....প্রায় দুই সপ্তাহ হলো ছেলে তার মায়ের সাথে নানার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে।.... মনে হচ্ছে যেন অনেকগুলো বছর কেটে গেছে।.... যেন আজ কয়েক বছর হলো ছেলের সাথে দেখা নেই আমার....। ....রাতে বাসায় ফিরে সময় কাটে না। রুমের ভেতর পায়চারি করি.... বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বইগুলোর পাতা উল্টাতে উল্টাতে ফজর হয়ে আসে।.....
....সারা দিনের ক্লান্ত দেহ নিয়ে রাতে যখন বাসায় ফিরতাম, ছেলে দৌড়ে এসে কোলে উঠতো। খিল খিল করে হাসতো।...... রাত বারোটা অবধি জেগে থাকতো আমার প্রতিক্ষায়।.... কখনও কখনও অপেক্ষা করতে করতে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়তো।..... আমি ফিরে ঘুমন্ত কপালে চুমু খেতাম।
ছেলের মা রাগ করে বলতো- থাক হইছে আর আদর করতে হবে না!
বুকের গভীর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতো....।
...মোবাইলের গ্যালারিতে থাকা ছবিগুলো বার বার ঘেটে ঘেটে দেখছি। চোখের পাতা ভিজে ওঠছে।....একাকি বোধ করছি খুব। দারুণ একাকি....।
.......জানি না কী করে আমাদের প্রবাসি ভাইয়েরা তাদের আদরের ছেলে মেয়েকে রেখে বছরের পর বছর পরবাসে জীবিকার তাগিদে পরে থাকেন । জানি নাহ......। মালয়েশিয়ায় কিছু সময়ের জন্য এক শ্রমিক ভাইয়ের মেসে উঠেছিলাম।..... সেখানে দেখলাম- সবাই তাদের পুত্র-কণ্যার ছবি লেমিনেটিং করে বিছানার পাশের দেয়ালে আঠালো টেপ দিয়ে আটকে রেখেছেন। ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে এক অব্যক্ত হাহাকার নাড়া দিয়ে ওঠে বুকের মাঝারে...। আহা রে জীবন! আহা রে ভালোবাসা!....
....কেউ কেউ বললেন, ছোট্ট মেয়েকে কোলে রেখে গেছেন। সেই মেয়ে বড় হয়েছে। বিয়ে হয়েছে একদিন।.... কিন্তু এত এত বছরে একটি বারের জন্যও আদরের মেয়েকে ছুঁয়ে দেখার ভাগ্য মেলে নি তার।.... একবার দেশে আসতে-যেতে সবকিছু মিলিয়ে অনেক খরচ-পাতির বিষয়...।... নতুবা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বহু আগে।.... লুকিয়ে কাজ করছেন। একবার দেশে ফিরে আসলে হয়তো যাবার সুযোগ মিলবে না আর।....
...... আমি জানি আমাদের পিতারাও ঠিক এমনি ভাবেই আমাদের জন্য হাহাকার ভরা ভালোবাসা অনুভব করেছেন এবং করছেন এখনও...... .