somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হলুদ শার্ট ও একজন নারী

২৭ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হঠাৎ হঠাৎ দেখা হয় লিফটে,
এই বিল্ডিং এ সবাই নতুন উঠেছি,
সবাই ফ্লাটের মালিক না,
ভাড়াটিয়া ও আছে কয়েকজন,
কখনো কথা হয়নি,
হয়তো শূভেচ্ছা হাসি বিনিময় হয়েছে।

আজ লিফটের জন্য অপেক্ষার সময়
পার্কিং এ দেখা,
হঠাৎ করেই উনি বলে উঠলেন,
“আচ্ছা আপনি কি কখনো
উত্তর যাত্রাবাড়ীতে ছিলেন?”
আমি খুবই আশ্চর্য্য হয়ে বললাম,
“জি, ছিলাম ,সে তো প্রায় “
বলেই একটু হাতে গুনে বললাম
“একুশ বছর হবে,
কলেজে পড়তাম তখন,
দু’বছর ছিলাম, ওয়াশা গলিতে ছিলাম,
বাসার নাম্বারটা মনে নেই,
কেনো বলুনতো ?”
“ঠিক পাশের দোতলা বাড়ীটা ছিলো আমাদের,
আমাদেরটা ছিলো আশি
আর আপনি ছিলেন উনাশিতে,
সিজারদের বাসায় ”

আমি খুবই আশচর্য্য হয়ে কিছুক্ষন
ভদ্র মহিলার দিকে তাকিয়ে থাকলাম,
কোনো ভাবেই পরিচত মনে হচ্ছে না,
তবুও হাসি মুখে বললাম,
“আমার স্মৃতিশক্তি খুবই দূর্বল,
ক্ষমা করবেন,
আপনার দেখি সব মনে আছে,
বাবার বদলি চাকুরী ছিলো,
তারপর আমরা সিলেটে চলে গিয়েছিলাম,
আর আপনাদের তো নিজেদেরই বাড়ী।”
এইটুকু বলতেই লিফটা চলে আসলো।
ভদ্র মহিলার লিফটে উঠার
কোনো লক্ষনই দেখলাম না,
অগ্যতা আমার ও দাড়িয়ে পড়তে হলো।

“আমি থাকি 7/A তে , আপনি?”
“আমি 5/D তে থাকি” বলেই লিফটের দিকে তাকালাম
লিফট আবার নিচেই নামছে।

“আপনি প্রায়ই হলুদ শার্ট পড়তেন,
হলুদ আপনার প্রিয় রং, তাই না?”
আমি এতোই আশ্চর্য্য হলাম যে
আবারও লিফট এসে কখন যে চলে গেলো
বলতেই পারবো না।

মনে পরে গেলো হলুদ শার্টের কথা,
বাবাকে কে যেনো হলুদ কাপড় এর
একটা থান দিয়েছিলো,
আমার ধারনা কোন কাজের
ঘুষ হিসাবে দিয়েছিলো কেউ আমার কেরানী বাবা’কে,
বাবা বিনে পয়সার কাপড় পেয়ে
আমাকে একসাথে তিনটা হলুদ
শার্ট বানিয়ে দিয়েছিলো।

কলেজের দু’বছর আমাকে
হলুদ শার্ট পড়েই কাটাতে হয়েছিলো,
মা’র সাথে তখন অনেক ঝগড়া করেছিলাম হলুদ শার্ট নিয়ে,
বাবা’কে কিছু বলার সাহসই ছিলোনা আমার কখনো ।

আমি বললাম,
“আপনার স্মৃতিশক্তি সত্যিই বলার মতো।”
“ আমার এক ছেলে ,
কলেজে পড়ে,
আর স্বামী ব্যাবসায়ী,
আমি গৃহিনী, আপনার?”
বলেই আমার দিকে প্রশ্ন চিহ্ন করে তাকালো,
“ আমার এক ছেলে, এক মেয়ে, বউ ডাক্তার,
আমি ও ব্যাবসা করি”
বলেই সাথে সাথেই বললাম
“আজ আসি”
ভদ্র মহিলা বললো,
“নামটা ও জানতে চাইলেন না?,
আমার নাম ‘রুমা”
আমি খুবই অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,
“ আমার নাম..”
উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“থাক আর বলতে হবে না,
আমি জানি আপনার নাম।”
বলেই উনি লিফটের বদলে
সিড়ি ভেংগে উঠতে লাগলেন,
আমি খুবই আশ্চর্য্য হয়ে তাকিয়ে থাকলাম শুধু।

অনেকদিন আর দেখা হয়নি উনার সাথে,
একদিন আবার লিফটেই দেখা,
সাথে কিশোর বয়সের একটি ছেলে,
আমি পরিচিত মানুষের মতো সৌজন্য হাসি দিলাম,
উনি আমার দিকে তাকালোই না,
কিশোরের পড়নে হলুদ রং এর একটি শার্ট
ছেলেটি একটু বিরক্ত প্রকাশ করে নীচু স্বরে বললো,
“ মা’ হলুদ রং আমার একটুও পচ্ছন্দ না,
তুমি সব সময় আমাকে জোর করে
হলুদ রং এর কাপড় পড়াও,
আমি এখন বড় হয়েছি,
কলেজে পড়ি, মা,
নিজের পচ্ছন্দ বলে আমারওতো কিছু আছে।”

উনি কিছুই বললেন না,
লিফট থেকে নামার সময় শুধু আমার দিকে
নির্লিপ্ত ভাবে তাকালো,
কিশোরটিকে বললো,
যেনো আমি ও শুনতে পাই,
“ হলুদ রং আমারও পচ্ছন্দ না,
তুমি বাসায় গিয়ে শার্টটা বদলিয়ে আসো,
রঙ’টা কেমন যেনো চোখে লাগছে,
হলুদ রং দেখলেই শরীর গুলিয়ে উঠছে।”
————————————
রশিদ হারুন
২৭/০৭/২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:০৯
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×