somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিপ্লব৯৮৪২
জীবন ঘনিষ্ট বিষয় নিয়ে লেখালেখি করি। চেতন ভগতের মতো বাংলাদেশেও পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি। সেই পরিবর্তন শুরু হবে আমার নিজ জেলা কুমিল্লা থেকে, পরে ছড়িয়ে পড়বে সারা বাংলাদেশে-এই আমার বিশ্বাস।

পৃথিবীর পথে পথে – তারেক অনু

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একেকজনের একেক ধরনের বই পড়ার শখ। আবার রিভিউ লেখার উদ্দেশ্যও সবার এক নয় । কেউ লেখকের কাছ থেকে সৌজন্য কপি পায়, পরিচিত লেখকবন্ধুর অনুরোধে রিভিউ লেখে। কেউ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের অনুরোধে সম্মানীর বিনিময়ে রিভিউ লেখে। সবার উদ্দেশ্য ভাল- পাঠকের সাথে লেখকের পরিচয় করিয়ে দেয়া। যেহেতু তারা পেশাদার খ্যাতিমান রিভিউ লেখক তাই তাদের লেখাও চমৎকার। আর আমি কোন পেশাদার লেখক নই, কিন্তু নাম না জানা, অচেনা যে কোন লেখকের প্রথম লেখা বই নগদমুল্যে খরিদ করি কোন রকম দরদাম করি না । তারপর অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়ি, তারপর রিভিউ লিখি। উদ্দেশ্য একটাই লেখক যেন তার লেখা চালিয়ে যান, দ্বিতীয় বইটি বের করেন । আজকের বই পৃথিবীর পথে পথে – লেখক তারেক অনু ।



প্রথম কথা হল এই বইটি কেন কিনবেন কেন পড়বেন ?
পড়বেন কারন, এই বইটি পড়লে জানতে পারবেন কোন দেশে রাতের বেলায় সুর্য দেখা যায়, সবারপ্রিয় আলু এসেছে কোন দেশ থেকে,হিমালয়ের কোন নদীর বয়স হিমালয় থেকেও বেশি- আরো জানতে পারবেন কোন দেশের হোটেলে লেখক পরিচয় দিলে মাগনা থাকা যায়।

এই বইটি পড়লে আরো জানতে পারবেন রবি ঠাকুর আর্জেন্টিনায় গিয়ে ফুটবল খেলেছিলেন কিনা ? সেই খেলায় তিনি কয় গোল করেছিলেন? ইউরোপের কোন দেশে রানাপ্লাজার মত হেলানো বিল্ডিং কাত হয়ে রয়েছে?
তারা সেই বিল্ডিং না ভেংগে আমাদের বিল্ডিংগুলো ভাংগার জন্য বলে।
এই রকম আরো অনেক প্রশ্নের জবাব পেতে পারেন মাত্র ৫০০ টাকায়। তবে জনাব লেখক-প্রকাশক সম্ভবত লাভ করেন কম সেল করেন বেশি। তাই বইমেলায় এই বইটি পাবেন মাত্র ৩৫০ টাকায়। ৩৫০ টাকা,৩৫০ টাকা,৩৫০ টাকা।



ভাগ্য ভালো হলে পেতে পারেন লেখকের অটোগ্রাফ, একদম ফ্রি।



সাথে ছবি তোলার সুযোগ তাও ফ্রি। বইটি পড়ার আগে হয়ত ভাববেন একটা ছবি তুলব তাতেও আবার টাকা দিতে হবে, এতো ফুটানি কিসের। কিন্তু না বইটি পড়ার পর বুঝবেন কারো সাথে ছবি তুলতে গেলে তাকেও টাকা দেয়া লাগে।


লেখকের মুড ভালো থাকলে পাবেন কিছুক্ষন গল্প বলার সময়।

সচলায়তন ব্লগে লেখকের লেখাগুলো আগেই পড়েছি- এবার বইতে পড়লাম। ব্লগে ছবি ছিল বেশি তাই পড়তে পড়তে মনে হতো আমি নিজেও ঘুরছি। বইতে ছবি কম তাই লেখকের বর্ননার সাথে কিছু কল্পনা যোগ করে নিতে হয়।

ব্লগ থেকে লেখাগুলো সরাসরি বইতে দেয়ার আগে একটু চোখ বুলানো উচিৎ ছিল। যেমন, বইতে ৩৩৪ পৃষ্টার ১৬ নম্বর লাইন ,” আগ্রহীরা কেতকী কুশারি ডাইসনের এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন ” । ব্লগে এইখানে একটি লিংক ছিল, বইতে তো সেই লিংকে ক্লিক করা সম্ভব না।

মোট ৪৫ খানা ভ্রমন কাহিনী । প্রতিটি ভ্রমন কাহিনী নিয়েই একটি করে বই লেখা সম্ভব। তবে লেখক বেশ কয়েক জায়গায় বলেছেন, সময়ের অভাবে এটা দেখতে পারিনি, ওটা করতে পারিনি। তাই ৪৫ খানা বই না লিখে তিনি একখানা বইতে ৪৫ খানা ভ্রমনের বর্ননা করছেন অতি দ্রুত গতিতে। কারনটা সহজে অনুমেয়। তবে এই ভ্রমন কাহিনীগুলো কতটা জনপ্রিয় ছিল তা পাঠককে একটু সামান্য তথ্য দিলেই আঁচ করতে পারবেন। সচলায়তনে এই লেখাগুলো প্রকাশের সময় সেখানকার অন্য ভ্রমন কাহিনীর লেখকরা লেখা দেয়া বন্ধ রেখেছিল। ভাবখানা এমন পথে ভিআইপি যাচ্ছে, তার জন্য রাস্তা ছেড়ে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কারো কারো লেখার হাতে এমন জং ধরেছে যে তিনি পরে লেখালেখি করাই ছেড়ে দিয়েছে।
তবে মিউজিয়াম ঘুরার বর্ননার সময় সংশ্লিষ্ট যে ছবির কথা লেখক বলতে চাইছে তা বইতে দিলে ভালো হত। মিউজিয়াম থেকে সরাসরি ছবি না তুলতে পারলেও ইন্টারনেট থেকে কপিরাইটবিহীন কোন ছবি সংগ্রহ করে দেয়া যেত, তাতে বর্ননা জীবন্ত হতো ।

এবার আসা যাক পদ্মাপারের বংগসন্তান পৃথিবীর কয়টি দেশ ঘুরেছেন।
বইয়ের বর্ননা মতে, লেখক ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানী, যুক্তরাজ্য, নেপাল, তিব্বত,পেরু, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, দক্ষিন আফ্রিকা, কিউবা,ব্রাজিল, ইটালী, ভ্যাটিকান সিটি, উত্তরমেরু,নেদারল্যন্ড ও গ্রীস ভ্রমন করেছেন। এছাড়া আমরা যারা তার লেখার সাথে পরিচিত তারা জানি তিনি বলিভিয়া, উরুগুয়েসহ আরো কয়েকটি দেশে পা রেখেছেন। তার ভ্রমনের বেশিরভাগ স্থান প্রাচীনযুগ আর মধ্যযুগের সপ্তাচার্য দর্শনীয় স্থানগুলো উল্লেখযোগ্য। এছাড়া জ্ঞানবিজ্ঞান আর শিল্প সাহিত্যের দেশ ও সমাজে ভ্রমন করে সবিশেষ জ্ঞান আরোহনে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন । এরই মাঝে আফ্রিকার জন্তু-জানোয়ারের কাছ থেকে কী জ্ঞান আরোহন করেছেন তা অবশ্য বইতে স্পষ্ট নয় ।

আমরা বাংগালীরা যে দুটি দেশে ভ্রমন করে বেশ গর্ব করি তার একটি হলো সৌদি আরব। অন্যটি হলো মার্কিন যুক্তরাস্ট্র- যে দেশ ভ্রমন করে আসার পর নিজের টাকায় অনেককে বই লিখতে দেখেছি। এই দুটি দেশ ভ্রমন করেছি বলতে পারলে বংগসমাজে কিছুটা মানসম্মান থেকে। সেই হিসেবে লেখককে জাতে উঠার জন্য এই দুটি দেশ ভ্রমনেরও পরামর্শ দেয়া গেল।

ব্যক্তিগত আলাপচারিতাঃ লেখকের সাথে আমার সামান্য কিছু কথা হয়েছে। সেই আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছেন, তিনি আফ্রিকার উপর বেশকিছু বই পড়ছেন তার পরবর্তী গন্তব্যস্থল আফ্রিকা। আমি ভেবেছিলাম এতোসব দেশ ঘুরে এসে এবার বুঝি তিনি দেশে এসে থিতু হবেন। বাড়ির আশেপাশের লোকজনকে অলস দুপুরে তার ভ্রমন কাহিনী শোনাবেন, কোন দেশের কোন রাজা তাকে কত খাতির করেছে, কোন দেশের কোন রমনী তার দেশে ফেরার কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে মরে গেছে- এইসব। কিন্তু না, আমরা আরো কিছু কাহিনীর অপেক্ষার থাকলাম।

জ্ঞানের কোন একক নেই। লেখককের ভ্রমন কাহিনী পড়লেই বুঝা যায় তিনি প্রচুর বই পড়েন, তবে তার জ্ঞান কত বিশাল তা বুঝা যায় না। আসুন একটু অন্যভাবে পরিমাপ করি। হিমালয় এলাকায় দুরত্ব বুঝাতে ৫ মাইল বা ১০ মাইল না বলে বলা হয় ৫ ঘন্টা বা ১০ ঘন্টা। কারন উপরের দিকে ৫ মাইল রাস্তা যেতে যদি লাগে ১০ ঘন্টা, একই রাস্তা নেমে আসতে লাগে ৫ ঘন্টা। লেখক সদুর ফিনল্যান্ড থেকে যেই বইগুলো দেশে এনেছেন তার ওজন দুই টন। তিনি দুই টন জ্ঞান ভর্তি বই মাথায় নিয়ে সব সময় ঘোরাফেরা করেন- যা আমরা দেখতে পাইনা। সেই হিসেবে আমার জ্ঞান অনেক কম, কারন ছাত্রজীবনে আমি মুলবই না পড়ে নোট ফটোকপি করে পড়েছি। সেই হিসেবে মাথায় আছে মাত্র কয়েক কেজি । তবে তার লাইব্রেরিটি দেখার আগ্রহ জাগল। কোন একদিন শুধু এই লাইব্রেরি দেখার জন্য রাজশাহী যাব ।

দুই টন বই আনার সময় তাকে কাস্টমসে বেশ কিছু টাকা দন্ড দিতে হয়েছে। এই কথা শুনে আমি বেশ মজা পেয়েছি। কারন, সস্তায় তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরলেও, সেখানকার ঠক-বাটাপারদের হাত থেকে রক্ষা পেলেও দেশে এসে তার শেষ রক্ষা আর হলো না। প্রসংক্রমে একটা কথা বলে রাখি ব্যবহার্য জিনিষ যা বানিজ্যিক উদ্দেশে আমদানীকৃত নয়, তার জন্য ট্যাক্সের দরকার নেই। যেমন, আমাদের বহু মেধাবী ছাত্র বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে ফেরার সময় গৃহস্থলির সব জিনিষ, আন্ডা-বাচ্চার খেলনা থেকে শুরু করে বাথরুমের ব্রাশ পর্যন্ত নিয়ে আসে, কোন ট্যাক্স লাগে না।


২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×