"চ্যান্টা".......
শব্দটির শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ কি বা আদৌ কোন অর্থ আছে কিনা জানা নাই। অবশ্য জানার চেষ্টাও কখনও করা হয় নাই।
তবে যেসব গাই (গাভী) দুধ দেয় না, দুধে হাত দিলেই লাফালাফি করে, উল্টা গৃহস্থকে লাথি দেয় সেগুলোকে অজ পাড়া-গাঁয়ের মানুষ "চ্যান্টা গাই" বলে। অনুরুপভাবে এক শ্রেনীর হুজুরদেরকেও তারা "চ্যান্টা হুজুর" বলে।
তবে এসব হুজুরগণ যে শুধু গাঁও-গেরামেই আছে এমনটা ভাবার কোন কারণ নাই। শহরেও এদের দৌরাত্ব বেশ প্রবল।
সাধারণ মুসুল্লীরা সপ্তাহের বাকি দিনগুলো পেটের ধান্ধায় ব্যস্ত থাকলেও শুক্রবার ছুটির দিনে জুমার নামাজে অংশগ্রহণের চেষ্টা ও আন্তরিকতার কমতি নেই। এদিন হজ্বের সওয়াব পাওয় যাবে। তাই, একটু আগেভাগেই রেডি হয়ে ভাল কাপড়-চোপড় পড়ে বাচ্চা-কাচ্চাসহ মসজিদে উপস্থিত হয়ে সামনের দিকের কাতারে বসার একটা প্রতিযোগিতাও থাকে। লক্ষ্য- সারা সপ্তাহে যা কিছুই করেছি আজ হুজুরের সুললিত কন্ঠে লম্বা সুর করে টেনে টেনে কোরান হাদিসের কিছু বাণী, নবী-রাসুলদের জীবনী শুনে অশেষ নেকী হাসেল করা আর নামাজ শেষে লম্বা মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে সারা সপ্তাহের সকল গোনাহ মাফ করিয়ে নিষ্পাপ মাসুম বাচ্চা হয়ে ঘরে ফেরা।
কিন্তু, কিছু মসজিদে পৌছার পরে.............
সারা সপ্তাহ এদের পাওয়া যায় না, আজ পেয়েছি! সারা জীবনের অর্জিত সকল জ্ঞান আজ ঢেলে দিতে হবে!! নিজের পান্ডিত্য আর শ্রেষ্ঠত্য জাহির করার এমন সুযোগ খুব কমই পাওয়া যায়!!!
তাই, হুজুরের কর্কশ কন্ঠে, তীব্র চিৎকারে, দম ফাটানো শব্দে তার গলা কিংবা মাইক না ফাটলেও মুসুল্লিদের কান ফাটানো বয়ান। ব্যাঙাত্বক ও আক্রমণাত্বক ভাষায় অন্য ধর্মের ও মসজিদে অনিয়মিত সাধারণ মুসুল্লিদের ইহকাল-পরকাল সব তিনি একদিনেই শেষ করে দিলেন। তীব্র চিৎকারে মুসুল্লিদের কান ফাটলেও কানে হাত দেয়া যাবেনা, তাতে হুজুরের ও ধর্মের অবমাননা হবে। আবার দাতে দাত খিইচ্চা ঝিম মাইরা বইসাও থাকা যাবেনা, হুজুরের মূল্যবান বয়ানের জবাবে মাঝেমাঝে চিৎকার করে "সুবহান আল্লাহ", "আলহামদুলিল্লাহ", "নাউযুবিল্লাহ" ইত্যাদি শব্দ বলতে হবে, হুজুরের নির্দেশ অমান্য করা যাবেনা। তাতে সব-কাল এখনই শেষ হয়ে যাবে।
নামাজ শেষে ফিরতে ফিরতে সাধারণ মুসুল্লি পাপী বান্দারা ভাবে- পরকাল তো এমনিতেই শেষ, আপাতত কানের চিকিৎসা খরচ বাচিয়ে ইহকালটা অন্তত রক্ষা করি। তাই আর না............
বিশ্বব্যাপী আজ ইসলামের এই দৈন্যদশা, ইসলাম বিরোধী মনোভাব তৈরি, ইসলাম বিমূখ শ্রেণীর উদ্ভব এমনকি সাধারণ মুসলমানদের ইসলামের অত্যাবশ্যক হুকুম-আহকাম পালন করা থেকে দুরে ঠেলে দিতে এসব "চ্যান্টা হুজুরদের" ভূমিকা অগ্রগণ্য।
মসজিদ কমিটিগুলোকে আরো অনেক সচেতন হওয়ার অনুরোধ রইল।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:২৬