প্রিয় জানেমান,
শুনেছি তুমি বেশ শুকিয়ে গেছো!
এদিকে আমি খুব দিব্যি আছি সব ভুলে গিয়ে।
সবাই বলে ''ভুলে যাও'', ''ভুলে যা!'' শেষমেষ না ভুলে আর পারলাম কই?
পাগলেরও কি-না আত্ম-সম্মানবোধ আছে, আমারটা দেখাতে চাইনি কখনো। তোমার সাথে পার্ট দেখাব আমি? এ যা, আমি জানি কেমন...
অভিমান করার সে সময় কোথায়, বল? বিকেল, সন্ধ্যে কাটানোর সিডিউল মিলিয়ে কুল পাইনা।
ওদিকে তুমি নাকি রোজ চোখের নিচে কালি এঁকে দিচ্ছ। আমি কি-না এপারে কি-বোর্ড চাপতে চাপতে সকাল দেখে ফেলছি।
তুমি বললে শেষে, আমাদের মধ্যে কিছু ছিল না। আমি জানতাম প্রেম, ইতিতে বিয়ে। কমিটমেন্টটা তুমিই শুরু করেছেলি ফার্স্টে। আমি বাসা ও তোমাকে মেইনটেইন করে বলতাম 'সব সময় বলে দিবে'। তুমি আস্থা রেখেছিলে, এরপর কত বিকেল পার করলাম পাশে বসে, বৃষ্টিতে ভিজে। আমি ফিচার লিখতাম, তুমি অপেক্ষাতে মোবাইলে। কন্ঠটা শুনে একরকম শান্তি পেতাম দুজনে। সুরে সুর বসিয়ে সকাল নামিয়ে ছাড়তাম শেষ অবধি। তুমি আমার প্রথম সকাল, ভাবতাম জীবনের শেষ সকালটা পর্যন্ত তুমি থাকো পাশে। আমার সবকিছুর সাথে তোমাকে ঝড়িয়ে ফেললাম। অর্জন ও উৎসাহে।
মনে আছে, সেদিন তুমি কি টেনশন করছিলে, বিরক্ত করছিলে ফোন দিয়ে বারবার। আমি নমিনেশন পেলাম, অ্যাওয়ার্ড পেলাম না-কেঁদেছিলাম। সান্ত্বনা দিয়ে তুমি পাঠালে ''ডোন্ট ওরি, নেকস্টটাইম ফাটাইয়া দিবি!'' পরের বারও তুমি অনুপস্থিত, কাছে থাকতে চা্ওনি। আমার টেনশন মানতে পারবে না ভেবে। আমি ফাটিয়ে দিলাম ঠিকই ২টা অ্যাওয়ার্ডে, তুমি পাঠালে ছোট টেক্সটে 'কনগ্রেচুলেশন'। বেশতো আগের বারের অপূর্ণটা গোছালি!' খুশি করতে এটুকু যথেষ্ট ছিল না। তোমার দীর্ঘশ্বাস মোড়ানো অভিনন্দন আমাকে ব্যথিতই করেছে আড়ালে। আমি লিখে পাঠালাম, ''তোর জন্যই সব সম্ভব হয়েছে, ইউ আর লাকি ফর মি!'' তুমি জবাব দিলে, ধুর বোকা, সব তোর জন্যই তুই পেরেছিস। বাকি পথটুকুও একা পাড়ি দিতে হবে।''
গন্ডগোল দেখে পাওয়া-না পাওয়ার হিসেবে মেলাতে বসলাম....
তোমার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষক। তুমি ইংরেজি সাহিত্য পাঠ চুকাওনি এখনো। আর আমি সাংবাদিকতায় তৃতীয় বর্ষে। সবাই শিক্ষিত ক্যাটাগরিতে পড়ে গেছি। তবুও তুমি ভয়ে থাকতে পাছে বাবা ''হার্টএটার্ক'' করে। তুমি বড় মেয়ে বাবার ননীর পুতুল। আমি অভয় দিয়ে আগালাম অনেকদূর। যেয়ে দেখলাম বার্ধক্যে একেবারে জরাজীর্ণ অবস্থা আমার হবু শ্বশুরের। শুনো, আমি পানি খেতে না, সালাম করতে গিয়েছিলাম তোমার প্রিয়মানুষটাকে। বাকি সব তোমাদের ভুল রটনা। জিডিটা করতে একটু বাধল না কারো?
সে বাদ দাও, ভালো-মন্দ বিচারের ক্ষমতা নাকি সব শিক্ষিত মানুষের আছে। আমারও বিশ্বাস ছিল এতদিন। এখন হয় না একদমই! গভীরভাবে উপলব্ধি করলাম পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত অসঙ্গতি, অনিয়ম জিয়ে থাকবেই। এটা মানুষের না, সমাজের দোষ। সমাজ টা কি মানুষ দ্বারা সৃষ্ট নাহ? মানুষগুলোও বা কোথা থেকে আসল?
তোমাদের সমাজ কি বলে? দ্য প্রবলেম এভাউট আওয়ার ডিফারেন্ট রিলেজিওন!!!! মানুষ নাকি ধর্ম আগে? এদিকে তুমি হিন্দু-আমি মুসলিম। তুমি মন্দিরে, আমি মসজিদে। তুমি পূজায় খুঁজ, আমি নামাজে। হে মহান স্রষ্টা! তুমি কিছুই করতে পারলে না? হে আমাদের শিক্ষিত সমাজ। বুড়ো আঙ্গুলটা তো দেখিয়েই দিলাম। সাম্প্রদায়িকতা থেকে আমাদের উদ্ধার করতে পারলে না? একবার হাত কেটে দেখালাম আমার হাতের রক্তের কালারও ''লাল''। আমরা তাহলে কিসে হলাম অভিন্ন? আমি রিস্ক নিতে চেয়েছিলাম, কি্ন্তু তুমি স্বপ্ন দেখিয়েও দূরে ঠেলে দিলে। এ জন্য একটু অভিমান হয়েছিল। আর ওটা কি মিথ্যে অজুহাত দেখালে? সত্যটা স্বীকার করে নিলে, নেহাত মুচকি হেঁসে 'ইটস একে' বলে ফেলতাম।''
ওহহহহহহহহ তুমি না কি, এত ইগো থাকলে চলে? সে সুযোগটাও দিলে না। ''নো..নো..নো..নো..নো..নো..নো!!!'' মাঝে মাঝে ভীষণ ন্যাকামি করতে ইচ্ছে করে অকারনে। পুরনো ছবির সাথে কথা বলি। এ পৃথিবীতে আমরা দুজন ভুল মানুষ। কিন্তু এখনো বেঁচে আছি! নিজেদের মত করে ভালো আছি। কি...নেই? তুমি একবার প্রমিজ করেয়েছিলে আর কাউকে যেন কখনো ''জানেমান'' না ডাকি। হয়তো আবেগ ছিল-কিন্তু সেটার মূল্য দিতেও আমি রাজি। একটা শব্দ না হয় তোলে রাখলাম তোমার জন্য।
শুনলাম তুমি নতুন প্রেম শুরু করেছে। আমাকে দূরে ভালো রাখতে চাওয়ার কি প্রাণপণ প্রচেষ্টা তোমার। বলি বিয়েটা করে ফেল, অনেক তো হলে। ছেলেটা তো দারুণ স্মার্ট, মানাইছে দুজনকে জোশ! আমার এককালের হবু শ্বশুরটা, মরার আগে কি জামাই দেখে যাওয়ার সুযোগটাও দিবা না? প্লিজজজজজ ডু ইট ফাস্ট...বলি খাওয়া-দাওয়াটা ঠিকঠাক করো, সময়মতো ঘুমাও, রূপচর্চাটা বাড়িয়ে দাও।
আমাকে নিয়ে ভেবো না, অন দ্য ওয়ে...আমি কখনোই শূণ্য নই। তোমার মধ্যে আমার একটা পৃথিবী দেখতে পাই।
writer : জা.আ.খা.এন