somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইয়েমেনের হাসপাতালে সৌদি জোটের বিমান হামলায় ও আমার গল্প

৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


#গিলগামেশের_দরবার_থেকে

সৌদি আরব এবং ইয়েমেন বর্ডার। শাকিক সকাল বেলায় বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের সাথে ''আবস হসপিটালে'' গেছিল।এ হাসপিটালটা ইয়েমেনের ভিতরে পড়ে। তার খালার বিয়ে হয়েছে ইয়েমেনে। যুদ্ধাবস্থা বাদে প্রায় প্রতিবার ছুটিতেই শাকিক খালার বাসায় কিছুদিন থাকে। এবার আর তা হবার নেই। সৌদি রয়্যাল সরকার বলে দিয়েছে ইয়েমেনের কোন আত্নীয়ের বাসায় যেন কোন সামরিক কর্মকর্তা না যায়। যাই হোক ইয়েমেনে এক বেলা আসার উদ্দেশ্য হলো তার খালার চোখ অপারেশন। চোখে ছানি পড়েছে তার। ডাক্তার বলেছে দুই একদিন থাকতে হসপিটালে। কিন্তু খালার কোন মেয়ে নাই। তাই সে মাকেই আসতে বলেছে তার দেখা শোনার জন্য, সাথে আমাদেরও আসতে বলেছে অনেক দিন দেখা হয় না তাই। শাকিক তড়িঘড়ি করছে। একটু পরেই তার ডিউটি রয়েছে। তাড়াতড়ি সে খালার কাছে বিদায় চাইলো। খালা আরবীয় কায়দায় চোখ এবং কপালে চুমু খেয়ে শাকিক কে বলল " সাবধানে বিমান চালাস বাবা"। যুদ্ধের সময় কি হয় না হয়!"। শাকিক খালাকে আস্বস্ত করে ,মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেসের দিকে গাড়ি ছুটালো।

বেসে গিয়েই দেখে, কমান্ডিং অফিসার তাকে ডেকেছে। স্কোয়াড্রন লিডার কাবলুল, শাকিককে রুটিন পেট্রোলিং এর জন্য একটা এফ-১৬ নিয়ে বেরিয়ে পড়তে বললো। শাকিক দেরি না করে বিমান রাখা হ্যাংগারের দিকে ছুটে গেলো। সে দেখে প্রতিদিনের পেট্রোলিং এর মত দুটো হেল ফায়ার মিসাইল লোড করে রাখা আছে। এই সেই পেশা যার জন্য তার জন্ম হয়েছে বলে সে মা্যের সাথে গর্ব করে। কারন শাকিক সৌদি রয়্যাল বিমান বাহিনীর একজন পাইলট। বিমানের সিটে বসার আগে মাথার মুখোশ ও হেলমেট পরে নেয় সে। ইঞ্জিন চালু করে বুড়ো আঙ্গুল দেখায় টেকনিশিয়ানকে। সব কিছু ঠিক আছে। এটা এফ-১৬ বিমান। ঠিক না থাকার কোন কারন নাই। কোটি ডলারের বিমান এটা, আমেরিকার তৈরি।

এফ-১৬ এর ককপিট। শাকিক কন্ট্রোল টাওয়ারকে বলল," Alpha one to Base. Here all is clear. Requesting permission for takeoff. Ready to approach" (বেসকে আলফা বলছি। এখানে সব ঠিকঠাক।উড়ার অনুমতি চাচ্ছি)
কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ফিরতি মেসেজ দিলো এক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট, " You are clear to approach. Alpha one! Good hunting! (উড়ার অনুমতি দেয়া হলো আলফা কে)।

কিছু সময় পরে সে সৌদি সীমান্ত পার হয়ে ইয়েমেনের ভিতরে ঢুকে পড়ল। ককপিট থেকে এই শহর গুলো ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। শাকিক কন্ট্রোল টাওয়ারে যোগাযোগ করল, '' Control, Do you see any hustle movement of enemy troops? What was the satellite and Intel report?" (তোমরা কি শত্রুর কোন নড়াচড়া দেখেছো? স্যাটেলাইট ও গোয়েন্দা রিপোর্ট কি বলছে?)
টাওয়ার থেকে স্কোয়াড্রন লিডার কাবলুলের কথা শোনা গেলো, " Yes. This is base to alpha one. we have intel and satellite confirmation, a big enemy movement has seen before one hour on Abs city near hospital. Do you copy? (আলফা কে বেস বলছি। আমাদের গোয়েন্দা ও স্যাটেলাইট নিশ্চিত করেছে যে, শত্রুর এক বিশাল দল আবস শহরের হাসপিটালের দিকে দেখা গেছে। তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?)

শাকিকের হাত ঠান্ডা হয়ে গেছে। আবসে তার বাবা-মা ও খালা আছে। যে হসপিটালটার কথা কাবলুল স্যার বলছে সেটাতে তার আত্নীয়রা রয়েছে। একটা খটকা লাগল তার। সবসময় অপারেশন রুমে থাকে একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কিন্তু আজ খোদ কমান্ডার কেন? সে উত্তর দিলো, " A-1 to Base. Roger. But sir there is a hospital near target area. Many civilian can be dead if we charge there. My suggestion will be, send the ground troops and infiltrate the hustle area. Bombing cause too many causalities. ( বেস কে আলফা বলছি। স্যার এলাকাটায় হসপিটাল রয়েছে।আমরা হামলা করলে অনেক সাধারন মানুষ মারা যেতে পারে। আমার সাজেশন হলো পদাতিক বাহিনী পাঠিয়ে শত্রু মুক্ত করা যেতে পারে। বোম্বিং করলে অনেকেই মারা পড়বে)।

কমান্ডার বললেন, "You bloody bastard! you suggest me rubbish? I am the commanding officer of this base. go and hit the hospital. What ever we do, our ROYAL government will tackle it. and intel said this hospital is running by some fucking yellow spy to help them. Do not hesitate! Just annihilate that building to ground. Charge the bomb and return to the base, Have some coffee and fun. Do it." (খান** পুলা। তুই আমারে সাজেশন মারাস! আমি এই বেসের কমান্ডিং অফিসার তুই জানস? হাসপাতালে গিয়ে বোম ফেলা। আমরা যাই করি না কেন, আমাগো রাজা বাদশাহ বাপেরা সব সামলায়ে নিবো। আর গোয়েন্দা রিপোর্ট ও বলছে, ওখানে ওই সব খান** পুলারা ঘাটি গাড়ছে। তুই মোটেও দ্বিধায় ভুগিস না। যা গিয়ে বাড়ীডারে মাটির সাথে মিশায়ে দে। বোম ফেলা। বেসে ফিরে আয়। কফি খা । আর ঘুম দে)।
শাকিক বলল," But sir, My whole family is in there in hospital. I can't bombing there. It's totally unethical to my military oath. I can't. I am returning to the base. (আমার পুরো পরিবার ঐ হসপিটালে। আমি হসপিটালে বোম্বিং করতে পারব না। এটা আমার মিলিটারি এথিকসে পড়ে না। আমি ফিরে আসছি)

রেডিও আবার জ্যান্ত হয়ে উঠল, " You bastard! You traitor! You challenged my command? Come bastard i will court martial you and hanging you in electric chair. How do you know your family in there? You are a traitor. Am i right? Your family is not precious than those pig. Destroy those pig along with your family or i will tell other- you are a traitor, a coward and hanging rope is waiting for you. So fuck that building and come to base.( শু** বাচ্চা। গাদ্দার। তুই আমার কমান্ডরে চ্যালেঞ্জ করিস? আয় বেসে আয় তোরে কোর্ট মার্শাল করে ইলেক্ট্রিক চেয়ারে যদি না বসাইছি! তোর পরিবার ওখানে আছে তুই ক্যামনে জানলি? তুই সা* গাদ্দার। ঠিক বললাম না? তোর পরিবারের চাইতে ঐ শু** গুলার মৃত্যু বেশি দরকার আমার কাছে। তোর পরিবারের সাথে ঐ শু** গুলারেও মেরে ফেলা আর নইলে কাপুরুষ আর গাদ্দারির অপরাধে ফাসির দড়ি তোর জন্য ঝুলতাছে। তাই দালানডারে উড়ায়ে দে আর বেসে ফিরে আয়)।

শাকিক ভাবল সে তো এমন কিছু করে নাই যে তাকে এসব শুনতে হবে? সে তার পরিবারকে ভালোবাসে তাই বলে সে গাদ্দার বা কাপুরুষ না। কিন্তু কমান্ডিং অফিসার আজ এমন কথা কেন বলছে? সেতো আগে অনেক ভালো ব্যবহার করতো তার সাথে। তাইলে আজ কেন এমন হচ্ছে? নানা প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। তবে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে হবে তার। বিমান অনেক সময় ধরে আকাশে উড়ছে। শাকিক অনেক বইতে পড়েছে, অনেক দেশপ্রেমিক তার দেশের জন্য নিজ পরিবারকেও কুরবানি দিয়েছে। তাই সেও আজ বোমা ফেলবে। হসপিটালটার উপরেই ফেলবে। তার বাবা, তার মা, তার প্রিয় খালা, আপন ভাইয়ের ঘাড়ের উপরেই বোমা ফেলবে।

ডান হাতের পাশে মিসাইলের লাল রংয়ের বোতামের সেফটি ক্যাচ খুলে ফেলে শাকিক। রেডিওতে বলে," I am going to bombing. Requesting permission to fire.'' ওপাশ থেকে সাথে সাথে জবাব আসে," A-1, You are clear to engage. Just annihilate that building to ground." (আলফা। অনুমতি দেয়া হলো। দালানডারে খালি ধসায়ে দে।)

শাকিক আর কালবিলম্ব করে না। ড্যাম বাটনে চাপ দেয়। মিসাইল রাখা কেস থেকে একটা হেল ফায়ার লক্ষের দিকে ছুটে যায়। তারপর চারিদিকে সব আগুন, ধোঁয়া আর ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। শাকিকের বিমানটা তার কেবলমাত্র করা শিল্পকর্মটা দেখতে থাকে উপর থেকে। দেখতে থাকে তার পরিবার, শান্তি ও ভালোবাসা গুলো কিভাবে তারই ছোড়া মিসাইলে পুড়ে ছাই হচ্ছে। আনমনে রেডিওতে সে বলে ওঠে, '' A-1 to Base. Building destroyed. Enemy area is burning. Requesting immediate medic supply. Mission accomplished. Returning to base. (বেস কে আলফা বলছি। দালান ভেঙ্গে পড়েছে, শত্রু এলাকা পুড়ে গেছে। জরুরী মেডিকেল সার্ভিসকে পাঠাও। মিশন সম্পন্ন হয়েছে। আমি বেসে ফিরছি)। ওপাশের যান্ত্রিক কন্ঠস্বর বলে ওঠে," Congratulations! Solider. You made it!. You and us together made history of Royal Soudi Air force. Come to base son. Do you copy? come! ( অভিনন্দন ব্যাটা। তুই পেরেছিস। তুই এবং আমরা একসাথে সৌদি বিমান বাহিনীতে আজ ইতিহাস তৈরি করেছি। আয় বাপ বেসে আয়। তুই শুনতে পাচ্ছিস? আয়।)

শাকিক আনমনে তার মা, খালা, ভাই, বাবার কথা চিন্তা করতে করতে বলে," Roger!"( পাচ্ছি)

এফ-১৬ বিমানটা ইয়েমেনের আকাশ ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাটিতে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির সাইরেন ছাপিয়ে বিমানের ইঞ্জিনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। শাকিক আবার দেখল হাসপাতালটা। দেখল পারিবারিক কবর টা।

দেশ প্রেমিক শাকিক ফিরে যাচ্ছে, আগামি দিনের বোমা ফেলার প্রস্তুতি নিতে।

বিঃদ্রঃ শাকিক চরিত্রটা Salim Al-din এর জোছনা-মাখা রজনী উপন্যাস থেকে একদিনের জন্য ধার করা।

উৎসর্গঃ ইয়েমেনের হাসপাতালে সৌদি জোটের বিমান হামলায় নিহত "১১ জন মানুষ" কে
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×