somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ করেছি .কেউ কমেন্ট করলে ভালো লাগবে

২০ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাইট হো, জীভস
মূলঃ পি,জি,ওডহাউস
রুপান্তরঃ শরীফুল হাসান

এক


“জীভস”,আমি বললাম, “খোলাখুলি একটা কথা বলি?”
“অবশ্যই, স্যার”
“শুনে তুমি কষ্ট পেতে পারো”
“পাবো না, স্যার”
“ঠিক আছে, বলছি--
আচ্ছা, একটু দাড়াঁন, আমি আসলে অন্য দিকে চলে গেছি।

আমি ঠিক জানিনা আপনাদেরও আমার মত অভিজ্ঞতা আছে কিনা, কিন্তু শুরু করাটা ,মানে গল্পের শুরু করাটা আমার জন্য খুব ঝামেলার মনে হয়। এটা এমন একটা জিনিস যদি শুরুটাই খারাপ হয় তাহলে পুরোটাই বৃথা। আপনি যদি বোকার মতো শুরুতেই অনেক সময় নেন , পরিবেশ তৈরি করতে যান , যা বিশেষজ্ঞরা বলে , পরিস্থিতি আপনার হাতের বাইরে চলে যাবে আর শ্রোতারা আপনার কথায় কান দেবেনা ।আর যদি বেশি তাড়াহুড়ো করেন তো জনতা শুধু ভ্রু কোঁচকাবে আর এমন ভাব করবে যে আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছেনা।

উপরের কথোপকথোন ছিল গুসি ফিঙ্ক নটল, মেডেলিন বাসেট , আমার কাজিন এঞ্জেলা, আমার আন্টি ডাহলিয়া, আমার আঙ্কেল থমাস , তরুন টাপি গ্লসপ আর রাধুঁনি আনাতোলকে নিয়ে আমার প্রারম্ভিক রিপোর্টের একটা অংশ।

আমার একটু পিছু ফেরা উচিত, ঘটনার পুরো বিচার করলে দেখা যায়,এর উদ্বোধন হয়েছিল তখন যখন আমি কানেস ভ্রমনে গিয়েছিলাম। আমি যদি কানেসে না যেতাম তো মিস বাসেটের সাথে আমার দেখা হতোনা অথবা সাদা ঐ কোটটা যদি না কিনতাম,এঞ্জেলা যদি তার হাঙ্গরের মুখোমুখি না হতো আর আন্টি ডাহলিয়া যদি ব্যাকারেট না খেলতেন।

সত্যি, কানেস হচ্ছে সব নষ্টের গোঁড়া।

ঠিক আছে, আমি সব খুলে বলছি।

আমি কানেস গিয়েছিলাম জীভসকে রেখেই, ও যেতে চায়নি কারন জুনের শুরুতেই ছিল এসকট রউন্ড বলে একটা উৎসব। আমার সাথে ছিল আন্টি ডাহলিয়া আর তার মেয়ে এঞ্জেলা, টাপি গ্লসপ, এঞ্জেলার বাগদত্ত, যদিও সে যোগ দিয়েছিল একেবারে শেষ মুহুর্তে আন্টি ডাহলিয়ার স্বামী,থমাস আঙ্কেল, বাড়িতেই থেকে গেলেন কেন্ না উনি দক্ষিন ফ্রান্স একবারেই সহ্য করতে পারেন না।

তো আপনারা একটা লে-আউট পেয়ে গেলেন- আন্টি ডাহলিয়া, কাজিন এঞ্জেলা আর আমি জুনের শুরুতে কানেসের উদ্দেশে রওনা দিলাম।
আমরা কানেসে ছিলাম প্রায় দুই মাস, সময়টা সবার ভালোই কাটছিল শুধু আন্ট ডাহলিয়া উনার জামা হারিয়েছিলেন ব্যাকারেট খেলায় আর এঞ্জেলার ঐ হাঙ্গরের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনাটা ছাড়া।

জুলাইএর পঁচিশ তারিখে আমি আন্ট ডাহলিয়া আর এঞ্জেলাকে নিয়ে লন্ডন ফিরে এলাম, জুলাইএর ছাব্বিশ তারিখ সন্ধ্যায় আমরা যে যার পথ ধরলাম, আন্ট ডাহলিয়া তার উরসেস্টারশায়ারে ফিরে গেলেন যেখানে টাপি গ্লসস্পের সাথে ওদের দেখা হওয়ার কথা, আমি সোজা ফিরে এলাম আমার ফ্ল্যাটে, ব্যাগপত্র রেখে একটু পরিষ্কার হয়ে চলে গেলাম ড্রোনসে রাতের খাবারের জন্য।
আমার ফ্ল্যাটে আমি যখন গোসল শেষে কাপড়-চোপড় পড়ে তৈরি হচ্ছিলাম,তখন আচমকাই আমাদের কথার মাঝখানে জীভস গুসি ফিঙ্ক নটলের নাম তুললো।

যতটা সম্ভব আমাদের কথাবার্তা হয়েছিল নিম্নরুপঃ

আমিঃ জীভস, আবার এইখানে? কি বলো?
জীভসঃ জী, স্যার।
আমিঃ মানে বলতে চাছছি, ঘরে ফিরলাম।
জীভসঃ একদম ঠিক,স্যার।
আমিঃ মনে হচ্ছে অনেক দিন পর ফিরলাম।
জীভসঃ জী, স্যার।
আমিঃ সময়টা ভালো কেটেছে এসকটে তোমার, তাই না?
জীভসঃ আপনার সাথে একমত,স্যার।
আমিঃ কিছু জিতেছো?
জীভসঃ অধমের জন্য পর্যাপ্ত, স্যার।
আমিঃ জীভস, আর কি খবর বলো? কেউকি আমার খোঁজ করেছিল অথবা কোন ফোন?
জীভসঃ মিঃ ফিঙ্ক নটল,স্যার, উনি প্রায় প্রতিদিনই আসতেন।

আমি তাকালাম, একটু বিশ্রাম নিলাম বললে ভুল হবেনা মনে হয়।
- মিঃ ফিঙ্ক-নটল?
-জী,স্যার।
- তুমি নিশ্চয়ই বলছোনা যে মিঃ ফিঙ্ক-নটল?
-জী,স্যার।
- কিন্তু মিঃ ফিঙ্ক-নটলতো লন্ডনে নেই?
-জী,স্যার।
-হু, আমি উড়ে গেলাম।

আমি আপনাদের বলছি কেন আমি উড়ে গেলাম, কেননা জীভসের এই কথা আমার কাছে খুবই হাল্কা মনে হলো। এই ফিঙ্ক-নটল হচ্ছে এমন এক চীজ যে লন্ডন সহ্য করতে পারেনা আর যার সাথে আপনার জীবনের যাত্রায় নানাভাবে দেখা হবেই হবে। শ্যাঁওলাঢাকা লিঙ্কনশায়ারের এক অজ পাঁড়াগায়ে সে বছরের পর বছর পড়ে থাকে, এমন কি ইটন আর হ্যারোর ম্যাচ দেখতেও সে আসেনা। একবার আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার হাতে কি অনেক কাজ যার জন্য লন্ডনে আসার সময় পাওনা, সে বলল, ব্যাপারটা তা না, কারন হচ্ছে বাগানের মধ্যে তার একটা পুকুর আছে আর পুকুরের নিওটদের (পানির গুইসাপ) স্বভাব পর্যবেক্ষনে তাকে সময় দিতে হয়।
আমি কল্পনা করতে পারছিলাম না এমন কি ঘটল যা তাকে এই মহান শহরে টেনে আনলো। নিওটের বাচ্চাদের সরবরাহ কম না হওয়া পর্যন্ত সে কখনই ঐ গ্রাম ছাড়বেনা এটা আমি বাজি ধরতে রাজি ছিলাম।

- তুমি নিশ্চিত?
-জী,স্যার।
- নামটা ঠিকমতো শুনেছো তো? ফিঙ্ক-নটল?
-জী,স্যার।
- ভালো, এটা খুব আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার। গত পাঁচ বছর সে লন্ডনে ছিলনা। সে কখনই লুকাতো না যে এখানে তার দম বন্ধ লাগে। এখন পর্যন্ত সে আঠার মতো গ্রামে আটকে ছিল, নিওট (পানির গুইসাপ) বেষ্টিত হয়ে।
-স্যার?
-নিওট (পানির গুইসাপ) আরর ওদের বাচ্চারা, জীভস, মিঃ ফিঙ্ক-নটলের প্রান। তুমি নিশ্চয় নিওটের (পানির গুইসাপ)নাম শুনেছো। ঐযে একধরনের প্রানী যারা পুকুরে বড়ো হয়।
- ওহ,স্যার, সালামানডার পরিবারের মোলগে গোত্রের জলজ সদস্য।
-একেবারে ঠিক, গুসি ওদের প্রায় দাসের মতো। স্কুলেও সে ওদের সাথে নিয়ে যেত।
-আমার ধারনা অনেক বাচ্চাই এটা করে, স্যার।
-মনে আছে, সে ঐ নিওটদের (পানির গুইসাপ) ওর পড়ার ঘরে রাখতো একটা কাঁচের চৌবাচ্চায় আর পুরো ব্যাপারটাই ছিল বিদ্ঘুটে।আমরা গুসির এই ব্যাপারটাকে খুব একটা পাত্তা দিইনি। এখন দেখা যাচ্ছে জিনিসটা অনেকদুর গড়িয়েছে।
- ঠিক বলেছেন স্যার।
- একদম ঠিক জীভস, এটা ওর মাথায় চেপে বসেছে। নিওটরা ওকে দখল করে নিয়েছিল, সে এসেছিল মানুষ বেশে কিন্তু ওর জীবনটা শেষ হচ্ছে ঐ আজব প্রানীদের পেছনে। আমার ধারনা, সে ওদের ধরে রাখবে অথবা ছেড়ে দেবে পন করেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওদের কাছেই আত্মসমর্পন করল।
- তাই মনে হয় স্যার।
- সত্যি কথা জীভস, যে কোন শরতেও সে লিঙ্কনশায়ারের ঐ গুহা থেকে বের হয়নি গত পাঁচ বছর,এর মধ্যে ওর কাজ ছিল এক দিন পর পর সেই কাঁচের চৌবাচ্চায় পরিষ্কার পানি ঢালা। তাই তুমি যখন বললে সে হঠাৎ দেখা দিয়েছে আমি অবাক না হয়ে পারিনি। আমি এখনও বিস্বাস করতে পারছিনা। আমার এখনও মনে হচ্ছে কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। যে ঘুঘুটা আমার খোঁজে এখানে এসেছিল আমার মতে সে অন্য প্রজাতির ফিঙ্ক-নটল। আমি যে বস্তুটাকে চিনি সে শিঙ্গের চশমা পড়ে আর ওর মুখখানা দেখতে মাছের মতো। এই বিষয়গুলো কি তোমার তথ্যের সাথে মেলে?

- যে ভদ্রলোক এখানে এসেছিলেন উনি শিঙ্গের তৈরি চশমা পড়েছিলেন, স্যার।
- আর তাকে অনেকটা পাথরের টুকরার মতো দেখাচ্ছিল?
- আপনার এই উদাহরনটা অনেকখানি মিলে যায়, স্যার।
- তাহলে সে অবশ্যই গুসি, কিন্তু এমন কি ঘটল যা ওকে লন্ডনে নিয়ে এলো?
- আমি ঘটনাটা একটু ব্যাখ্যা করতে পারি,স্যার। মিঃফিঙ্ক-নটল আমাকে এই শহরে আসার উদ্দেশ্যটা বলেছেন। উনি এসেছেন কেননা ঐ তরুনীও এখানে আছেন।
- তরুনী?
- জী,স্যার।
-তুমি নিশ্চয়ই বলতে চাচ্ছনা যে সে প্রেমে পড়েছে?
- জী,স্যার।
- আচ্ছা, আমি পপাতধরনীতল হলাম, বুঝলে জীভস।

আসলেই তাই, কৌতুক কৌতুকই, এর একটা সীমা আছে।

এখন আমি এই আজব ঘটনার অন্যান্য দিকগুলোও বিচার করছি। ধরে নিলাম সে দুনিয়ার সব ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে চলে গেছে আর প্রেমে পড়েছে, কিন্তু আমার ফ্ল্যাটে ওর বারবার হানা দেয়ার কারনটা কি? এইসব সময় একজন বন্ধুর প্রয়োজন পড়তেই পারে কিন্তু আমাকেই বেছে নেয়ার কোন কারন তো দেখতে পাচ্ছিনা।

এটা এমন নয় যে আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম না, একসময় আমাদের মধ্যে প্রায়ই দেখাশোনা হতো, কিন্তু গত দুই বছর ওর কাছ থেকে আমি একটা পোষ্টকার্ডও পাইনি।

আমি জীভসকে সব বললাম
- আমার কাছে ওর আসাটা একটু অদ্ভুত, কিন্তু সে এসেছে, তর্কের কোন অবকাশ নেই এখানে। ওর নিশ্চয়ই খুব খারাপ লেগেছে যখন আমাকে পায়নি।
- জ়ী না স্যার, মিঃ ফিঙ্ক-নটল তো আপনার কাছে আসেননি।
-ঠিকমতো বলো জীভস, তুমি এতক্ষন তো আমাকে এটাই বলছিলে।
- উনি আমার সাথে দেখা করার জন্যই এসেছিলেন,স্যার।
-তোমার সাথে? কিন্তু আমি তো জানি তোমাদের আগে কখনো দেখা হয়নি।
- উনি এখানে না আসা পর্যন্ত আমার সেই সৌভাগ্য হয়নি স্যার, আমার মনে হয় উনার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মিঃ সিপারলী আমার কথা উনাকে বলেছেন যে আমি তাকে উদ্ধার করতে পারি।

রহস্য পরিষ্কার হলো। সব বুঝতে পারলাম। আমার বলতে দ্বিধা নেই গত কিছু সময়ে পরামর্শক হিসেবে জীভস বেশ নাম কামিয়েছে, আমার পরিচিত মহলের কেউ কোন গাড্ডায় পড়লে নির্দ্বিধায় জীভসের কাছে তা চালান করে দেয়। জীভস তখন ক কে উদ্ধার করে। ক খ কে পাঠায়,যখন সে খ এর সমস্যা সমাধান করে, খ পাঠায় গ কে আর ক্রমান্বয়ে একজন আর একজনকে পাঠাতেই থাকে।

আর এভাবেই জীভসের পরামর্শ দেয়া বাড়ছেই। বুড়ো সিপ্পি, আমি জানি, এলিজাবেথ মুনের সাথে জড়ানোর জন্য জীভসের প্রচেষ্টায় সে মুগ্ধ। কাজেই এটা খুবি স্বাভাবিক যে সে গুসিকেও জীভসের কথা বলবে।

-ওহ, তো তুমি ওর জন্য কাজ করছো?
- জী,স্যার।
- হমম, এখন বুঝতে পারছি। তো গুসির সমস্যা কোথায়?
- আজব মিল বলতে পারেন স্যার, মিঃ সিপারলীকে যেমন সাহায্য করতে হয়েছিল এখনেও প্রায় এক কাহিনী। সন্দেহ নেই মিঃ সিপারলীর সেই ঝামেলাটা আপনার মনে আছে,স্যার।উনি মিস মুনের মারাত্মক অনুরক্ত ছিলেন, এমনকি উনার কথা বলাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

আমি নড করলাম।
-সিপারলী কেসটা আমার মনে আছে। তুমি বলছো গুসিও ঠিক একই ম্যানহোলে পড়েছে।
- প্রতি বার বিভিন্নভাবে সে বিয়ের প্রস্তাব তৈরি করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার সাহস হয়না।
- তারপরও ঐ তরুনীকে সে তার স্ত্রী হিসেবে পেতে চায়, তাই তো?
- অক্ষ্ররে অক্ষরে, স্যার।

মজা পাচ্ছি।
-এটা আসলে অবধারিতই ছিল। প্রকৃতির এই খেলায় এই ছোঁড়াও ঘায়েল হবে এটা কখনো চিন্তা করিনি। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে এই পথটা তার জন্য একটু কঠিন।
- জী, স্যার।
- ওর জীবনের দিকে তাকিয়ে দেখো
- জী, স্যার।

- আমি নিশ্চিত সে বছর কে বছর কোন মেয়ের সাথে কথা বলেনি। এটা আমাদের জন্য একটা শিক্ষা যে কখনই নিজেকে অজ পাড়াগাঁয়ে বন্দি করে রাখতে নেই আর ঘন্টার পর ঘন্টা কাঁচের চৌবাচ্চার দিকে তাকিয়ে থাকা ঠিক নয়।এগুলো করলে উদ্ধত পুরুষ হিসেবে কখনই প্রতিষ্ঠা পাওয়া যাবেনা। আমাদের সামনে দুটো পথ খোলা আছে, আমার অজ পাড়াগাঁয়ে থেকে সারাদিন কাঁচের চৌবাচ্চার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি অথবা যৌবন উপভোগ করতে পারি। কিন্তু দুটোই একসাথে করা যাবেনা।
- না স্যার।

গুসির সাথে শেষ কবে দেখা হয়েছিল মনে পড়লো, প্রায় দুই বছর আগে। সেবার যাত্রাপথে ওর বাড়িতে বিরতি নিয়েছিলাম, দুপুরের খাবারের সময় কিছু সবুজ ধরনের পা ওলা বস্তু দিয়ে সে আমাকে মজা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। ওদেরকে সে আদর করছিল ঠিক মায়ের মতো আর শেষ পর্যন্ত ওদের এক সদস্য আমার সালাদের বাটিতে পড়ে গিয়েছিল।সেই ছবিটা এখনও চোখে ভাসছে আর এই ছোঁড়ার জন্য আমার মায়া হচ্ছে, ওর জন্য ওই তরুনীকে জয় করা খুবি কঠিন হয়ে যাবে যদি সেই মেয়েটা এখনকার আধুনিক মেয়েদের মতো হয় তো।আমার মনে হচ্ছে মেয়েটা এরকমই হবে।
- জীভস,ঠিক করে বলতো, আমি বললাম, জানি খারাপটাই শুনব, “গুসির ওই মেয়েটা কেমন?”
- আমার সাথে এখনো দেখা হয়নি,স্যার। মিঃ ফিঙ্ক-নটলের মতে উনি খুব আকর্ষনীয়া।
- মেয়েটাকে সে পছন্দ করে, তাই না?
-জী, স্যার।
- সে কি মেয়েটার নাম বলেছে তোমাকে? আমি হয়তো চিনতেও পারি।
- মিস বাসেট স্যার, মিস মেডেলিন বাসেট।
-কি?
-জী, স্যার।

আমি ধাঁধায় পড়ে গেলাম।

-জীভস! চমৎকার, দুনিয়াটা আসলে অনেক ছোট, তাই না, কি?
- উনি আপনার পরিচিত, স্যার?
- খুব ভালো করে চিনি, খবরটা পেয়ে একটু নিশ্চিন্ত হলাম, জীভস, আমার মনে হচ্ছে এখন কাজ করার মতো একটা পরিবেশের সৃস্টি হয়েছে।
- আসলেই স্যার?
- অবশ্যই। স্বীকার করছি এই খবরটা জানার আগ পর্যন্ত আমি বেচারা গুসির যেকোন মেয়েকে যেকোন অবস্থায় আয়ত্তে আনার ক্ষমতা সম্পরকে সন্দিহান ছিলাম। তুমিও নিশ্চয় আমার সাথে একমত হবে।
- আপনার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে,স্যার।
- ক্লিওপেট্রা ওকে কখনই পছন্দ করতো না।
- সম্ভবত না, স্যার।
- ওকে আসলে অন্য কেউই পছন্দ করতো না।
-জী,স্যার।
- কিন্তু যখন তুমি বললে তার অগ্রহের প্রধান বস্তু মিস বাসেট, তখন একটু আশার আলো দেখা যাচ্ছে। হয়তো মেডেলিন বাসেটের সাথে ওর মিলেও যেতে পারে।

এই বাসেট, কানেসে আমাদের সহযাত্রী ছিল, এঞ্জেলা আর বাসেটের মধ্যে এক অস্বাভাবিক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল যা সচরাচর দেখা যায়না। আমাদের বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। যদিও আমার গাম্ভীর্যপুর্ন মুহুর্তগুলোতে আমি কখনই কোন নারী প্রজাতির দিকে এক পাও অগ্রসর হইনা।

আর সবচেয়ে কষ্টদায়ক ও বিরক্তিকর ব্যাপার হচ্ছে যতই তার সাথে দেখা হয়েছে ততই আমি কথা বলার মতো ভাষা খুঁজে পাইনি।

আপনারা জানেন মেয়েদের সাথে মাঝে মাঝেই এমন হয়। তারা যেন আমাদের ভেতর থেকে সাহস কেড়ে নেয়। আমি বলতে চাচ্ছি , তাদের ব্যাক্তিত্ত্বই এমন যা গলার স্বরযন্ত্র অবশ করে দেয় আর মস্তিস্ককে ফুলকপিতে পরিনত করে। আমার আর মিস বাসেটের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছিল, ওর উপস্থিতিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাট্রাম উষ্টার টাইয়ের গোরা নিয়ে ব্যস্ত নয়তো পা ঝাড়া দিচ্ছে, এদিক সেদিক তাকাচ্ছে যা ছিল একেবারে বেকুবের মতো কাজ।
বলে নিই, তার সৌন্দর্য্য আমাকে বেকুব বানায়নি, সে ছিল সুন্দর চোখের ব্লন্ড চুলের এক মিষ্টি মেয়ে কিন্তু তাকে দেখে দমবন্ধও হয়ে যায়না।

আসলে আমার এই সমস্যার কারন ছিল তার সপ্রতিভ কথাবার্তা আর তার মানসিক আচরন। আমি ভুল কোন ব্যাখ্যা দিতে চাইছিনা যে সে কবিতা লেখে , কিন্তু তার কথোপকথন আসলে আমাকে সেটাই বলতে বাধ্য করে।

আমার আর তার মানসিক সামঞ্জস্য একেবারেই নেই, কিন্তু গুসির সাথে সমীকরনটা একবারেই ভিন্ন। আমার মধ্যে এই ধারনা কাজ করছে যে এই মেয়েটা আদর্শ আর চেতনা দিয়ে চালিত আর গুসিও অনেকটা একই রকম।

গুসি হচ্ছে স্বাপ্নিক এক পাখি, সবাই নিজেকে এক অজ পাড়রঁগায়ে বন্দি রাখতে পারেনা আর নিওটদের জন্য জান কোরবান করতে পারেনা, যেকোনভাবে সে এখন প্রেমে পড়ে গেছে আর এই সুযোগ ওদের দুজনের ছুঁড়ে ফেলা উচিত নয়।

- ‘মেয়েটা ওর জন্য একদম ঠিক’, আমি বললাম।
- শুনে খুব ভালো লাগলো, স্যার।
- সেও মেয়েটার জন্য একদম ঠিক, জীভস।
- ‘খুব ভালো, স্যার’, জীভস উত্তর দিল, ‘আমি এই ব্যাপারটায় এখনই নজর দিচ্ছি’

এখন পর্যন্ত আমি জানি আপনারাও স্বীকার করবেন যে সবকিছুতেই একটা সাম্য বিরাজ করছিল। কর্মদাতা আর কর্মচারীর মধ্যে অতি সাধারন মিষ্টি মধুর কথাবার্তা। কিন্তু ঠিক এই মুহুর্তে, আমি আফসোসের সাথে বলছি, ব্যাপারটা এক অপ্রীতিকর রাস্তায় মোড় নিয়েছে। পরিবেশ আচমকাই বদলে গেছে, ঝড়ের মেঘ জমতে শুরু করেছে, আমরা কোথায় আছি জানার আগেই, এই কথাটা পরিবেশ পালটে দিয়েছে। আমি জানতাম, উষ্টার হাঊসে আগেও এমন ঘটেছ্বে।

ঊপরের কথোপকথনের সময়, আমি আসলে আয়েশ করে তৈরি হচ্ছিলাম, একটা একটা করে মোজা, জুতো পড়ছিলাম, আর ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠছিলাম মানে ভেসট,সার্ট, টাই ঠিক করছিলাম আর জীভস নিচু হয়ে আমার জিনিসপত্র গোছাচ্ছিল।
সে আমার দিকে এগিয়ে এলো হাতে সাদা মতো একটা বস্তু নিয়ে। ওটা দেখামাত্র আমার মনে হলো আরেকটা মনকষাকষির উপলক্ষ্য তৈরি হতে যাচ্ছে, আরেকটা দুঃখজনক সংঘর্ষ দুই শক্তিশালী মানুষের মাঝে, আর বারট্রাম, যে সত্যের পক্ষে লড়াই করে তার পুরবপুরুষের মতো, সে কখনই হাল ছাড়বে না।

আমি জানিনা আপনিও আমার মতো এই গ্রীষ্মে কানেস গিয়েছিলেন কিনা, তাহলে আপনার মনে থাকবে, পার্টির প্রান হবার জন্য অনেকেই ক্যাসিনোতে সান্ধ্যকালীন ট্রাউজারের সাথে পিতলের বোতামওলা সাদা মেস জ্যাকেট পড়েছিল। যখনি সেই জ্যাকেট নিয়ে আমি কানেস ছাড়লাম তখনি ভাবছিলাম জীভস এই জিনিসটাকে কিভাবে নেবে।

বিকেলের পোষাকের বেলায় জীভস মারাত্মক সেকেলে আর প্রতিক্রিয়াশীল, নরম পশমী কাপরের সার্টের বেলায়ও সে এমন করেছিল, এবার তো অবস্থা আরো শোচনীয় হবে মনে হচ্ছে। পাম বীচের ক্যাসিনো থেকে জ্যাকেটটা কেনার সময় আমারও কেমন উসখুশ লাগছিল কিন্তু তারপরও কেন জানি জিনিসটা কিনে ফেললাম।

আমি দৃঢ় হবার প্রস্তুতি নিলাম।

- জীভস? আমি বললাম, যদিও আমার গলার স্বর ছিল কোমল, কিন্তু কেউ একজন আমার চোখ দেখলে বুঝতে পারতো সেখানে লৌহ কঠিন ভাব ঝিলিক দিচ্ছে। জীভসের মস্তিকের কার্যক্ষমতা সম্পকে আমার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা, কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে মালিকের কাছ থেকে দায়িত্ব কেড়ে নেয়া, এই ব্যাপারটা সামাল দেয়ার সময় এসেছে। এই মেস জ্যাকেট আমার প্রানের খুব কাছের বস্তু আর আমি প্রয়োজনে উষ্টার পরিবারের গৌরবগাঁথার সেই যুদ্ধের মতো লড়াই করে যাবো।
- হ্যা, জীভস? আমি বললাম, “তুমি কিছু ভাবছো , জীভস?”
- আমি ভয় পাচ্ছি আপনি কানেস ছাড়ার আগে অন্য কারো কোট নিয়ে চলে এসেছেন, স্যার।

আমার লৌহ কঠিন ভাব একটু বাড়ালাম।

- না, জীভস, আমি একই সুরে বললাম, তুমি যা নিয়ে কথা বলছ তা পুরোপুরি আমার, আমি ওখান থেকে কিনেছি।
- আপনি এটা পড়েছেন, স্যার?
- প্রতি রাতে।
- কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই এটা ইংলান্ডে পড়ার কথা ভাবছেন না, স্যার?

আমি দেখলাম আমরা আবার চুড়ান্ত মুহুর্তে চলে এসেছি।
- আমি তাই ভাবছি, জীভস।
- কিন্তু স্যার...।
- তুমি কিছু বলছিলে,জীভস?
- এটা একবারেই মানানসই নয়, স্যার।
- আমি তোমার সাথে একমত নই,জীভস। আমি আশা করছি এই জ্যাকেটা অনেক প্রশংসা পাবে। আগামীকাল সবার সামনে পঙ্গো টুইসলেটনের জন্মদিনে আমি এটা পড়ে যাবো আর এটা সবাইকে মাতিয়ে দেবে। আর তর্ক নয়, জীভস, আর কথা নয়। তুমি যাই বলোনা কেন, আমি এই জ্যাকেট পরবোই।
- খুব ভালো, স্যার।
সে হাবিজাবি জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেল। আমি এই বিষয়ে আরো কিছু বললাম না। আমি এই যুদ্ধে জিতেছি আর উষ্টাররা পরাজিত শত্রুর সামনে উৎসব করেনা। এখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে আমি ওকে হাসিমুখে বিদায় জানালাম আর পরামর্শ দিলাম যেহেতু আমি রাতে বাইরে খাবো, সে চাইলে বিকেলটা ছুটি নিতে পারে, চাইলে সিনেমাও দেখে আসতে পারে।

সে তেমন আগ্রহ দেখালো না।
- ধন্যবাদ, স্যার। আমি এখানেই থাকছি।

আমি ওকে পর্যবেক্ষন করলাম।

-কোন সমস্যা,জীভস?
- না, স্যার। আমার এখানেই ভালো লাগবে। মিঃ ফিঙ্ক-নটল বলেছিলেন তিনি আজ সন্ধ্যায় আসতে পারেন।
- ওহ, গুসি আসছে, আসলেই? আচ্ছা, ওকে আমার ভালোবাসা দিও।
- খুব ভালো, স্যার।
- ওকে পানীয় আর যা লাগে আপ্যায়ন কোরো,
- খুব ভালো, স্যার।
-ঠিক আছে,জীভস।

আমি তারপর ড্রোনসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে এলাম।

ড্রোনসে আমি পঙ্গো টুইস্লেটনের দিকে ছুটে গেলাম, ছোঁড়াটা তার আসন্ন বিয়ে নিয়ে বকবক করেই গেল, এই সংক্রান্ত খবর আমি আমার নিজস্ব সুত্র থেকে আগেই পেয়েছিলাম, ওর হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যখন বাসায় এলাম তখন প্রায় এগারোটা বাজে।

দরজা খোলার সময় আমি সিটিং রুম থেকে কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছিলাম আর যখন আমি সিটিং রুমে ঢুকলাম তখন বুঝলাম কথা হচ্ছে জীভস আর এক জলজ্যান্ত শয়তানের মাঝে।

আর একটু খেয়াল করে দেখতে বুঝলাম এ হচ্ছে গুসি ফিঙ্ক-নটল, সেজে আছে ফাউষ্টের শয়তানের মতো।









৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×