আমার এক বন্ধুর #Slovakia এর এইসব ছবি দেখলে নাকি মনের পাখা গজায় আর উড়ে চলে যায়।এবং সে কল্পনাতেই ওই ঘাসের মধ্যে শুয়ে ঘুম দেওয়ার ফিলিংস নেয়।
এইরকম ফিলিংস যে আমার সেই বন্ধুটির শুধু একা হয় তা না। আমি জানি এই ইট পাথরের বন্দীশালার প্রতিটা অলিন্দে এমন হাজারো , লাখো যাযারর আফসোসের ঢোঁক গিলে খায়।
আমরা যাযারররা এখানে একটা হিপোক্রেসি করি।আমরা দিন শেষে আমাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার দুহাই দিয়ে এইসব পরামানন্দ থেকে নিজেদের দূরে রাখি।
আমরা কখনো ভাবী না প্রকৃতির এই ওপার সৌন্দর্য উপভোগের জন্যই আমরা একটু বেশি কাজ করি, বেশি অর্থ আয় করি। কেন আমি এই চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি না আমি নায়াগ্রা দেখবো বলেই দৈনিক ৮ ঘন্টা অফিসের সাথে ৩ ঘন্টা ওভার টাইম করছি।
"মানুষ ভ্রমণের জন্য এমন পাগমি করে নাকি” এই সিনারীটা বোতাম আটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান বাঙ্গালীর ঘিলুতে আটে না। একটা প্রশ্ন আমাকে প্রায়ই ভাবায় ইবন বতুতা, ভাস্কো দা গামা, মার্ক পলো না হোক বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে দুই একজন নামকরা ভয়েজার/পর্যটক/ সাহসী পরিব্রাজক নাই কেন?
আমাদের এই ভ্রমণ বিমুখ স্বভাবটা ঐতিহাসিক। উনিশ শতকের ব্রজেন দাস থেকে আজকে মুসা/মুহিত/নিশাত কাউকেই ছোট করে দেখার আমার অভিপ্রায় না।বরং আমি উনাদের নিয়ে গর্বিত। যে জাতির সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের ভ্রমণ ইতিহাস টিম টিম করে জ্বলে সেই জাতির পায়নিয়ার স্টার উনারাই।তবু আমাদের এক্সপ্লোর করার ইতিহাস অতি নাতিদীর্ঘ। আপনি ইতিহাস ঘেটেও এমন কোন ঘটনা পাবেন না, যে বাঙ্গালী অন্য এক রাজ্য দখল করে ৩০০ বা ৩০ বছর শাসন করেছে।
আমাদের সমাজে ভ্রমণের / যাযাবর বৃত্তির অভ্যাস আছে শুধু বেদে ও বাউল সম্প্রদায়ের কাছে। বিষয়টা অনেকটা প্রাচীণ কীর্তি মিউজিয়ামে তুলে রাখার মতো। আমরা সমাজ থেকে ভ্রমণের অভ্যাসকে সংরক্ষিত করে দিলাম।
এখানে একটু হট্টগুল বাধাচ্ছে যুব সমাজ। এই সমাজটা বরাবরই তেরা। দেশ, সমাজ,রাষ্ট্রযন্ত্র যখন চলছে "বাবা খাইটে খুইটে খা/কিনে কিনে ফতুর হ " এই নীতিতে, যখন মুঠোফোন আর ফেসবুক মানুষের দাম ও দাম্বিকতা প্রকাশের ট্রেডমার্ক তখন এই ঘারতেড়ারা বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখে, বাবা খাবি দাবি সেলফি তুলবি না ফেসবুকে আন্দোলন ছড়ায়ে দেয় , হুদাই কতোগুলা সাইকেল নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আর নাম দেয় "অমুক সাইকেলিস্ট"। আর কি করে জানেন, কোথায় কোথায় থেকে বিশ জন জড়ো হয়ে বলে অমুক পাহাড়ে যাবে !
এই ঘরকুনো স্বভাবের পিছনে যুক্তির অভাব নাই। সেদিন দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়া প্রসঙ্গে একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি আমায় রেফারেন্স দিচ্ছেন “ মহান কবি অমুক বলেছেন ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা বসুন্ধরায় আমার দেশ সকল দেশের সেরা । তুমি শোন নাই বাবা বাংলার রূপ দেখার পর অমুক কবি আর বিশ্বকে দেখতে চান না।এই ভ্রদ্রলোকের ভাষ্য শোনার পর বাঙ্গালির ভ্রমণ অনিহার যথার্থ কারণ খুঁজে পাইলাম।
"কালা পানি (সুমুদ্র) পাড়ি দেওয়া মহাপাপ " এই ভূত শাওয়ার হওয়া হাজার বছরের বাঙ্গালী মজ্জায় "থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে /দেখবো এবার জাগ ৎ টাকে " এমন কথা বড্ড বেমানান।যাক তবু একজন স্বপ্ন দেখালেন।আবার কবি গুরু বাঙ্গালীকে নাকি ঘরকুনো করে দিলেন।রবীন্দ্রনাথ গলধ করা বাঙ্গালী ভ্রমণের অফারে রবীন্দ্র বাবুকে শুধু বাড়ির পাশের ধানের উপরে শিশির বিন্দু দেখায়।
আমার সাফ কথা। এই ভ্রমণ পিপাসু তরুণদের ঘরের কোনায় বেঁধে রাখার যতই চেষ্টা করবে ততই ফেঁসে যাবেন দাদা। এখনো সময় আছে, এই বিশ্বকে জয় করর,সৃষ্টির ওপার সৌন্দর্য দেখার অধিকার হইতে এই যুবককে বঞ্চিত করিয়েন না।নতুবা দেখবেন কোন এক সকালে এই তরুনেরা আপনাকে রবীন্দ্র সংগীত শোনিয়ে দেবে
ওরে নবীন , ওরে আমার কাঁচা ,
ওরে সবুজ , ওরে অবুঝ ,
আধ-মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:১০