আগেই বলেছিলাম যে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই পটেনশিয়ালিটি, ক্রিয়েটিভিটি রয়েছে। অনেকে সেটা জানেন না, খুজে বের করতে পারেন না। সেজন্যই হয়তো সক্রেটিস বলেছিলেন, 'নোও দাই সেলফ বা নিজেকে জানো'!
নৌ মন্ত্রী শাজাহান খানকে গতকালকের একটা লেখায় পদত্যাগ করতে বলেছিলাম। জানি সেটা হবে না। পৃথিবীর বহু দেশের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীদের অনেক তুচ্ছ কারনে পদ ছেড়ে দেয়ার উদাহরন দিয়েছি। তবে বাংলাদেশে সেটা হয় না, কারন এখানে ব্যাক্তিকে বড় করে দেখা হয়। মনে করা হয়, 'আমিই সব', এই 'আমিই' যদি না থাকি তাইলে আর কি!
এই সেই শাজাহান খান যাকে ১৯৮০ সালে ফরিদপুর জেলখানা থেকে ছাড়া পাওয়ার মুহুর্তে ফুলের মালা দিয়ে বরন করতে আমরা মাত্র তিন চারজন মানুষ গিয়েছিলাম। আমি, ততকালীন জাসদের জেলা সাধারন সম্পাদক আবু সাঈদ খান (সমকালের ব্যবস্হাপনা সম্পাদক), ছাত্রলীগের জেলা সম্পাদক একে আজাদ (এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি) ও সভাপতি মুনির আহমেদ। উনাকে জেল গেটে স্বাগত জানিয়ে শ্লোগান দিয়েছিলাম, "শাজাহান খানকে এনেছি, রব জলিলকে আনবো।"
যাইহোক, আজ সেই শাজাহান খান সাহেব মন্ত্রী। নৌমন্ত্রী, তবে বিগত ছয় বছরে দেশের নৌ খাতে সামান্যতম সত্যিকারের কোন উন্নয়ন তিনি করতে না পারলেও খুব মনযোগ দিয়ে জড়িত থাকেন পরিবহন শ্রমিকদের সাথে আর কিছুদিন যাবত গার্মেন্টস শ্রমিকদের সাথে। কেনো করেন সেটা দেশবাসী ভালো করেই জানেন।
আজ আমি উনাকে কিছু পরামর্শ দিতে চাই যেটা হয়তো তিনি জানেন অথবা জানেন না। উনার মত লোককে দিয়ে বাংলাদেশের পরিবহন ও নৌ খাতে আসলেই কিছু উন্নয়ন করা সম্ভব। কারন যেভাবেই হোক উনার শ্রমিকদের মাঝে বেশ প্রভাব আছে। কিন্তু উনাকে সদব্যবহার করতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে।
কানাডাতে আমরা কোন লিফট বা এলিভেটরে যখন উঠি আর সেটাতে যদি অতিরিক্ত মানুষ চড়ে বসেন কি হয়? লিফট টা চলা বন্ধ করে কো কো করে আওয়াজ শুরু করে দেয়। কারন ওই এলিভেটরের মানুষ বহন করার একটা নির্দিষ্ট ধারন ক্ষমতা রয়েছে। সে ক্ষমতার বেশী হয়ে গেলে সে আওয়াজ করে কারন সেটা ভেংগে পড়তে পারে। যতক্ষন না কিছু মানুষ নেমে যান, ওটা চলা শুরু করে না।
এছাড়া বেশ কিছু ডিভাইস বের হয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে দুর থেকেও আপনি সবকিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। যেমন ধরুন আপনি আপনার দোকানে ঠিকমত যেতে পারেন না, বাসায় বসেই দেখতে চান যে আপনার দোকানে কি হচ্ছে, কাকে কি বলতে হবে। সেখানে দুর নিয়ন্ত্রিত ক্যামেরাটা বসিয়ে দিন আপনি দেখতে পাবেন ঘরে বসেই যে দোকানে কে কি করছে।
কানাডার অনেক প্রতিষ্ঠানের দরজাতেই এখন এক ধরনের সিকিউরিটি ডিভাইস লাগানো আছে যেটা কোড নম্বর টিপে একবার বন্ধ করলে, চোর বা অন্য কেউ সেটার একই কোড ব্যবহার না করে যদি জোর করে ঢুকতে চায় সাথে সাথে পুলিশের কাছে এলার্ম পৌছে যাবে, পুলিশ আপনাকে ফোন করে জানাবে যে আপনার অফিস বা দোকানে এলার্ম বেজে চলেছে সেটা আপনি জানেন কি না? অনেক সময় আপনার ভুলের কারনেও সেটা হতে পারে সুতরাং তারা আপনাকেই আগে জিজ্ঞেস করবে। আপনি না হয়ে অন্য কেউ হলে ওরা দ্রুত এ্যাকশনে যাবে।
এছাড়া ধরুন আপনি কোন হলরুম ভাড়া নিবেন, সেখানে কোন অনুষ্ঠান করবেন। কানাডাতে প্রত্যেক হল রুমের একটা নির্দিষ্ট পরিমান মানুষের ধারন ক্ষমতা রয়েছে নিরাপত্তার জন্য। কারন একশো লোকের ধারন ক্ষমতার রুমের মধ্যে কোনভাবেই সেখানে দুইশত লোককে ঢুকতে দেয়া হয় না। যদিও আমরা বাঙালীরা খালি চোখে দেখি যে সেখানে হয়তো আরো দুইশত লোককে খুব সহজেই ঢুকিয়ে দেয়া যায়। না সেটা এখানে এলাও করা হয় না। প্রত্যেক রুমে ফায়ার এক্সিট থাকতে হয় যাতে কোন সমস্যা হলে মানুষ প্রধান দরজা দিয়ে বের হতে না পারলে ওইসব ফায়ার এক্সিট দিয়ে বের হতে পারে। আর প্রতি পন্চাশ বা একশত লোকের জন্য একজন পুলিশ বা সিকিরিটি গার্ড নিয়োগ দিতে হয়। তো সেই সব রুমে যদি অতিরিক্ত লোক কোন কারনে ঢুকানো হয় সেখানেও এলার্ম বেজে উঠতে পারে।
কয়েকটা মাত্র উদাহরন দিলাম। এখন মাননীয় মন্ত্রী শাজাহান খানকে অনুরোধ করবো যে অন্য কিছু না পারলেও এ্যাটলিষ্ট মানুষগুলোকে বাচাতে চেষ্টা করুন। প্রত্যকেটা লন্চে, বাসে এই ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করুন, করতে বাধ্য করুন। যাতে আপনি আপনার অফিসে বা শোবার ঘরে বসেই জানতে পারবেন যে ওই বাসে বা লন্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা হয়েছে কিনা? এলার্ম বেজে উঠার সাথে সাথেই সর্বশক্তি দিয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্হা করুন। আপনাকে দৌড়ে সেখানে যেতে হবে না, সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে ব্যবহার করুন। তাদের কাজের জবাবদিহিতা আপনি নিজে তদারকি করুন। যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মত হেটে হেটে এগুলো খোজার দরকার হবে না।
জানি হয়তো বলবেন যে আরে মিয়া, ঐসব ডিভাইসতো দুইমিনিটেই নষ্ট করে ফেলবে, খুলে নদীতে ফেলে দিবে। হ্যা জানি সেটা হতে পারে। সেটারও সমাধান রয়েছে। ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, আগে ইচ্ছেটা আনুন দেখবেন বাকি সমস্যারও সমাধান হয়ে গেছে। গুড লাক মাননীয় নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান।