somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামী আইন : প্রসঙ্গ বাল্যবিবাহ ১

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূচনা কথা

বিবাহ বিধিবদ্ধ দাম্পত্য জীবন বিনির্মাণের প্রধানতম সূত্র। এটি নারী-পুরুষের মধ্যকার সবচেয়ে প্রাচীনতম বন্ধন। এ বন্ধন সূত্রেই মানুষ আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে থাকে; সদ্যভূমিষ্ট মানবশিশুটি লাভ করে বৈধতার স্বীকৃত অধিকার। মানবীয় জীবন-ধারার সূচনাকাল থেকেই এ সূত্রটির কার্যকারিতা চিরস্বীকৃত হয়ে আসছে। আল্লাহপ্রদত্ত এ বিবাহ নীতিকে কেন্দ্র করেই এ ধরাধামে মানবীয় জীবনপ্রণালী সূচিত হয়। কালে কালে মানবীয় প্রথা-আদর্শে নানা আঙ্গিকে উত্থান পতন ঘটলেও বিবাহ ধারণাটি এখনো অক্ষুণœ রয়েছে বেশ শক্তিমত্তার সাথেই। তাই পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মেই বিবাহ প্রক্রিয়াটিকে বেশ ভক্তি-শ্রদ্ধার সাথে চর্চা করা হয়।
যে পবিত্র সত্তা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই তার সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বৈবাহিক আইন প্রণয়ন করেছেন। এ আইনের মূলধারাগুলো কুরআন হাদীসের ছত্রে ছত্রে বেশ পরিচ্ছন্নভাবেই বিবৃত হয়েছে। হাদীস-ফিকহের গ্রন্থগুলোতে এর প্রয়োজনীয় উপধারাগুলোও যথাযথভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এরপর আর তাতে সংযোজন বিয়োজনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। ব্যক্তিবিশেষের জন্য সময় বিবেচনায় এ জাতীয় আইনগুলো ভিন্ন আঙ্গিকেও উপস্থাপিত হতে পারে। এর জন্যও সংশ্লিষ্ট আইনে ভিন্ন ভিন্ন পরিচ্ছেদ ও উপধারা রচিত হয়েছে।
ইসলামী আইনের কোথাও বিবাহ প্রথাটি বয়সসাপেক্ষ বিবেচনায় উপস্থাপিত হয়নি। সেখানে এর জন্য সময়-কালও বেধে দেয়া হয়নি। যে কোনো বয়সে বিবাহ চুক্তিটি হয়ে যেতে পারে। তবে দাম্পত্য জীবন সূচনার জন্য সাবালকত্বসহ আবশ্যিক সক্ষমতার বিধান সেখানে আরোপিত হয়েছে। যৌনজীবন যাপনের ক্ষেত্রে প্রকৃতিগতভাবেই বয়সকেন্দ্রিক একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বয়সকেন্দ্রিক সে সাবালকত্বের সীমবদ্ধতা ছাপিয়ে নতুন কোনো সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সুযোগ ইসলামী আইনে রাখা হয়নি। ইদানিং মানবরচিত আইনের সূত্র ধরে ‘বাল্যবিবাহ’ যুক্ত শব্দটির বেশ প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ নিবন্ধে ইসলামী আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বাল্যবিবাহ বিষয়ে বিস্তৃত একটি আলোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

বাল্যবিবাহ পরিচিতি

বাল্য অর্থ ছেলেবেলা, বালকবয়স, ষোল বৎসর বয়স পর্যন্ত জীবনকাল। বাল্যবিবাহ অর্থ বাল্যকালে বা অপরিণত বয়সে বিবাহ। (সংসদ বাংলা অভিধান; পৃষ্ঠা ৪২৫)
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৩ (খসড়া) ২ নং ধারার (গ) য়ে বলা হয়েছে ‘বাল্যবিবাহ’ অর্থ সেই বিবাহ যাহাতে সম্পর্ক স্থাপনকারী পক্ষদ্বয়ের যে কোনো একজন নাবালক।

নাবালকত্বের মেয়াদ

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯ (১৯২৯ সালের ১৯নং আইন) এর ২নং ধারার ‘ঘ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নাবালক’ (Minor) বলতে পুরুষের ক্ষেত্রে একুশ বৎসরের কম এবং নারীর ক্ষেত্রে আঠার বৎসরের কম যে কোনো ব্যক্তিকে বুঝাবে।’ একই কথা বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৩ (খসড়া) ২নং ধারার (খ) য়ে বলা হয়েছে।
তবে ইসলামী আইন অনুসারে, একজন বালক বা বালিকা যখনই প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে তখনই তার নাবালকত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ((Child-Marriage-Prevention-Law-2013, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স ও মুসলিম আইন ৪১৪)

শিশু শব্দের বিচিত্র রূপ

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৩ (খসড়া) তে বলা হয়েছে, ‘শিশু’ (ঈযরষফ) অর্থ অনুর্ধ্ব আঠার বৎসরের কম বয়সী কোন ব্যক্তি। ‘শিশু বিবাহ’ (Child marriage) অর্থ সেই বিবাহ যাহাতে সম্পর্ক স্থাপনকারী পক্ষদ্বয়ের যে কোন একজন শিশু। (Child-Marriage-Prevention-Law-2013)
সেভ দ্য চিলড্রেন থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশে কর্মজীবী শিশু - ম্যাথিউ এ কিং ও সহযোগী রায়ান এর নক্স বইটিতে ১৯৯৬ সনে ব্লাঞ্চেট পরিচালিত গবেষণায় শিশুর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- যে মানব সন্তানের কিছু বোঝার ক্ষমতা নেই তাকে বলা হয় শিশু।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে ১৮ বছরের কম বয়সী যে কোনো মানব সন্তানকেই শিশু বলা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় শিশু নীতি ১৮ বছরের নিচের যে কোনো বালক-বালিকাকে শিশু বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাবালকত্ব আইনে বেশ স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সাবালকত্বের বয়স শুরু হবে ১৮ বছর থেকে। শিশুর সংজ্ঞা দু’টির মাঝে সমন্বয় সাধনের উদ্দেশে ‘শিশু এবং অল্পবয়সী’ শব্দটির আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত কিছু প্রকল্পে শিশু বয়সের নিয়ম মেনে চললেও অধিকাংশ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে শিশু বয়সের সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম মানা হয় না। বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থায় শিশু অভিধাটি বিচিত্ররূপে উপস্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন আইনে শিশুর বয়সকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

বাংলাদেশে প্রযোজ্য প্রচলিত বিভিন্ন আইনে শিশুর সংজ্ঞা

১. চাকুরীতে নিয়োগের অনুমতি প্রসঙ্গে- (কারাখানা আইন-১৯৬৫; দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন-১৯৬৫; শিশু শ্রমিক নিয়োগ আইন-১৯৩৮।) বয়সসীমা ১২ থেকে ২১ বছরের মধ্যে হলে শিশু হিসেবে গণ্য।
২. বিবাহের ক্ষেত্রে বয়সসীমা মেয়েদের জন্য ১৮ বছর ও ছেলেদের জন্য ২১ বছর।
৩. তামাক, সুরা বা অন্য কোন মারাত্মক ড্রাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১৬ বছর।
৪. বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বশেষ বয়স ১০ বছর।
৫. সামরিক বাহিনীতে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণের বয়স ১৬ বছর (অভিভাবকের সম্মতিতে)।
৬. ফৌজদারী দায়-দায়িত্বের ক্ষেত্রে ১২ বছর থেকে সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব বর্তাবে এবং ফৌজদারী আইন ভঙ্গ করা সম্পর্কিত খ-নযোগ্য আনুমানিক বয়স সীমা ৭ থেকে ১১ বছর।
৭. গ্রেফতার, আটক বা কারারুদ্ধের মাধ্যমে ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা বিষয়ে (ফৌজদারী দায়-দায়িত্বের সাথে সম্পর্কিত) নির্ধারিত কোন বয়স নেই।
৮. মৃত্যুদ-ের ক্ষেত্রে ১৭ বছর; ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদ- ৭ বছর; তবে শর্ত থাকে যে বয়সের অনুমান সম্পর্কে কোন যুক্তি খ-ন করা হয়নি।
৯. আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য যদিও কোন সর্বনি¤œ বয়স নির্ধারিত নেই; তবে সাক্ষীকে অবশ্যই প্রশ্ন বোঝা এবং উত্তর দেয়ার মতো যথেষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন ও সচেতন হতে হবে।
১০. আদালতে অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার পাবার ক্ষেত্রে (অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া) বয়সসীমা ১৮ বছর।
১১. যুদ্ধক্ষেত্রে নন-কমিশন অফিসারের জন্য ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর এবং কমিশন্ড অফিসারের জন্য দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
(সূত্র : First periodic report of the Government of Bangladesh under the Convention on the Rights of the Child [Draft]; Ministry of Women and Children Affairs; Government of People's Republic of Bangladesh; Dhaka, November-2000)
এর বাইরেও বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু কিছু আইনে শিশু হিসেবে কাদেরকে অভিহিত করা যাবে, সে সম্পর্কিত বিধানের উল্লেখ রয়েছে।
* চুক্তি আইনে বলা হয়েছে যে, ১৮ বছর বয়সের কম কোন ব্যক্তি চুক্তি করতে পারে না। এই আইনে ১৮ বছরের কম বয়সের মানব সন্তানকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
* নিম্নতম মজুরী আইনে ১৮ বছর পূর্ণ না হলে সে শিশু হিসেবে গণ্য হয়।
* খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের তালাক আইনে নাবালক নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুত্রের ১৬ বছর এবং কন্যার ১৩ বছরের কম হলে নাবালক বলা হয়েছে।
* খনি আইনে ১৫ বছর পূর্ণ না হলে তাকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। শিশুকে খনিতে কাজে নেয়া যায় না।
* ১৯৩৯ সালের মোটর গাড়ী আইনে ১৮ বছরের কম বয়সের ব্যক্তিকে গাড়ী এবং ২০ বছরের কম বয়সের ব্যক্তিকে বড় গাড়ী চালানোর অনুমতি দেয়া হয় না। (তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট)
কথা হলো শিশু শব্দটিকে নিয়ে এত টানা হেচড়া এত পানি ঘোলা করার কী স্বার্থকতা থাকতে পারে।

সংজ্ঞাগত বিপত্তি (!)

একটি প্রশ্ন, বালক নাবালক শব্দ দু’টি কি বিপরীতার্থক শব্দ? বাহ্য দৃষ্টিতে শব্দদু’টিকে বিপরীতার্থক বলেই মনে হবে। কারণ মূল শব্দ হলো, বালক। এর আদিতে না উপসর্গ যুক্ত হয়ে বিপরীত অর্থ প্রকাশ করছে। যদিও এটা ফারসী ব্যাকরণিক নীতি; কিন্তু বাংলা ব্যাকারণেও এ নীতির সিদ্ধতা বিদ্যমান। এ নীতি অনুসারে শব্দদু’টির মূল ধাতু ভাষাগত দৃষ্টিকোণ থেকে এক ও অভিন্ন। আর তা হলো, আরবী বা-লা-গা (بلغ-যৌবনে পদার্পণ করা)। আর এ ধাতুমূল থেকে গঠিত হয়েছে কর্তাবিশেষ্য বালিগ। আরবী এ বালিগ শব্দটিকে ফারসী ব্যাকরণে আদিতে না উপসর্গ যুক্ত করে বিপরীতার্থক শব্দ তৈরি করা হয়েছে। ফারসী এবং উর্দু ভাষাতে সে বালিগ শব্দটি বালেগ নাবালেগ শব্দে রূপান্তরিত হয়েছে। সেই ফারসী উর্দুর নাবালেগ বাংলায় এসে নাবালক হয়েছে। নাবালক শব্দের এ রূপান্তর প্রক্রিয়া বাংলা ব্যাকরণে স্বীকৃত। সংসদ এবং বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে এ রূপান্তর ধারাকে স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু বালক শব্দটির ক্ষেত্রে বাংলা অভিধানবেত্তারা এ রূপান্তর ধারাকে স্বীকার করতে রাজি নন। তারা বলেন, সংস্কৃত বাল শব্দান্তে ক যুক্ত হয়ে বালক শব্দের রূপ পরিগ্রহ করেছে।
আমরা যদি ব্যুৎপত্তিগত প্রথম মতটি গ্রহণ করি তবে বালক নাবালকের আইন ও অভিধানগত সংজ্ঞায় বড় ধরনের অসঙ্গতি ও বিপত্তি দৃষ্টিগোচর হবে। কারণ অভিধানে বালকের অর্থ করা হয়েছে ‘ষোল বৎসরের অনধিক ব্যক্তি’। অন্য দিকে আইনে নাবালকের অর্থ করা হয়েছে নারী পুরুষ ভেদে ১৮ এবং ১৯ বছরের কম বয়স্ক ব্যক্তি। অথচ প্রথম ব্যুৎপত্তির দিক থেকে বালক অর্থ যৌবনপ্রাপ্ত আর নাবালক অর্থ অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এ দৃষ্টিকোণ থেকে দশ বছরের একটি ছেলে এক দিক থেকে বালক এবং নাবালকও। এটা তো বড় ধরনের অসঙ্গতি। তবে যদি আমরা বাংলা আভিধানিক ব্যুৎপত্তির দিকটি আমলে নিই তবে অসঙ্গতির পরিমাণ কমে আসবে। কারণ তখন বালক নাবালক শব্দ দু’টি সমার্থবোধক শব্দে পরিণত হবে। তবে বিপত্তি খানিকটা থেকেই যাবে। কারণ বাংলা ব্যাকরণগুলোতে বাল্য বা বালকের অর্থ করা হয়েছে ‘ষোল বৎসরের অনধিক ব্যক্তি’। আর বালিকার অর্থ করা হয়েছে ‘অনধিক ষোল বৎসরের নারী’। সুতরাং যদি ছেলে এবং মেয়ের বয়স ১৭ হয় তাহলে আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক বাল্যবিবাহের আওতায় পড়বে না। অথচ সংসদীয় আইনে তা সম্পূর্ণরূপে বাল্যবিবাহের আওতাভুক্ত। এমন কি যদি মেয়ের বয়স ১৮ হয় এবং ছেলের বয়স ২০ হয় কিংবা মেয়ের বয়স ১৭ এবং ছেলের বয়স ২১ হয় তখনও এ বিবাহ সংসদীয় আইনের খড়গ থেকে মুক্ত হবে না। তো এক্ষেত্রে সংসদীয় আইন আর ভাষা আইনে সংঘর্ষ বেধে যাচ্ছে। এক আইনে একটার বৈধতা দিলে অন্য আইনে সেটাকে আইনত দ-নীয় বলে ঘোষণা দিচ্ছে। এভাবে এক আইন দ্বারা অন্য আইনকে নিয়ন্ত্রণ করার আইনগত বৈধতা কতটুকু- এ বিষয়টিও একটি পর্যালোচনাসাপেক্ষ বিষয়।
অন্যদিকে নাবালক শব্দটির আভিধানিক এবং ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো অপ্রাপ্ত বয়স্ক, বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করে নি এমন বালক। কিন্তু বাল্যবিবাহ আইনে শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত এবং আভিধানিক অর্থের দিকে লক্ষ্যই করা হয়নি। সেখানে নাবালক শব্দের এমন একটি সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে যার সাথে শব্দটির সামান্যতম সংশ্লিষ্টতা নেই। কারণ পৃথিবীতে সম্ভবত এমন কোনো মেয়ে সন্তান নেই যে ১৮ বছরের পূর্বে বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করেনি। তেমনিভাবে এমন কোনো ছেলে সন্তানও খুঁজে পাওয়া যাবে না যে ২১ বছরের আগে যৌবনে পদার্পণ করেনি। সাধারণত মেয়েরা দশ বারো বছর বয়সে আর ছেলেরা চৌদ্দ পনের বছর বয়সে প্রাপ্তবয়সে উপনীত হয়ে যায়। শব্দটির উপরে আইনী খড়গ না চালিয়ে বছর বিবেচনায়ই আইনটি প্রণয়ন করা যেত। তাহলে শব্দগত এবং সংজ্ঞাগত এত বিপত্তির জঞ্জাল সৃষ্টি হতো না। তাছাড়া এ আইনটি করার ফলে ভাষানীতির মাঝে বড় ধরনের একটি অবাঞ্ছিত দেয়াল দাঁড়িয়ে গেল। কারণ যেসব ছেলে মেয়েগুলো এখনো বয়ঃসন্ধিকাল অতক্রম করে নি মানুষ তাদেরকে কী অভিধায় অভিহিত করবে? তাদের জন্য তো আর আলাদা কোনো শব্দই অবশিষ্ট নেই। আর বিশ বছর বয়সের আগে বাবা হওয়ার দৃষ্টান্ত এ সমাজে অনেক রয়েছে। বিশেষত বেদে পল্লিতে তো এটা নিতান্তই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তো দেখা যাচ্ছে, বাবা, মা এবং ছেলে সবাই শিশু। একটি পরিবারের সবাই শিশু। কি হাস্যকার একটি ব্যাপার! সংসদীয় এ আইনের ফলে এখন শৈশব, কৈশোর এবং যৌবন বলে আলাদা কোনো স্মৃতিময় শব্দের অস্তিত্ব থাকবে না। এখন যেটা শৈশব সেটাই যৌবন, যেটা কৈশোর সেটাই শৈশব। অথচ বাংলাদেশে ছেলেবেলা বা মেয়েবেলাকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করার নীতি আবহমান কাল থেকেই প্রচলিত। ৫ বছরের নিচে শৈশবকাল, ৬ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বাল্যকাল এবং ১১ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত কৈশোরকাল। (বাংলাপিডিয়া ১৩/৬২)
শৈশব বললে নিষ্পাপ শিশুর মুখের একটি হাসির রেখা ফুটে উঠত। এখন তা আর ফুটে উঠবে না। এখন নিষ্পাপ শিশুর হাসি বলে কোনো শব্দের স্বার্থকতা নেই। এখন শিশুটি আর নিষ্পাপ নয় পাপীও হতে পারে। কৈশোর বললে যে দুরন্তপনার একটি স্মৃতিময় চিত্র ফুটে উঠত তাও আর তেমন সুন্দর করে ফুটে উঠবে না। কারণ দোলনার নিষ্পাপ শিশুটি যদি সেকেন্ডের ভিতরে বিশ বছরের ইয়া বড় তাগড়া যুবকে পরিণত হয়ে যেতে পারে তবে কিশোর আর পিছিয়ে থাকবে কেন। কৈশোর তো শৈশবের পরবর্তী ধাপের নাম। এভাবে শব্দ ও শব্দ শিল্পীদের উপর অবিচার করার কোনো মানে হয় না।

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে যখন বৃটিশ প্রশাসনের জগদ্দল পাথর ভারত উপমহাদেশে জেঁকে বসে তখন প্রথম দিকে তারা পূর্ব থেকে চলে আসা মুসলিম আইনের উপর কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করে নি। কিন্তু ধীরে ধীরে মুসলিম আইনের উপর বৃটিশ খড়গ নেমে আসে। মুসলিম আইনের পরিধি সংকীর্ণ হতে থাকে। এমনকি শেষ অবধি ব্যক্তিগত আইনের উপরও বৃটিশ আইনের বিষেল থাবা আঘাত হানে। ফলে বৃটিশ শাসনের অবসানকালে তিনটি ব্যক্তিগত মুসলিম আইন প্রণীত হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯ (ঞযব ঈযরষফ গধৎৎরধমব জবংঃৎধরহঃ অপঃ, ১৯২৯, অপঃ ঘড়. ঢওঢ ড়ভ ১৯২৯)। আইনটি ১ অক্টোবর, ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত হয়। আর ১৯৩০ সনের পহেলা এপ্রিল হতে বলবৎ হয়। এ আইনে ১৪ বছরের নিচের পাত্রী এবং ১৮ বছরের নিচের পাত্রের বিবাহ আইনত দ-নীয় বলে ঘোষণা করা হয়। তবে এর আগে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে সাবালকত্ব আইন নামে একটি আইন পাশ করা হয়েছিল। সে আইনের ৩ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, নাবালকত্বের মেয়াদ পূর্ণ হবে ১৮ বছর বয়সে। তবে যদি কোনো নাবালকের অভিভাবক ও ওই নাবালকের সম্পত্তির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কোর্ট অফ ওয়ার্ডের ওপর ন্যস্ত থাকে তাহলে নাবালকত্বের বয়সসীমা ২১ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হবে। (বাংলাপিডিয়া ৯/৩৩৯, ১১/২৬৫)
বৃটিশ শাসন অবসানের সাথে সাথে তাদের আইন ব্যবস্থারও অবসান হওয়া ছিল বিবেকের একটি অপরিহার্য দাবি। কিন্তু আমাদের প্রচ- আক্ষেপের সাথে প্রত্যক্ষ করতে হয় তার উল্টো চিত্র। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান সরকার একটি ল’ কমিশন গঠন করে। এ কমিশনে উলামায়ে কেরামকে সদস্যভুক্ত করা হয়। এ কমিশনে যখন পারিবারিক আইনের বিষয়াদি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয় তখন উলামায়ে কেরাম পারিবারিক সমস্যার আইনী সমাধানকল্পে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে যুগোপযুগী এবং যুক্তিপূর্ণ কিছু প্রস্তাবনা পেশ করেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ল’ কমিশন এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। পরিবার সম্পর্কিত আইনী বিষয়গুলো এভাবেই অমীমাংসিত থেকে যায়।
এরপর পাকিস্তান সরকার ১৯৫৫ সালে মুসলিম আইন সংশোধনকল্পে (!) ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি ফ্যামিলি কমিশন গঠন করে। ড. খলিফা সুজা উদ্দীনকে এ কমিশনের সভাপতি করা হয়। তার মৃত্যুর পর প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মি. আব্দুর রশীদকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। কমিশন গৃহীতব্য মুসলিম পারিবারিক আইনের ধারাগুলোকে সামনে রেখে প্রস্তুতকৃত কিছু প্রশ্নপত্র সারা দেশে ব্যাপকভাবে প্রচার করে। উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে প্রচারিত এ প্রশ্নপত্রের জবাব লিখে প্রচ- রকমের আপত্তি জানানো হয়। উক্ত কমিশন উলামায়ে কেরামের যুক্তিপূর্ণ জবাব এবং সমালোচনা ও আপত্তির কোনো তোয়াক্কা না করে ১৯৫৬ সনের জুন মাসে রিপোর্ট পেশ করে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইনের সুপারিশ করে। রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর দেশের ধর্মভীরু মুসলিম জনতার পক্ষ থেকে প্রচ- রকমের প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ ব্যাপারটিকে মুলতবী ঘোষণা করে।
কিন্তু ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সেনাপ্রধান আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক আইন জারি হওয়ার সাথে সাথে সমাহিত করা সে প্রস্তাবিত আইনকে উদ্ধার করে তা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুসলিম পারিবারিক আইন সংশোধনের জন্য আইন কমিশনের কিছু সুপারিশ কার্যকর করার ঘোষণা প্রদান করা হয়। মিডিয়ায় চাউর হয়ে যায়, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী মুসলিম পারিবারিক আইন পাশ হতে যাচ্ছে। তখন পাকিস্তানের ১৪ জন খ্যাতিমান আলেম অনুমোদিতব্য এ আইনের উপর একটি পর্যালোচনাপত্র তৈরি করেন এবং তা গভর্নমেন্ট বরাবর পেশ করে প্রতিবাদ জানানো হয়, যেন কুরআন সুন্নাহ বিরোধী এ আইন পাশ না করা হয়। এ পর্যালোচনা প্রতিবেদনটি গ্রহণ করার পরিবর্তে তারা এর প্রচারের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। উপরন্তু তারা কিছু অপরিণামদর্শী আলেমের সহযোগিতায় এ আইনের স্বপক্ষে অযৌক্তিক দলীল-প্রমাণের এক বিশাল স্তুপ তৈরি করে নেয়। ফলে ১৯৬১ সালে জেনারেল আইয়ুব খান উক্ত কমিশনের রিপোর্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশটি ইসলামী আইন (?) হিসেবে জারি করে দেন। যা ১৯৬১ সালের ৮ নং অধ্যাদেশ নামে পরিচিত। এ আইনটি ১৯৬১ সালের ১৫ জুলাই হতে কার্যকর করা হয়। (মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ., জাওয়াহিরুল ফিকহ ৪/২৩৪-৩৬, জাস্টিস মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, হামারে আইলী মাসায়েল ১১-১৪, বাংলাপিডিয়া ৩/৩৮৬, ১১/২৬২, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স ও মুসলিম আইন; পৃষ্ঠা ৯২)
১৯৬১ সালে পাশকৃত মুসলিম পারিবারিক আইনের ১২ নম্বর ধারটি ছিল ১৯২৯ সালের বৃটিশ আইন ‘বাল্যবিাহ নিরোধ আইন ১৯২৯’ এরই নতুন সংস্করণ। এ ধারাটিতে ১৮ বছরের কমবয়সী ছেলে এবং ১৬ বছরে বমবয়সী মেয়ের বিবাহকে আইনত নিষিদ্ধ করা হয়। তবে বাংলাদেশ হওয়ার পর ১৯৮৪ সালের এক সংশোধনী আইনে ২১ বছরের কমবয়সী পুরুষ এবং ১৮ বছরের কমবয়সী মেয়ের বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ ৪/২৬৪, বা.পি. ১৩/৬৪)

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের উদ্দেশ্য

আইনটির উদ্দেশে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এ আইনের উদ্দেশ্য, বিবাহের বৈধতা কিংবা অবৈধতা প্রশ্ন উত্থাপন নয়। ব্যক্তিগত আইনে যদি কোন বিবাহ বৈধ বলে গণ্য অথচ অত্র আইনে প্রতিকূল হলে তা শাস্তিযোগ্য। সেখানে ‘এ আইনে প্রভাবিত বিবাহের বৈধতা’ শিরোনামে বলা হয়েছে ব্যক্তিগত আইনে সম্পাদিত বিবাহ এ আইন দ্বারা প্রভাবিত হবে না। যারা এ বাল্যবিবাহ সম্পাদন করবে তারাই শাস্তি পাবে। আইনটির ৪ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেহ একুশ বৎসর বয়সোর্ধ্ব সাবালক পুরুষ অথবা আঠার বৎসর বয়সোর্ধ্ব সাবালিকা নারী কোন বাল্যবিবাহের চুক্তি করলে, সে একমাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদ- বা একহাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয়বিধ দ-ে দ-িত হবে। (মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স ও মুসলিম আইন ৪১৪)
তবে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৩ (খসড়া) তে শাস্তির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একুশ বৎসরের অধিক বয়স্ক কোন পুরুষ বা আঠার বৎসরের অধিক বয়স্ক নারী কোন শিশু বা নাবালকের সহিত বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি করিলে সেই ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদ- বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-ণীয় হইবে। এছাড়াও সেখানে বাল্যবিবাহ পরিচালনাকারী (কাজী) এবং এর সাথে সম্পৃক্ত পিতা-মাতা বা অভিভাবকের শাস্তি বিধানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ -এর ১২(১)(ক) ধারা অনুসারে একজন নাবালকের বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (প্রাগুক্ত ১০১)
তবে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ’ ২০১৪ শিরোনামের একটি খসড়া আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ থেকে নামিয়ে ১৬ করার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ উদ্যোগ-পরিকল্পনা নানা মহল থেকে তীব্রভাবে সমালোচিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একটি কৌশল অবলম্বন করে। আর তা হলো, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ ই থাকবে। তবে মা-বাবা চাইলে ১৬ বছরেও বিয়ে হতে পারে। (‘সম্পাদকীয়’, আলোকিত বাংলাদেশ; ৮ মার্চ ২০১৫)
বৃটিশরা যে দুষ্ট চিন্তা ও ইসলাম বিদ্বেষ মাথায় নিয়ে মুসলিম পারিবারিক এ আইনটির উপর আইনী খড়গ চালিয়েছিল তার বিষবাষ্প অর্ধশত বছর পরও আমাদের এ দেশীয় মুসলিম (!) আইনবেত্তাদের কলমে উদগীরিত হচ্ছে। একজন আইনবিদ বলছেন,
১৯২৯ সালে প্রণীত এই আইনটির মাধ্যমেই ইংরেজগণ ব্যক্তিগত আইনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সংস্কারমূলক উদ্দেশ্য গ্রহণ করে। মুসলিম সমাজের ক্রমঅবনতির জন্য বাল্যবিবাহ বহুলাংশে দায়ী ছিল। হেদায়া মোতাবেক বিবাহযোগ্য হওয়ার জন্য বালকদের ক্ষেত্রে বারো বৎসর এবং বালিকার ক্ষেত্রে নয় বৎসর সাবালকত্বের বয়স ধরা হইত। ইহার ফলে মুসলিম সমাজে মারাত্মক গোলযোগ ও অপকর্ম দেখা দেয় এবং বিবাহ ইচ্ছুক পক্ষসমূহ ও তাহাদের গুরুজনেরা বাল্যবিবাহের দিকে ঝুঁকিয়া পড়ে। সাবালকত্বের বয়স নির্ধারণ করতঃ বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করিয়া এবং বিধি ভঙ্গের জন্য দ-ের বিধান নিশ্চিত করিয়া বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন বাল্যবিবাহের বিষময় ফল রোধ করে। (মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স ও মুসলিম আইন; পৃষ্ঠা ৮৫)
একটি আইন প্রণয়নের পেছনে কিছু যুক্তির বেসাতি দেখাতে হয়। বৃটিশ প্রশাসন ইসলাম বিদ্বেষ মাথায় রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে যে হাস্যকর যুক্তিগুলো তুলে ধরেছিল সেই যুক্তিগুলোই আমাদের আইনবিদ(!)রা পরিপূর্ণ আস্থার সাথে তুলে ধরছেন। স্বকীয়তাবোধ, আত্মমর্যাদাবোধ সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ জ্ঞানের দৈন্যদশা হলে যে অবস্থা সৃষ্টি হয় তাই অ্যাডভোকেট মহোদয়ের কলমে দৃশ্যমান হলো।

বাল্যবিবাহ : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

বৈজ্ঞানিক এবং চিকিৎসাশাস্ত্র মতে বাল্যবিবাহের প্রকৃত সংজ্ঞা হলো, বয়ঃসন্ধিকালীন বয়সে পদার্পণের পূর্বেই বিবাহের সিঁড়িতে আরোহণ করা। সুতরাং ১৮ বছরের পূর্বকালীন বিবাহকে বাল্যবিবাহ নামে অভিহিত করা বৈজ্ঞানিক এবং শরয়ী নীতিমালা অনুসারে যথার্থ নয়। বিবাহের বিষয়টি বস্তুত সাবালকত্বের সাথে সম্পৃক্ত। সাবালকত্ব এমন একটি আবহ যেখানে মানুষ তার নাবালকত্বের পর্যায় পেরিয়ে সাবালকত্বের বয়সে পদার্পণ করে। আর এ সময়টায় মানুষের মাঝে ফিজিয়োলোজিক্যাল (শরীরবৃত্তিক) এবং সাইক্লোজিক্যাল (মনোবৃত্তিক) পরিবর্তন দেখা দেয়। আর সাবালকত্বের বয়স আন্তর্জাতিকভাবে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে ৯ থেকে ১৬ বছরের মাঝে ওঠানামা করে। (ড. হুসামুদ্দীন আফফানা, আয্যিওয়াজুল মুবকির ১/৪)
ইসলামের দৃষ্টিতে বাল্যবিবাহের দু’টি অর্থ লক্ষগোচর হয়। (১) সংকীর্ণ অর্থ। অর্থাৎ বালক-বালিকা প্রজননক্ষমতা অর্জনের বয়সে কিংবা বয়ঃসন্ধিকাল বয়সে উপনীত হওয়ার পর থেকে বৈবাহিক বয়সের সূচনা হবে। এটি মূলত সাবালকত্ব ও নাবালকত্বের স্বভাবজাত মানদ-। ইসলাম প্রকৃত নাবালকত্বের সীমারেখার উপর কোনোরূপ নিয়ন্ত্রণ বিধি আরোপ করেনি। একজন বালক কিংবা বালিকা যখন প্রজননক্ষমতা অর্জন করবে তখন থেকেই ইসলাম তার উপর সাবালকত্বের যাবতীয় বিধান আরোপ করবে। (২) মুক্ত অর্থ। অর্থাৎ সূচনা বয়স থেকেই নবজাতকের বৈবাহিক বয়সের ধারা সূচিত হবে। তবে ইসলামী শরীয়া আইনে অপরিপক্ব এবং অনুপযোগী বয়সে যৌন জীবন বিধিসম্মত করা হয়নি।
ইমাম ইবনে শুবরুমা, আবু বাকার আসাম্ম এবং উসমান বাত্তী রাহ. প্রমুখের অভিমত হলো, প্রজননক্ষমতা অর্জন তথা প্রাপ্তবয়সে উপনীত হওয়ার পূর্বে বালক-বালিকার বিবাহ বিধিসম্মত নয়। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামী আইনবেত্তাগণ এ অভিমতটিকে বিচ্ছিন্ন, অপ্রণিধানযোগ্য এবং সর্বসম্মত অভিমত পরিপন্থী মত বলে অভিহিত করেছেন। বিচ্ছিন্ন এ আইনী অভিমতটিকে কেন্দ্র করে আরব রাষ্ট্র সিরিয়ায় বিবাহ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। (ড. ওয়াহবাহ যুহাইলী, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ ৭/১৮৩-৮৮)। সর্বসম্মত না হলেও এ আইনী অভিমতটির একটি ভিত্তি রয়েছে। কিন্তু প্রচলিত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটি সর্বসাকুল্যে অনুমাননির্ভর এবং সম্ভাব্য সমস্যা রোধকল্পে প্রণীত। প্রাকৃতিক বিধানের সাথে এর কোনোই সাযুজ্য রাখা হয়নি।

বাল্যবিবাহ বিধানের দালিলিক পর্যালোচনা

পবিত্র কুরআনের ভাষ্য, তোমাদের যে সকল স্ত্রীর আর ঋতুমতী হবার আশা নেই তাদের ইদ্দত সম্বন্ধে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যারা এখনো রজঃস্বলা হয়নি তাদেরও (ইদ্দতকাল হবে তিন মাস)। (‘সূরা তালাক’- ৪)
কুরআনিক ভাষ্যটিতে ঐসব কিশোরীদের ইদ্দতের কথা আলোচিত হয়েছে যারা এখনো রজঃস্বলা বয়সে উপনীত হয়নি। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা, ইদ্দত বিবাহোত্তর ডিভোর্স কিংবা স্বামী মৃত্যুর সাথে সম্পৃক্ত একটি বিষয়। এতে সুষ্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়, কুরআনিক আইনমতে বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বেকার বিবাহ বিধিসম্মত। অথচ বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে নিছক প্রজনন ক্ষমতা অর্জনের পূবকালীন বিবাহই নয়; বরং প্রাপ্তবয়সে উপনীত হওয়ার চার পাঁচ বছরের পরবর্তী বিবাহকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
হাদীসের ভাষ্য, (১) আয়িশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার যখন ছয় বছর বয়স হয় তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে নেন। আর আমার যখন নয় বছর বয়স হয় তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে বাসর যাপন করেন। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৫১৩৪, সহীহ মুসলিম; হা.নং ৩৫৪৫)
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদরের কন্যা ফাতেমা রাযি. কে আলী রাযি. এর সাথে অল্প বয়সে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করেন।
(৩) উমর রাযি. আলী রাযি. এর অল্পবয়সী মেয়ে উম্মে কুলসূম রাযি. এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
(৪) যুবাইর ইবনুল আউয়াম রাযি. এর কন্যা যখন প্রাপ্তবয়সে উপনীত হন তখনই কুদামা ইবনে মাযউন রাযি. তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। (আবু হুসাম তারফাবী, আল-উনফ যিদ্দাল মারআহ ১/৪৯)
(৫) ইবনে ইসহাক সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামা রাযি. এর অল্পবয়স্ক ছেলে সালামার সাথে হামযা রাযি. এর ছোট্ট মেয়েকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দিয়েছিলেন। (আহকামুল কুরআন লিলজাসসাস ২/৩৪৪, মাকালাতুন ফিত তাশাইউ ৪৮/৩৬, আলমাবসূত লিস সারাখসী ৪/২১২)
এছাড়াও বাল্যবিবাহ সম্বন্ধে সাহাবা তাবিয়ীদের আরো অসংখ্য উক্তি ও কর্মপন্থাÑ হাদীস, ফিকহ ও ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হয়েছে।

উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত

ইসলামী শরীয়ার সূচনাকাল থেকে অদ্যাবধি উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, অল্পবয়সী শিশু-কিশোরদের বিবাহ বিধিসম্মত। ইমাম আবু বকর জাসসাস রাহ. সূরা নিসার ৩ নম্বর আয়াতের অধীনে (আর যদি তোমরা ভয় করো যে, পিতৃহীন মেয়েদের অধিকার তোমরা যথাযথভাবে আদায় করতে পারবে না তবে সে সব মেয়েদের মধ্য হতে তোমাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি আশঙ্কা করো যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না তবে একটিই; অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা বিদ্যমান।) বলেন, এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, পিতার জন্য তার ছোট্ট মেয়েকে বিবাহ প্রদান করা বিধিসম্মত। কারণ এ আয়াত দ্বারা সব রকমের অভিভাবকদের জন্য তাদের অধীনস্ত বালিকাকে বিবাহ দেয়া বিধিত হওয়া প্রমাণিত। তো পিতা নিকটস্থ অভিভাবক হিসেবে এ অধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় বেশি অগ্রগণ্য হবে। উপরন্তু বাল্যবিবাহ বৈধতার ব্যাপারে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কোনো ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞের ব্যতিক্রম অভিমত আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। (আহকামুল কুরআন লিলজাসসাস ২/৩৪৬)

ইসলামী বিবাহ আইনের তাৎপর্য

ইসলাম কেন বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে এতটা উদার দৃষ্টিভঙ্গি লালন করেছেÑ এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা সংক্ষিপ্ত পরিসরে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরবো যাতে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের সামাজিক বিপত্তি ও অসঙ্গতিগুলো পরিষ্কার ফুটে উঠে।
১. একব্যক্তির প্রাপ্তবয়সী একটি ছেলে বা মেয়ে রয়েছে। উন্মাতাল যৌনতা ও অশ্লীলতার সয়লাবে তার সন্তানের চারিত্রিক অবক্ষয় চরম আকার ধারন করেছে। সে দেখছে, যদি তার সন্তানের বিবাহের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে তার সন্তানকে চরম অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। এদিকে উপযুক্ত সম্বন্ধও হাতের নাগালে রয়েছে। তার এ দুঃসময়ে আইন তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বলবে, এ চরম অবক্ষয়ের মুহূর্তেও তুমি তোমার সন্তানকে ১৮ বা ২১ বছর আগে বিবাহ করাতে পারবে না। আইনী খড়গের কারণে তার সন্তানের অধঃপতন স্বচক্ষে দেখা ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকবে না। কারণ বিবাহ ছাড়া এ ব্যধির কোনোই প্রতিষেধক নেই।
২. রোগবিছানায় শায়িত অশীতিপর বৃদ্ধ বাবার একটিমাত্র পনের বছর বয়সী কন্যা। তার ভিটায় বাতি জ¦ালাবার আর কোনো উত্তরাধিকারী নেই। জীবনের শেষ বেলায় এসে সে চাচ্ছে, তার আদরের কন্যাটিকে একজন চরিত্রবান ভদ্র ছেলের হাতে তুলে দিয়ে আত্মিক প্রশান্তির সাথে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করবে। কিন্তু আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে তার কন্যাকে অসহায় অবস্থায় রেখে দুঃখাক্রান্ত মন নিয়ে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করতে হবে। আর তার আদরের মেয়েটি তার মৃত্যুর পর স্বার্থান্বেষী মহলের শিকার হয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদবে।
৩. একজন বিধবা নারীর একটিমাত্র প্রাপ্তবয়স্কা কন্যা রয়েছে। আর্থিক অনটনের কারণে নিজের জন্য দু’মুঠো আহার যোগাড় করা, নিজের মান-সম্মান রক্ষা করা তার জন্য একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সঙ্কটময় মুহূর্তে তার মেয়েকে নিজের কাছে রাখা তো সীমাহীন কষ্টের ব্যাপার। সাথে সাথে এ আশঙ্কাও রয়েছে, দ্রুত বিবাহের ব্যবস্থা না করলে তার আদরের মেয়েটি অসভ্য মানুষের লালসার শিকার হবে। বিধবার এমন দুঃসময়ে আইন বলবে, নাবালকত্বের মেয়াদ শেষ না হলে তুমি তোমার মেয়েকে বিবাহ দিতে পারবে না। আইনী সীমাবদ্ধতার কারণেই অস্বচ্ছল আশ্রয়হীন একটি পরিবারে নেমে আসবে দুর্যোগের কালো মেঘের পর কালবৈশাখী ঝড়।
৪. বিবাহের ক্ষেত্রে এ আইনী সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের সমাজের চারিত্রিক অবক্ষয় ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যিনা-ব্যাভিচার, অশ্লীলতা ও যৌনতার প্রাদুর্ভাব ঘটবে। যা রাষ্ট্রের জন্য চূড়ান্ত পরিণতি ডেকে আনবে। কারণ উঠতি বয়সের যুবক যুবতীরা বিবাহের অনুমতি না পেয়ে তাদের জৈবিক চাহিদা নিবারণ করার লক্ষ্যে অবাধ যৌনাচারের নিষিদ্ধ পথ মাড়াতে বাধ্য হবে।
৫. বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের কার্যকারিতাকে ফলপ্রসূ করার জন্যে জন্মনিবন্ধন আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে। ফলে এ বিষয়টি গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের জন্য সীমাহীন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বিবাহের ক্ষেত্রে মানুষ হয়তো মিথ্যা সাক্ষ্য আনতে বাধ্য হচ্ছে নতুবা সন্তানের বয়সকে বিবাহযোগ্য করার জন্য অবিধানিক কোনো পন্থা গ্রহণ করছে। সমাজে এগুলো নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। (জাস্টিস মুফতী তাকী উসমানী, হামারে আয়েলী মাসায়েল (ঈষৎ সংক্ষেপিত, পরিবর্তিত পরিবর্ধিত ১৫৭)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×