-তোমাকে যদি একটি হত্যার বৈধ্যতা দেওয়া হয়, তাহলে তুমি কাকে মারতে চাইবে?
আমার বউ বেশ নির্বিকার ভাবেই প্রশ্নটা ছুড়ে দিল আমার দিকে। প্রথমে খানিকটা বিহব্বল, পরে কিছুটা ধৈর্যের সহিত উত্তর করলাম,
-ভেবে জানাই?
-অবশ্যই। আজকের পুরো রাতটা সময় দিলাম। হবেনা?
-যথেষ্ট।
নিঃসন্দেহে এটা আমার জন্য একটি চমকপ্রদ ভাবনার খোরাক ছিল। বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে প্রথমেই বউকে দিয়ে শুরু করলাম। বউকে মারলে কেমন হয়? চিন্তাটা প্রথমেই বাদ দিতে হলো। আমার বউ কে নিয়ে আমি সুখী। ভয়াবহ রকম সুন্দরভাবে কেটে যায় আমাদের প্রত্যেকটা মূহুর্ত। তাহলে কাকে? আমাদের তিন বৎসরের সন্তানটিকে? যে কিনা এখন আমার বুকের পাশেই ঘুমিয়ে রয়েছে নিশ্চিন্তে। ছিঃ ছিঃ কি সব বিদঘুটে চিন্তা করছি আমি! আমার সন্তানের বুকে আমিই ছুরি চালাবো?
মফস্বল এলাকার ছোট্ট একটি ছনের ঘরে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা আমার বৃদ্ধ বাবা কে মারবো নাকি? এটা করলে মন্দ হয়না! সে তো কয়েকদিন পরেই মারা যাচ্ছে! মাঝখানে আমি পাচ্ছি নিজের পশুত্ব জাহির করার প্রশস্থ কার্যক্ষেত্র। পরক্ষণেই ভাবলাম, তিনি নিশ্চই আরো কয়েকটা সুর্যোদয় দেখে যেতে চাইবেন, ক্ষুধার্ত পেটে। আমি হয়তো তাকে তিলে তিলে মারতে পারবো, কিন্তু একেবারে মেরে ফেলা আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়।
খেলাটা প্রথম দিকে স্বস্তিদায়ক মনে হলেও রাত বাড়ার সাথে সাথে সেটা কঠিন থেকে আরো কঠিনতর হয়ে উঠলো। পুরাতন প্রেমিকা, বন্ধু, প্রতিবেশী, কলিগ, পরিচিত প্রত্যেককে একবার করে ফায়ার রেঞ্জে দাড় করলাম একে একে। কাউকে উপযুক্ত মনে হলো না যার টুটি ছিড়ে ফেলে উল্লাসে মেতে ওঠা যায়। অথচ এদের প্রত্যেককে আমার স্বার্থের জন্য ব্যবহার করেছি। নিজেকে উলটে পালটে প্রশ্ন জালে ঠেলে দেই, আরেকবার চূড়ান্ত স্বার্থপরতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গড়তে পারিনা আমি?
আমার হাত পায়ের তালু ঘামতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। বুঝতে পারছি অন্ধকারটা আরো অন্ধকার হয়ে আসছে। রাত যখন শেষের দিকে তখন হঠাৎ মনে হতে লাগলো আমি তাকে পেয়েছি! আস্তে করে বিছানা ছেড়ে নেমে দাড়াই এবং অতি সঙ্গোপনে এগিয়ে যাই আলনার ধার ঘেষে রান্না ঘরের দিকে একটি আধ মলিন শাড়ী হাতে জড়িয়ে। সিলিং ফ্যানের ময়লা পরিষ্কার করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
(ছবি: ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:০২