somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা "সমস্যার" সমাধান করতে হবে বাংলাদেশকেই, কারণ-

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের সীমানা মাত্র ২৭১ কি:মি: অপরদিকে ভারতের সাথে মায়ানমারের সীমানা ১৪৪৮ কি:মি:। বাংলাদেশের সাথে সীমানা আছে শুধুমাত্র ভারত এবং মায়ানমারের আর মায়ানমারের সীমানা আছে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড এবং লাওস এর সাথে। মায়ানমারের রাখাইন অন্চলটি বাংলাদেশের সাথে সংস্লিষ্ট, "মুংডু"। রোহিঙ্গা যেমন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বা নিচ্ছে তেমনি আশ্রয় নিয়েছে বা নিচ্ছে ভারতেও, কিন্তু বাংলাদেশে এই রোহিঙ্গা আসার চাপটা বরাবরই বেশি কারণ বাংলাদেশে আসার পথটি ভারতের মত পাহাড়ী বা দুর্গম নয় এবং নৌপথেও আসা যায়। রোহিঙ্গারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান, বাংলাদেশও মুসলমান তাই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, তুলনামুলকভাবে বাংলাদেশের বিগত এবং বর্তমান সরকার রোহিঙ্গাদের প্রতি কঠোর নয়।

মায়ানমার আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের চাইতে সাড়ে ৪গুণ বড়ো, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ- প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, উর্বর ভুমি এবং কাঠ। অপরদিকে মায়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদ- প্রাকৃটিক গ্যাস, তেল, কাঠ, টিন, পারমানবিক উপাদান, টাংসটেন, জিংক, কপার, লিড, কয়লা, মার্বল স্টোন, লাইম স্টোন, নানাবিধ খনিজ পাথর, হাইড্রো পাওয়ার এবং উর্বর ভুমি। অপর ভাষায় মায়ানমার হলো গুপ্তধন সমৃদ্ধ একটি দেশ, দীর্ঘদিন সামরিক শাষণে থাকার কারণে এখনো এইসব গুপ্তধন অনাবৃত হয়নি। বর্তমান বিশ্বের নিয়ন্ত্রক ব্যাবসায়িরা কোনো না কোনোভাবে মায়ানমারে ব্যাবসা সম্প্রসারনে নিয়োজিত, হালে বাংলাদেশের প্র‌থম সারির গার্মেন্টস মালিকরাও মায়ানমারে অফিস বা কারখানা খুলে রেখেছেন।

আয়তনগতভাবে বাংলাদেশের চাইতে সাড়ে 8 গুন বড়ো মায়ানমারের জনসংখ্যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার চাইতে ৩ গুন কম। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ ইসলাম ধর্ম, ৯ শতাংশ হিন্দু ধর্ম এবং ১ শতাংশ অনান্য (বৌদ্ধ, খৃষ্টান, সাওতাল, পাহাড়ী) ধর্মের। অপরদিকে মায়ানমারের ৮৮ শতাংশ বৌদ্ধ, ৬ শতাংশ খৃষ্টান, ৪ শতাংশ ইসলাম এবং ২ শতাংশ অনান্য ধর্মের।

রাখাইন এবং রোহিঙ্গা সমস্যা হঠাৎ কোনো সমস্যা নয়, এটি দীর্ঘদিন হতে চলে আসা একটি ধারাবাহিক সমস্যা। এই সমস্যা মায়ানমারের জাতিগত নয় বরং আন্চলিক। শুধুমাত্র রাখাইন অন্চলকে ঘিরেই মায়ানমারের এই অপততপরতা, রোহিঙ্গাদের রাখাইন মুক্ত করা। ধারণা করা হয় প্রকৃতির যে অফুরন্ত সম্পদ মায়ানমারে আছে তার বেশিরভাগই আছে রাখাইন অন্চলে।

সামরিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। বিশ্বের বিবেক দেশগুলোও তাদের ভবিষ্যৎ ব্যাবসার কারনে সেইরকম চাপ দিবে না। বাংলাদেশে থাকা লক্ষ, লক্ষ রোহিঙ্গা হাসতে হাসতে মায়ানমার ফিরে যাবে না। কারন তারা জানে সেখানে তাদের জীবন কতটা দুর্বিষহো, কতটা রক্ত তারা ঝরিয়েছে বিনা কারনে, কত স্বজন, স্বপ্ন হারিয়েছে।

সামরিক সম্পদ হিসাবে বাংলাদেশের ২ টা সাবমেরিন আছে যা মায়ানমারের নেই কিন্তু অনান্য সামরিক সরন্জামে মায়ানমার এগিয়ে। এছাড়াও কোনো প্রত্যক্ষ্য সামরিক সমাধানে যদি বাংলাদেশ যেতে চায় তার পুরো সুবিধাটাই পাবে মায়ানমার। তাই পরোক্ষভাবে এই সমস্যার সমাধানে চীন এবং ভারতকে সাথে নিয়ে এগুতে হবে বাংলাদেশের। চীন যে মহাসড়ক নির্মান করতে চাচ্ছে এবং চীনের আন্চলিক মিত্র সন্ধানের সুবিধা নিয়ে এগুতে পারে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গারা তাদের ভাগ্য ফেরাতে প্রথমে তাদের নেতা নির্বাচন করতে হবে। কিছু নেতা হবেন প্রবাসী এবং কিছু নেতা হবেন রাখাইনে। এই সকল নেতা রোহিঙ্গাদের দাবি নিয়ে সোচ্চার হবেন, নির্যাতনের প্রতিবাদ করবেন এবং এই সকল নেতাদের বিশ্বঅংগনে কর্পোরেট ভাষায় ব্রান্ডিং করতে হবে বাংলাদেশকে। যেসকল বাংলাদেশি ভাই বোনেরা ফেসবুকে রোহিঙ্গা নিধনের ছবি শেয়ার সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা করছেন তাদেরও কর্তব্য হবে রাখাইন রোহিঙ্গা নেতাদের প্রোমোট করা। দাও, বটি নিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছার চাইতে এইটা বেশি কার্য্যকর হবে। নেতা তাদের প্রয়োজন, যেদিন কফি আনান মায়ানমারে তার রিপোর্ট পেশ করছেন তার পরপরই কোন বেকুব একসাথে মায়ানমারের এতগুলো সেনা ফারিতে আক্রমন করবে!! যে কফি আনান মায়ানমার সামরিক বাহীনির বিরুদ্ধে এবং রোহিঙ্গাদের পক্ষে রিপোর্ট দিচ্ছেন সেই সন্ধিক্ষনে এমন আক্রমন তার প্রতিউত্তরে মায়ানমারের সামরিক হিসাবে ৪০০ নিহত (বেসামরিক হিসাব ১০০০ হতে পারে) এবং প্রায় ১ লক্ষ শর্ণার্থী বাংলাদেশে।

এই গণহত্যা বন্ধে বাংলাদেশ সরকার এবং এর জনগনকে সচেতন এবং কার্য্যকরি ভুমিকা নিতে হবে। ভুয়া খবরে তুরস্কের যু্দ্ধ জাহাজ মায়ানমারে রওনা হয়েছে, বৌদ্ধ নিধন শুরু হয়েছে কিংবা ২০০০ সালে নাফ নদীর যুদ্ধে ৬০০ নাসাকা মেরেছে বাংলাদেশ এমন ভুয়া খবর বর্জন করতে হবে। ঝড়ের বেগে আমিন না লিখে, শেয়ার না করে সুর্য্যের বেগে সচেতন হতে হবে..

এই সেপ্টেম্বরে জাতি সংঘ সম্মেলনে বাংলাদেশ এবং সমমনা দেশগুলির মায়ানমারের এই গনহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

(পরবর্তী- গুজবের নাফ নদীর যুদ্ধ, ৬০০ নাসাকা নিধন এবং বাংলাদেশ)

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:২১
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×