশে চলে আসে । তারা কিন্ত্তু তাদের পরিবারকে নিশ্চিত ও আরাম আয়েশের জীবন থেকে বন্চিত করেছে .। আপনি নিশ্চই বলবেন না উনারা ভর্তি ফরম এর টাকার ভাগ এর জন্য দেশে চলে আসছে।
স্যার , সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়েছে , যে ছাত্র-ছাত্রীরা এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি , তারা তাদের শিক্ষকদের সম্পর্কে কি পরিমান খারাপ ধারনা নিয়ে ক্লাসে ভর্তি হবে এবং তখন সন্মানটা সবার সাথে আপনারটা ও কমবে। ঝড় উঠলে বড় গাছগুলোই আগে উপড়ে যাবার ভয় বেশী।
স্যার ,যেহেতু আপনার লেখা ও বক্তব্য প্রকাশ্যে সবার জন্য উম্মুক্ত ছিল এই জন্য আমি প্রকাশ্যে আপনার কাছে আমার আবেদন তুলে ধরলাম। আর আমার অবস্হান হচ্ছে বিনা পয়সায় ভর্তির আবেদন এবং সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সম্পূর্ন পক্ষে । যেহেতু Public বিশ্ববিদ্যালয়, তাই সমস্ত খরচ সরকার দিবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অতিরিক্ত পরিশ্রমের মুজুরী ও সরকার দিবে ।আপনি এই ব্যাপারটা নিয়ে আন্দোলন করেন , সবাইকে কাছে পাবেন বলে আমি বিশবাস করি।
স্যার, সব পরিবারেই কম বেশী ঝামেলা থাকে , বর্তমান ও প্রাক্তন SUSTian দের কাছে SUST এর সকল ছাত্র-ছাত্রী , শিক্ষক , কর্মকর্তা , কর্মচারী , এবং SUST ক্যাম্পাসে যারা ব্যাবসা করে তারা ও আমাদের এক পরিবারের অন্তরভূক্ত , তার নাম SUST পরিবার। পরিবারের ঝামেলা হলে মাইকে ডেকে পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে বিচার দেওয়া একেবারে ভালবাসাহীন এবং বন্ধনহীন মানুষের কাজ , সর্বোপরি পরিবারের কাছে অঙ্গীকারহীন ব্যাক্তিত্বর কাজ ।
সমস্যা নিজেরাই মিটান আর না পাড়লে প্রাক্তন SUSTian দের ডাকেন । আমরা হৃদয় দিয়ে , ভালোবাসা দিয়ে আপনাদের ঝগড়াঝাটি মিটিয়ে দিব ।
---------------------------------------
জি ,এম, হারন অর রশিদ
১ম ব্যাচ , অর্থনীতি বিভাগ
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৪