somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামের ভ্রমন

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

.

শীতের এই সময়টা বলা চলে ডিসেম্বর মাস এলেই আমার আনন্দ আর ধরে রাখা যেতো না । স্কুলে পড়া কালীন বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়া মানেই গ্রামের পথে ছুটা । আমার আর আপুর রীতিমতো যুদ্ধ লেগে যেতো , ব‍্যাগ এ কে কার কাপড় রাখবে আগে,তা নিয়ে ঝগড়া , ইচ্ছে হতো সব কাপড় ব‍্যাগ এ  ঢুকিয়ে ফেলি । আম্মুর বকাতে আমরা শান্ত হতাম অবশেষে ।

   তারপর সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা ,আগে থাকতেই কেবিন আব্বু বুকড করে রাখতো ।৩ তালা লঞ্চে কখনো ২ তালায় কিংবা ৩ তালায় কেবিন টা থাকতো । লঞ্চ ছাড়ার সময় হলে আম্মু বারবার জানান দিত , বাচ্চারা সরে দাড়াও , লঞ্চ ধাক্কা দিবে কিন্তু।
সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি আমরা একটু পর পর চেয়ার পেতে বাহিরে বসে নদীর দৃশ্য উপভোগ করতাম । লঞ্চে নাকি ছেলে ধরা আছে , আম্মু তাই বেশিক্ষন থাকতে দিত না । লঞ্চে অনেক মজা ,আমি আর আপু টয়লেট যাবো বারবার মিথ্যে বলে ঘুরে আসি আর সাথে ভাইয়াও আসতো । লঞ্চে সেদ্ধ ডিম খাওয়া যে কি মজার কেউ ওইখানে বসে না খেলে বুঝার উপায় নেই । তাছাড়া চানাচুর আর ঝালমুড়ি তো ছিলই । লঞ্চে কেবল ঘন ডাল রান্না টাই ভালো হত ,বাকি রান্না মুখে তোলা যেতো না ।
 
সকাল বেলা যখোন আমাদের গ্রামের ঘাটে লঞ্চ এসে থামতো ,আমরা সবাই বাহিরে এসে দাড়াতাম । ছোট মামা ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতো ,কি যে ভালো লাগতো ।
গ্রামের বাড়িতে প্রথম একটু খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগতো।
তারপর যখন কাজিনরা ঝাকে ঝাকে আসতো , তখোন আর কে পায় আমাদের । সারাবেলা খেলা আর গল্প লেগেই থাকতো ।
দুঃখের বিষয় কাজিনদের মধ্যে তখন ছোট ছিলাম বলে , আমাকে সবাই খেলায় দুধভাত রাখতো । কিছু দিন পরেই আমরা লাকড়ি চুলা বানানো শুরু করে দিতাম , সব কাজিনরা মিলে চলতো পিকনিক । সকাল বেলা আমরা বড়শি ফেলে মাছ ধরতাম তখোন , সেই মাছ আমরা সবাই মিলে রান্না করতাম । লাকড়ি চুলা জ্বালানো যে কি কঠিন , লাকড়িতে আগুন ধরিয়ে চুলার গর্তে ঢুকাতে হয় , তারপর জোরে জোরে ফুঁ দিতে হয় না জ্বলা পর্যন্ত । চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তো । তাও মজার ছিল সবাই মিলে রান্না করার ।
গ্রামের ভোরবেলা আমাদের কে  আম্মু আন্টিরা জাগিয়ে তুলতো , কি যে কষ্ট ছিল ঘুম থেকে উঠা । রান্না ঘরে চোখ ডলতে ডলতে আমরা সবাই হাজির হতাম ।গরম গরম চিতই পিঠা সাথে গুড় চিনি নাহলে ধোঁয়া উড়ানো ভাপা পিঠা খেতে গিয়েই ঘুম ভেঙে যেতো । তারপর সকাল দশটা হলে ভাত চলতো, গ্রামে তিন বেলায় তখোন ভাত খেতো । সন্ধ্যা হলে রসে ডুবানো পিঠা কিংবা বাজার থেকে আনা গুড়ের জিলাপি আর না হয় বাজারে বসে মিষ্টি খাওয়া ছিল পরম আনন্দের কাজ ।

রাত হলেই জমতো জ্বীন ভুতের গল্প । হালকা হারিকেনের আলোয় সেই গল্প বেশ জমে যেতো । একদিন সকাল বেলা ভাইয়া আর একজন কাজিন মিলে বাঁশ ঝাড়ে ডুকলো জ্বীন খুঁজার উদ্দেশ্যে । অনেকক্ষণ পর ফিরে এলো দুইজন হাপাতে হাপাতে । আমরা তো ভয়ে শেষ । ভাইয়া বলতে লাগলো , জ্বীন নাকি কাজিনকে ধরে আছাড় মেরেছে ,জ্বীনের ইয়া বড় দাড়ি আর অনেক লম্বা সে , সাদা জামা পড়া ছিল । আমরা আর সেই রাত ভয়ে ঘুমাতে পারিনি । বড় হয়ে জানলাম , সেই গল্প নাকি ভাইয়া আর কাজিন মিলে বানিয়েছিল ।
        আজ এখানেই শেষ । সবাই ভালো থাকবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৩
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×