এক লোক আমেরিকায় আসছে পি এইচ ডি করতে। তো, বহুত কষ্ট তখলীফ করে সে রিসার্চ করে। কোর্স ওয়ার্ক করা, সাথে কামলা খাটা, সেই সাথে নিজের পিএইচডি করা। কত্ত ঝামেলা?
তো যাই হোক সারাদিন সারারাত খেটে খুটে, সংসার জলাঞ্জলী দিয়ে ল্যাবে ৩ ঘন্টার পর পর গিয়ে রীডিং নিয়ে, জীবনকে পানি করে তার পি এইচ ডি হলো।
নামের আগে ড. বসলো। শত শত পেপার হলো, সাইটেশন হলো। ড. ওল্ড কামলা আজ নিজের কাছে সফল। চাকরি শুরু করলো, বছরে দেড় লাখ ডলার বেতন পায় সে এখন, আগে সে কামলা খাটতো, এখন স্টুডেন্টদেরকে দিয়ে খাটায়।
==================================
ভালই চলছিল জীবন। তো কি হল, একদিন ড. ওল্ড কামলার বাসার বাথরুমের ওয়াটার ডিসপোসাল সিস্টেম নষ্ট হল, পুরো বাথরুমের অবস্থা খারাপ। তাড়াতাড়ি সে তড়িঘড়ি করে প্লাম্বার (যারা বাসার পানির লাইন, বাথরুমের পানির লাইন ঠিক করে) কে কল করলো। তো একজন প্লাম্বার আসলো।
৩-৪ ঘন্টা কাজ করলো প্লাম্বার। তো, প্রবলেম সলভড। এখন পে করতে হবে। কিন্তু পে করতে গিয়ে দেখা গেল, চার্জ খুবই বেশী। পার আওয়ার প্রায় ৬০ ডলার। কি উপায়? ( যেখানে মিনিমাম ওয়ার্কিং আওয়ার চার্জ নরমালী ৮ ডলার )
যাই হোক, ড. ওল্ড কামলা শেষমেশ ঘন্টা ৬০ ডলারই পে করলো, সে প্লাম্বাররে বললো,
----< আমি পি এইচ ডি করে যত টাকা কামাই, তুমি তো দেখি প্লাম্বার হয়ে তার থেকে অনেক বেশী কামাও? এ কেমন বিচার?
প্লাম্বার বললো,
===>এটা দারুণ বিচার। কারণ মার্কেট চলে, চাহিদা অনুযায়ী। যার চাহিদা যত বেশী, তার দাম তত বেশী। কোন জিনিসের যোগান কম হয়ে গেলে, তার চাহিদা বেড়ে দাম বেড়ে যায়। তাই এখন প্লাম্বারদের অনেক দাম, কারণ এই কাজের লোক পাওয়া যায় না । আর যেভাবে হাজারে হাজারে পি এইচ ডি হচ্ছে, তাতে পি এইচ ডি করে মানুষ তো বেকার থাকে.... হেহে... এত পড়াশুনা আর কষ্ট করে কি লাভ যদি বেকার থাকতে হয়। আপনার চাকরির কোন গ্যারান্টি আছে?
খুব আাঁতে লাগলো কথাটা ড. আমলার। বললো, কত কামাও বছরে?
====> বছরে ৩ লাখের উপরে। ইমার্জেন্সীতেই অনেক কামাই।
মাথা খারাপ হয়ে গেল ড. কামলার: বলে কি? প্লাম্বার হয়ে আমার ডাবলের চেয়েও বেশী কামায়? পি এইচ ডি করে জীবনে কি পেলাম। এখনও বাড়ীর ঋণ, গাড়ীর ঋণ শোধ করতে পারিনাই টাকার অভাবে, আর এই প্লাম্বার এত কামায়??ড. না হয়ে বোধ হয় প্লাম্বার হওয়াই ভাল ছিল??
প্লাম্বার বুঝলো মনে হয় ড. আমলার মনের কথা। প্লাম্বার বলে উঠলো:
====> শুনেন, আমেরিকায় এগুলা কোন ব্যাপার না। পি এইচ ডি করছেন তো কি হইছে? দুনিয়ায় সব কাজই সমান। আমাগো মতন প্লাম্বার হইয়া যান, ডাবল বা ট্রিপল কামাইবেন। পুরা গ্যারান্টেড জব। এই লাইনে লোক কম, তাই অনেক ডিমান্ড। আর আপনাগো কামে অনেক ঝামেলা সারাদিন কি সব রিসার্চ করা লাগে, ভেজাল। চাকরির গ্যারান্টি আছে আপনাগো?
শুনেন , আমাগো সাথে জয়েন করেন, এইটা ব্যাপার না। খালী সবাইরে কইবেন, আপনি ক্লাস ফাইভ পাশ। কোথাও কাম করতে গেলে এমন ভাব করবেন যে আপনি ক্লাস ফাইভ পাশ। ব্যস, জীবনে কত আনন্দ দেখেন? এই নেন কার্ড। ওস্তাদের নাম্বার আছে এখানে, দরকার পড়লে কল দিয়েন ওস্তাদরে। আপনারে আমরা আপন কইরা নিমু। অন্য কোন স্টেইটে আপনারে পাঠাইয়া দিবো ওস্তাদ, ওইখানে গিয়া খালি টাকা কামাইবেন। কত্ত মজা জীবনে চিন্তা করেন, কোন টেনশন নাই। খালী টাকা আর টাকা।
একটা কার্ড দিয়া প্লাম্বার মামা চইলা গেল।
=====================================
ড. ওল্ড কামলার তো মাথা পুরা খারাপ হয়ে গেল। কি কয়? এত কষ্ট কইরা পি এইচ ডি করছে প্লাম্বার হবার জন্য?
দিন যায় , রাত যায়। ড. ওল্ড কামলার মাথা খারাপ।
নাহ, আর নিজের সাথে যুদ্ধ করে পারলোনা। ড. কামলা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। প্লাম্বারের কথাই সঠিক। কল দিলো প্লাম্বারের ওস্তাদরে। ওস্তাদ তো ড. কামলারে পাইয়া খুবই খুশী। মাত্র ১৫ দিনের প্রশিক্ষণেই ড. কামলা পুরা তৈরী হইয়া গেল।
যাই হোক, ড. কামলা এখন নতুন স্টেটে ওস্তাদের সংগে চলে আসছে। খালি টাকা আর টাকা। কামাইতেছে। মনে বড়ই আনন্দ। খালী কাউরে কইতে পারেনা, যে সে আসলে পি এইচ ডি। সবাইরে কয় সে ক্লাস ফাইভ পাশ।
এভাবেই যাচ্ছিল ভালই।
====================================
কিন্তু হঠাৎ ওই স্টেটের গর্ভনের মাথায় ভুত চাপলো, যে সব প্লাম্বার সহ কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কারদের আর একটু বেশী এডুকেট করতে হবে। আইন পাশ হল। প্লাম্বার হতে হলে মিনিমাম ক্লাস ৭ পাশ হতে হবে, কিছু ব্যাসিক ম্যাথ - সাইন্স শিখতে হবে। সান্ধ্যকালীন ক্লাসের ব্যবস্থা হল। প্লাম্বার রা এখন রাতে ১ ঘন্টা ক্লাস করে, সিলেবাস খুবই সহজ করে পড়ায়, কারণ ওরা তো প্লাম্বার, এত বুঝেনা।
তো, ড. ওল্ড কামলা পড়লো বিপদে। সে তো পি এইচ ডি, তার জন্য পুরান ছোট দের জিনিস পড়া একটা বোরিং কাজ। তো যাই হোক, কিছু করার নাই, জাতির কাছে তো সে ফাইভ পাশ। ওই ক্লাস না করলে প্লাম্বিং করতে দিবেনা সরকার; আবার সারাদিন রিসার্চ করো, প্রজেক্ট সামলাও, পেপার লেখো, কত্ত ঝামেলা, কে করবে ওসব?, তাই কিছু করার নাই। ওস্তাদ খুব বুঝাইলো, ড. কামলারে, যে কিছু করার নাই, তুই খালী ক্লাসগুলা ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া পার করবি, পরীক্ষা তো তোর কাছে কোন ব্যাপার না।
তো, যাই হোক, ক্লাস শুরু হইলো এক মেট্রিক পাশ শিক্ষক আসলো পড়াইতো, সে একাই ম্যাথ- সাইন্সসহ সব সাবজেক্ট পড়ায়।
দল বেঁধে সব প্লাম্বার রা আসে পড়তে, অনেকেই ঘুমাই ঘুমাই ক্লাস করে। শিক্ষকের ভাল লাগেনা। ছেলে পেলে মন দেয় না কেন? এরা তো পরীক্ষায় ফেল করবে, কত কঠিন কঠিন অংক।
কয়েক মাস ক্লাস হল, হঠাৎ শিক্ষকের মনে হল একদিন ক্লাসে, যে একটারে ধইরা পানিশমেন্ট দিতে হবে, নাইলে এরা ঘুমাই ঘুমাই ক্লাস করা বন্ধ করবেনা, কত্ত কঠিন কঠিন ম্যাথ।
===================================
সারাদিন কাজ করে আসছে ড. কামলা। আজ একটু বেশীই ক্লান্ত। ক্লাসে আজকে পুরাই ঘুমাচ্ছে সে। শিক্ষকের নজরে পড়ে গেল। ম্যাথ ক্লাসের মধ্যে ঘুম? আজকে ধরবো.....
শিক্ষক ক্লাসে হুংকার দিয়ে উঠলো, ড. কামলাকে উদ্দেশ্য করে :
'এই ছেলে এই, তোকে সবসময় দেখি ক্লাসে ঘুমাস, পরীক্ষায় পাশ করবি কেমনে?'
ড. কামলা হড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠলো... লা জওয়াব হয়ে গেছে সে।
শিক্ষক বললো: 'আজকে তোকে ক্লাসেই পরীক্ষা করবো। আজকে ক্লাসে বোর্ডে তোকে অংক কশতে হবে। না পারলে মেইন পরীক্ষায় ফেল করাই দিবো, তোর প্লাম্বিং লাইসেন্স বাতিল করে দিবো। '
ড. কামলা ভয় পেয়ে গেল। এ কি বলে? হায় হায়! আবারও সেই রিসার্চ, ল্যাব, প্রজেক্ট, নির্ঘুম রাত্রী? না না , এ হতে পারেনা....
: স্যার মাফ করেন ভুল হইয়া গেছে। বলে উঠলো ড. কামলা।
শিক্ষক: কোন মাফ নাই। বোর্ডে যাহ।
ড. কামলা বোর্ডে গেল্, মনে মনে ভাবতেছে , 'ক্লাস সিক্সের অংক আর কত কঠিন, ব্যাপার না।'
শিক্ষক মনে মনে ভাবতেছে, আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্র ফল দেখাইছি, ত্রিভুজেরটা দেখাইছি, বৃত্তের টা এখনও দেখাইনাই। এরে বৃত্তের ক্ষেত্রফল টা বের করতে দি, তাইলেই ও শেষ, জীবনেও পারবেনা। সব ছেলেপেলে ঠান্ডা হয়ে যাবে। এরপর থেকে সবাই ক্লাসে মনোযোগ দিবে।
যাই হোক, শিক্ষক বলে উঠলেন: একটা বৃত্তের ব্যাসার্ধ যদি 'আর' হয়, তাহলে তার ক্ষেত্রফল কত, বের করতো দেখি?বের করতে না পারলে এট লিস্ট সূত্রটা লিখ ? বোর্ডে লিখে দেখা।
ড. ওল্ড কামলা তখনও ঘুমের ঘোরে আছে। মাথা ঠিকমতন কাজ করতেছেনা। যাই হোক, তার খুব একটা আতংক লাগলোনা, কারণ বৃত্তের ক্ষেত্রফল বের করা কোন ব্যাপার হবার কথা না?
তো ড. কামলা ততক্ষণে বৃত্তের ক্ষেত্রফল ভুলে গেছে। বের করতে হবে, একটু মাথা টা ঠান্ডা হয়ে নিক।
ড. কামলা চিন্তা করলো, আরে ধুর ক্যালকুলাস আছেনা? ইন্টিগ্রেট করে দিলেই তো এরিয়া বের হয়ে যায় ।
ড. কামলা একটা বৃত্ত বোর্ডে এঁকে ইন্টিগ্রেশন করা শুরু করলো। খুব দ্রূত দুই লাইনে রেজাল্ট বের হয়ে গেল।
কিন্তু বৃত্তের ব্যাসার্ধ আসছে (- পাই * আর * আর )। মানে ''নেগেটিভ পাই আর স্কয়ার''
ড. কামলা বুঝতেছেনা, এখন যে নেগেটিভ কেন আসলো? এরিয়া কি নেগেটিভ হয়? আরে নেগেটিভ আর পজিটিভ তো খালী একটা ভেক্টর? একই কথা? নাকি ভিন্ন? এটা চিন্তা করতেছে ড. কামলা, ভুলে গেছে সব। ঘুম ঘুম ভাবটা যায় নি।
পিছনে ওইদিকে অন্য প্লাম্বার বন্ধুরা মৃদু গুঞ্জন করতেছে আর ড. কামলারে বকতেছে। প্রায় সব প্লাম্বার সমস্বরে বলে উঠলো :
'' ইন্টিগ্রেশনের লিমিট চেঞ্জ কর, উল্টাই দে, তাইলেই প্লাস এরিয়া আসবে, এরিয়া নেগেটিভ দেখলে স্যার বুঝবেনা। তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি। ''
ওস্তাদ অন্য প্লাম্বারদের বলতেছে " আরে তোরা ওরা বকিস না , এখনকার পি এইচ ডি রা হাতে ক্যালকুলেশন করেনা, সব সফটওয়্যার দিয়ে করে, তাই ও ভুলে গেছে। "
এরপর ওস্তাদ ড. কামলারে আস্তে আস্তে বলতেছে (যাতে স্যার শুনতে না পায়) " খালি নেগেটিভ সাইনটা মুছে দে রে কামলা, স্যার (শিক্ষক) ইন্টিগ্রেশন বুঝেনা, এটা নিয়ে ঝামেলা করতে পারবেনা।"
ওদিকে অবাক নয়নে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে শিক্ষক, চারিদিকে হওয়া গুঞ্জন তার কানে আসছেনা। ঠিক বুঝতেছেনা যে কিভাবে দুইলাইনে বৃত্তের এরিয়াটা বের হয়ে গেছে।
''এস এর মত দেখতে এইটা কি আঁকছো কামলা? উপরে নিচে আবার ছৌট করে দুইটা সংখ্যা লিখছো?''
বলে উঠলেন শিক্ষক। কিভাবে এরিয়াটা বের হল ঠিক ঠাহর করতে পারতেছেন না!!!!
এ যাত্রায় পার পেয়ে গেলেন ড. কামলা, কিন্তু ................ হেহে
=========================
পুনশ্চ: রাগ কইরেন না ভাইরা। এইটা জাস্ট একটা কৌতুক। তবে এর একটা হিডেন মেসেজ আছে। সেটা আপনাদের জন্যই থাক। হেহে
কর্টেসি: M. Rezaul Karim Bhuyan / ফেসবুক
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০২