somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আক্ষেপ

২৫ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১)
মানব জন্ম নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ ছিলনা। সঞ্জিবের ছিল। সঞ্জিব রায় আমার শৈশবের একমাত্র বন্ধু যাকে পেয়েছিলাম কোন এক দুপুর বেলা আমাদের বাড়ির বড় আম গাছটাতে। চিৎকার করে মাকে ডাকতে যাবো এমন সময় তার চোখে আমার চোখ আটকে গেল। সেই চোখে কি ছিল বলতে পারিনা তবে আমি থেমে গেলাম আর সে দ্রæত নেমে এলো গাছ থেকে। গাছ থেকে নেমেই সে দৌড়াতে শুরু করলো। কোন কিছু না ভেবে আমিও তার পিছু নিলাম। কিছুদুর দৌড়ানোর পর আমরা নিজেদের আবিষ্কার করলাম কালীগঙ্গার তীরে, হাপাচ্ছি।

-কি ভাবছিস?
সে এই বলে শুরু করেছিল সেদিন।
-তোদের আম গাছ নেই?
আমি জিজ্ঞেস করি।
-আছে। পৃথিবীর সমস্ত আম গাছ, লিচু গাছই আমার। ওই দেখ!
সে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে নদীর ওপারের একটা আম বাগানের দিকে নির্দেশ করলো।
-ওইটাও আমার!
-তাহলে লুকিয়ে লুকিয়ে নিচ্ছিল কেন?
-আমার এভাবেই ভাল লাগে। কেমন এক রোমাঞ্চ লাগে! চল ওপারের ওই বাগান টা থেকে ঢু মেরে আসি। যাবি?
-না। মা বকবে।
-আরে মায়েদের কাজই হচ্ছে বকবে, আবার আদর করবে।

এই বলে সে নদীতে ঝাঁপিয়ে পরে। আমিও মোহাচ্ছন্নের মত তার পিছু নেই।

এভাবেই সঞ্জিব রায় আমার বন্ধু হয়ে গেল। আমরা সুযোগ পেলেই নদীর পাড়টাতে গিয়ে বসতাম দুইজন। জলের ঢেউ দেখতাম। পানিকৌড়, বেলে হাঁসের ডুবোডুবি দেখতাম। কাঁশবন দেখতাম। ঝিনুকের পেট খুলে মুক্তো খুঁজে দেখতাম। বেলে মাটির ভেজা গন্ধ আমাদের নাকে লাগত। জেলেরা জাল শুকাতে দিতে সেখানে। জালের ফুটোয় চোখ রেখে আকাশকে গোল করে দেখতাম। আরো কতকিছুই দেখতাম অথবা কতকিছুই দেখিনি আমরা সেদিন!

আমরা মেয়েদেরও দেখতাম। ওরা ঘন্টার পর ঘন্টা কি অদ্ভুত ধৈর্য নিয়ে গায়ে সাবান মাখতো! ভেজা কাপড়ে তারা যখন হেঁটে ফিরত কলসী কাঁখে আমাদের চোখ ঢুকে যেত তাদের পেছনে, বুকে। একটা শিরশিরে ভাব অনুভূত হতো শরীরে। আমি জানতাম না ওতে পাপ হয় কিনা।

-এই আমাদের পাপ হবে না?
সঞ্জিবকে জিজ্ঞেস করি।
-কেন?
-এই যে লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েদের দেখছি, খারাপ চিন্তা করছি।
-পাপ বলে কিছু হয়না। আমি পাপ-পূণ্যে বিশ্বাস করিনা।
সঞ্জিবের কন্ঠ হঠাৎ গাম্ভীর্যপূর্ণ হয়ে যায়। সে বলতে থাকে।
-বলতে পারিস? কোন পাপে আমার বাবা নেই! আমার দিদি বেশ্যা? আমার মা অন্ধ? আর কোন পূণ্যে আমাকে এই বয়সে দুমুঠো ভাতের জন্য সারাদিন কাঠমিস্ত্রির কাজ করতে হয়?

কোন পূণ্যে আমি জন্ম নিয়েছি বল? আমাকে জিজ্ঞেস করে জন্ম দেয়া হয়েছে? কেউ কি জানতে চেয়েছে আমি এইসব পাপ পূণ্যের ধকল সইতে পারব কিনা? আমার এসব ভাল লাগে কিনা?

আমার এগুলো ভাল লাগে না রিদু। আমার খেলতে ভাল লাগে, আমার উড়তে ভালো লাগে। আমার গাছ দেখতে ভাল লাগে। আমার পুকুর দেখতে ভাল লাগে। আমার পালাতে ভাল লাগে। তাই তো পালাই। দেখিস একদিন এমন কোথাও পালিয়ে যাবো কেউ আর আমাকে খুঁজে পাবেনা কোনদিন।

২)
সেদিনের পর থেকে সঞ্জিব কেমন যেন গাছেদের মত চুপচাপ হয়ে যায়। আগের মত আমাদের আর দেখা হয়না। একসময় আমাদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেল। ওদের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি, কাউকে না বলে কোথায় যেন চলে গ্যাছে। সেই প্রথম বার আমার ভেতরে একটা দুঃখ আর অভিমানের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। তুই আমাকেও বলে গেলি না?

এভাবে আমার শৈশব পেরিয়ে গেল। সঞ্জিবের সাথে আমার আর কোনদিন দেখা হয়নি। আমি শহরে পড়তে এলাম। পড়াশোনা শেষে ভাল একটা চাকরি পেলাম। একটা বিয়েও করলাম। দুটো বাচ্চা হলো। চাকুরী, বউ, বাচ্চা, পরিবার নিয়ে লুডো খেলতে খেলতে বয়স বার্ধক্যে এসে ঠেকল। একসময় মরেও গেলাম।

মানব জন্ম নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ ছিলনা। সঞ্জিবের ছিল। তাইতো সে ভর দুপুরে পেরেছিল ঘর ছেড়ে পালাতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×