somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ত’ যদি ৩ হত! (গল্প)

১০ ই মার্চ, ২০০৯ ভোর ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্থান যদি স্থানাঙ্কের বোঝার ভুলে প্রস্থান করে বেলুচিস্তানে, ভাবীবধূর উপটানশোভিত মুখের ব্রণগুলো কি অবস্থান পাল্টে বিলীন হবে প্রসাধনীর আড়ালে?-এইধবরনের এক আপাত অর্থহীন ভাবনার হঠাৎ মস্তিষ্ক দখলের কারণটাই আগে বলা যাক।
আমরা পুরো বন্ধুমহল গতকাল সন্ধ্যা থেকে অবস্থান করছি নড়াইলে- উপলক্ষ সহপাঠিনীর “শিংমাছ বরণ”(শুনেছি, অনেকেই নাকি এই “শিংমাছ বরণকে” শখের বশে “বিয়ে” নামে অভিহিত করছে আজকাল!)। একটু আগে তার “গায়ে হলুদ” সমাপ্ত হল। মেয়েদের মুখের মাঝে আমি কখনো সিনেমার পোস্টার, কখনোবা লুভর মিউজিয়াম কিংবা ভলভো বাস খুঁজে পাই , কিন্তু গায়ে হলুদের সমস্ত সময়টুকু বান্ধবীটির মুখের দিকে ঋষির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেও কেবল ঐসব অনাহূত ব্রণগুলোকেই মেঘের মত ভাসতে দেখলাম তার মুখাবয়বে। কাল বিয়ের বিশেষ সাজ ঐ ইতর ব্রণগুলোকে ঢেকে দিতে পারবে তো?এই আশঙ্কাই সহসা উদ্ভট প্রশ্নের উদয় করেছিল, এতক্ষণে ধরতে পারলাম।
নিশাদের সঙ্গে পুরো ফার্স্ট ইয়ারে কোন কথা হয়েছে কিনা স্মরণে নেই, খুব সম্ভবত সেকেণ্ড ইয়ারে উঠার পর শিক্ষাসফরে ময়নামতি গিয়েই আমাদের প্রথম বাক্যবিনিময় হয়, তাও বেশ কাকতালীয়ভাবে : বিকেলের দিকে একটা বিনোদনমূলক ইন্টারেকটিভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সিনিয়র ভাইয়া-আপুরা। একটি বিশেষ রাউণ্ড ছিল সেখানে- প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষ থেকে একজন ছেলে-একজন মেয়েকে নির্বাচন করা হবে, তারা বাংলা সিনেমার অভিনয় করবে।বলার অপেক্ষা রাখেনা, আমাদের ক্লাস থেকে আমার সঙ্গী নির্বাচিত হয়েছিল যে দীর্ঘাঙ্গিনী, কাল এসময় তারই “শিংমাছ বরণ” সম্পণ্ন হয়ে ‘মাছ রন্ধনের” প্রস্ততি চলতে থাকবে।(নিন্দুকেরা “মাছ রন্ধনকে” ‘ফুলশয্যা’ বলে থাকে!)
আমরা এসেছি মোট ১২জন, ঢাকা থেকে নড়াইলের দুরত্বটা একটা বিশাল প্রতিবন্ধকতা হওয়ায় অনেকেই ইচ্ছা সত্ত্বেও আসতে পারেনি, বিশেষত মেয়েরা। তবুও, শবনম, হৃদিতা, জেরিন, আর লিয়ার বাসা থেকে রাজী করানো গেছে শেষপযর্ন্ত। ছেলেদের মধ্যে নিশান আর অভীকের প্রসঙ্গে বিশেষভাবে বলতেই হবে।আমাদের মধ্যে সত্যিকারের অলরাউণ্ডার হচ্ছে নিশান; কী যে ‘ও’ পারেনা, আর কতকিছু যে পারে, সেই বৃত্তান্ত বলতে গেলে আরোও কয়েকজন সহকারী লাগবে। পক্ষান্তরে, অভীক একটু অন্তর্মুখী স্বভাবের, পড়াশোনা নিয়েই যত ভাবনা তার, শিক্ষাজীবনের প্রান্তিক অংশে আমরা যখন চাকরীর জন্য বায়োডটা প্রস্ততে ব্যস্ত, সেক্ষণে সে আইএলটিএস কোর্স করছে কানাডা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এই বিয়েতে ওকে না আনতে আমাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছিল,তবুও শেষপর্যন্ত বন্ধুত্বেরই জয় হল।

সেই শিক্ষাসফরের পর খুব সহজেই ১৫-১৬ জনের একটা বিশাল দল তৈরি হয়ে গিয়েছিল আমাদের। সেই দলে নিশানের মত একাধারে অসাধারণ কণ্ঠশিল্পী-আকিয়ে-কবি, জাহিদের মত ক্রীড়াবিদ, অথবা লিয়ার মত আবৃত্তিকারের পাশাপাশি নিশাদ-অভীক-আমার মত নিতান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীও ছিল। সময়ের পরিক্রমায় কিভাবে যেন নিশাদ-অভীক জুটিটাও গড়ে উঠেছিল, ক্রমাণ্বয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ওরা এতটাই পরিচিত জুটি হয়ে উঠে যে অনেক শিক্ষকও ওদের সম্বন্ধ সম্বন্ধে জানতেন। গতমাসেও দুজনকে একসঙ্গে জাতীয় নাট্যশালায় দেখলাম, আর আজ?
অভীকের প্রতিক্রিয়াশূন্যতা, নিশাদের নির্লিপ্ততায় গতকাল সন্ধ্যা থেকেই ভয়ে ছিলাম। এখন অবশ্য মৃত নদীর মত নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে, এমনকি ‘গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে’ অভীক নিশাদের কপালে হলুদও ছুইয়ে দিয়েছে চরম আড়ষ্টহীনতায়। ওদের মধ্যে আদৌ কি কোন সম্পর্ক ছিল?কে জানে!

এখন রাত্রি সাড়ে ১০টা, মফ:স্বলের প্রেক্ষাপটে গভীর রাতই বলা যায়।তবুও বাড়িভর লোকের শোরগোল শোনা যাচ্ছে_ নিশাদের মামা-চাচা-খালা-ফুফু-তাদের পরিবার মিলেই তো একটা আশুলিয়া মডেল টাউন হয়ে যাবে। আশেপাশের বাড়িগুলোতেও উৎসবের আমেজ লক্ষণীয়। কিছুক্ষণ আগে গরু জবাই হল, খাসী জবাই হয়ে গেছে সন্ধ্যার দিকেই, রোস্টের উদ্দেশ্যে আনা মুরগীতে ছোটখাটো একটা পোলট্রি ফার্মে রূপান্তরিত হয়েছে বাড়ির পেছনের অংশটা; আগামীকালের ভুরিভোজের মেনুগুলো এখনই চোখে নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে!
মুহুর্মুহু আতশবাজির শব্দে ক্ষনিকের জন্য শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পেলেও এতক্ষণে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমাদের বন্ধু শাকিল আবার এ ধরনের কাজে বরাবরই আগ্রণী ভূমিকা নিয়ে থাকে, তাই নিশাদের ছোট ভাই-তাদের বন্ধুদের দলে ভীড়ে ‘বাজিম্যান ইন চিফ’ এর দায়িত্ব নিতে দেরি হয়নি ওর।ওদিকে, জেরিন বেচারী অত্যুৎসাহে বাজি পোড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বৃথাই লজ্জা পেল : ভয়ের বাড়াবাড়িতে বাজির শলতেয় আগুন না ধরিয়েই দৌড় দিতে গিয়ে পা পিছলে চিৎপটাং!

মাত্রই গতকাল সন্ধ্যায় আমরা নড়াইল এসেছি, অথচ এরই মধ্যে কি অসম্ভব হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে এ বাড়ির মানুষদের সাথে। এই যেমন, এখন আমরা কয়েকজন নিশাদের চাচার ঘরে বসে তাস খেলছি ওর চাচাতো-মামাতো ভাইদের সাথে। গৌরাঙ্গ-তৌসিফ’রা গেছে সিগারেটের সন্ধানে। তবে, ভয় বাড়ছে অনীককে নিয়ে ; আসার পর থেকেই নিশাদের ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া খালাত বোনের সঙ্গে ওর কথোপকোথনটা সন্দেহজনক লাগছে। থার্ড ইয়ারে সেই কেলেঙ্কারির পর কোন মেয়ের সঙ্গে ওকে একাকী কথা বলতে দেখলেই পুরনো বিস্মৃত অধ্যায়টি স্মৃতিতে সজীব হতে চায়!উপরন্তু,গায়ে হলুদের পর থেকেই ওকে দেখতে পাচ্ছিনা, মোবাইলে রিং হলেও সে ধরছেনা, মান-সম্মান নিয়ে ঢাকা ফিরতে পারলে প্রয়োজনে মিলাদ দেব!
আশ্চযর্জনকভাবে আজ অভীকও তাস খেলতে বসেছে আমাদের সাথে, যে দৃশ্য সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও কোনদিন দেখার দুর্ভাগ্য(!) হয়নি। এই সংবাদ শুনে বিয়ের কনে পযর্ন্ত আমাদের খেলার ঘরে এসে বিস্ময় প্রকাশ করে গেছে, অন্যদের কথা বলাই বাহুল্য। অবশ্য, নিশাদ খুব বেশিক্ষণ ছিল না আমাদের সঙ্গে, খালাম্মা এসে(নিশাদের মা)ডেকে নিয়ে গেছেন। আমি অভীক-নিশাদের মিথষ্ক্রিয়া থেকে কোনরূপ ইঙ্গিত উদ্ধারের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থই হলাম, কারণ তাদের অভিব্যক্তিতে কোন বিশেষত্ব ছিলনা। এরাই কি আমাদের ডিপার্টমেন্টের সেই বিখ্যাত জুটি?
বাড়ির উঠোনে গান গাইছে নিশান, এই মুহূর্তে নিশাদের ভাবী-খালাত বোনসমেত রমণীমহল ও কিশোরদলসহ বিরাট ভক্তকুলবেষ্টিত সে। নিশান সম্পর্কে তো ইতিমধ্যে বলাই হয়েছে_ সুতরাং, আসার সন্ধ্যা থেকেই তার গুণের সৌরভ ব্যাপন প্রক্রিয়ায় অন্যদের কাছে দ্রুত পৌছে যাবে, এটাই স্বাভাবিক । আজ দুপুরে রঙের খেলাতেও সে ছিল প্রধান আকর্ষণ ; কে কত ভালভাবে ওকে রঙে রঙিন করতে পারে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল বিয়েটা বোধহয় ওর সঙ্গেই হচ্ছে।সন্ধ্যার ‘গায়ে হলুদের’ সময় পরা পাঞ্জাবীটাই এখনো শরীর জুড়ে আছে, ভাবীদের কল্যাণে চুমকি-জরিও জুটে গেছে কপাল-কপোলে।
এতক্ষণ সে আধুনিক গান গাইছিল, আমরা দলবেধে উঠোনের কাছে আসতেই তার গান থেমে গেল।
‘আমরা বন্ধুরা একত্রিত হলেই আমি ইংরেজি সুরে বাংলা গান গাই’-
ওর এই কথাটি উপস্থিত শ্রোতাকুলের কৌতূহল বাড়িয়ে দিল।
‘এই যেমন, কিছুক্ষণ আগে আমি একটা নজরুল গীতিকে ইংরেজিতে কনভার্ট করলাম। সুর শুনলেই বুঝতে পারবেন গানটা’- সে একনাগাড়ে বলে গেল।
‘ক্ই, আমরা তো জানিনা’ –শবনমের বিস্ময়ের প্রেক্ষিতে ওর মৃদুহাস্যের জবাব –‘আরে, জানবি কিভাবে, এটাতো সবে আজ গায়ে হলুদের সময় কনভার্ট করলাম মনে মনে। শুনে দেখ:
How long I heard from you
Yet, I remember your face
Mirror of my memory,
Till today, looks for you….
How long….

সুর শুনেই বোঝা গেল এটা সেই “কতদিন দেখিনি তোমায়’এর ইংরেজি ভার্সন। ইংরেজি কথায় বাংলা সুরের এমন মনোমুগ্ধকর মূর্ছনায় উচ্ছ্বসিত সবাই একযোগে হাততালি দিলেও সে নির্বিকারভাবে গানের পরবর্তী অংশ গেয়ে চলল;
How long, you aren’t here
But, heart feels thirst….only for you
Only for you…
Whenever darling goes,
She comes more near…
How long..

গান চলছে, আর আমার দৃষ্টি চলে যাচ্ছে কয়েকগজ দূরে বসা লিয়ার দিকে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে আজ হলুদ শাড়ি পরেছে ‘ও’: দেখে মন উড়ে যাচ্ছে ‘হলুদিয়া পাখির হলুদ ডানা” শরণে।ওর কণ্ঠস্বরের প্রতি আমার মুগ্ধতা পরিচয়ের প্রথম প্রহর থেকেই, এরপর কণ্ঠ থেকে কণ্ঠের মানুষটির প্রতিও মুগ্ধতাটা প্রতিমুহূর্তে বিপদসীমা অতিক্রম করে গেছে প্রমত্ত জলোচ্ছাসেরা অনুভূতি হয়ে উঠলে।ছেলেদের সঙ্গে ও-ই সবচেয়ে সহজভাবে মিশতে পারে বাকী মেয়েদের তুলনায়, এমনকি আমাদের ধূমপান পর্বেও ওর স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে প্রায়ই, অথচ আমি ‘টিপিক্যাল বাঙালি ছোকরার’ মত সাহস করে ওর চোখে ‘গ্রীক সভ্যতা’ সন্ধান করতে পারিনি কখনো।আজ এই শহরতলীর এই মহুয়া রাত্রিতে - এতদিন ফতুয়া-জিন্স এর আড়ালে লুকিয়ে থাকা ওর নারী রূপটি শাড়ির কলিতে বিকশিত হল, ঠিক যেভাবে অবগুণ্ঠন মুক্তি ঘটে চিরভাবুক শামুকের। কেমন হয়, যদি আজই লিয়ার ‘ল’ অক্ষরটি ‘ভ’ এর সঙ্গে বদল করতে চাই?
-নিশান বোধহয় আমার দৃষ্টিকে পড়তে পারছিল, তাই ইচ্ছাকৃতভাবে গানের শেষাংশটুকু গাইল চড়া গলায়:
here is dark night….all around
Sleepless my two eyes...
Love is the mirage,
Finally I got...
How long, how long I heard from you...

নিশান ব্যাটা আজ দুর্দান্ত ফর্মে আছে মনে হয়, তাই গান শেষ হওয়ামাত্র পাশে বসা ভাবীদের উদ্দেশ্যে বলল -‘অনেক তো গান হল ভাবী; চলুন, এবার অন্য কিছু করি’।
-‘সেটা কেমন?’-উৎসুক হয়ে ভাবী জানতে চাইল।
-‘এটা অবশ্য আমাদের আড্ডায় ভীষণ প্রচলিত একটা খেলা, তবে আপনারা চাইলে আমাদের সঙ্গে অংশ নিতে পারেন।ধরুন, আমরা এখানে ১১জন আছি।আমি একটি গল্প বলা শুরু করে এক পর্যায়ে থেমে যাব। পরবর্তীজন সেখান থেকেই গল্পটা চালিয়ে নেবে তার মত করে, এরপর আরেকজন, এভাবে সর্বশেষজন গল্পটি শেষ করবে’।
-‘বাহ, দারুণ তো। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে গল্প তৈরি করবো কিভাবে? মাথায় তো কিছুই আসবেনা’ আরেকজন ভাবীর এই প্রশ্নটা অবশ্য যুক্তিসঙ্গত।
-‘খেলার মজাটাই তো এখানে। এটা হবে তাৎক্ষণিক গল্প। গল্পকে যেভাবে ইচ্ছা চালাবেন, এতে শহর থেকে গ্রাম, মহাকাশ, বিদেশ যেখানে ইচ্ছা যাক গল্পের কাহিনী। শর্ত একটাই : প্রত্যেক গল্পের কথককে একটি করে নতুন চরিত্র যোগ করতে হবে গল্পে।যার গল্প সবচেয়ে সুন্দর হবে, তাকে আগামীকাল বিয়ের আসরে আস্ত মুরগী ফ্রাই খেতে দেয়া হবে।সাধারণত নিশাদই এই গল্পগুলোর শেষ কথক থাকত এতদিন, আজ হবে অভীক”
-নিশান এই কথাটা বলামাত্র আমি ওর দিকে তাকালাম, ‘ও’ আসলে কী বোঝাতে চাইছে, কারণ অভীক সবসময় এই গল্প-গল্প খেলায় প্রথম কথক হয়, সবাই জানে সে কিরকম মুখচোরা মানুষ; নিশান কি ওর যন্ত্রণাটা সর্বশরীরে ছড়িয়ে দিতে চাইছে?কিন্তু, নিশান তো এরকম ছেলে নয়! তাহলে কী আছে ওর মনে?
‘ঠিক আছে, আমি গল্প শুরু করছি”. -নিশান বলতে শুরু করল :
‘ঠা ঠা রোদের মধ্যে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে একটি ছেলে, পকেটে একটা মানিব্যাগ , তাতে একটা ঠিকানা , আর একটা চিঠি ছাড়া কিছুই নেই। পয়সার অভাবে দুপুরে খাওয়া হয়নি, অথচ খিদের জ্বালায হাটতেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। হঠাৎ পেছন থেকে গাড়ির হর্ন শুনে সে থমকে দাঁড়ালো.........” ‘এবার এখান থেকে বলবে জেরিন’- এই বলে নিশান বসে পড়লো, আর জেরিন শুরু করল:
ছেলেটি পেছন ফিরে দেখলো রুক্ষ চেহারার ড্রাইভার হলুদ দাঁত বের করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেজাজ খারাপ করে সে ছেলেটিকে বলল ‘ওই মিয়া দেইখা হাটেননা? দিনের বেলায়ই নেশা করছেন নাকি। যান মিয়া, আইল্যাণ্ড দিয়া হাটেন। ছেলেটি করুণ চোখে ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বললো, ভাই সারাদিন কিছু খাইনি, মাথা ঘুরছে’। এরপর পকেট থেকে ঠিকানাটা বের করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো...........’এখান থেকে বলবে শাকিল, ব্যস জেরিনের দায়িত্ব শেষ।
শাকিলের মাথায় দুষ্টুবুদ্ধির শেষ নেই, কাহিনীকে যে কোথায় নিয়ে ঠেকাবে, এমন চিন্তা করতে করতেই শাকিল শুরু করে দিল:
এগিয়ে দিয়ে বললো, “ভাই এই ঠিকানাটা কোথায় বলতে পারেন? ড্রাইভার অবাক হয়ে যেইনা ঠিকানা লেখা কাগজটা হাতে নিল, ঠিক তখনই গাড়ির পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিল এক অপরূপা, এই ধরো, আমাদের নিশাদের মত দেখতে। (হায় হায়, পরের বউয়ের রূপের বর্ণনা দিতেছি, নিশাদের বর তো মাইরা ভাগা দিবো আমারে।) ছেলেটি সেটি লক্ষ্য করে ড্রাইভারের কাছ থেকে কাগজটি নিয়ে মেয়েটির পাশাপাশি হাটা ধরলো। মেয়েটি একটু বিরক্ত হইলেও, চুপি চুপি বলি- আদতে খুশিই হইতেছিল, কারণ ছেলেটার চেহারা-ছবি মাশআল্লাহ- একেবারে আমাদের অভীকের মত! তো, ছেলেটি ভনিতা না করে মেয়েটিকে বলল-“সারাদিন হাটছি, আপনি কি আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ পার্কে বসবেন? (আগেই বলছি, মেয়েটার ছেলেটাকে ভাল লাগছে। সুতরাং রাজী হয়ে গেল।)দুজনে হাটতেছে, ছেলেটির ইচ্ছা হচ্ছিল মেয়েটির হাত ধরতে, কিন্তু সেটা তো বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।এমনি দোটানা নিয়েই তারা পার্কের কাছাকাছি চলে আসল...........এখান থেকে বলবে লিয়া, (শাকিলের গল্প শুনে সবাই হোহো করে হাসতে শুরু করল)।

আজ লিয়াকে দেখেই আমার হৃদয়ের গভীরে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে, তাই গল্প বলার সময ওর দিকে তাকানোর সাহস হলনা। আমি নিশানের পাশে গিয়ে বসলাম। ইত্যবসরে লিয়া শুরু করে দিল:
পার্কের কাছাকাছি এসেই হঠাৎ মেয়েটি ছেলেটিকে বলল, ‘জানেন, আমি দারুণ রবীন্দ্রসংগীত জানি। ছেলেটিতো খুশিতে বলগাহারা। সে বাকবাকুম করতে করতে বললো, তবে দেরি কেন, এখানে বসেই আপনার গান শুনি। এই ভরদুপুরে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে ক্ষুধা-তৃষ্ণা ভুলে থাকা যাক। তখন মেয়েটি বলল, কিন্তু আমিতো ইংরেজি কথায় রবীন্দ্র সঙ্গীত গাই, সেটা কি ভাল লাগবে? ছেলেটাও বেপরোয়া, সে বললো, ‘আরে সঙ্গীতের আবার ভাষা কী?আপনি গান, সুর শুনেই বুঝে নেব।“ মেয়েটি আহলাদে সতেরোখান হয়ে এই গানটি শুরু করলো:
What my heart does want
It’s you, only you are,
What my heart does want
Without you, in the earth
I have no one, nothing I do have
What my heart does want

If you don’t find peace…
Then go for peace…
I have got you amid heart, nothing more I do wish
What my heart does want.

কিন্তু মেয়েটির গানে ছন্দপতন ঘটল কোত্থেকে এক উটকো লোক এসে বাগড়া দেয়ায়। সে মেয়েটিকে বলল, ‘আপু আপনার গানটা ভাল লাগল। “আমারো পরাণও যাহা চায়’ এর হিন্দি ভার্সন শুনেছি এর আগে। ইংরেজিটা হিন্দির চেয়েও ভাল লাগল। যদি কিছু মনে না করেন, একটা কথা বলতে পারি?”....এখান থেকে বলবে মেহেদী.....’- লিয়ার মুখে আমার নামটি শুনেই চমকে উঠলাম।'ও' কি খেয়াল করেছে আমি ওকে সরাসরি দেখতে না চাওয়ার জন্যই নিশানের পাশে বসেছি।ওর মুখে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে পুলকিত হলাম, সেই সঙ্গে ইংরেজিতে গাওয়ার কারণটিও দুর্বোধ্য নয় মোটেই। তবে কি লিয়া....? যাইহোক, আমি শুরু করি:

মেয়েটি বলল: জ্বি বলেন। লোকটি বলল: কাছেই একটা কমিউনিটি সেণ্টারে আমার এক বন্ধুর বিয়ে হচ্ছে।আপনারা কি যাবেন আমার সঙ্গে? আমি একা যেতে খুব অস্বস্তিবোধ করছি। ছেলেটি সারাদিন অভুক্ত, খাদ্যপ্রাপ্তির সমূহ সম্ভাবনা দেখতেপেয়ে সে তৎক্ষণাৎ রাজী হয়ে গেল। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে ছেলেটি হতাশ হল। এখানে আয়োজনের কোন কমতি নেই, কিন্তু সেগুলোকে মনে হল কৃত্রিম। গ্রামে-মফ:স্বলে বিয়ের সঙ্গে কোনক্রমেই মিলছেনা, এমনকি কার যে বিয়ে হচ্ছে তাও এই আসরের অনেকেই জানেনা বলে মনে হল তার। মেয়েটিকেও বিমর্ষ মনে হল। ওদের খাবার টেবিলের সামনে দিয়ে একজন ওয়েটার হেটে যাচ্ছিল, কিছু একটা চাওয়ার জন্য মেয়েটি তাকে ডাকল।এসময় হঠাৎ মেয়েটির মোবাইলে কল আসল.........এখান থেকে বলবে সন্দিপ।
সন্দিপ গল্প বলতে শুরুর করার আগেই নিশানের পাশে বসা ভাবীটি বলল_” এই তোমাদের মশা কামড়ায়না?গল্পের যাদুতে তো আটকিয়ে ফেললে, কিন্ত মশাকে যাদু করবে কে? ভাই, সন্দিপ, একটু থাম, আমি একটা কয়েল নিয়ে আসি......... (সমাপ্ত)
৪০টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×