মোটামুটি প্রতিজ্ঞা করেই গত এক বছর হুমায়ূন আহমেদের বই পড়া থেকে বিরত ছিলাম। স্টেইনলেস স্টিলে কীভাবে মরিচা পড়ে তার সবচেয়ে মানবীয় উদাহরণ এই ভদ্রলোক। যিনি কিনা চাইলে চেখভ স্টাইলে কিছু করতে পারতেন, কিংবা নিদেনপক্ষে নিজের নামটাকে আগামী ৫০ বছরের জন্য আলাদা একটা ট্রেডমার্ক হিসেবে দাড় করাতে পারতনে, পাগলামি আর ফাইজলামি রোগে তিনি সেটা স্বজ্ঞানে ধ্বংস করলেন।
ঈশ্বরগুপ্ত সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা হলো, 'এতোবড় প্রতিভা টিটকারি মারতে মারতে শেষ হইয়া গেলো।' হুমায়ূন আহমেদের ক্ষেত্রে একই কথা বলা যায়- এতোবড় প্রতিভা পাগলামি আর ফাইজলামি করতে করতে বাতিল হয়ে গেলো!
পরিচিত একজন হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত। সেদিন তিনি একটা বই (সানাউল্লার মহাবিপদ) হাতে ধরিয়ে দিয়ে অনুনয় করলেন- একটু এই বইটা পড়েন। আমি রাতে আপনাকে ফোন করব। তাঁর কথা রাখার জন্য মাথার গরম রক্ত কোনোমতে ঠাণ্ডা করতে করতে পড়লাম। মোটামুটি নিশ্চিত- হাতের সামনে থাকলে ওই পরিচিতজনকে...
রাতে তিনি ফোন দিলেন। অত্যন্ত গম্ভীর স্বরে বললেন, 'মানুষের কাছে নিজের নামটার প্রতি ভালোবাসা বেশি প্রয়োজন নাকি প্রচুর টাকা থাকার পরও আরও টাকা দরকার?' আমি বললাম, 'কেন?' তিনি উত্তর দিলেন, 'হুমায়ূন আহমেদকে হয় টাকার রোগে ধরেছে, নয় তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। আমার একজন অতি প্রিয় লেখককে এভাবে অসুস্থ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি।'
হুমায়ূন আহমেদের কানে হয়তো পাঠকের আকুতি পৌছায় না কখনো। না হলে তাঁর কাছ থেকে ক্রমাগত সরে যাওয়া পাঠকের প্রতিধ্বনির প্রতিফলন থাকবে না কেন?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৪:০০