সীমন্তিনীকে প্রথম দেখেছিলাম বসন্তের রাত্রিতে , আধো আধো সুরে তার বলা কথা , আর তুমুল ক্রন্দনে পাশের বাড়ি থেকে আমরা ছুটে এসেছিলাম । হাসপাতালে নিতে আমরা সাহায্য করলাম । 2 দিন পর ছাড়া পেল কোমল বালিকা সীমন্তিনী । সবে সে স্কুলে পা রেখেছে । সেদিন থেকেই তার সাথে আমার সখ্যতা । আমি তখোন প্রাথমিক গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক স্কুলে পদার্পন করলাম । পাশের বাড়ি হওয়াতে , বিকাল হলেই পুতুল নিয়ে ছোট ছোট পায়ে হেঁটে সীমন্তিনী হাজির হতো । তার শত প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হতাম । রোজ পুতুল খেলতে গিয়ে আমার ফুটবল আর ক্রিকেট এর চেয়ে পুতুল খেলায় যেন বেশি প্রিয় হয়ে উঠল ।
আমি কলেজে পদার্পন করলাম, সীমন্তিনী হঠাৎ করে এসে বলল সীমান্ত দাদা চলো না মেলায় যাই । সেদিন ছিল শনিবার বিশাল মেলা বসেছিল । কাঁচের চুড়ি , বাতাসা , সন্দেশ কিনে আমরা বাড়ি ফিরলাম । সারা পথ জুড়ে সীমন্তিনীর সে কি হাসি , তখোন থেকেই সীমন্তিনীর প্রতি ভালো লাগা জন্মাতে শুরু করল । মাঝে সীমন্তিনী একবার মামা বাড়ি গেল , কি বদ মেয়ে আশার কোনো নাম গন্ধ নেই, আমি রোজ নদীর ঘাটে বসে থাকতাম , এই বুঝি সে এলো ।
এভাবে বেশ চলছিল , বিপত্তি ঘটলো যখোন শহরে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি টা পাকা হয়ে গেল । আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করতাম , সীমন্তিনীকে আবার যে কবে দেখবো , ভাবলেই চোখে জল চলে আসতো । সীমন্তিনী তখোন অবুঝ কিশোরী , যাওয়ার দিন বললাম আসিরে ভালো থাকিস । বোকা মেয়ে বলল দাদা যাও , ফিরবার সময় আমার জন্য চুড়ি নিয়ে আসবা , আর কানের দুল , সন্দেশও আনবা । আমি ভাবলাম ও বুঝি আরো কিছু বলবে, কিন্তু ঐটুকু বলেই সে খেলতে চলে গেল । আমার বুকের ভেতরটা তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম । কি যে যন্ত্রণা অবুঝ সীমন্তিনী বুঝলো না ।
চার বছর পর বাড়ি ফিরলাম । এসেই সীমন্তিনীর খোঁজ করলাম । ওকে অনেক চিঠি দিয়েছিলাম , ও প্রথম দুই বছর জবাব দিত , এরপর আর কোন খবর নেই । আমি চিঠি দিয়েই যেতাম , কোনো প্রতিউত্তর আসতো না । ক্লান্ত হয়ে শেষে থেমে গিয়েছিলাম । বাড়ি এসে জানলাম সে শাহেদ নামের কোন এক ছেলের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে । শুনা মাত্রই আমার মনে হচ্ছিল, কেউ যেন আমার গলা টা চেপে ধরলো ।
অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে শাহেদ নামক ছেলের ভূত টা ওর মাথা থেকে সরালাম । শাহেদ খুব সুবিধার ছিল না, তাই আমার আর বেশি একটা কষ্ট হলো না । সীমন্তিনী এক বিকেলে সে কি কান্না , দাদা জানো ছেলেটা কি বদ , বলেই আবার কান্না, আর আমি মনে মনে বিজয়ের হাসি টা দিলাম । সে কি পরম শান্তি , আমার সীমন্তিনী অবশেষে আমারি আছে । ব্যাগ থেকে এতোদিন পর এক ঝুড়ি কাঁচের চুড়ি সীমন্তিনীকে বের করে দিলাম , সে কি হাসি তার , দাদা তোমার এতদিনেও মনে ছিল ! আমি তো ভাবলাম ভুলে গেছো বুঝি ।
আবার শহরে ফিরলাম , একটা চাকরি যে যোগার করতেই হবে, সীমন্তিনীকে যে আমার চাই এ চাই । ছয় মাসের মাথায় চাকরি পেয়ে গেলাম । আনন্দ আমার যেন আর ধরেই না । সীমন্তিনীদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম । সবাই এক বাক্যেই রাজী । কেবল সীমন্তিনী বোকা মেয়েটা বিয়ের কিছুদিন আগে এসে বলল , দাদা তুমি আমার বর হবে কেন , দাদারা কি বর হয় কখনো ? ওর প্রশ্ন শুনে আমি হেসেই বললাম , খবরদার বিয়ের পর দাদা বলবি না কিন্তু ।
আজ সারা গ্রাম জুড়ে আলোক সজ্জা । গানের আসরও বসেছে । সীমন্তিনীর সে কি অপরূপ সাজ , একটা মেয়ে যে বউ সাজে এতো সুন্দর হয় , আমি চোখ ফিরাতেই পারছিলাম না । ওর মুখে তখনো হাসি লেগে আছে । আমার মনে হচ্ছিলো, সারাটা জীবন আমি ঐ হাসির জন্যই বাঁচতে চাই ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০৮