somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজলাদিদি .............. উতসর্গ আউলাদি

০৮ ই জুন, ২০০৮ রাত ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি যখন খুব ছোট তখন মায়ের মুখে তার গল্প শুনতাম। তার কথা বলে বলে মা আমায় ঘুম পাড়িয়ে দিত। না খেতে চাইলে বলতো তার কথা ............ কখনো খুব দুষ্টুমি করলে বলতো ----- ''সে তো এতো দুষ্টু ছিল না । সে ছিল আমার লক্ষী মা , তুই কেন আমাকে এতো কষ্ট দিস বাবা? ''
........ এই কথা শুনে আমি দুষ্টুমি বন্ধ করতাম। মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে তার কথা আবার শুনতে চাইতাম। তখন মা ছলোছলো চোখে আমাকে তার কথা বলতো। বলতো সে কেমন করে পূবের ঘরের সিড়িতে বসে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে ছড়া আবৃত্তি করতো, একুশে ফেব্রুয়ারী এলে কেমন করে সে সালাম সালাম হাজার সালাম গানটা গাইতো, কেমন করে সে রংপেন্সিল দিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতায় আকিঁবুকি করতো ............ আকাশে বোউউউ শব্দ করে উড়োজাহাজ উড়ে গেলে সে কেমন করে ছলোছলো চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতো ......................
সে ......... সে ছিল আমার হারিয়ে যাওয়া একমাত্র বড় বোন , যে কিনা আমার জন্মের একবছর আগে মাত্র তিন বছর বয়েসে ডিপথেরিয়া হয়ে মারা গিয়েছিল .........

সেই থেকে আমি কখনো বড়বোনের আদর পাইনি। কাউকে বড়পা বলে ডাকার সুযোগ হয়নি। আচ্ছা তাকে কি আমি বুবু ডাকতাম ?? নাকি আপা???? .......... মনে পড়ে ক্লাস সেভেনে থাকার সময় দাদুর লাইব্রেরী থেকে যখন প্রথমবারের মতো 'পথের পাঁচালি' পড়লাম তখন দূর্গার কথা মনে করে অনেকক্ষন কেদেঁছিলাম ।

শৈশব ব্যতীত আমার মাকে কখনো তার কথা বলতে শুনিনি। পারিবারিক আলোচনায় কখনো তার কথা উঠলে মা আর সেখানে থাকতো না । সেখান থেকে চলে যেত। আর তার মৃত্যুবার্ষিকী এলে মা সারাটি দিন মন খারাপ করে থাকতো।আর একটু পর পর এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। সেদিনটায় আব্বু বাসায় থাকতো না । অনেক পরে বুঝেছিলাম , আব্বু আসলে আম্মুর কাছ থেকে সেই দিনটায় পালিয়ে বেড়াত ..........

অবশেষে আমি যখন ক্লাস টু তে পড়ি তখন মা দু'সপ্তাহের জন্য কোথায় যেন চলে গেল । আব্বুকে জিজ্ঞেস করে জানলাম , মা হসপিটালে গেছে। ক'দিন পরেই আমার জন্য একটা ছোট্ট বাবু নিয়ে চলে আসবে। ....... কিন্তু আমার যেন আর সেই ক'দিন কাটতে চায়না। অবশেষে একদিন বাসায় অনেক হৈ চৈ শুনতে পেলাম। দোতলার বারান্দা দিয়ে উকি দিয়ে দেখি মা ........ । তার কোলে তোয়ালেতে জড়ানো একটা ছোট্ট জীবন্ত পুতুল । কেমন নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে আছে ........... মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে কেদেঁ উঠছে। তার কান্না দেখে আমারো কান্না পেয়ে গেল ......... আমি দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে আমার ছোট্ট বোনটাকে আরো ভালো করে দেখার জন্য মায়ের গা ঘেষেঁ দাড়ালাম ............

ধীরে ধীরে আমার বোনটা আমার একমাত্র খেলার সাথী হয়ে উঠলো। মা রান্নাঘরে গেলে আমি চুপিচুপি বিছানার পাশে এসে দাড়াতাম। দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ও আর একটু বড় হলে কথা বলতে শিখলো ।
আমার ডাকটিকিটের খাতাটার উপরেই ছিল ওর রাজ্যের আকর্ষন। আর আমিও ছিলাম নাছোড়বান্দা। আমার সাধের খাতাটায় উল্টাপাল্টা আকিবুঁকি করে নস্ট করবে!!!! কক্ষনো না !!!! শেষে ও ভ্যা করে কান্না শুরু করে কয়েকটা পৃষ্টা টান দিয়ে ছিড়ে ফেলতো........ । ছেড়া খাতার দিকে তাকিয়ে আমার চোখ ছলোছল করতো। শেষে মা এসে আমাদের দুজনেরই কান্না থামাতো.............

এখন আমার সেই পিচ্চি বোনটা কত্তো বড় হয়ে গেছে । ক্লাস নাইনে পড়ে । আমাকে ফোন করে ওর ক্লাসের মজার মজার সব ঘটনা শোনায় । সাতকাহনের দ্বিতীয় পর্বটা যে মোটেও প্রথমটার মতো ভালো হয়নি সেটাও বলে .............. তখন আমি এই সাড়ে পাচঁ হাজার মাইল দূর থেকে আমার বোনটার কথা কল্পনা করি। কল্পনায় দেখি ও বেনী দুলিয়ে বান্ধবীটার সাথে হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলতে বলতে স্কুলের গেট দিয়ে বের হচ্ছে । প্লেটে সবজি না দেয়ার জন্য মার কাছে কাকুতি মিনতি করছে। বারান্দায় বসে বসে গম্ভীর মুখে সাতকাহন পড়ছে ...............

তখন আমি আমার সেই হারিয়ে যাওয়া 'কাজলাদিদির' কথা কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলে যাই।

কিন্তু .......... কিন্তু মাঝে মাঝে যখন সেই সালাম সালাম হাজার সালাম গানটার সুর ভুল করে ভেসে আসে ,............
আকাশে বোউউউ শব্দ করে কোন উড়োজাহাজ উড়ে যায় ...........
ক্যালেন্ডারের পাতায় কোন কাচাঁ হাতের আকিবুকি দেখি , কিংবা দূর্গা আর অপুর সেই রেললাইনে দাড়িয়ে হাত ধরাধরি করে দূর দিগন্তের পাড়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার দৃশ্য মনের পর্দায় ভেসে উঠে .................. তখন আবার আমার সেই হারিয়ে যাওয়া বড় বোনটির কথা মনে পড়ে ............



আসলে কিছু কিছু কষ্ট এবং অভাব আছে যেগুলো কোনদিন , কোনকিছুর বিনিময়েই পূরন করা যায় না ....................
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০০৮ রাত ১:৪৫
৫১টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×