জুলাই মাসের প্রচণ্ড গরমে ঘেমে আমি বাস থেকে নামলাম।দুপুর দুইটার মত বাজে।অফিস বন্ধ আজকে।তবু ঘর থেকে বের হয়েছি,ঘরে থাকতে ইচ্ছা হচ্ছেনা,সন্ধ্যা নামা পর্যন্ত বাইরেই থাকব,সকাল থেকে পেটে একটা কলা আর এক কাপ চা ছাড়া
কিছুই পড়েনি।শীলা রাগ করে ওর বান্ধবীর বাসায় চলে গেছে,যাওয়ার সময় কিছু বলে যায়নি অবশ্য,তবু শিওরলি ওর বান্ধবীর বাসা বাড্ডাতেই আছে।থাকুক।দুই-তিন্টা দিন থাকলে কি আর সমস্যা হবে।সমস্যা হচ্ছে একা বাসায় থাকা,বাসায় পড়ে থাকলেই মেজাজটা বিগড়ে যাচ্ছে,বুয়াটা সকাল এসে কাপড়-চোপড় ধুয়ে যাবার কথা,এল না।তাড়াহুড়া করে চা-কলা খেয়ে ধোয়ার কাপড়গুলো লণ্ড্রিতে দিয়ে চলে আসলাম এই শাহবাগ এলাকায়।মন খারাপ হলে এখানে চলে আসি আমি,একা একা বসে থাকি,সিগারেটের পর সিগারেট টেনে শেষ করি।শীলা নেই ,কেউ বলবেনা।"আর কত সিগারেট খাবা?"
মেজাজ খারাপ করে মোবাইল টা সাথে আনলাম না,এখন মনে পড়ল,কোন জরুরী ফোন যদি আসে?আসলে আসুক!একদিন ফোন না ধরলে দুনিয়া উলটে যাবে না...রমনা পার্কের ২নং গেটে ঢুকে বেশ খানিকক্ষণ হাঁটলাম।পেট টা মোচড় দিচ্ছে খিদায়।শার্টের পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরালাম।বমি বমি ভাব হচ্ছে।পার্কের ভিতর দিক দিয়ে গিয়ে একটা খালি বেঞ্চে বসে পড়লাম,আরো কিছুক্ষণ বসে থাকলে খিদাটা কেটে যাবে।
এক্সকিউজ মি!
-আমাকে বলছেন?
-জ্বি,এখানে বসতে পারি?
-বসুন না,কে মানা করেছে
-ধন্যবাদ
ভাল করে খেয়াল করিনি,কে আসল,কে বসল।আর কোন কথা বলছেনা দেখে আমি পাশ ফিরে দেখলাম,মুখ দেখা যাচ্ছে না,চুল দিয়ে মুখের একপাশ ঢাকা,হাল্কা নীল শাড়ি,গাঢ় নীল ব্লাউজ,হাত আর কাঁধের খোলা অংশ দেখে অনুমান করলাম মেয়েটার গায়ের রঙ শীলার মতই,শ্যামলা।কি আশ্চর্য! মেয়েটা কাঁদছে।শব্দ হচ্ছে না,কিন্তু ফুলে ফুলে উঠার ভংগি দেখে বুঝতে পারছি,আমি জিজ্ঞেস করতে যাবো তখনি রুমালে চোখ মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকাল
-আপনাকে বিরক্ত করলাম...
-না,কিন্তু,আপনি...
-আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না
বলেই মেয়েটা চুপ হয়ে গেল।বিরক্ত না হয়ে আর উপায় কি।আমি অগত্যা হাঁটা ধরলাম।
-দাঁড়ান,একটু শুনুন
আমি দাঁড়ালাম
-আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন,কেন এত কাঁদছি,সে আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়,আমাকে মোটেই বুঝে না,গতকাল রাতে ,হ্যাঁ রাতেই আমাকে যাচ্ছেতাই বলেছে,সব কিছুই ঠিক ছিল,কিন্তু যখন বলল আমাকে আর ভালো লাগছে না,আমি নাকি ইনটলারেবল,তখন কেমন লাগে বলুন,বলেই মেয়েটা আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ঝাঁকি দিতে লাগল,
"কেমন লাগে ?বলুন ?"
- - - - -
চোখে কড়া রোদ লেগে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।সাতটার আগেই জানালা দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকে পড়ে।শীলা আমার আগেই উঠে গেছে।মনে মনে গতকালের ঝগড়ার কথা ভাবছে নাকি?
-একটা স্বপ্ন দেখলাম।
-আমিও
-কি দেখলে?
-তুমি চলে গেছ রাগ করে বান্ধবীর বাসায়,আমি রমনা পার্কে ...
-আর আমি দেখলাম তুমি রাতে আর বাসায় ফেরনাই।
শীলার হাত টা বুকে নিয়ে আরেকটু ঘুমিয়ে নেই।আজকে অফিস বন্ধ।