somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিলির ভুবন

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রানী মহল নামক বাড়িটি আজ আলোয় সজ্জিত । এতদিনের নীরব বাড়ি যেনো আজ প্রান খুঁজে পেল । চারিদিকে হাসি, হৈচৈ কোনো কিছুরই কমতি নেই । ছাঁদে চলছে নাচের রিহার্সেল । আর দুতালাতে জমেছে গল্পের আসর । বিশাল এলাহি কান্ড । আর ঘন্টায় ঘন্টায় রয়েছে চা কফির আয়োজন ।

সব কিছু থেকে আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে মিলি । ছাদের এই পাশ টা তার খুব প্রিয় । মন খারাপ হলেই এখানে এসে তার সকল কষ্ট অভিমান চোখের জল হয়ে নামে । ছোট বেলায় কেউ বকা দিলে এখানে লুকিয়ে থাকতো । একবার সে কি কান্ড , মিলির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, সারা বাড়ি খুঁজে সবাই মাথায় তুললো , মাইকে বলা হলো, কিছুতেই কিছু হল না, শেষে দেখা মিলল মিলির এই গুপ্ত জায়গায় । মিলি কাঁদতে কাঁদতে সেদিন ঘুমিয়ে পড়েছিল , ঘুম থেকে উঠেই এতো লোক দেখে ভয় এ পেয়ে গিয়েছিল । তারপর থেকে এই জায়গা আর গোপন থাকলো না । কখোন যে কে এসে পড়বে ,ভয় উকি দিল মিলির মনে , আজ সারাদিন সবাই মিলিকে ঘিরে রেখেছিল ,অবশেষে একটু রেহাই পেলো ।

হাতে মেহেদির আলপনা, বাতাসে খোলা চুল , ভেসে আসা গানের সুর , সব মিলে অপরূপ কোনো নারীর ছায়া যেন । এমন এক দৃশ্য তো শ্রাবন একেছিল । কথা ছিল গায়ে হলুদে দুই জন মিলে নাচ করবে , সুরের ছন্দে হ্নদয় মন কম্পিত হবে । মনে হবে ফুলেল সাজে সজ্জিত কোনো এক দেবী রূপ ললনা দাড়িয়ে আছে । অপলক দৃষ্টি ভাঙবে বিয়ে বাড়ির তীব্র কোলাহলে । সব আশা ভেঙে গেল কেবল একটি মেসেজে ।

সময় টা ছিল শীতের হিমেল হাওয়ার ক্লান্ত কোন দুপুর । হঠাৎ অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো, দুই বার রিং বাজতেই মিলি ফোন কেটে দিল । আবার বেজে উঠলো । বাধ্য হয়েই ফোন ধরেই বলল ,বলুন শুনছি । ওপাশ থেকে শ্রাবন হেসেই বলল কেমন আছেন ? শুরু টা এভাবেই ছিল । এরপর রাতের পর রাত শ্রাবনের ফোন আসতেই লাগলো । বিরক্ত হয়ে মিলি মাঝে মাঝে ফোন রিসিভ করেই ফেলতো । শ্রাবনের ঐ সময় টা খুব একাকী কাটছিল, শূন্যতা কাটাতে এক সময় মিলিকে পেয়ে যায়, লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে চলতো তাদের কথপোকথন । 
সময়ের ধাপে ধাপে মিলি তখোন কলেজে পদার্পন করল, দীর্ঘ দুই বছর পর অবশেষে তাদের সামনাসামনি দেখা মিলল । তার ঠিক তিন মাস পর শ্রাবন বিদেশ পাড়ি জমালো । শুরু হলো মিলির দীর্ঘ অপেক্ষা । দেড় বছর পর পর তাদের দেখা মিলতো । ফোনে তেমন আর কথা হতোই না । মেসেজ আদান প্রদানই ছিল শেষ ভরসা । এভাবে কেটে গেল ঝগড়া অভিমান ছাড়া ছয় বছর ।
শ্রাবন গ্রাজুয়েশন শেষ করে চলে আসলো । সমস্যার শুরু তখোনি । মিলির অভিযোগ শুরু হল , অভিমান জমে জমে পাহাড় আকার ধারন করল । আগের ভালোবাসা কোথায় যেন হারিয়ে গেল । শ্রাবনের কাছে সব অর্থহীন লাগে, সামনে ক‍্যারিয়ার গড়তে হবে , মিলির কথা এখোন আর অতো ভালো লাগে না । দেশে এসেও দুজনের মাঝে বিশাল এক দেয়াল গড়ে উঠলো । শ্রাবনের তাতে মাথাব্যথা নেই, এতো ভাবলে কি আর চলে , অবশেষে ভেবেচিন্তে মিলিকে ব্রেক আপ এর মেসেজ টা পাঠালো । আর এভাবেই শেষ হলো সাত বছরের সম্পর্ক ।

একটা বছর মিলির মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়ল, পড়াশুনায় মন বসছিল না , বারেবারে মনে হচ্ছিল শ্রাবন ফিরে আসবে, এটা হয়তো স্বপ্ন । সারাদিন ঘর অন্ধকার করে রাখে , মুখ চেপে কান্না আর আর্তনাদে ঘরের দেয়াল ও যেন কেঁদে উঠতো । এমন টা তো হবার কথা ছিল না । শ্রাবন ওর জীবনে প্রথম ছেলে আর প্রথম ভালোবাসা । আজো কি যত্নে শ্রাবনের দেয়া প্রথম গোলাপের পাপড়ি বইয়ের পাতায় রেখেছে । 

দুই বছর কেটে গেল, শ্রাবন আর ফিরলো না । মিলি এখোন আর অভিমানে কাঁদে না ।

তিন দিন পর মিলির বিয়ে । অনেক টা ক্লান্ত হয়েই বিয়েতে মিলির রাজি হওয়া । সীমান্তরাই একদিন হুট করে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো । মেয়েকে নাকি ছেলের খুব পছন্দ, কোথায় জানি দেখেছে , এখন তার আর কাউকেই ভালো লাগে না , হেসে হেসে বলল সীমান্তর মামা । মিলির বাবা মায়েরও ভালো লাগে সীমান্ত কে, ভদ্র ছেলে খুব মানাবে মিলির সাথে , বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করে ফেললেন মিলি কে । প্রস্তাব পাঠানোর সাতদিন পর রেস্টুরেন্টে প্রথম দেখা হলো মিলি আর সীমান্তের । সীমান্তের হাসি টা অবিকল শ্রাবনের মতো, মিলি চোখ ফিরাতে পারছিল না কিছুতেই, এও কি সম্ভব, শ্রাবন কি তবে সীমান্তের মাঝে ফিরে এলো । এরপর দুই একবার ওদের আবার দেখা হলো । সীমান্তর হাসি যেনো ওকে বারবার টানছিল । মিলির কেবল মনে হচ্ছিল ওকে আমার চাই ।

মিলির কাজিন হাপাতে হাপাতে চলে এলো । ছাদের কোনেই  মিলিকে দেখতে পেল । হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলো নীচের ঘরে । সীমান্ত দাঁড়িয়ে আছে । অপলক দৃষ্টি আর ঠিক সেই মিষ্টি হাসি । সময় যেন চলছে মন্থর গতিতে । অন‍্যের জন্য অপেক্ষা সুখ হয়ে ধরা দিল পড়ন্ত এই বিকেলে । সময় যেন আজ রাঙ্গিয়ে দিল সহস্র দিনের ঝরে পড়া অশ্রু জলকে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৪
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×