somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিকারি : A Story of Britain

১১ ই জুন, ২০১৮ রাত ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


: হায়া ডূড!
: হাই পল!
: মাছ ধরবে?
: কি ধরব?!
: মাছ! ড’য়্যু ’ওয়ানা কেচ্‌ ফিশ?!
:D কয় কি ! এই বিদেশে মাছ ধরার সুযোগ! আকর্ণ বিস্তৃত একটা হাসি এসে গেল।
: অফ’কৌছ! কোথায় আছে হারামজাদা মাছ শুধু দেখিয়ে দাও। তারপর দেখ ক্যামনে ধরি।
হেসে ফেলল পল। বললঃ তুমি কি জানো কিভাবে মাছ ধরতে হয়?
এটা খুব কঠিন কিছু না। আমি তুমাকে দেখিয়ে দেব।
: আরে ব্যাটা আমরা হলাম বাঙ্গালি। মাছ আর আমাদের মধ্য কি ঐতিহাসিক সম্পর্ক তা তুমি বুঝবে না। তোমরা তো মাছ ধরা শিখ বই পড়ে আর ইন্সট্রাক্টদের কাছ থেকে। বইপুস্তকে মাছ ধরার যত কৌশল লেখা আছে তার বাইরেও হাজারো কৌশল বাঙ্গালির জানা আছে। আমি সেই বাঙ্গালিদের একজন। আমাকে তুমি মাছ ধরা শিখাবে ? :O
: বইয়ের বাইরেও তোমাদের হৌম মেইড কৌশল আছে মাছ ধরার?!
: আছেই তো।
: সেটা কেমন?
: বোয়াল মাছ চেন? বাটার ফিশ।
: না। এটা কি বিগ ফিশ?
: হ্যাঁ। খুব-ই বিগ এবং ডেইঞ্জারাস।
: ডেইঞ্জারাস কেন?
: ডেইঞ্জারাস কারণ, ওটা হচ্ছে রাক্ষস। আই মিন রাক্ষুসে মাছ। মনে কর ওটা হচ্ছে মিঠা পানির হাঙ্গর।
: সে কি নিজ জাতিকে খায়?
: নিজ জাতিকে খায় কি খায় না জানি না তবে অন্যান্য মাছ ধরে ধরে খায়।এর সারিবাঁধা দাতগুলো খুবই বিপজ্জনক। ওর মুখের ভিতর যদি তোমার হাত ঢুকে যায় তাইলে মুক্তির একটাই উপায়।
: কি সেটা?
: হয় তোমার হাত কাট আর না হয় ওকে ধরে দুটুকরো করো।
: আমার হাত তো ওর ভিতরে। ওকে দু টুকরো করব ক্যামনে?
: হের লেইগ্যাই তো কইলাম হ্যাতে হইল গিয়া ডেইঞ্জারাস! 3:)
এই মাংসাশী মাছকে আমাদের ছেলেরা ক্যামনে ধরে জানো?
: না। পল অবাক হয়।
: খালি হাতে। কোন ইকুইপম্যান্ট ছাড়াই। জিন্দা ধইরা নিয়া আহে।
চমকে উঠে প্রফেশনাল মাছ শিকারি পল! তার বাপের জন্মেও এমন কাহিনী শুনেনি।
: এটা ক্যামনে সম্ভব? ক্যামনে করে তাঁরা?


মনে মনে একছুট হেসে নিলাম। হে হে হে হেহ্‌। ব্যাটা এতক্ষন চাইছিলো আমাকে মাছ ধরা শিখাবে এখন উল্টো আমার কাছ থেকে শিখতে চাচ্ছে।

তাইলে শোন। তোমাদের ইন্সট্রাক্টররা যেটা এখনো জানে না কিংবা কোন বইপুস্তকেও যেটা এখনো লিখা হয়নি তেমন একটা কৌশল হলোঃ
বোয়াল মাছের যখন ডিম ছাড়ার সময় হয় তখন সে নদীর কিনার ধরে সাঁতরাতে থাকে। চলতে চলতে হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকে নিশ্চল। সন্তর্পণে অতি সাবধানে তখন এর পেটের নিচে পৌঁছাতে হবে তোমার হাত। তবে সাবধান! ধরতে যাবে না। বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তর্জনী দিয়ে ধীরে; অতি ধীরে তার পেটের নীচ সঞ্চালন করতে থাক। আরাম পেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে তুমার শিকার। গলার কাছে হাত যখন পৌঁছে যাবে কায়দা মতো ধরে ফেলো। ব্যাস। তবে লড়াই বাঁধতে পারে।। সেই লড়াইয়ে তোমাকে জিততে হবে। আর না হয় তুমি নিজেই চিৎপটাং হয়ে পড়বে নদীতে। চাহে কি তোমাকে দু’একটা কামড়ও বসিয়ে দিতে পারে।
: সে কি?! এতো রীতিমত দুঃসাহসিক কাজ।
: হ্যাঁ। দুঃসাহসিক এবং ধৈর্যের। তোমাকে হতে হবে স্নাইপারদের মতো।
: এই কাজটা তুমি কখনো করেছ?
: আরে ছোহ্‌! এ তো আমাদের বাচ্ছা ছেলেদের কাজ। আর আমি তো অনেক বড়।
: তাইলে তো মাছ ধরায় তুমার বেশ অভিজ্ঞতা আছে।
: তা বলতে পার। আমরা কবে যাচ্ছি, মাছ ধরতে?
: সামনের মঙ্গলবারের পরের মঙ্গলবারে।
: ডান!
: ডান।

আমার উত্তেজনা বেড়ে গেল। কতদিন তাজা মাছ খাইনা। দেখিওনি। শেষ কবে যে তাজা মাছ খেয়েছিলাম সে আর এখন মনে নেই। বাংলাদেশ, মিয়ানমার সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হিমায়িত মাছ আসে এদেশে। কিন্তু এগুলো যে সেই কোন যামানায় বরফ দিয়ে মুড়ে প্যাকেট করা হয়েছিলো কে জানে? পনেরদিন সময় হাতে আছে এখনো। অর্থাৎ দুই সাপ্তাহ। প্রতি সাপ্তায় একদিন ছুটি পাই আমি।
ঠিক করলাম মাছ দিয়ে খাওয়া যায় এরকম কিছু দেশি সবজি জোগাড় করব। বাংলাদেশি সবজি কিনতে হলে আমাকে ছুটতে হবে এখান থেকে প্রায়্ ৮০ মাইল দূরে কার্ডিফ সিটিতে। ৮০ মাইল হোক আর ১০০ মাইল; কাজটা আমাকে করতেই হবে। ভাবতেই ভাল লাগছে।

জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে লাগলাম, হ্রদ থেকে তুলে আনছি ইয়া বড় কার্প!
তারপর সেই কার্পকে কেটেকুটে সাইজ দিয়ে কিছু অংশ ভাজা হবে গরম তেলে।
হালকা আঁচে আগুনে পুড়িয়ে নিয়ে কুঁচি কুঁচি ক'রে কাঁটা হবে পেঁয়াজ।
সেই পেয়াজের সাথে মিশানো হবে কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা আর সামান্য কিছু ড্রায়েড মেতির গুড়ো।
ভাজা পেটি থেকে কাঁটা ছাড়িয়ে নিয়ে মিশানো হবে এই মিশ্রণে। তৈরি হবে মাছের চাটনি।
বাকিটুকুর কিছু অংশ রান্না হবে বাংলাদেশি শিম দিয়ে।
আরো কিছু বুনতে হবে এদেশে পাওয়া যা্য খুব-ই সুস্বাদু সবজি ‘লিক’ দিয়ে।
কিনে আনবো কিছু এসপ্যারাগাছও। এই সবজি দেখতে অনেকটা পুঁই ডাটার মতো। রং সবুজ।
রান্না করলে হয়ে যায় কচুর লতি। ...উলস উলস; জিহবায় জ্বল এসে গেছে। আর কি চাই।

তারপরেও আরো কি কি আইটেম করা যায় ভাবতে লাগলাম।
আশে পাশে থাকেন এমন দু একজন বাঙ্গালীকে দাওয়াতও দিয়ে ফেললাম।
গত ক্রিসমাসে তারা আস্থ টার্কির রোষ্ট করে আমাকে খাইয়েছিলেন।
এবার সুযোগ এসেছে সেই খাতিরের প্রতিদান দেয়ার।
আল্লাহ্‌! ইয়া বড় একটা মাছ দিও। দুটো হলে আরো ভাল হয়!

পনের দিন পরঃ

এসে গেছে কাংখিত মঙ্গলবার।
মহাউত্তেজিত হয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। আজ ঈদ হয়ে গেছে আমার। তাড়াতাড়ি নাস্তা সেরে কাপড় পরে তৈরি হয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম। দুপুর ঠিক ১২টায় এল পল। সঙ্গে আছে তার বিখ্যাত নৌকা গাড়ি। এই গাড়িকে প্রথম দিন দেখেই নাম দিয়েছি নৌকা গাড়ি। গাড়িতো নয় যেন মাছ ধরার নৌকা। এত দামি একটা গাড়ি; ব্যান্টলি। ১ লাখ পাউন্ডের উপরে দাম; একমাত্র ড্রাইভিং সিট ছাড়া আর বাদবাকি সারাটা ভর্তি থাকে নানান ধরণের ফিশিং গিয়ারে। ব্যাগ, ছিপ, টোপ, বুট, ফিসিং জ্যাকেট, ফিসিং ট্রাউজারস ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই ফিসিং জ্যাকেট একটা মজার জিনিস! অনেকটা আর্মির পোষাক জেনো। পরিবেশের সাথে নিমিষে মিশে যাওয়ার মতো করে এর ডিজাইন করা। লতাপাতা ফুল পাখি দিয়ে এমনভাবে এর ক্যানভাস তৈরি; আপনি পরে ফেললে এটা একটা নিঁখোত ক্যামোফ্লাজ! ফিসিং জ্যাকেট এবং ফিসিং ট্রাউজার এর ভিতরে ঢুকে আপনি যদি কোন ঝোপে বসে থাকেন আর নড়াচড়া না করেন তাহলে মাছ কেন কোন প্রকার প্রাণী এমনকি খালি চোখে মানুষও আপনাকে সহসা সনাক্ত করতে পারবে না। ডিটেক্টিং ডিভাইস লাগবে।

এখান থেকে সোয়ান লেইক ঘণ্টা দুয়েকের ড্রাইভ। কোনরকমে জায়গা করে নিয়ে সামনের সিটে বসতে পারলাম। সিটবেল্ট বাঁধা শেষ হতে না হতেই ইগ্নিশান দিল পল। ব্যাক গিয়ারে বেরিয়ে গেল পার্কিং লট থেকে। রেডিও ছাড়তেই ভেসে এলো আজকের আবহাওয়ার খবর। রৌদ্রকরোজ্জল দিন থাকবে... উত্তর দক্ষিণ থেকে মৃদু ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হতে পারে... তবে আজ কোন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নাই... ইত্যাদি। ছুটছে ব্যণ্টলি কন্টিন্যান্টাল । সিংগল ক্যারিজয়ে ৬০ মাইলের বেশি স্পিড তুলতে পারছে না। উল্টা পাল্টা করলেই পিছনে এসে হাজির হবে পুলিশ । এই ব্যাটারা কোত্থেকে আসে কে জানে। কোথাও কোন পুলিশ বা পুলিশ কার দেখবেন না। কিন্তু ঘটনা ঘটার সাথে সাথে-ই এরা ঠিকি হাজির হয়ে যায়। আপনি বৃটেইনের যে কোন জায়গায় থাকেন না কেন পুলিশ থেকে আপনি মাত্র আড়াই মিনিট দূরে।

তবে সব সময় পুলিশ না-ও আসতে পারে। তাতেও অসুবিধা নাই। কারণ আপনি সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে বেশি দূরে নন। গাড়ি চালাতে গিয়ে স্পিড লিমিট ভঙ্গ করুন। তারপর রাতে আরামছে একটা ঘুম দিন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন আপনার নামে সুন্দর খামের ভিতরে একটা অফিসিয়াল চিটি। চিটির ভিতরে একটা ছবি এবং একটা অফিসিয়াল কাগজ। ছবিতে দেখা যাচ্ছে আপনার গাড়ি এবং তার নাম্বার প্লেইট। ড্রাইভিং সিটে কে বসা এবং কে ড্রাইভ করছে তার মুখ। এক পৃস্টার এক কাগজে লেখা আপনি স্পিড লিমিট ভঙ্গ করেছেন অথবা রেড সিগনাল মানেননি অথবা জেব্রা ক্রসিংয়ে দাঁড়ান্নি অথবা......
অতএব আগামী দুই সাপ্তার ভিতরে আপনার লকাল কাউন্সিল অফিসে গিয়ে ১০০ পাউন্ড জরিমানা দিতে দিয়ে আসবেন।
আদা' ওয়াইজ য়্যুইল হ্যাভটূ ফেইছ দ্য কৌ'ট।
যদি কৌর্ট পর্যন্ত যান আর আপনি গিল্টি প্রমাণিত হন তাহলে এই ১০০ পাউণ্ডের সাথে আপনার বিচারের জন্য কৌর্ট করতে গিয়ে পুলিশের যা খরচ হয়েছে সেটাও দিয়ে আসবেন।
তারচে' আইন মেনে গাড়ি চালানোই ভাল।

হাইওয়েতে নামলেই বেশিরভাগ ড্রাইভার রেডিও অন রাখে। যাতে ঘুমিয়ে না যায়, প্রথমত। দ্বিতীয়ত কোন কারণে কোন সার্টেইন রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে সাথে সাথে রেডিওতে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে বিকপ্ল রাস্তার। ক্ষনেক্ষনে বাজছে রিদমিক উদ্দ্যাম সংগীত। মুহুর্মুহু জানিয়ে দিচ্ছে ওয়ার্ল্ড নিউজ হেডলাইন। শৈল্পিক মনমাতানো উপস্থাপনায় ইতার তরঙ্গ আপনাকে আনন্দে ভাসিয়ে রাখবে; অনাবিল।
ঘুমুতে দেবে না, যতক্ষন গতিশীল আছেন । মসৃন হাইওয়ে বেয়ে গড়াচ্ছে আমাদের কার। অলস গতির গাড়িগুলোকে মাঝে মাঝে পাশ কাটাচ্ছে অনায়াস দক্ষতায়। ছুটেছে ব্যান্টলি; নাচছে ইতার; ঘুরছে স্টিয়ারিং।

পল থমাস। সাবেক এঞ্জিনিয়ার। রিটায়ার্ড করার পর জীবনটাকে উপভোগ করছে। অনেক দিনের পুরুনো বন্ধু আমার। মাছ ধরা যার নেশা। প্রথম স্ত্রী লওরা’র সাথে বনিবনা হয়নি তার। কি কারণে হয়নি কে জানে? অবশ্য বিয়ে ভাংতে এদের তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ কারনের প্রয়োজন হয় না। সামান্য তুচ্ছ কিছুকে কেন্দ্র করেই ছুটে যায় বাঁধন। প্রচলিত প্রবাদ হলো স্বামী স্ত্রীতে মোট তিনবার শাউটিং হলেই ভেঙ্গে যায় বিয়ে। স্বামী- স্বামীর পথে; স্ত্রী- স্ত্রীর পথে। পলের বেলায়ও হয়ত তাই ঘটেছে। জিজ্ঞেস করলে চেহারায় নামে মেঘের ছায়া। আসে সেই গৎ বাঁধা উত্তর, " গর্লজ আ' নৌ গুড, ম্যান! " তার স্ত্রীও একই ধারায় জবাব দেয়। না, ভুল বললাম লওরা তো ওর স্ত্রী-ই ছিল না। ছিল পার্টনার। লিভটুগেদার করাকে এরা পার্টনারশিপ বিজনেস মনে করে। যতদিন খুশি একসাথে থাক আর যখন পোষায় না যারযার পথ দেখ। অর্থাৎ তারা আলাদা হয়ে যায় । আলাদা হয়ে গেছে পল; আলাদা হয়ে গেছে লওরাও।

কিন্তু একাকি আর কতদিন থাকা যায়। যদিও এদের প্রতিটি ঘরে সঙ্গ দেয়ার জন্যু একটি করে কুকুর থাকে। কিন্তু কুত্তা তো কুত্তাই। সে তো আর মানুষ না। মানুষের মতো সঙ্গী তো কুকুর হতে পারে না। সঙ্গ পাবার জন্যে এরা কি না পোষে? কুকুর, বিড়াল, সাপ, ব্যাজি বাঘ, সিংহ, কুমির, ডলফিন হেন কোন প্রাণী নেই যা এরা পোষে না। কিন্তু প্রাণী তো আর মানুষের সম্পূরক হতে পারে না। হয় না।
ঘুরেফিরে মানুষের সন্ধান করতে হয় মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য।
আবারো নতুন করে জীবন শুরু করার প্রত্যাশায় নতুন পার্টনারের খুঁজে দু'জন-ই ।
উইকএন্ডে নাইটক্লাবে যাচ্ছে নিয়মিত। ওখানেই খুঁজ মিলে নতুন পার্টনারদের।
বারে বসে মদ গিলো।
আর এদিক অদিক ইতি - উতি তাকাও।
দেখ তোমার মতো নীড় হারা পাখি আছে নাকি আর কেউ।
একে তাকে অফার করো। যদি কাউকে পেয়ে যাও; চিয়ার্স! ড্যান্সফ্লৌরে কিছুক্ষণ নেচে নাও। ডেইটিংয়ের ডেইট ফিক্সড শেষে ঘরে ফিরো। ডেইটিংয়ে শেষে যদি পছন্দ হয়ে যায় তাহলে পেয়ে গেলে সঙ্গী।
হাত ধরো। ঘর বাঁধো। লিভ টুগেদার।
সকাল ৯টায় কাজ।
বিকেলে কুকুর নিয়ে হাঁটাহাঁটি।
রাত্রে রেস্টুরেন্টের ডিনার শেষে, টিভি, মদ।
ভোরে কাজ, বিকেলে কুকুর, রাত্রে ঘুম।
ঘুম - কাজ - কুকুর- খাবার; খাবার -কুকুর- কাজ- ঘুম।
এ-ই জীবন।
তারপর কোন একদিন শাউটিং।
একদিন শাউটিং । দুইদিন শাউটিং। তিনদিন শাউটিং। পার্টনারশীপ খতম। পথ দেখ যারযার।
কয়েকদিন মন খারাফ। গৃহপালিত পশুটাকে অবলম্বন করে বেঁচে থাক কিছুদিন। প্রচুর মদ ।
মদে না পোষালে ড্রাগ। ড্রাগে না পোষালে তোমার যাচ্ছে তাই কর... ট্রা লা লালা লা।


ব্রেইক কষল বেন্টলি ভি এইট। দাঁড়িয়েছে 'ট্যাকল মার্ট' এর সামনে। এটি একটি ফিশিং শপ।
যাবতীয় সর্বপ্রকারের মাছ ধরার সরঞ্জাম কেনার জন্য আদর্শ । তাছাড়াও আছে বিভিন্ন ধরণের একুরিয়াম। একুরিয়ামের ভিতরে সাঁতার কাটছে দুনিয়ার সুন্দর সুন্দর সব মাছ। এক একুরিয়ামে দেখলাম বাংলাদেশি খালিশা মাছ। ছয় সাতটা। একুরিয়ামের গায়ে লিখা আছে এই মাছেদের বাড়ি কোথায় , খায় কি, বাঁচবে কয়দিন ইত্যাদি ইত্যাদি। মাছ সহ এই একুরিয়ামের দাম পড়বে ৭০ পাউন্ড। একুরিয়াম কিনার ইচ্ছা না। আমার ঘরে একুরিয়াম আছে। ছোটবোনের প্রিয় প্যাট। গৌল্ডফিশ। আমি একদিন গৌল্ডফিশ গুলোকে ভাত খাওয়াতে গেছিলাম সে এমন চটে গেলো যে... তার কাছে কামান ছিলো না। থাকলে বিনা দ্বিধায় ফায়ার করত। এগুলো নাকি বাঙ্গালি রাইস ভাত খায় না। ফিশফুড খায়। আচ্ছা না খাইলে নাই! চান্স পাইলে আমি এগুলোকে গরম তেলে ভেজে নিজেই খেয়ে নিতাম। কিন্তু রক্ষক বড় এগ্রেসিভ। :(

খালিশা মাছের খাঁচায় ধারে ভিড়লাম। হাজার হোক দেশি ভাই। বাংলায় কথা বলতে পারব।
কবি ঠিকি বলেছেন;
" নানান দেশের নানা্ন ভাষা
বিনা স্বদেশী ভাষা মিঠে কি আশা? "
বাংলায় কথা বলে কি যে আরাম। যে বাংলা বুঝে না তারে ক্যামনে বুঝামু?
পরিচিত ইংরেজদের সাথে মাঝে মধ্যে বাংলায় কথা বলি।
কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে উত্তর দেয়ঃ 'অ্যাই ডৌন আন্ডা'স্ট্যান্ড 'য়্যুর ব্যাংলাডেশ!'
আরে ! গাধা কোথাকার! এইটা বাংলাদেশ না; এইটা হইল বাংলা ভাষা। :D
খালিশা মাছগুলোকে জিজ্ঞেস করলাম, কিহে বাহে। এই বিদেশ বিভূঁইয়ে ক্যামন লাগছে?!
জাতভাই দেখেই হয়ত সবকটা খালিশা চলে এলো একুরিয়ামের এই দিকের দেয়ালে। ঠোঁট নেড়ে কাঁচের দেয়াল ঘষল কিছুক্ষণ। হয়ত বলল হাই দোস্থ এই ঠাণ্ডার মধ্যে বাইরে কি করছ? চলে আসো আমাদের সাথে। উষ্ণ পানিতে কি যে আরাম। না ঢুকলে বুঝবে না। :D
কাঁচের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকল তারা।
আসলে তারা বুঝেছে তাঁদের বুঝি খাবার দেয়া হবে। কারণ এরকম একজন মানুষ এসেই তাঁদেরকে খাবার দেয়।

এখানে থামার কারণ হলো , এখান থেকে আপনি ছিপ কিনতে পারেন; কিনতে পারেন মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন ধরণের রেডিমেইড টোপও। যেমন, মাছে খায় এক ধরণের ছোট ছোট পোকা যা আমাদের দেশের পঁচা বাঁশের ভিতরে পাওয়া যায় কিংবা আরো নানান ধরণের পোকা মাকড় আছে যা বড়শিতে গেতে পানিতে ফেলতে হয়। সবগুলা আছে দোকানে। নির্দিষ্ট বক্সে ঈষদুষ্ণ পরিবেশে কিলবিল করছে।
বক্স ভেদে দামের তারতম্য হয়। তিন পাউন্ড থেকে ছ’ কি সাত পাউণ্ড দাম একেক বক্সের।

লেইকের ধারে নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি রেখে ফিশিং জ্যাকেট আর ট্রাউজারস পরে নিলাম আমরা।
দুজনে দুটি ছিপ, ছাতা, ক্যানভাসের তৈরি ফৌল্ডিং চেয়ার ইতাদি নিয়ে চুপি চুপি সুবিধামতো জায়গার খুজে চল্লাম। হাসি পেল আমার। মাছ নয় যেন বাঘ শিকারে চলেছি। একটি ঝোপের পাশ ঘেঁষে দুটি ফৌল্ডিং চেয়ার পাতলাম আমরা। তারপর হাতে গ্লাভস পরে বক্স থেকে একটা পোকা ধরে বড়শিতে অর্ধেক গেতে নিলাম। বাকি অর্ধেক কিলবিল করতে থাকল। এটার নড়াছড়া দেখে আসবে মাছ।
এই হ্রদে আছে বিভিন্ন ধরণের কার্প; আছে মিঠা পানির ঈল। ঈল ধরতে পারলে তো কেল্লাফতে। আর না পারলে নিদেনপক্ষে কার্প হলেও চলবে। দূরে ছুড়ে দেয়া হল বড়শি । কেনভাসের তৈরি ইজি চেয়ারে আরামছে বসে এবার অপেক্ষার পালা।
আয় কার্প আয়।
আয় ঈল আয়।
মজাদার সুস্বাদু
পোকা খেয়ে যা।

খুশির ঢেউ বইছে মনজুড়ে। রুই কি ঈল একটা হলেই হলো। তারপর বাংলাদেশি শিম, পালংশাক
সুস্বাদু সবজি লিক, পুঁই ডাঁটার মতো দেখতে সবুজ রঙয়ের এস্পেরাগাস। দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি, ফ্লুরোসেন্ট বাল্বের উজ্জল আলোর নীচে সাজিয়ে রাখা ডাইনিং টেবিল। বড় বড় মাছের টুকরো। তাজা মাছ। সাথে দু’তিন জন বাঙ্গালি গেস্ট। যারা আমাকে গত ক্রিসমাসে আস্ত টার্কির রৌস্ট খাইয়েছিলো।

ফ্লাক্স থেকে কফি ঢালল পল। প্রিয় ড্রিঙ্ক কেপচিনো।
শান্ত স্থির লেইক। ঝিরি ঝিরি বইছে হাওয়া। মৃদু আন্দোলিত হচ্ছে লেইকের পানি। নিঃশঙ্ক চিত্তে সাতার কাটছে বড় বড় সোয়ান। সাথে আছে এদের চে’ আকারে ছোট কিছু পাতিহাস। আরও আছে নাম না জানা অনেক জাতের হাঁস। মনের আনন্দে ভাসছে। ডুব দিয়ে পানির নীচে গিয়ে খাবার খুঁজছে। মাঝে মাঝে এদের ডানা ঝাপ্টানোর শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। অন্যান্য ঝোপের আড়ালে যারা ছিপ ফেলে বসে আছে তারাও কোন শব্দ করছে না। অপেক্ষা করছে চুপচাপ। মাঝে মধ্যে কৌল্ড ড্রিংক্স বা চা-কফি খাচ্ছে। কিছু ফ্ল্যামিংগো উড়ছে আকাশে। গাছের ডালে বসছে। আবার উড়ে যাচ্ছে। তবে পানিতে নামছে না। এরা সামুদ্রিক পাখি। হ্রদের পানিতে নামে না।

নড়ে উঠলো পলের ফাতনা। খাড়া হয়ে একটু দেবে গেল পানির নিচে। ঢিলেঢালাভাবে বসে ছিলো এতক্ষন ; শিরদাঁড়া শক্ত করে হাতে ছিপ নিল ইঞ্জিনিয়ার। না, আর কোন সাড়া নেই।
মৃদু শব্দে বিরক্তি প্রকাশ করল শিকারি পল। টোপটা আলগোছে খোলে নিয়ে গেছে মাছ। বরশী ছোয়নি। নিশ্চয়ই ঈল হবে বেটা। কারণ কার্প এত চালাক না।

কোন নোটিশ দেয়নি কেউ। আকাশ ভেঙ্গে পড়ল হ্রদের পানিতে। দু’দল হাসের মধ্যে ভয়ংকর যুদ্ধ বেঁধে গেছে। একটি সোয়ান দল ছেড়ে দূরে এসে একাকি একটি মাছ ধরেই ফেলেছিলো। কাছাকাছি থাকা কয়েকটি পাতিহাস তার থেকে এটা চিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে। ব্যাস। লেইকের রাজা সোয়ান কিছুতেই মেনে নেয়নি এই অপমান। পাতিহাসের পালের মধ্যে ঢুকে পাল্টা আক্রমণ চালায় সে। একা। মাছ তার চাই। দূরে থাকা অন্যান্য পাতিহাস জাতভাইয়ের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। যুদ্ধবিমানের মতো ফ্লাই করে তারা। পানিতে ডানা ঝাপ্টিয়ে মুহূর্তে পৌঁছে যায় অকুস্থলে। বেসামাল হয়ে পড়ল শাদা ধবধবে সোয়ান। আকার এবং শক্তিতে বড় হলেও প্রতিপক্ষ সংখ্যায় অনেক। সে আউট নাম্বারড হয়ে গেছে।

এতক্ষনে অন্যান্য সোয়ান ও দেখতে পেয়েছে ঘটনাটা। পাতিহাসের মাঝখানে একাকি একটা সোয়ানকে আক্রান্ত হতে দেখে যা বুঝার বুঝে গেছে তারা। লেইকের এই সাইডে থাকা সবক’টি রাজহাঁস ঘুরে গেল যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে। তবে দৌরাচ্ছে না তারা। টার্গেট নির্দিষ্ট করে ঠাণ্ডা মাথায় এগুচ্ছে ঝটলার দিকে। যেন রণাঙ্গনে যাচ্ছে যুদ্ধ জাহাজ । তারা জানে এই পাতিহাসগুলি হচ্ছে লেইকের পাতিমাস্তান। একাকি একটা সোয়ানকে পেয়েও কিছুই করতে পারবে না।


ছোটখাট হাসগুলি ইতিমধ্যে বুঝে গেছে এখানে বেশিক্ষন যুদ্ধ করে ঠিক হবে না। তাছাড়া যা মাছ নিয়ে যুদ্ধ বেঁধেছিল সেটা এখন কোথায় কে জানে?! রনেভংগ দিল তারা। অন্যান্য রাজহাঁস পৌছানোর আগেই কোন এক অদৃশ্য নির্দেশে সবাই এক সাথে ডুব দিল। মুহূর্তেই নাই হয়ে গেল গোটা ঝাঁক । একাকী ভাসছে আক্রান্ত সোয়ান। কিছুক্ষণ পর পচিশ ত্রিশটা হাঁস ভেসে উঠলো। তবে এক দিকে না। পচিশ ত্রিশটা হাঁস ভেসে উঠেছে পচিশ ত্রিশ দিকে। রাজহাঁসগুলোর কোনোভাবেই এদেরকে আর ধরতে পারবে না। যেমন হটাৎ করেই শুরু হয়েছিলো ঝগড়া তেমন হটাৎ করেই নীরব হয়ে গেলো সবকিছু।

শান্ত স্থির লেইক। ঝিরিঝিরি বইছে হাওয়া। মৃদু আন্দোলিত হচ্ছে লেইকের পানি। নিঃশঙ্ক চিত্তে সাতার কাটছে বড় বড় সোয়ান। সাথে আছে এদের চে’ আকারে ছোট কিছু পাতিহাস। আরও আছে নাম না জানা অনেক জাতের হাঁস। মনের আনন্দে ভাসছে।


পলের বরশী থেকে সেই যে একবার টোপ নিয়ে ভেগেছে এক মাছ আর কোন খবর নেই।
আমার বরশীতেও একবার নাড়াচাড়া করেছে কি জেনো। আবার পোকা গেঁথে ফেলতে হয়েছে। মাছ এখনো ধরা হয় নি। দু’টার সময় ছিপ ফেলেছি আমরা। এখন বাজে প্রায় চারটা। পলের ব্যাগ থেকে বেরুলো এগ এন্ড টুনা স্যান্ডউইচ। সাথে আছে অনিয়ন এন্ড চিজ প্যাস্ট্রি। আর দুই বোতল ওরেঞ্জ জোস। ধন্যবাদ তাকে। সে জানে আমি মুসলিম। উল্টা-পাল্টা কিছু আনেনি। হটডগ বা বিফ বার্গার আনলে মুসলিম খায় না! ওগুলো হালাল না। কিংবা বিয়ার ও চলে না।

ধীরে ধীরে আমার উৎসাহে ভাঁটা পড়তে শুরু করেছে । মাছ আদৌ মিলবে তো। পাঁচটা বেজে গেছে। ঠিক ছ’টার সময় এখান থেকে চলে যেতে হবে। আরেক প্রস্থ কফি ঢালা হলো। পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে সূর্য। বাতাসের গতি আরেকটু বেড়েছে। ঠন্ডা লাগছে। হাত পায়ে ব্যাথা করতে শুরু করছে।

ঘাসের উপর দিয়ে কোন কিছু টেনে নেয়ার শব্দ হচ্ছে কোথায় যেন। অর্থহীন লাগছে সবকিছু।
বিদ্যুৎ খেলে গেলো যেন পলের শরীরে। শিকারি বাঘের ক্ষিপ্রতায় লাফ দিল সাবেক ইঞ্জিনিয়ার। ঝাপিয়ে পড়ে টেনে নিল আমার সামনে পড়ে থাকা ছিপ। বরশী গিলেছে মাছ! টোপ খেতে গিয়ে ফাঁদে আটকা পড়েছে। কি টেইস্টি পোকা। খেয়েদেয়ে নিশ্চিন্ত মনে চলে যেতে চাইছিল। কিন্তু তার সাথে চলতে শুরু করেছে ফিশিং লাইন। ফিশিং লাইন জড়ানো ছিলো ছিপের আগায়। টান খেয়ে চলতে শুরু করে ছিপ। ছিপের গোঁড়া ছিলো ঘাসের উপরে; আমার সামনে। টান খেয়ে নেমে যাচ্ছিলো পানিতে। দেখতে পায় ব্যান্টলির মালিক। অপেক্ষা করতে করতে ত্যাক্ত হয়ে যাওয়ায় তেমন কিছুই বুঝিনি আমি। কিন্তু চোখ এড়ায়নি প্রফেশনাল শিকারির। ছিপ টেনে ধরতেই শুরু হয় স্ট্রাগলিং। শক্তিশালী মাছ কিছুতেই আত্মসমর্পণ করবে না। আর একে ধরতে না পারলে আজকের অভিযান-ই বৃথা।

টান খেয়ে ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো হয়ে গেছে ছিপ। অনেক বড় মাছ। কিছুতেই বাগে আসতে চাচ্ছে না। অনেকক্ষণ খেললো । ঘেমে নেয়ে উঠছে পল। এক চিপে দুইজনে ধরে টানাটানি করা যায় না। নিয়ম নেই। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। উৎসুক দর্শক।
এক সময় হাল ছেড়ে দিলো বেচারা জলদানো।। ভেসে উঠলো পানির উপরে। হ্যাঁ বিশাল এক কার্প। দৌড়ে গিয়ে নিয়ে এলাম মাছ ধরার জাল। কাঁদায় নেমে জাল বন্দি করলাম। এই সেই তাজা মাছ! যার স্বপ্ন দেখেছি গত পনেরটা দিন। তীরে উঠানো হলো আমাদের শিকার। কিছুক্ষণ খাবি খেলো। যাতে মরে না যায় এ জন্য প্রচুর পানিঢালা হলো। পল গিয়ে নিয়ে এল বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। ওজন নেয়া হলো। মাপা হলো দৈর্ঘ। তারপর কিছুক্ষণ কোলে নিয়ে আদর করল মাছটাকে। তুলা হলো অনেকগুলো ছবি। নবজাতক সন্তানকে কোলে নিয়ে গর্বিত পিতা যে পোজ দেয় সেই পোজ দিল পল।

আরো কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে আদর করার পর মাছটাকে কোলে করে নেমে গেল পানিতে।
ধড়াস ক'রে একটা বাড়ি খেলো হৃৎপিণ্ড।
চিৎকার দিলাম। হেই পল করছ কি?! ছুটে যাবে তো। পানির নাগাল পেলে এর শক্তি বেড়ে যাবে। পিছলে যেতে পারে এতবড় মাছটা।

নামতেই থাকল পল। জেনো শুনতেই পায়নি কি বলছি। কোমর পানিতে নেমে তীরের দিকে ঘুরে থাকালো। শান্ত কন্ঠে বললঃ
: একে ছেড়ে দিতে হবে না? যেন অবাক হয়েছে ।
: ছেড়ে দিবে?! :O
বিস্ময়ে হা হয়ে গেলাম। বলে কি রিটায়ার্ড ইঞ্জিনিয়ার?!
দু’জন মানুষ সারাদিন এত কষ্ট করে ধরলাম আর সে কি না একে ছেড়ে দিতে পানিতে নেমে গেছে।
: হ্যাঁ! মাছ শিকার তো হলো। মাছ শিকারে এসেছিলাম শিকার করলাম। এবার পানির মাছ পানিতে চলে যাবে।
: সে কি?! সারদিন কি তাহলে ভূতের বেগার খাটলাম?!
: মাছ তো আর আমাদের সাথে থাকতে পারবে না। মুছকি হেসে; যুক্তি দিলো রিটায়ার্ড ইঞ্জিনিয়ার ।
আর এতবড় মাছ রাখার জন্য একুরিয়ামও আমাদের নেই। তোমার ঘরেও নেই আমার ঘরেও নেই। অতএব সে চলে যাবে পানিতে যেখানে সে সুখে থাকবে আর আমরা চলে যাব হিটারের আরামদায়ক উষ্ণতায়, আমাদের ঘরে। প্রয়োজনে কালকে এসে একে আবার ধরবো।
কয় কি?! এতো সত্যি সত্যি পাগলের পাল্লায় পড়েছি। আগে তো কখনো এই লক্ষণ দেখিনি।
তবে যুক্তি খণ্ডন করার কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে, দাঁড়িয়ে রইলাম কিনারে।

মাছটাকে কোলে নিয়ে পানিতে নেমেছে শিকারি। মানুষ যেভাবে ছোট বাচ্চাদেরকে সাতারকাটা শিখায় সেভাবে তাকে পানির উপরে ভাসিয়ে রাখল কিছুক্ষণ। পানির নাগাল পেয়েই দৌড় দিলনা কার্প। তর্জনী দিয়ে ধীরে; অতি ধীরে তার পেটের নীচ সঞ্চালন করল ইঞ্জিনিয়ার। আরাম পেয়ে নড়ছে না তার শিকার।
ফিসফিস করে কিছুক্ষণ কথা বলল মাছের সাথে পল। হয়ত ক্ষমাটামা চাইল। সরি মিস্টার ফিশ... উই ডু অ্যাপলযাইজ ফ' আওয়া' মিস ডিড... প্লিজ ফ'গিভাছ।


তারপর পেটের নীচ থেকে সরিয়ে নিল হাত। ভর করে থাকার মতো কোন কিছু না পেয়ে সামান্য একটু লেজ নাড়ল জলজ প্রাণীটা । হয়ত ধন্যবাদ দিলো। বাগে পেয়েও তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। হ্রদের গভীরে রওয়ানা দিল কার্প।

স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছি সোয়ান লেইকের পারে। ছয়টা বেজে গেছে। অন্ধকার নেমে আসছে। জোর বাতাস ছেড়েছে। রৌদ্রকরোজ্জল দিনের পূর্বাভাষ কাজ দেয়নি। আবহাওয়া রুপ পাল্টাচ্ছে। ঠান্ডা বাতাস ঝাপটা মারছে নাকে মুখে। ঝিরঝির বৃস্টি নামছে । জমে গেছে দু’কান। খেয়াল নেই সেদিকে।

চোখের সামনে ভাসছে বাংলাদেশি শিম, পালংশাক। সুস্বাদু সবজি লিক, পুঁই ডাঁটার মতো দেখতে সবুজ রঙয়ের এস্পেরাগাস। ফ্লুরোসেন্ট বাল্বের উজ্জল আলোর নীচে সাজিয়ে রাখা ডাইনিং টেবিল। বড় বড় মাছের টুকরো। তাজা মাছ। সাথে দু’তিন জন বাঙ্গালি গেস্ট। যারা আমাকে গত ক্রিসমাসে আস্ত টার্কির রৌস্ট খাইয়েছিলো।


© and written by Baab Ul Habib

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৮ ভোর ৫:৩৩
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×