somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক হৃদয়স্পর্শী হজ্জের গল্প

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সাঈদ জেদ্দাহ এয়ারপোর্টের ওয়েটিংরুমে বসে ছিলেন। তার পাশে আরো একজন ছিলেন, তিনিও হজ্জ সম্পন্ন করেছেন।
মানুষটি বললেন, আমি একজন ঠিকাদার হিসেবে কাজ করি এবং আল্লাহ আমাকে ১০তম হজ্জ পালন করার সৌভাগ্য দিয়েছেন।
সাঈদ বললেন, হজ্জ মাবরুর! আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন এবং গুনাহ সমূহ ক্ষমা করুন।
মানুষটি মুচকি হাসলেন এবং বললেন আমিন। এরপর বললেন , আপনি কি এর আগে হজ্জ করেছেন?
সাঈদ বলতে ইতস্ততঃ করলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন, ওয়াল্লাহি! এটা অনেক দীর্ঘ গল্প।আমি চাইনা আমার কথায় আপনার মাথা ব্যাথা হোক! লোকটি বললেন, দয়া করে আমাকে বলুন, আমাদের এখন কিছুই করার নেই, আমরা শুধুই অপেক্ষা করছি।
সাঈদ হাসলেন, বললেন "হ্যা, অপেক্ষা দিয়েই আমার গল্পের শুরু!
.
হজ্জে যাবার জন্য আমি অনেক বছর যাবত অপেক্ষা করছিলাম। ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে ৩০ বছর একটা প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করার পর আমি হজ্জের জন্য যথেষ্ট টাকা জমাতে পেরেছিলাম। যেদিন আমি টাকা তুলতে গিয়েছিলাম সেইদিনই হঠাৎ এক মায়ের দেখা পেলাম যার প্যারালাইজড সন্তানের চিকিৎসা আমি করেছিলাম।আমি তার মুখে চিন্তার ছাপ দেখতে পাচ্ছিলাম।
তিনি বললেন, "আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করুন ভাই সাঈদ। এটা আমাদের হাসপাতালে শেষদিন।"
আমি তার কথা শুনে অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তিনি আমার চিকিৎসায় খুশি নন।তাই তিনি তার সন্তানকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
মহিলাটি বললেন, "না ভাই সাঈদ, আল্লাহ সাক্ষী যে আপনি আমার ছেলের সাথে পিতার মত আচরণ করেছেন এবং চিকিৎসা দিয়ে তাকে সাহায্য করেছেন যখন আমরা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম।"
এরপর তিনি বিষন্নভাবে চলে গেলেন।
.
পাশে থাকা মানুষটি কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বললেন, ব্যাপারটা অদ্ভুত! যদি তিনি আপনার চিকিৎসায় সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন আর তার ছেলের উন্নতিও হচ্ছিল, তবে কেন তিনি চলে গিয়েছিলেন? সাঈদ বললেন, সেটা আমিও ভেবেছিলাম।তাই কি ঘটেছে তা জানার জন্য কতৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে বলেছিল যে ছেলেটার বাবার চাকরি চলে গিয়েছিল, তাই তার ছেলের চিকিৎসার খরচ চালাতে পারছিলেন না।"
.
পাশে বসা মানুষটি বললেন, আল্লাহ ছাড়া কারো কোন শক্তি,সামর্থ্য নেই। তাদের কত দুর্ভোগ! আপনি কিভাবে ব্যাপারটার গতি করেছিলেন? সাঈদ বললেন, আমি ম্যানেজারের কাছে গেলাম এবং হাসপাতালের খরচে ছেলেটার চিকিৎসা করাতে যুক্তিতর্ক করলাম।কিন্তু সে তৎক্ষণাৎ সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল এবং বলল, "এটা একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান, দাতব্য সংস্থা না।" আমি পরিবারটির জন্য দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে অফিস ত্যাগ করলাম।
.
তখন হঠাত আমার পকেটে হাত রাখলাম, সেখানে আমার হজ্জের জন্য প্রস্তুতকৃত টাকাগুলো ছিল।আমি আমার জায়গায় কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ালাম তারপর মাথা উপরের দিকে তুলে আমার রবকে বললাম, "ও আল্লাহ! আপনি জানেন আমি কেমন অনুভব করছি! আপনার ঘরে যাওয়া ও হজ্জ করা এবং আপনার রাসূলের মসজিদে যাওয়ার চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয় কিছুই নেই। আপনি জানেন আমি সারাটি জীবন এই মূহূর্তের জন্য কাজ করেছি।কিন্তু আমি এই দরিদ্র মহিলা ও তার সন্তানকে নিজের উপর প্রাধান্য দিচ্ছি।তাই আপনার অনুগ্রহ থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না।" আমি হিসাবের ডেস্কে গেলাম এবং ছেলেটার চিকিৎসার জন্য আমার কাছে থাকা সমস্ত টাকা দিয়ে দিলাম।যা পরবর্তী ছয়মাসের জন্য যথেষ্ট ছিল। আমি হিসাবরক্ষককে অনুনয় করে বললাম যেন মহিলাটিকে বলা হয়, বিশেষ অবস্থার কারণে চিকিৎসার খরচ হাসপাতাল থেকে দেয়া হচ্ছে।
.
হিসাবরক্ষক এর দ্বারা প্রভাবিত হলেন, তার চোখে পানি এসে গেল। বললেন "বারাক আল্লাহ ফিক।" পাশে বসা মানুষটি বললেন, আপনি যদি আপনার সমস্ত টাকা দান করে থাকেন,তাহলে আপনি কিভাবে হজ্জে এলেন?
.
সাঈদ বললেন, সেদিন বিষন্ন মনে ঘরে ফিরে এলাম, হজ্জে যাওয়ার সুযোগ হারানোর কারনে। কিন্ত আমার মন আনন্দে ভরে উঠেছিল এই কারনে যে আমি এক মহিলা ও তার সন্তানের দুঃখ দূর করেছিলাম।
আমি সেই রাতে ঘুমাতে গেলাম অশ্রুসিক্ত অবস্থায়। স্বপ্নে দেখলাম আমি কাবা ঘর তাওয়াফ করছি এবং মানুষেরা আমাকে সালাম দিচ্ছিল। তারা আমাকে বলেছিল, "হজ্জ মাবরুর, হে সাঈদ! কারন তুমি পৃথিবীতে হজ্জ করার আগেই নভোমণ্ডলে হজ্জ করেছ।"
আমি তাৎক্ষণিকভাবে জেগে উঠলাম এবং অবর্ণনীয় আনন্দ অনুভব করলাম।সবকিছুর জন্য আল্লাহর প্রশংসা করলাম এবং তার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ছিলাম।
.
যখন ঘুম থেকে জেগে উঠলাম আমার ফোন বেজে উঠল।হাসপাতালের ম্যানেজার ফোনেটি করেছিলেন।
তিনি আমাকে বললেন, " হাসপাতালের মালিক এ বছর হজ্জে যেতে চাচ্ছেন এবং তিনি ব্যক্তিগত থেরাপিস্ট ছাড়া সেখানে যাবেন না। কিন্তু তার থেরাপিস্টের স্ত্রী গর্ভবতী এবং তিনি গর্ভাবস্থার অন্তিম পর্যায়ে পৌছেছেন। তাই সে তার স্ত্রীকে ছেড়ে যেতে পারে না।
আপনি কি আমার একটা উপকার করবেন?
আপনি কি তাকে তার হজ্জে সংগ দিতে পারেন?"
আমি শুকরিয়ার সিজদা করলাম। আপনি যেমন দেখছেন, আল্লাহ তার ঘরে যাওয়ার জন্য আমাকে কবুল করলেন কোন অর্থব্যয় ছাড়া।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী আমাকে কিছু দিতে জিদ করলেন। আমি তখন তাকে সেই মহিলা আর তার ছেলের গল্প তাকে শুনালাম।
.
তিনি নিজ খরচে ছেলেটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চাইলেন।আর নিঃস রোগীদের জন্য হাসপাতালে একটা দানবাক্সের কথা ভাবলেন। তার উপর তিনি ছেলেটির বাবাকে তারই একটা কোম্পানিতে চাকরি দিয়েছিলেন।
এমনকি তিনি সে টাকাগুলোও ফেরত দিয়েছিলেন যা আমি ছেলেটার চিকিৎসার জন্য দিয়েছিলাম। আপনি কি আমার রবের অনুগ্রহের চেয়ে বড় অনুগ্রহ আর দেখেছেন? সুবহানআল্লাহ!
.
পাশে বসা মানুষটি তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন আমি কখনো আজকের মত লজ্জা অনুভব করিনি। আমি একবছর অন্তর হজ্জ পালন করতাম আর ভাবতাম আমি মহৎ কোন কাজ করছি। আর ফলাফলস্বরূপ আল্লাহর কাছে আমার অবস্থান উন্নত হবে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আপনার হজ্জ আমার হাজার হজ্জের সমতুল্য।
আমি আল্লাহর ঘরে গিয়েছিলাম, কিন্তু আল্লাহ তার ঘরে আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন। আল্লাহ আপনার হজ্জ কবুল করুন!
.
সংগৃহীত
রাকিবুল হাসান
সংগ্রহ............. WAFI LIFE -wafi.com
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×