কবি কাহ্নপা, জন্ম-আটপাড়া, কৃষ্ঠপুর গ্রাম। জন্ম-আনুমানিক ১০ম শতকে। হাজার বছর আগের বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য ও চর্যাপদ কর্তা। প্রকৃত নাম কৃষ্ণাচার্য পাদ, অপভ্রংশে হয়েছে কাহ্নপা। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যার কালকেই বাংলা সাহিত্যের উৎপত্তি কাল বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে সিদ্ধাচার্য মীননাথ ওরফে মৎসেন্দ্র নাথই বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবি। এবং তিনি প্রমাণ করেন যে মৎসেন্দ্রনাথ ৭ম শতকে জীবিত ছিলেন। কিন্তু মৎস্যেন্দনাথ চর্যাপদের প্রথম কবি হলেও কবি কাহ্নপাই চর্যা পদের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ কবি। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস গবেষক প্রখ্যাত বৌদ্ধ ধর্মীয় অধ্যক্ষ জিতেন্দ্র লাল বড়ুয়া “নেত্রকোণা: অতীতও বর্তমান” শীর্ষক এক গবেষণা মূলক রচনায় কাহ্নপাকে নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার কৃষ্ঠপুর গ্রামের সন্তান বলে দাবী করেছেন।
কবি কাহ্নপা রচিত চর্যাপদে ব্যবহুত বিভিন্ন শব্দ এখনও নেত্রকোনার গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক প্রচলন। জিতেন বড়ুয়ার দাবীকে যৌক্তিক বলে প্রাতিষ্ঠত করেছে। তবে কেউ তাঁকে তিব্বতি ঐতিহ্যমতে উড়িষ্যার অধিবাসী বলেছেন। বাংলা সাহিত্যের আদিনিদর্শন চর্যাপদের কবি গোষ্ঠীর মধ্যে তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠ। পালরাজ দেব পালের রাজত্বকালে (আনুমানিক ৯০০-৯৫০) তিনি বর্তমান ছিলেন। কাহ্নপাই সম্প্রদায় গতভাবে ব্রাহ্মন ছিলেন, পরে সহজিয়া মতে দীক্ষা নিয়ে সিদ্ধাচার্য, মন্ডলাচার্য ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত হন। পরিণত বয়সে তিনি পাহাড় পুরের সোম বিহারে অবস্থান করতেন। তিনি ছিলেন সোম বিহারের অন্যতম বিখ্যাত আচার্য। তিনি বৌদ্ধ সহজিয়া মতের অনুসারী ছিলেন। নাথ পন্থী যোগী জলন্ধরী পা (বা হাড়িপা) ছিলেন তাঁর গুরু। চর্যাপদের ২৩ জন কবির মধ্যে কাহ্নপার পদ সংখ্যা সর্বাধিক, মোট ১৩টি। এ পর্যন্ত কাহ্নপার ভনিতায় ৭৪ খানি গ্রন্থের নাম জানা গেছে।
অন্যান্য পদ কর্তার মতে কাহ্নপাও সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। তাঁর প্রত্যেক পদের শীর্ষে রাগ তালের উল্লেখ্য আছে। রূপক প্রতীক সংকেতের ভাষায় রচিত পদ গুলিতে তাঁর কবিত্ব শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর কাহ্নপা গীতিকা, যোগরতœমালা, হেবজ্রসাধন, মন্ডল বিধি, হেবজ্রপদ্ধতি ইত্যাদি। এছাড়া অপভ্রংশ ভাষায় লেখা তাঁর একটি “দেহকোষ” আবিষ্কৃত হয়েছে। তাঁর রচিত “হেবজ্র পঞ্জিকা” নামক একখানা পুথি কেমব্রিজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রক্ষিত আছে। আলোচনা সাপেক্ষে বলা যায় চর্যাপদ কবি কাহ্নপাই নেত্রকোনার প্রথম ও আদি কবি। তথ্য সূত্রঃ নেত্রকোণা মুখশ্রী, নেত্রকেণা জেলা সমন্বয় পরিষদ ঢাকা।
[হামিদুর রহমান-এর লেখা নতুন পাণ্ডুলিপি "নেত্রকোনার বাউল কবি" থেকে নেয়া।]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৯