somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজুস প্রভাবিত ডিজিটাল প্রজন্মের প্রতিনিধি হওয়ার প্রেক্ষিতে, আচানক analogue যুগীয় দুর্ভাবনা..

১৫ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই লেখাটির প্রেক্ষাপট সাম্প্রতিক চালু হওয়া ‘ডিজুস ভয়েস চ্যাট’ প্রকল্প(?)। মূল বিষয়বস্তুতে আলোচনার পূর্বে কিছুক্ষণ প্রাসঙ্গিক অতীতকাল ঘুরে আসা যাক।
Analogue টেলিফোনের দু:সহ অভিজ্ঞতা হয়ত এখনো অনেকেরই স্মরণে আছে : লাইন পাওয়া ছিল ভাগ্যের ব্যাপার, আর পাওয়া গেলেও ক্রস কানেকশন তো নৈমত্তিক ব্যাপার, এরপর এলো ডিজিটাল টেলিফোন।
মোবাইলের একেবারে প্রথমদিকের গ্রাহক, তারা নিশ্চয়ই সেইসব দিনের কথা মনে করে বর্তমান সময়ের সাথে তুলনা করেন আর আফসোস করেন , ‘হায়, কেন যে তখন এতটাকা খরচ করেছিলাম, আর কিছুদিন অপেক্ষা করলেই হত’। আমার আব্বু এবং বড় আপা সেই সময়কার গ্রাহক হওয়ায় সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমারও কিঞ্চিৎ পরিচিতি আছে: সিম কেনার জন্য কয়েকমাস আগেই টাকা জমা দেয়া, ছবি, লাইন ধরা...ঝামেলার পর ঝামেলা, এর সঙ্গে সিম+ ফোনসেটের আকাশচুম্বী দাম তো আছেই। আমি নিজে যখন ২০০৫এর জানুয়ারীতে মোবাইল কিনলাম, তখন মোবাইল অনেকটাই সহজলভ্য, কারণ বন্ধুমহলে আমিই সবচেয়ে দেরিতে ফোন কিনেছিলাম, অথচ সেসময় আমরা মাত্র ইন্টার পরীক্ষার্থী। আর, আজ ৪ বছর পরে অবস্থা এখন এমন দাড়িয়েছে যে হাত-পা-চোখ-কানের মত ‘মোবাইলও’ মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এই 'হয়ে উঠা' নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই, আপত্তিটা কোথায় সেটাই এই লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
রাত ১২টার পরে ফ্রি কথা বলা, কম কলরেটে কথা বলা, এসব নিয়ে এত বেশি লেখা হয়েছে যে এ ব্যাপারে আর লিখতে চাইছিনা। হলে থাকার সুবাদে রাত ১২টার পরে দৃশ্য দেখতে দেখতে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এমনকি এটা নিয়ে একটা গল্পও লিখেছিলাম পলিফোনিক রিংটোন ।বরং আমি লিখতে চাইছি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বয়:সন্ধিক্ষণের কিশোর-কিশোরীদের উপর এই ‘ডিজুস সংস্কৃতির’ প্রলয়ঙ্করী প্রভাব নিয়ে।
কয়েকমাস আগে আমি আইডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্র পড়াতাম। তার সিম আছে মোট ৫টি, এমনকি পড়ানোর সময়ও সে প্রথমে কিছুদিন কানে হেডফোন লাগিয়ে এফএম শুনত মোবাইলে।পরে অবশ্য আমি সে অভ্যাসটা বাদ দেওয়াতে সমর্থ হয়েছিলাম ; সারাক্ষণ তো আর পড়া সংক্রান্ত কথা বলা যায়না, ওর সঙ্গে ওর বন্ধু-স্কুল, এসব নিয়েও কথা বলতাম মাঝে মাঝে। সেসব গল্প শুনে আমি আতঙ্কিত, কারণ ওদের বন্ধুদের মধ্যে প্রায়ই প্রতিযোগিতা চলে কার কয়টা সিম আছে, কে কতক্ষণ ফোনে কথা বলে....অনেকে সেজন্য ক্লাসেও আসতে পারেনা সময়মত, পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করে, অথচ অভিভাবকমহল এ ব্যাপারে কতটা ভাবান্তর দেখান, তা জানিনা।
ঈদ ছাড়া সচরাচর সেভাবে বাসায় যাওয়া হয়না আমার। আম্মুর পীড়াপিড়িতে গত ২দিন বাসায় থেকে আজ ফিরলাম। ফরিদপুর মেডিকেলে পড়ুয়া আমার এক বন্ধুকে পেয়ে যাওয়ায় ২ দিন নিরানন্দ কাটেনি। ওর সঙ্গে কথা বলে একটি অদ্ভুত তথ্য জানতে পারলাম; ‘ওর’ ছাত্র পড়ে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে; তার নাকি ৩টা সিম, আর একটু নেতা নেতা ভাব চলে এসেছে আচার-আচরণে।সেই ছেলে আমার বন্ধুটিকে কিছুদিন আগে বলেছে “স্যার, ফরিদপুর শহরে যে মেয়েরে পছন্দ হয়, শুধু আমারে বলবেন; আমি ম্যানেজ করে দেব। আর, যদি কথা বলার জন্য নাম্বার লাগে, তাইলেও আমারে বইলেন”।এ কথার জবাব দিতে আমার সেই বন্ধুটির প্রায় ৩ মিনিট সময় লেগেছিল। আরও, আশ্চার্যন্বিত হয়েছিলাম বিকেলে মাঠে গিয়ে; স্কুলে পড়ার সময় ঐ মাঠে সারা বছর ক্রিকেট খেলতাম, বিকেলবেলা মাঠের দখল নিতে অনেকদিনই মারামারি বেধে গিয়েছে অন্য দলের সঙ্গে।অথচ, এবার গিয়ে দেখলাম পুরো মাঠটা ফাকা, ছেলেরা সব ছোট্ট ছোট্ট দলে মাঠের বিভিন্ন স্থানে গোল হয়ে বসে গল্প করছে, কেউ গান শুনছে, কেউ নতুন ফোন সেট দেখাচ্ছে, এরকম একটা অবস্থা। কিশোরদের মানসিক ভুবন থেকে বিনোদনের ধারণা খেলার জগত থেকে বেশ সরবেই ‘মোবাইল’ ‘এফএম’ এ স্থানান্তরিত হয়ে যাচ্ছে, এই ব্যাপারটি বোঝার জন্য মফ:স্বলের এই খেলার মাঠটিই একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠল!
‘জটিল ভাব, আবার জিগায়, ফাও গ্যাজানো, কঠিন..”এইসব উদ্ভট ভাষা এখন যত্রতত্র উচ্চারিত হচ্ছে ডিজুসের কল্যাণে। এখনও পর্যন্ত উদ্ভট যত বিজ্ঞাপন দেখেছি মোবাইল ফোনের , তার সিংহভাগই এই ডিজুসের।শুনেছি, ডিজুসকে নাকি তারুণ্যের প্রতীক বলা হয়। তো টেলিভিশন কিংবা খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনে যেসব ডিজুস মডেল দেখি, তাদের পোশাক-দাড়ি-গোফ-চুলের স্টাইলই যদি তারুণ্য হয়, তাহলে নিজেকে তরুণ ভাবতে আমি লজ্জাবোধ করবো। ডিজুসের এই ভাষা পৌছে গেছে এফএম রেডিওগুলোতেও। এফএম এর অনুষ্ঠানের মান মোটামুটি সন্তোষজনক, কিন্তু তাদের রেডিও জোকিদের ভাষাটা কি কেউ শুনেছেন? এদের অর্ধ ইংরেজি-এক চতুর্থাংশ বাংলা-এক চতুর্থাংশ হিন্দি সংমিশ্রণের ভাষা শুনলে মনে হয়, আজ যদি ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বেঁচে থাকতেন, তাহলে নিশ্চিত নতুন একটি ভাষার জন্ম হত যেটার ব্যাকরণ তিনিও বুঝতেননা। সেক্ষেত্রে আমরা বুঝবোনা এটাই স্বাভাবিক।
এই ডিজুস আগ্রাসনের সর্বশেষ সংস্করণ ‘ডিজুস ভয়েস চ্যাট’। কাল বিজ্ঞাপন দেখলাম এটার, এরপর আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে পুরো ব্যাপারটি বুঝলাম। সে-ও এই ‘ভয়েস চ্যাট’ এ রেজিস্ট্রেশন করেছে সম্প্রতি। আমার বোঝার সুবিধার্থে সে কিছুক্ষণ চ্যাটও করল; পুরো প্রক্রিয়াটিতেই চরম বিরক্ত হয়েছি। আমার মনে হয়েছে, কিশোর-কিশোরীদের ‘ইচড়ে পাকামিকে’ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে promote –patronize করার একটা হীনচেষ্টা।
এ ব্যাপারে মিডিয়া কী বলে? অবশ্যই ভাল বলে। নয়তো টেলিভিশনে এত ফলাও করে বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয় কিভাবে? কিংবা সংবাদপত্র মিডয়ার ভূমিকা কী?এরাও নীরব দর্শক, আর মাঝে মাঝে ভাড়ামী করবে। এই কুপ্রভাব নিয়ে সেরকম কোন জোরালো প্রতিবেদন কোথাও লেখা হয়েছে কি?হবেনা, কারণ সেক্ষেত্রে মোবাইল কোম্পানীগুলো তাদের প্রতি গোস্বা করে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এমন নির্লজ্জ লেজুড়বৃত্তির পরও যদি ‘যা কিছু ভাল, তার সঙ্গে....” এমন কোন শ্লোগান দেখি কোন খবরের কাগজের, তখন ভণ্ডামীকে অনেক উচ্চমার্গীয় শিল্প ভেবে সান্ত্বনা খুজি। আমার এই লেখাটাতে কিশোর-কিশোরীরা সংশোধন হবেনা, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও তড়িঘড়ি করে বিজ্ঞাপন নীতিমালা প্রণয়ন করবেনা, কিংবা খবরের কাগজগুলোও কড়া সমালোচনা করে কোন সংবাদ ছাপাবেনা, সবকিছু আগের মতই রয়ে যাবে, তবুও এটা লিখছি নিজের ক্ষোভটা অন্তত প্রকাশ করা যায়, এই একটিমাত্র উদ্দেশ্যে। আমাদের মত ক্ষমতাহীন মানুষরা কেবল ক্ষোভই প্রকাশ করতে পারে; সংস্কার-পরিবর্তন-বাস্তবায়ন জাতীয় শব্দগুলো অনেক উপরের পর্যায়ের মানুষদের জন্য সংরক্ষিত, যারা হয়ত কোনদিনই এই শব্দগুলো প্রয়োগ করবেননা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৯:৫২
১৬৭টি মন্তব্য ১০৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×