somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গুমের গল্প

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“দশ মিনিট পর চোখের বাঁধন খুলবি,
আর পিছনে ফিরে তাকাবি না,
উল্টাপাল্টা করলেই গুলি করে দিবো”।

দশ মিনিট না দশ দিন
আমি বলতে পারবো না
আমি অনন্তকাল পর চোখের বাঁধন খুললাম,
সামান্য আলোতেই আমার চোখ ঝলসে গেলো,
আমি কিছুই দেখছি না
চোখ বন্ধ করে ফেললাম সাথে সাথেই।

আমি অনেক অনেকদিন কোনো আলো দেখিনা,
আলোর রং আমার কাছে এখন শুধুই কালো মনে হয়,
এখন রাত না সকাল বুঝতে পারছি না,
কিছু মানুষ এর ফিস ফিস শব্দ
আমাকে চমকে দিচ্ছে বারবার,
ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছি শরীরের ভিতরে।

একজন একটু চিৎকার করেই বলে উঠলো
“এই লোকটিকে গাড়ী থেকে কিছু মানুষ
ধাক্কা দিয়ে ফেলে গিয়েছে,
আমি দুর থেকে দেখেছি।”

আরেকজন বলছে “ভাই আপনার পরিচয়?”
আমার পরিচয়!!!
খুবই আশ্চর্য্য হলাম
আমার নামটাই মনে করতে পারছি না,
আমি শুধু বললাম “ভাই এখন দিন না রাত”
কেউ একজন বললো, “এখন ভোর ছয়’টা”
আমি আর কোন কথাই শুনছিনা,
চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছি মাটিতে,
কতক্ষন বসে ছিলাম জানিনা,
একজন শরীরে প্রচন্ড ধাক্কা দিয়ে বললো
“এই তোর নাম কি?
ঠিকানা কি?
কারা তোকে গাড়ী থেকে ফেলে গেছে?
চোখ খুলে আমার দিকে তাকা,
আমি একজন পুলিশ।

আমি চোখ বন্ধ রেখেই শুধু বললাম,
“আমি সব ভুলে গেছি,
আমাকে দয়া করে বলবেন আমি কে?”
তারপর আমার আর কিছুই মনে নেই,
গভীর ঘুমে তলিয়ে ছিলাম ।

এতোদিন কিছু মানুষ যেভাবে জানতে চাইতো
স্বপ্নেও ঠিক সেইভাবেই কে যেনো জানতে চাইতো,
“এই তুই কি জানিস বলে ফেল?”
আমি উত্তরে বলতাম
“মিথ্যা বলা মহা পাপ,
সূর্য পৃথিবীর চেয়ে বড়,
সাত দিনে এক সপ্তাহ,
পানির অপর নাম জীবন।”

আরো তীব্র হুন্কাংর দিয়ে জানতে চাইতো
“ আর কি কি জানিস?”
“আমি বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান,
আমার কপালে একটা কাটা দাগ আছে,
ছোট বেলায় একটা কুকুর পালাতাম ,
হঠাৎ একদিন, কুকুরটা ঘরে ফিরেনি,
আমি অনেক দিন মহল্লার অলিগলিতে ওকে খুঁজেছি ,
আর কখনোই পাইনি,
সেই কষ্টটা এখনো আছে বুকের ভিতর,
আমার একটা বউ আছে।

কিছুক্ষন পর আবার জানতে চাইতো,
“তুই কি করেছিস বল?”
“আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি,
আমি বন্ধুদের সাথে দু’বার গাজায় টান দিয়েছি,
টিকেট না কেটে অনেকবার ট্রেনে উঠেছিলাম,
চাকুরীর পাবার জন্য ঘুষ দিয়েছিলাম,
একদিন একটা প্রেমের কবিতা লিখেছিলাম।”

তারপর প্রায়ই শুনতাম
“মনে হয় ভুল মানুষ,
শুধু শুধু সময় নষ্ট।”

তারপর, কতোদিন পর চোখ খুলেছি আমি জানিনা,
চোখ খুলার পর দেখলাম শুয়ে আছি বিছানায়,
একজন মানুষ সাদা পোষাক পরে আছে,
দেবদুতের মতো লাগছে,বললো
“জ্ঞান ফিরেছে তাহলে”
কিছু সময় লাগলো বুঝতে ,
সরকারী হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি।

আমি জানতে চাইলাম “আজ কতো তারিখ, কতো সাল?”
উত্তর শুনে আমি শুধু
ছাদের ঘুরন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকলাম.
দু’বছর তিনমাস দশ দিন,
হা দু’বছর তিনমাস দশ দিন পর আমি স্বাভাবিক কথা বলছি।

একজন পুলিশি পোশাক পরা মানুষও এসে হাজির,
আমাকে প্রথমেই প্রশ্ন করলো
“কারা আপনাকে গাড়ী থেকে ফেলে গেছে?
“আমি জানিনা”
“ কবে তুলে নিয়েছিলো?”
“দু’বছর তিনমাস দশ দিন আগে”
“ কেনো?”
“আমি জানিনা”
আমার ঠিকানা নিয়ে চলে গেলো মানুষটি।

আমি অপেক্ষা করছি,
বাবা-মা, আমার বউ
সবাই কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসছে ,
আমরা সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষন কাঁদবো।

তারপর কয়েক ঘন্টা পরই
আবার আসলো পুলিশ ভদ্রলোকটি ,
আমার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থেকে শুধু বললো,
“মনটা শক্ত করে আমার কথা শুনুন,
আপনি গুম হওয়ার পর
আপনার বাবা-মা দু’জনেই
মারা যান ছয় মাসের ব্যাবধানে”
আমি কিছুই বললাম না,
আমার কেনো যেনো মনে হলো
উনাদের মরে যাওয়াই স্বাভাবিক,
বেঁচে থাকলেই বরং আশ্চর্য্য হতাম।

আমার নির্বাকতায় ভদ্রলোক খুবই আশ্চর্য্য হলো,
“আপনার স্ত্রী ভেবেছিলেন আপনি বোধহয় আর বেঁচে নেই,
গত মাসে উনার বাবা-মা উনাকে আবার বিয়ে দিয়েছেন”
একথা বলেই ভদ্রলোক যেন
অনেকক্ষনের আটকানো নিঃশ্বাষটা ছাড়লো,
আমি কিছু না বলে শুধু
ছাদের ঘুরন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

ভোর ছয়’টা হবে তখন,
অনেক দিনের না কাটা দাড়ি নিয়ে
আমি ঠিক সেখানেই দাড়িয়ে আছি
যেখান থেকে আমি গুম হয়েছিলাম,
দু’বছর তিনমাস এগারো দিন আগে,
আমি মনে প্রান অপেক্ষায় আছি,
আমাকে যেনো আবারো কেউ চোখে কাপড় দিয়ে
গুম করে ফেলে অনন্তঃ কালের জন্য।

একসময় সকালের নিরবতা নষ্ট করে
আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললাম,
“ভালো লাগেনা আর বাঁচতে
প্রভু’ আমাকে আজীবনের জন্য গুম করে দাও।”
----------
রশিদ হারুন
২৪/০৭/২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:১৩
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×