somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আয়োজন

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





মাহসাদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবুও কেন জানি তার মনে হচ্ছে তার পেটটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে।
-যত্ত্বসব উদ্ভট চিন্তাভাবনা তোমার।
অবিতা একটা কপট রাগের ভঙ্গিমায় মাহসাদের শার্টের বুতাম ফিক্স করে দেয়।
-সত্যি বলছি আমি। বিশ্বাস করো আমার কথা।
-আচ্ছা বাবা বিশ্বাস করলাম। আজকে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরবে।
-কেন?
-তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।
-কেন?
-বাহ রে! তুমি ছেলে বাবু প্রসব করছো নাকি মেয়ে বাবু প্রসব করছো সেটা জানতে হবে না?
-ধ্যাত! যাচ্ছি আমি। গেইট লাগিয়ে দিও।

মাহসাদ বৌয়ের কথামত তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে। যথেষ্ট চিন্তিত সে তার পেট নিয়ে। অবিতা না বললেও সে নিজেই ডাক্তারের শরানাপন্ন হতো। সে বাসায় এসে দেখে অবিতা রেডি হয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে।
-তুমি জানলে কি করে আমি তাড়াতাড়ি আসবো?
-তোমার অফিসে ফোন করেছিলাম। তোমার অ্যাসিট্যান্ট বললো, কিছুক্ষণ আগেই বেড়িয়েছো।

এই এলাকাতে বাসা ভাড়াটা বেশ কম। এটাই একমাত্র কারণ হতে পারে ডঃ মেহেরুন্নেসার এখানে আসবার। আবার ভিন্ন কারণও হতে পারে। বাড়িওয়ালার একটি মাত্র কন্ডিশন ছিলো, বাসায় কোন রকম সাইনবোর্ড বা বিজ্ঞাপন চিত্র লাগানো নিষেধ। বিনাবাক্যে রাজি হয়েছে সে। পারতপক্ষে এটাই চাইছিলো সে। প্রচন্ড রকম নিরিবিলি একটা বাসা। মাসে দু একটা রোগী হলেও সমস্যা নেই তার। এতদিন দুইহাতে টাকা কামিয়েছে সে। এখন একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। কোন রকম বিষন্নতা যেন ঘিরে ধরতে না পারে সেই জন্যই চেম্বারটা খুলেছে সে।

কিছুক্ষণ হলো মাহসাদ আর অবিতা ডঃ মেহেরুন্নেসার চেম্বারে এসেছে। অবিতা হাত নেড়ে নেড়ে মাহসাদের সমস্যাটা মেহেরুন্নেসাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। মাহসাদ চুপচাপ বসে আছে সোফার এক কোণায়। কোন কারণে তার চোখটা ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে।
-ওয়াশরুম টা কোনদিকে?
ঢোক গিলে উচ্চারণ করে মাহসাদ।
-কি হয়েছে মাহসাদ? খারাপ লাগছে?
অবিতা মাহসাদের পাশে চলে আসে।
মেহেরুন্নেসা তার অ্যাসিট্যান্টকে ডেকে ওদের ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিতে বলে।

আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বটার দিকে তাঁকায় মাহসুদ। নিজেকে কেমন যেন অচেনা লাগে। তার পেটের মধ্য থেকে বিকট একটা অট্টহাসি ভেসে আছে। মাহসুদের আবারো গা গুলিয়ে ওঠে।
-ওয়াক!
সর্বশক্তি দিয়ে বেসিনটা আকড়ে ধরে থাকে কিছুক্ষণ। ডঃ মেহেরুন্নেসা কে দেখা আকস্মিক হলেও দৈব নয়। মাহসাদ খেয়াল করলো বেসিনের আয়নায় এক টুকরো ক্ষতস্মৃতি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

-তুমি বোধকরি বাবা হতে চলেছো!
মেহেরুন্নেসার কথায় থমকে যায় মাহসদ।
-তুমি নিশ্চই জানো একজন অবিবাহিত ছেলের পক্ষে সংবাদটা মোটেই সুখকর নয়।
একটা ক্রুর হাসি ফোটে মাহসাদের ঠোটে।
-এটা তুমি কি বলছো মাহী?
-হ্যা বাচ্চাটাকে নষ্ট করে দাও মেহের।
-আমি পারবো না।
-তোমাকে পারতেই হবে।
-ওহ! এটাই তোমার শেষ কথা?
-হ্যাঁ।
-আচ্ছা। তবে কান খুলে শুনে রাখো মাহী ওকে আমি বাঁচিয়ে রাখবো যে করেই হোক এবং তাকে এমনভাবে গড়ে তুলবো যে তুমি কখনো চিন্তাই করতে পারবে না।

-আমার সন্তানকি বেঁচে আছে এখনো? কত বড় হয়েছে সে?
মাহসাদ ভাবে। একটা পাপবোধ তাকে কুকড়ে ফেলে দুমড়ানো কাগজে মত। সে আচ্ছন্নের মত পানির কলটা হাতড়িয়ে বেড়ায়।
মাহসাদ চোখে মুখে কয়েক আঁজল পানি ছিটিয়ে নেয়। তারপর টলতে টলতে ওয়াশরুম থেকে বেরোয়। সে নেশাতুর কন্ঠে বলে উঠে,
-আমি বাড়ি যাবো অবিতা।


মাহসাদের মনে হয় সে কোন শশ্মানে শুয়ে আছে। চারদিক কেমন নিস্তব্ধ। চারপাশটা একবার চোখ বুলিয়ে নেয় মাহসাদ। পারপেল কালারের একটা দেয়াল। পূর্বকোণে একটা উলঙ্গ বাচ্চার ছবি। বাচ্চাটা তার পেনিস হাতে নিয়ে খেলা করছে। বাচ্চাটা কিছু বলছে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছেনা তার কন্ঠটা। হঠাৎ বাচ্চাটার হাতে একটা ছুরি চলে এলো। বাচ্চাটা মৃদু হেসে ছুরিটা তার নিম্নাঙ্গে পোচাতে থাকলো। মাহসাদ চিৎকার করে উঠলো,
-নাআআ!!!
মাহসাদ বুঝতে পারলো এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল সে। অবিতা ঘুমুচ্ছে বেঘোরে। গোড়ালীর কাপড় সরে গিয়ে সুঢোল উরু উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। অন্যদিন হলে মাহসাদের নেশা ধরে যেত। আজ ধরলো না। থেকে থেকে একটা প্রশ্ন বার বার জেগে উঠলো।
-আচ্ছা মেহের কি জেগে আছে এখনো? বাসাটা বেশ কাছেই। চাইলে হেঁটেই যাওয়া যায়।
মাহসাদ উঠে পড়ে। দরজাটা আস্তে করে ভিজিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

-আমি জানতাম তুমি আসবে!
-আমার সন্তান কি বেঁচে আছে?
সোজাসুজি প্রশ্ন করে মাহসাদ।
-ধীরে বন্ধু ধীরে! সব বলবো। বলার জন্যই তো এত আয়োজন। চলো চা খেতে খেতে কথা বলি।

-তুমি কি জানো আমার কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে ঘৃণিত পুরুষ কে?
মাহসাদ চুপ করে থাকে।
-তুমি হয়তো ভাবছো তোমার কথা বলছি! মোটেই না। চলো দেখাচ্ছি তোমাকে।
মাহসাদ নেশাগ্রস্থের মত মেহেরুন্নেছার পিছু পিছু চলে।
প্রথমবার প্রবেশ করলে মনে হবে এটা একটা লাইব্রেরী। অসংখ্য বইয়ের সমাবেশ। আসলে এটা ডঃ মেহেরুন্নেসার স্টাডি রুম। রুমের আসবাবপত্র বলতে, ছোট্ট একটা টেবিল তার উপর কিছু সরঞ্চামাদি আর একটা সিঙ্গেল খাট।

-এটাতে কি আছে জানো মাহী?
একটা সাদা কৌটা হাতে নিয়ে মাহসাদের দিকে বাড়িয়ে দেয় মেহেরুন্নেসা।
-না।
-এটাতে একটা পেনিস রাখা আছে। তোমার সাইজের। আমার জন্মদাতার পিতার।
-কি! অসুস্থ হয়ে গেছো তুমি!!
-যা খুশি ভাবতে পারো। কিছুক্ষণ পর তোমার পেনিসটাও কৌটা বন্দী করে রাখা হবে।
-আমার এখানে আসাটা ভুল হয়ে গিয়েছে। যাচ্ছি আমি।
-এখানে আসার ইচ্ছেটা তোমার যাওয়ার ইচ্ছেটা আমার। পেছনের দিকে তাঁকালেই দেখতে পাবে একটা ভেজানো দরজা। দরজার পাশে আমার অ্যাসিট্যান্ট দাড়িয়ে আছে। ওকে তো তুমি দেখেছো? ওর চোখের দিকে তাঁকালেই বুঝতে পারবে পেশাদার খুনী ও। আশা করি জোরপূর্বক তোমাকে বিছানায় শোয়াতে হবে না?
-কি করতে চাও তুমি?
-বিশ্বাস করো একটুও ব্যথা পাবে না তুমি। আমি একজন স্বীকৃত ডাক্তার। সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে পারো আমার উপর।
-এটা হতে পারে না!
মাহসাদ অস্ফুট স্বরে চিৎকার করে উঠে।
-দেখি পাজামাটা খুলে ফেলো এবার। তোমার পুরুষযন্ত্রটা দেখাও।
-না আ।
ডুকরে কেঁদে উঠে মুখ ডাকে মাহসাদ।
-লজ্জা পাচ্ছো? লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আমি তো অসংখ্যবার দেখেছি ওটা! বাম পাশের তিলটা আগের মতই রয়েছে?
মাহসাদ সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে মুক্ত করতে চাইলো বেড থেকে। কিন্তু সে অনুভব করলো তার সারা শরীর কেমন অসাঢ় হয়ে গিয়েছে।
-তোমাকে যে ইনজেকশন দিয়েছি এটাতে তোমার দেহটা অসাঢ় হলেও তোমার শ্রবনন্দ্রীয় অ্যাকটিভ রয়েছে। আশা করি তুমিও আয়োজনটা উপভোগ করতে পারবে।

একটা খচখচে অনূভুতি পেল মাহসাদ।
-অনুভুতিটা কেমন ছিলো মাহী?
মেহেরুন্নেসা মৃদু হেসে জানতে চায়।
-তিনঘন্টা পর জ্ঞান ফিরবে তোমার। তোমার পেনিসটা এখন আমার কৌটায় সোভা পাচ্ছে। এটা নিয়ে কৌটার সংখ্যা দুইয়ে দাড়ালো। আমার সংগ্রহশালাটা আরো বাড়ানোর ইচ্ছা রয়েছে।
মাহসাদ চোখ বুজলো। তার চোখে মুখে ফুটে উঠলো অব্যক্ত যন্ত্রণার অভিব্যক্তি। অথচ এর চেয়েও বড় বিস্ময় তার জন্য অপেক্ষা করছিল।
-আমার এক্সপেরিমেন্ট যদি সফল হয় খুব শিঘ্রই তোমার নিজের ভ্রুণের মা হবে তুমি, যেটা আমি বাঁচিয়ে রেখেছিলাম এতদিন ধরে। তোমার প্রশ্নের উত্তরটা পেয়েছো মাহী??

ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:০৮
৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×