somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাক্তার যদি কসাই হয়, রোগীর আশ্রয় কোথায়?

১১ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেভাবে প্রতিনিয়ত ডাক্তাররা পেশাজীবি সাংবাদিকের গায়ে হাত দিচ্ছে, খামাখা কারণে ডাক্তাররা অনশনে যাচ্ছে, আর কর্তব্যে অবহেলা করে রোগীদের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে; সেক্ষেত্রে রোগীরা ভবিষ্যতে চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবে! এটা এখন 'মেটার অব থিংক' হয়ে দাঁড়িয়েছে...।

জীবিকার জন্য মানুষ নানা পেশা বেছে নেন। এর মধ্যে কয়েকটি পেশা মহৎ পেশা বলে বিবেচিত। চিকিৎসা পেশা তার মধ্যে অন্যতম। একজন মুমূর্ষ রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারেন একমাত্র চিকিৎসক। আবার আকস্মিক দুর্ঘটনার শিকার একজন মানুষও শরণাপন্ন হন চিকিৎসকের। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাজটি অন্য কোন পেশার সবচেয়ে দক্ষ মানুষটিকে দিয়েও সম্ভব নয়।

চিকিৎসকদেরও সামাজিক মর্যাদা আছে, আছে দৈনন্দিন জীবনের নানা চাহিদা। পেশার মর্যাদা রক্ষায় অন্যান্য পেশার মত চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত চিকিৎসকরাও আন্দোলন-ধর্মঘট করতে পারেন। কিন্তু কোন রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে ধর্মঘটে যাওয়া কি মেনে নেয়া যায়? বিশেষ করে জরুরি বিভাগের চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া একজন মুমূর্ষ রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার সামিল।

শনিবার গভীর রাতে কয়েকজন চিকিৎসক দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। আর তখনই আকস্মিক ধর্মঘটে চলে যান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা। তারা শুধু ধর্মঘটেই যাননি, জরুরি বিভাগেও তারা কোন রোগীর চিকিৎসা হতে দেননি। তারা হুমকি দিয়ে টিকিট বিক্রিও বন্ধ রাখতে বাধ্য করেন হাসপাতালের সম্মুখ ডেস্কের কর্মীদের। অবশ্য রোববার সকালে জরুরি বিভাগে বিকল্প ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়। তবে শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা এখনও কাজে যোগ দেননি।

চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে গভীর রাতে অনেক রোগী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়েও চিকিৎসা পাননি। ফিরে গেছেন অন্য হাসপাতালের খোঁজে। একজন রোগীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হাসপাতাল। কিন্তু সেই নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েও আশ্রয় পাননি তারা। দুর্বত্তরা চিকিৎসকদের ওপর হামলা করে অপরাধ করেছে সন্দেহ নেই। এ জন্য তাদের শাস্তিও চান সব শ্রেণী পেশার মানুষ। কিন্তু কোন রোগী তো অপরাধ করেননি। তাহলে রোগীরা কেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন?

সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসকদের কয়েকটি ঘটনা সাধারণ রোগীদের বিস্মিত করেছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা শুধু ধর্মঘটেই যাননি, তারা পেশাগত দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান এবং ঘোষণা দেন কোন সাংবাদিকের চিকিৎসা তারা করবেন না। মিটফোর্ড ও বারডেম হাসপাতালেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান চিকিৎসকরা। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ’ লিখে পোস্টার টানিয়ে দেয়া হয়।

যেকোন পেশার মানুষই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, হতে পারেন কোন দুর্ঘটনার শিকার। আর এ অবস্থায় তিনি যখন হাসপাতালে যান তখন একজন চিকিৎসকের কাছে তার পরিচয় তিনি একজন রোগী। আর এই রোগীর চিকিৎসায় আত্মনিয়োগ করতে হবে চিকিৎসার মত মহৎ পেশার একজন কর্মী অর্থাৎ একজন চিকিৎসককে। কিন্তু ওই চিকিৎসক যদি কে সাংবাদিক আর কে আইনজীবী সেই বাছ বিচার করে চিকিৎসা দিতে চান তাহলে তার পেশার প্রতি যেমন দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়া হবে তেমনই এটা পেশার প্রতি অমর্যাদাও।

একথা সত্যি যে, বিভিন্ন পেশার ওপর যে আঘাত আসছে তা থেকে মুক্ত নন চিকিৎসকরাও। তাদেরকেও অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা কী হবে? তারাও কি দুর্বৃত্তদের মতই ভিন্ন পেশার মানুষের ওপর আঘাত করবেন, রোগী তার সেবা নিতে এলে তাড়িয়ে দেবেন, নাকি সেবার মনোভাব নিয়েই তার দায়িত্ব পালন করবেন তা অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে সমাজের সুশিক্ষিত ও মেধাবী চিকিৎসকদের।

সাংবাদিকরা সমাজের অনেক অসঙ্গতির চিত্র তুলে ধরেন। সমালোচনামূলক প্রতিবেদন তৈরি করেন। এসব প্রতিবেদন সমাজ শুধরানোর একটি সুযোগ করে দেয়। আর এসব করতে গিয়ে নানা রকম হুমকি ও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয় তাদের। চিকিৎসা ব্যবস্থার ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেয়ার জন্যও সাংবাদিকরা চিকিৎসা জগতের নানা জায়গায় ছুটে বেড়ান। কিন্তু চিকিৎসকরা যদি তাদের ওপর মারমুখো হয়ে ওঠেন তাহলে দুর্বৃত্তদের আচরনের সাথে তাদের পার্থক্য থাকল কোথায়?

চিকিৎসকদের ওপর আঘাত এলে তারা এর প্রতিবাদ অবশ্যই করবেন। বিচারও চাইবেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও উচিৎ হবে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা। কিন্তু মানবসেবার এই মহৎ পেশায় নিয়োজিত মানুষ যদি দুর্বৃত্তদের অপরাধের শোধ নিতে গিয়ে রোগীকে তার প্রাপ্য চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন কিংবা রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন তাহলে তা হবে আরও একটি অপরাধ।

শনিবার রাতে চাঁনখারপুলে দুর্বৃত্তরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকের ওপর হামলা চালালে একজন আহত হন। আর রাতেই চিকিৎসকরা ধর্মঘটে চলে যান। ধর্মঘটের আগে তারা একবারও ভাবেননি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব অর্থাৎ রোগীর জীবন বাঁচানোর কথা। চিকিৎসকের অবহেলায় যদি একজন রোগীর মৃত্যু হয় তাহলে সেই দায় তো চিকিৎসককেই নিতে হবে। একটি অপরাধ থেকে আরও একটি অপরাধ সৃষ্টিকে মেনে নেয়া যায় না।

মহৎ পেশায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা কথায় কথায় ধর্মঘট আর ভাঙচুর চালালে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ তাদেরকে বিবেচনায় আনতে হবে রোগীর মৃত্যু নয়, রোগীকে বাঁচানোর এক মহান দায়িত্ব নিয়েছেন তারা। তাই তাদের পেশার ঝুঁকি কমিয়ে পেশার মর্যাদা বাড়ানোর জন্য নিয়মতান্ত্রিক পথেই এগুতে হবে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×