somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আউট বই পড়ার গপ্পো

৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এক.)
আমার একজন বইপোকা বাবা আছেন। বয়স একাত্তুর পেরিয়ে এখন বাহাত্তুরে। গ্রামে থাকেন কিন্তু ঢাকায় কোন বইটা নতুন বেরোল, কলকাতা থেকে কোন বইটা এলো। সব খো্ঁজখবর রাখেন তিনি নিত্যদিন। আমার বাবাকে শ্রেষ্ঠ বাবা মনে করি, সবচেয়ে বেশি প্রজ্ঞাবান মানুষ বলে মনে করি। কারণ, বাবা আমাকে এমন একটা জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন- সেটা বইয়ের জগত। তার পাঠরুচি ও মননশীলতা এমন ধারায় বিকশিত হয়েছিল যা আমাকেও প্রলুব্দ করেছিল বইপাঠে, বইপাঠের আনন্দ আস্বাদে। তার পাঠাভ্যাসে যে মননশীলতার প্রকাশ ঘটতো, শুধু তাই নয়- তার বিকাশ ঘটেছে তার লেখনীতেও। আমার গ্রামে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি পাঠাগার আছে। আমার গ্রামের নামেই পাঠাগারটির নাম 'শুনই প্রগতি পাঠাগার'। বর্তমানে সংগৃহীত বইয়ের সংখ্যা দুই হাজারের মতো। সেটার রক্ষণাবেক্ষন করেন আমার বাবা-মা। এই পাঠাগারটি এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। আমাদের গ্রামে যেখানে সৃজনশীল ও মননশীল বিনোদনের অন্যকোন মাধ্যম নেই সেখানে আমার বাবার পাঠাগারটি এখন পাঠকদের কাছে একটি ভালোবাসার জায়গায় পরিণত হয়েছে। অনেক মানুষের আনাগোনা বাড়ে আমাদের বাড়িতে। যখন আমার দাদা বেঁচে ছিলেন, উঠোনে পাটাতন বিছিয়ে পুঁথির আসর বসতো। দাদু এখন বেঁচে নেই। এখন বইপড়ার জন্য অনেকদূর থেকে মানুষ আসে। আড়াইশো বছর আগের প্রাচীন অনকে পুঁথিসহ অনেক দুস্প্রাপ্য সংগ্রহ রয়েছে এই পাঠাগারে।

(দুই.)
বলছিলাম বই, পাঠাগার আর বাবার গল্প। আমার প্রতিমাসের বাজারের লিস্টিতে চাল, আটা, মাছ, সবজির। সেখানে আমার বাবার অনুসন্ধিৎসু মনের খোরাকের জন্য পাশাপাশি বইও থাকে। তো এই বই কেনাটাই আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রকমারিডটকম সম্ভবত আমার ও আমার বাবার সে প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল।
বাবা-দোজখনামা পড়েছ?
আমি- না বাবা। সংগ্রহ করব নাকি। আয়নাজীবন ও তো বেরিয়েছে।
বাবা- হ্যা, রবিশংকরের টা, সাথে পারলে বাংলার সাহিত্যসম্মেলনের একটা বই।
আমি-জ্বি বাবা, ঠিক আছে।
বাবা-তোর তো অফিস ছুটি নেই, বিকেলও ইউনিভারসিটির ক্লাস। কী করে বইয়ের দোকানে যাবি।
আমি-হবে বাবা। একটা উপায়তো হবেই।

বাবা তখনো রকমারির কথা জেনে উঠতে পারেন নি। একদিন ইউনিভারসিটি পড়ুয়া আমার কাজিন সোহাগের কাছে শুনে রীতিমত লাফিয়ে উঠলেন-
'বলিস কী? বাংলাদেশতো অনেক এগোল দেখছি। ঘরেবসে বই পাওয়া যায়! আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। আমার স্কুলের হেডমাস্টারের বাড়ি থেকে বইআনতে গিয়েছিলাম। তখন আইয়ূবের মৌলিক গণতন্ত্রের যুগ ছিল। আমি সাড়ে ছ মাইল হেটে কিছু বই সংগ্রহ করেছিলাম।'

(তিন.)
রকমারীর একটা গল্প মনে পড়ে। বছর দুয়েক আগে ঈদের ঠিক আগে, ট্রেনের টিকিট কেটে অফিসের পথে পা বাড়িয়েছি। দু দিন বাদেই গ্রামের বাড়ি ফিরব কন্যাকে নিয়ে সবাই মিলে। অফিসে ফিরে রিসিপশনে একটা বাদামী রংয়ের সুন্দর প্যাকেট ধরিয়ে দিলেন রিসিপশনিস্ট রুমা আপা। খুলে দেখি ৮/১০ টা শিশুতোষ বই। আমার কাছে এরচে বড় উপহার আর কী হতে পারে! সবকটা বই আমার কন্যা দারুন পছন্দ করেছিল। আমার আজো জানা হলো না, রকমারী এই বইগুলোই কেনবা পাঠিয়েছিল। রকমারী আমার পাঠরুচি জানে। কিন্তু এক ক্ষুদে পাঠকের যে হদয়মন ভরিয়ে দিয়েছিল এই অসাধারণ উপহারে সেটা সম্ভবত রকমারী জানেনা। সে কৃতজ্ঞতা আজো রকমারীকে জানানো হয়নি।

(চার.)
একদিন বাবা মুঠোফোনে ঠিকঠিক আবিষ্কার করলেন রকমারীকে। গ্রামে বসে। এই খুশির বারতা আমাকে জানানোর মূহূতটি ছিল স্বগীয়। তিনি জানালেন-
বাবা- তোর বইওতো দেখছি রকমারীতে। এটাতো অসাধারণ ব্যাপার। "ভাষা, নারী ও পুরুষপুরাণ" দেখলাম, "দুষ্ট লীলাবতী", ভাটকবিতায় মুক্তিযুদ্ধ" বইটিও দেখলাম।
আমি- "জীবনবৃত্তে" ও আছে। এখন সবার সব বইই পাওয়া যায়।
বাবা- দেখিস তো আমার লেখক বন্ধুদের বইও আছে কিনা?
আমি-জ্বি বাবা, দেখব।

(পাছ.)
আমাকে অনকেই বলেন, বইপড়ার সময় কই। কিংবা বই কিনে পড়ার সময় কই। কেউ কেউ বলে, বই কেনার টাকা কৈ? আমি বলব এটা নিছক মিথ্যা কথা। আপনি প্রতিদিন দুপৃষ্ঠা করে বই পড়লে মাসে ষাট পৃষ্ঠা, বছরে সাতশো কুড়ি পৃষ্ঠা। বছরে সাতশো কুড়ি পৃষ্ঠা পড়তে পারা মানে অনকেগুলো বই পড়তে পারা। আর কেউ কী দুপৃষ্ঠাই পড়ে! কৃপণ ছাড়া। আর বই কেনার জন্য কী আসলে বই বাজারেই যেতে হয়? এই উত্তরটা কী রকমারী দেবে? একটা সিগারেটের প্যাকেটের চেয়েও বই সস্তা কিংবা এককাপ কফির চেয়েও।

(ছয়.)
বইপড়া নিয়ে বাবা বলেন-সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রটি অবশ্য দুই ধারায় বহমান। আর পাঠরুচি মূলত ভোগবাদী ধারা অনুসরণ করলেও বাংলাদেশে আমাদের মতো গেঁয়ো ভূতের বই পড়াকে ঠাট্রার ছলে দেখা হয়। এতো বই পড়ে কী হয়! বাবার কথা- বই পড়ে কী না হয়। কেউ কী বই পড়ে ঠকেছে এমনতো দেখিনি। তবে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই শুদ্ধ গণতন্ত্র বা যুক্তিবাদী ধারার অনুসারী প্রগতিভাবনা অনুপস্থিত নয়। নয় প্রগতিবাদী গ্রন্থাদির পাঠ। আমাদের প্রজন্মরা সারাদিন ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে, কিন্তু মননশীল বুক। বই ছাড়া তাদের মধ্যে শুভবুদ্ধি ও মানবকল্যাণচিন্তা হয়তো নান্দনিকতার সঙ্গে এক ধরনের ইতিবাচক সমঝোতায় পৌঁছতে পারবেনা। তরুণরা বই না পড়লে ব্যাক্তি মনস্তত্ত্ব, সমাজ মনস্তত্ত্ব কী করে বুঝবে। কী করে মানুষের কাছাকাছি যাবে। প্রেম করার জন্য হলেও বইপড়া উচিত।

(সাত.)
জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই এবং বই। কষ্টের দিনগুলোতে- হাসির দিনগুলোতে- অবসরের দিনগুলোতে-উৎসবের দিনগুলোতে-ভ্রমণের দিনগুলোতে-একাকীত্বের দিনগুলোতে-একসাথে থাকার দিনগুলোতে-বন্ধুত্বের দিনগুলোতে বইপড়ুন, বই বড় বন্ধু। শুভকামনা সকলের জন্য।

হাসান ইকবাল
ই-মেইল: [email protected]

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×