সারা শহরে একটা উৎসবের আমেজ ছিল আজ। ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এসেছিলেন...। পুরো শহর তাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল সারাদিন। পুরো শহর বললে ভুল হবে। বলতে হবে পুরো দেশই ব্যস্ত ছিল এক রকম।
বাংলাদেশের উন্নয়নের দারুণ প্রশংসা করে দুই দু'বার টুইট করেছেন জনাব কেরি।
বাংলাদেশের আসাধারণ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মতো তিনিও সন্তুষ্ট ও উচ্ছ্বাসিত..।
আমরা সবাই যখন জনাব কেরি সাহেবকে নিয়ে ব্যস্ত....। তার টুইট বার্তা নিয়ে আনন্দে অভিভূত,... ঠিক তখনই বুক ফাঁটা আর্তনাদে ফেঁটে পড়ছিলেন চাঁদপুরের মধ্য বাগাদী গ্রামের শায়লা বেগম।
তার চিৎকার ও কান্নার শব্দ ভারী করে তুলছিল বাগাদীর আকাশ-বাতাস। কেঁপে কেঁপে উঠছিলো কলা গাছের শুকনো পাতাগুলো। তাপ মরে আসছিল ভাদ্রের প্রখর রোদেরও...
পরীক্ষার ফি বাবদ বকেয়া থাকা মাত্র ৮০টি টাকার জন্য শিক্ষকের করা অপমান সহ্য করতে না পেরে সকালে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করে শায়লা বেগমের ১৪ বছরের মেয়ে সাথী আক্তার।
বাগাদী গণি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সাথী আক্তার।
একদিন উন্নয়নের সর্বোচ্চ শিখড়ে পৌঁছবে এই দেশ। দেশে আরো অনেক অনেক উন্নয়ন হবে। আমাদের এই পোড়া শহর ফ্লাই ওভারে ওভারে ছেয়ে যাবে। প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর বিশাল আকারের সেতু হবে। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে। কুয়াকাটায় নতুন বন্দর হবে। নতুন এয়ারপোর্ট হবে। পূর্বাচলে একশ' তলা বিল্ডিং হবে। শহরের রাস্তাগুলোতে এয়ার কন্ডিশন বাস চলবে। মেট্র রেল হবে। কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন-ভাতাদি বাড়বে....।
দেশ একদিন সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া হবে নিশ্চিত।
কিন্তু.... সাথী আক্তার আর ফিরে আসবে না.....। সে চলে গেছে ঐ আকাশে, আমাদের এই উন্নয়নের বুকে কষে একটা লাথি মেরে সে চলে গেছে চির তরে...
ভালো থাকিস সাথী। ভালো থাকিস বোন আমার....উন্নয়নের নিচে চাপা পড়া তোর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি....
সাথী আক্তার
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:৫৯