somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফার্মের মুরগির মত একটা প্রজন্ম গড়ে উঠছে যারা তাদের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানে না।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফোর্থ ইয়ারে আমাদের একটা কোর্স ছিল "History of Economic Thought" নামে। মূলত একেবারে শুরু থেকে ইকোনোমিক্সের ইতিহাস পড়ছিলাম আমরা। শুরু হয়েছিল সেই খ্রিষ্টপূর্ব সময় থেকে, একেবারে এরিস্টটল, প্লেটোর আমল থেকে। ম্যাডাম পড়াতে পড়াতে ৫০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এসে এক লাফে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে চলে গেলেন, মূলত তিনি ইচ্ছে করে এমনটা করেননি, যেই বইটা পড়াচ্ছিলেন সেখানে এভাবেই আছে। মাঝখানের সময়টা কোথায় গেল জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তর দিলেন, আসলে এই সময়টাতে ইকোনোমিক্সে তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। স্যারদের হা হু পর্যন্ত খাতায় নোট করে রাখা আতেলরা হয়তো এটাই নোট করে রেখেছিল। আমি পাশের ভালো সিজিপিএধারী বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, কি রে এমনিতে তো অনেক প্রশ্ন করিস এখন কিছু বলছিস না যে, মাঝের এই সময়টা কই গেল! সে বেশ বিজ্ঞের মত উত্তর দিল, আসলে এই সময়টা হচ্ছে ডার্ক পিরিওড তাই লেখক এই পার্টটা আলোচনা করেননি।



মনটাই খারাপ হয়ে গেল। মুসলিম ঘরের বাচ্চাদের ফার্মের মুরগির মত একটা প্রজন্ম গড়ে উঠছে যারা তাদের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানে না। বিশ পঁচিশ বছর আগের কিছু নোংরামি আর মূর্তিপূজাকে এদের হাজার বছরের ঐতিহ্য বলে শেখানো হয়, আর তারা তার তালে নাচতে থাকে। আমার খুব ইচ্ছে করছিল জন জন ডেকে ডেকে বলি তোমাদের এই বইটি যে লিখেছে সেই কাফেরের বাচ্চা ইচ্ছে করেই তোমাদের ইতিহাসটুকু বাদ দিয়েছে। কারণ এই সময়টাতে মুসলিমরা পূরো বিশ্ব শাসন করেছে, অর্থনীতি সোনালি সময় গেছে এই সময়টাতে, এই সময়ে মুদ্রাস্ফীতি ছিল না, এই সময়ে কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ হয়নি, এই সময়ে সম্পদের অসম বণ্টন ছিল না, এই সময়ে শোষক আর শোষিত বলে কিছু ছিল না, এই সময়ে জালিম আর মজলুম বলে কিছু ছিল না। এই সময়ে নিরাপত্তা ছিল, ন্যায়বিচার ছিল।
.
হ্যাঁ তোমাদের এই ডার্ক পিরিয়ডে উমার ইবনুল খত্তাব (রাঃ) এর মত নেতা ছিল যিনি বলেছিলেন, ফোরাত নদীর তীরে একটি কুকুরও যদি চর্ম রোগের মলমের অভাবে কষ্ট পায় আমি উমারকে কাল খেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। যিনি রাত্রি বেলা ঘুরে ঘুরে দেখতেন তার অধীনে উম্মাহর অবস্থা কেমন যাচ্ছে, যিনি এক বাড়িতে উপোস থাকা আল্লাহর বান্দাদের দেখে কাঁদতে কাঁদতে বায়তুল মাল থেকে নিজের কাঁধে আটার বস্তা বহন করে নিয়ে গেছেন, নিজে তাদের রুটি বানিয়ে, খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে তবেই ঘরে ফিরেছেন। কোন খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় যদি সবাই সেটা কিনে খেতে না পারতো তখন উমারও সেটা খেতেন না যতক্ষণ না সবাই সেটা কিনে খেতে পাওয়ার মত অবস্থায় না পৌঁছায়।

এই সময়ে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহর (রাঃ) মত মানুষ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে ছিলেন, সিরিয়ার ওয়ালি থাকা অবস্থায় একবার খলিফা উমারের কাছে তার বিরুদ্ধে সেখানকার লোকেরা অভিযোগ করল, তাদের আমির মাসে একদিন তাদের সামনে আসেন না। তার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে আবু উবাইদা বলেছিলেন, তার একটি মাত্র জামা। মাসের এই দিনে তিনি তার জামাটি ধুয়ে দেন, সেটি শোঁকাতে দেরি হয় বলে তিনি এই দিন মানুষের সামনে আসতে পারেন না। তার জবাব শুনে উমার (রাঃ) অঝোরে কেঁদেছিলেন।

হ্যাঁ এই সময়ে জণগনের সম্পদ মেরে খাওয়ার মত হায়েনারা ছিল না। এই সময়ে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় থেকেও তনুরা ধর্ষিত হয়নি। বরং উমারের আমলে নিরাপত্তার অবস্থা এমন ছিল, কোন সুন্দরী রমনিও যদি সজ্জিত হয়ে মাঝরাতে রাস্তা দিয়ে একাকি হেঁটে যেত তার মনেও আল্লাহ এবং পশুপাখির ভয় ছাড়া আর কোন ভয় ছিল না। এক মুসলিম বোনের হিজাব ধরে টান দেওয়ায় তার ইজ্জতের সম্মানে পুরো মুসলিম সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ে সালাউদ্দিন আল আইয়ুবির মত মানুষরা ছিল যিনি কোনদিন হাসতেন না, তার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলতেন, কি করে আমি হাসতে পারি যখন জেরুজালেম এখনো ইহুদিদের দখলে। এই সময়ে মুসলিমরা আন্দালুসে (স্পেইন) শাসন করেছে, জেনে নিও কেমন ছিল সেই গৌরবোজ্জ্বল সময়গুলো।

আফসোস আমাদের জন্য, আমাদের এই প্রজন্মের জন্য যারা তাদের ইতিহাসের ছিটেফোঁটাও জানে না। যাদেরকে স্কুলের বইতে পড়ানো হয় উমার (রাঃ) গণতন্ত্রমনা ছিলেন। যাদেরকে সুচিত্রা সেনের জীবনী পড়ানো হয়, হুমায়ূন আজাদের আবর্জনা গিলানো হয়, প্রশ্নপত্রে সানি লিওনের প্রসংগ থাকে। আমাদের প্রজন্মকে তাদের গৌরবময় ইতিহাসের পাঠ দেওয়া আপনার আমার দায়িত্ব। তাদের উপর একটু রহম করুন। তাদেরকে এভাবে মেরুদন্ডহীন নখদর্পহীনভাবে বড় হওয়া থেকে হেফাজত করুন।

লিখেছেন: ইউসুফ আহমেদ
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:২১
২৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×