সকাল ঠিক ৯ টায় দ্বি-চক্রযানটি দুজন আরোহী নিয়ে সেনপাড়া থেকে একটি বিশেষ কাজে নীলফামারীর পথে যাত্রা শুরু করে।
১ম জন- অতি রক্ষণশীল সনাতনী ধর্ম ইসকন এর অনুসারী। যিনি হয়ত বিশেষ ফুলে পূজোর শেষে সারাদিনের নিরাপত্তা, সুস্থতা ও সাফল্য কামনায় বিশেষ মন্ত্র জপে ঠাকুর সমীপে সকালের প্রার্থনা করে বাইকের ড্রাইভিং সিটে বসেছেন।
আর ২য় জন- আধুনিক উদারপন্থী মুসলিম। তিনিও হয়ত বিশেষ দোয়া পাঠ করে একই কামনায় পিছনের আসনে বসে পড়েছেন।
হাইওয়ে নয়, অনেক পথ ঘুরে অনেক কিছুর পরে সেটি থামল নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
প্রোগ্রামের সকল সেশন শেষে একজন বসে থাকেন আরেকজনের জোহরের নামাজ শেষের অপেক্ষায়। ১ম জন তার সম্প্রদায়ভুক্ত সুনির্দিষ্ট স্থান ব্যতীত অন্যকারো হাতের কোন খাবার বা পানীয় গ্রহণ করেন না। যদিও ২য় জন তেমন কোন বাছ-বিচার ছাড়াই হালাল সর্বভুক। তাই দুজনের দুপুরের খাবার শেষ হয় আলাদা স্থানে অবেলায়।
ফিরতে হবে। নীলফামারী হতে রওয়ানা হতেই আসরের আজান শোনা যাচ্ছিল। তাই, সৈয়দপুর এসে একজন অপেক্ষায় থাকে অন্যজনের নামাজ শেষের ও সাথে থাকে চা পানের সময়।
তারপর দুজনের গন্তব্য তারাগঞ্জে অবস্থিত ইসকন মন্দির। বিভিন্ন ফুলের বাগান সহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিপাটি পুরো মন্দির এলাকা। অভ্যর্থনা দেখেই বুঝা যায় ১ম জন এখানে বেশ পরিচিত, প্রায়ই আসেন, থাকেন। ভিতরে প্রবেশের পূর্বে ১ম জন মন্ত্র পড়ে প্রনাম করে নিজেকে হয়ত পরিশুদ্ধ করে নেয়ার চেষ্টা করে! আর ২য় জন এখনো জোহরের অজু সহ, পুত-পবিত্র! মন্দিরের ভিতরে অতি সুরক্ষিত বিশেষ অংশে বেশ পরিচ্ছন্ন বিশেষ ডিজাইনের দামী পোশাক, অলংকার, ফুল ও পুষ্পমাল্যে সুসজ্জিত কৃষ্ণ, তার বাম পাশে রাধা আর ডান পাশে তাদের মহাপ্রভুর প্রতিমা। প্রতিদিন নাকি এসব পোষাক পরিবর্তন করা হয়। নতুন করে আবার সাজানো হয়। এসব কাজে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ও অনুমতিপ্রাপ্ত পূজারী রয়েছেন। মাটির প্রতিমার গায়ে এত সুসজ্জিত মূল্যবান পোষাক, অলংকার, পুষ্পমাল্য দেখে অনেকের মনে হয়ত অনেক প্রশ্ন উদয় হতে পারে। তবে, ভক্তের সর্বোচ্চ সামর্থ্যের মূল্যবান উপহার তার প্রভুদের গায়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
১ম জনের বিশেষ প্রার্থনা শেষে ঘুরেফিরে মন্দির পরিদর্শন করে আবার যাত্রা শুরু হয়।
তবে তারাগঞ্জের একটু সামনে এগিয়েই একজন আবারো অপেক্ষা করে আরেকজনের মাগরিবের নামাজ শেষের।
বাইক রংপুরের পথে। রাতের হাইওয়ে এত ছোট যানবাহনের জন্য একটু ঝুঁকিপূর্ণ। ১ম জন হয়ত মনে মনে ঠাকুরের কাছে মন্ত্র জপে। হয়ত ২য় জনও মনে মনে দোয়া পড়ে, তছবী জপে। এবং যথাসময়ে সম্পূর্ণ নিরাপদে, ছহি-ছালামতে বাইক পৌছে ২য় জনের বাসার সামনে।
দুজনের সারাদিনের দৃশ্যত আচারে, মন্ত্র-দোয়ায় পার্থক্য সুস্পষ্ট হলেও তা পৌছে হয়ত একই স্রষ্টার দরবারেই। দুজনই নিজেকে সপে দেন নিজ নিজ প্রভূর কাছে। তবে দুজনেরই নিরাপত্তা, সুস্বাস্থ্য, সাফল্যের ভার নেন হয়ত একই স্রষ্টাই।
আর দিনের শুরুতে যা ছিল, দিন শেষেও তাই। দুজনের ধর্ম হয়ত একটাই। তা হল- মানবধর্ম।।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১৮