somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠ পুনর্দর্শন : "ঘর ভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ্য"# আহমাদ মোস্তফা কামাল

০১ লা মার্চ, ২০১০ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ধারণা নিবন্ধ আর গল্পের মধ্যে সূক্ষ নয়, চোখে পড়বার মত স্থূল একটা পার্থক্য রয়েছে। তাই আরও একটা ধারণা আমার প্রায়ই হয়ে থাকে, তা হল, নিবন্ধকার গল্পকার হতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিবন্ধ আর গল্প মিলমিশে 'নিল্প'(!) হয়ে যায়, একইভাবে গল্পকার নিবন্ধ লিখলে তাও প্রায়শই গল্প-নিবন্ধের সংকরায়নে গোবন্ধ লাগে।
ব্লগে আহমাদ মোস্তফা কামালের লেখাগুলো পড়ে মুগ্ধ হই। বাণীভঙ্গি নিদারুণভাবে টানে, কিন্তু ছাপার অক্ষরে তার কোন লেখা এর আগে একবারই পড়েছিলাম শতবর্ষের বাংলা গল্প নামে একটা সংকলনে। সেখানে গল্পটা পড়েই এই লেখার ভূমিকা অংশের উপলব্ধিটা হয়েছিল। যাহোক, বইয়ের নাম "ঘর ভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ্য", লেখক আহমাদ মোস্তফা কামাল। পাঠসূত্র এবং এডর্ন পাবলিকেশন্সে তার আরও বেশকিছু বই থাকা সত্ত্বেও এটাকেই বেছে নেয়ার দুটো কারণ ছিল :১. অন্য যে কোনকিছুর চেয়ে গল্প আমাকে চায়ের মত টানে ২. বইয়ের শরীরে একটা বিজ্ঞাপন :'প্রথম আলো বর্ষসেরা বই" পুরস্কারপ্রাপ্ত

বইয়ে গল্পসংখ্যা সাড়ে ৮টি। ৮ আর ৯ এর মাঝামাঝি সাড়ে ৮ বলার কারণটা একটুপরই বোঝা যাবে। গল্পগুলোকে কমপক্ষে ৫টি দলে ফেলব:
প্রথম দলে রাখব দুটি গল্পকে: ১. বিজ্ঞাপন ও মানুষের গল্প ২. মধুবাবুর আশ্চর্য কান্না
২য় দলে আড়াইটি গল্প : ৩. কনফেশন ৪ আমাদের শহরে একজন অচেনা লোক (১,২)
৩য় দলে একটি গল্প : ৫.তারা তখন পবিত্রতা রক্ষা করছিলো।
৪র্থ দলে দুটি গল্প : ৬. উন্মোচন ৭. স্বপ্ন ও বাস্তবতার ভেতরকার দেয়ালটি ভেঙে যাবার পর
৫ম দলে একটি গল্প: ঘুমোবার সব আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যাবার পর।।

৩য় দল থেকে শুরু করি।
'তারা তখন পবিত্রতা রক্ষা করছিলো' একটি স্যাটায়ারধর্মী গল্প। লৌকিকতার লেবাসে ধর্ম, নাকি ধর্মের লেবাসে লৌকিকতা, এরকম কিছু উগ্র মানসিকতার মানুষকে নিয়ে এই গল্প, যারা রমযানের পবিত্রতা রক্ষার্থে হোটেলে পর্দা টাঙাতে বাধ্য করে, কিংবা রোযা না রেখে কেউ স্ত্রীসঙ্গম করছে কিনা, তা নজরে রাখতে পারলে ঘরে ঘরে গিয়ে উকি দেয়, এমন অবস্থা। এইসব উগ্রপন্থীরা যে তলে তলে নিজেরাই একেকজন শ' অদ্যক্ষরের জন্তু, এবং সুযোগ পাওয়ামাত্রই মানুষের ম,ন, ষ বর্ণগুলো শ,য়, র এর সাথে অবস্থান বিনিময় করে সেটাই স্যাটায়ারের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। সে চেষ্টায় লেখক অনেকখানি সফল। কিন্তু স্যাটায়ার বিবেচনায় স্থূল হয়ে গেছে, কেননা যাদেরকে কটাক্ষ করা হচ্ছে তাদেরকে কদর্যভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ভাষা এবং বর্ণনারীতিটা তীক্ষ হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে করে উগ্রবাদী গোষ্ঠীটির প্রতি পাঠকের বিতৃষ্ণা জাগে। কিন্তু গল্পটা পড়ে মনে হয়েছে লেখক তার ব্যক্তিসত্তার সাথে সমঝোতা করে একে একটা মধ্যবর্তী প্রতিবাদ লিপি করতে চেয়েছেন। এই নিরিখে লেখাটার পরিসর ছোট হয়ে যায়। গল্পের এন্ডিংয়ের শ্লেষটা ভয়ানক, এবং তীব্র। কিন্তু শেষ বাক্য- 'এক অভূতপূর্ব ঘন অন্ধকারে রোজী তার উন্মুক্ত শরীর নিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। এই বাক্যটাই শেষের সুগভীর শ্লেষটাকে আবার অগভীর করে দেয়। রোজী চরিত্রটিকে একটা প্রশ্নবোধক হিসেবে দাঁড় করানোর প্রয়াস রাখেন লেখক, কিন্তু পুরো গল্পের প্রোগ্রেসে প্রশ্নবোধকটা জোরালো হতে পারেনা। বরং এই বাক্যটা বাদেই শেষের শ্লেষটা অনেক বড় একটা প্রশ্নবোধক হতে পারত বলেই মনে হয়েছে। তবে, লেখাটাকে যদি স্রেফ গল্প হিসেবে পড়ে কেউ, তাহলে শেষটাকে পরাবাস্তব ধরে, রোজীর দাঁড়িয়ে থাকার মাঝে কোন অসঙ্গতি নাও পেতে পারে।

এবার ২য় দল।
কনফেশন গল্পের থিম এবং বক্তব্য আমাদের আবারো মনে করিয়ে দেয়- 'ইট ইজ ইজি টু সে, বাট হার্ড টু ডু'। গল্পে একজন বিপ্লবী, যে কিনা চেতনায় বামপন্থী, স্বপ্ন দেখে শ্রেণীহীন সমাজের, সে-ই আসল সময়ে নিজের শ্রেণী থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনা। গ্রামের একটি দুস্থ মেয়ের সাথে তাদের বাড়ির রাখালের নিষিদ্ধ সম্পর্কের বিচার করতে গিয়ে তার চেয়ারম্যান চাচা রাখালের পক্ষ নিয়ে মেয়েটির পরিবারকে গ্রাম ছাড়তে নির্দেশ দেয়, কারণ ঐ মেয়েটির বড়বোনের সাথে নিষিদ্ধ সম্পর্কে জড়িয়েছে তার নিজের ছেলেও। বিপ্লবী সেই কথা জানত, তাই এই প্রহসনের বিচারে গ্রামবাসী তার প্রতিবাদ আশা করলেও সে অনড় বসে থাকে পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে।
এর বাইরেও প্রতিটি চরিত্রই কম-বেশি কনফেশন করেছে, এমনকি বিপ্লবীর চাচাও কনফেশন করেছে আদর্শ থেকে সরে আসার। এখানে এসে আদর্শ ও রাজনীতির মধ্যকার অন্তহীন দূরত্বটাকে লেখক চমৎকারভাবে নিয়ে এসেছেন।
কিন্তু গল্পের বর্ণনাভঙ্গিটা শ্লথ। বিশেষত অতিকথন প্রবণতা অত্যধিক। বিপ্লবী তার বন্ধুর কাছে ক্ষণে ক্ষণে নিজের পরিবার ইতিহাস বলতে গিয়ে গল্পটাকে প্রায় সময়ই ঝুলিয়ে ফেলেছে, গল্পের প্রয়োজনেই ইতিহাসটা দরকারী ছিল। কিন্তু ইতিহাস আনার কৌশলটা পড়ার ক্ষেত্রে ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। ক্ষণে ক্ষণেই গল্প হারিয়ে যায়। এই বিষয়গুলো উপস্থাপনে গল্পধর্মী কৌশলের প্রয়োজন ছিল, সেটার ঘাটতিতেই গল্প-নিবন্ধের বিষয়টা আবারো সামনে চলে এসেছে।
তবে একটা উপমার কারণে এই গল্পটা হয়ত আজীবন মনে থাকবে আমার; মৈথুনক্রিয়াকে লেখক একটা চমৎকার উপমা দিয়েছেন : 'কালি দোয়াতের মধ্যে প্রবিষ্ট কলম'
শালীনভাবে অশালীন কথা লেখাটাও একটা প্রতিভা।
আমাদের শহরে একজন অচেনা লোক (১,২) মূলত ২পর্বে বিভক্ত ১টাই গল্প। দুটো গল্পে একজন অচেনা লোকের মাধ্যমে তিনি তিনটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন সকলের উদ্দেশে- ১.মানুষ আসলে কী খুঁজে জীবনভর? ২. মানুষ কার জন্য অপেক্ষা করে? ৩. মানুষ কিসের জন্য অপেক্ষা করে?...এই প্রশ্ন তিনটিই ছড়িয়ে পড়ে শহরময়, এবঙ দেখা যায় উত্তর দিতে গিয়ে সবাই বিভ্রান্ত। গল্পের শেষে লেখক উপসংহার টেনেছেন এভাবে, এই প্রশ্নগুলো অর্থহীন, এবং এগুলোর উত্তর খোঁজাও নিষ্প্রয়োজন, কারণ উত্তর পাওয়াটা প্রকৃতির বিরুদ্ধবাদীতা হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে অচেনা লোকটিকে আমরা আমাদর বিবেকেরই বাস্তব ছায়া বলতে পারি। এদিক থেকে গল্পটা চমৎকার।
কিন্তু গল্পের মৌলিকত্ব বিচার করতে গেলে প্রশ্ন উঠে আসে। কারণ এই গল্পের প্লটটা লিও টলস্টয়ের একটা গল্পের কার্বনকপির কাছাকাছি। ঐ গল্পেও তিনটি প্রশ্নই রাখা ছিল। অচেনা মানুষের জায়গায় ঐ গল্পে দেবদূত নেমে এসেছিল পৃথিবীতে তিনটি প্রশ্ন নিয়ে। দেবদূত উত্তর পেয়েছিল, আর এই গল্পে ভবঘুরে তরুণরা নিজেরাই উত্তর খৌঁজা বাদ দিয়েছে, পার্থক্য বলতে এটুকুই।

৪র্থ দলের গল্প দুটো পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, যেহেতু গল্পটা লেখকই লিখেন, তাই গল্প তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি, এবং গল্পকে তিনি মারুন-কাটুন, যা ইচ্ছা করুন, পাঠকের তাতেই 'ইয়েস স্যার' বলে যেতে হবে, গল্পের নাটাই যে তারই হাতে!
স্বপ্ন ও বাস্তবতার ভেতরকার দেয়ালটি ভেঙে যাবার পর নামটা যতই শৈল্পিক হোক, গল্পের ভেতরে গিয়ে পাঠককে ধুকতে হবে। একজন মানুষ বাস্তব আর স্বপ্নের ঘোরটা আলাদা করতে পারছেনা, থিম হিসেবে দুর্দান্ত। কিন্তু থিমের বহিপ্রকাশ হিসেবে যে দৃশ্যচিত্রগুলো আনা হয়েছে, সেহুলো বহুলচর্চিত। স্বপ্ন-বাস্তবতার এই পার্থক্যে অক্ষমতাকে শুরুতে দেখানো হয়েছে, গল্পের পুরুষ চরিত্রটি ছেলেবেলায় তার চোখের সামনে বাবাকে নির্মমভাবে খুন হতে দেখেছে, তার মাকে খুনীরা হুমকি দিয়েছে, যদি সে মুখ খুলে তবে ছেলেকেও একইভাবে মেরে ফেলা হবে'- এধরনের দৃশ্য মান্না-রুবেলের বাঙলা সিনেমায় অহরহ দেখানো হয়ে থাকে। এরপর সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে গেলে সেখানকার আলাপচারিতাও তৌকির-বিপাশার প‌্যাকেজ নাটকঘেষা। তাই দুর্দান্ত থিমটার কোথাও স্ফূরণ দেখা যায়না, করং থিমটার বিনাশই দেখি শেষে এসে : কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে কিছু সন্ত্রাসী বাড়িতে ঢুকে পড়ে তারই চোখের সামনে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করল, সে তখনো স্বপ্ন আর বাস্তবতার পার্থক্য খুঁজছিল। এই আরোপিত এন্ডিংটাই আরও একবার বলে- লেখক চাইলে আকাশ থেকে বৃষ্টির বদলে বাঁশ নামবে!

উন্মোচন গল্পটা এই বইয়ের বাকিগল্প থেকে আলাদা। পুরোটাই পরাবাস্তব ভাবনা আর ঘটনাবলীর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনে মানুষের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা, কিন্তু সে কাজে চিরায়ত ব্যর্থতা ধরে জীবন এগিয়ে নেয়া- গল্পের থিম হিসেবে এটিকেই দাঁড় করানো যায়। এই থিমটাকে পোশাক পরাতে তিনি কিছু চরিত্র এনেছেন- মা, বাবা, আর গল্পকথক স্বয়ং। এই ফ্রেম থেকে নচিকেতার একটা গান প্রাসঙ্গিক:
পৃথিবীটা বড় রঙিন, ভাবত একথা খোকন
তাকে নিয়ে কত হাসি-আনন্দ
থাকত ঘিরে যখন
.............
............
অনাহূত হয়ে বেঁচে থাকা নাকি মৃত্যুর আয়োজন
বিষ হাতে নিয়ে খোকন
ভাবছে একথা এখন।।।
যদিও গল্পে গল্পকথক কোথাও মরার ইচ্ছা পোষণ করেনি, তবু্ও গল্পকথককে নিয়েতার মা-বাবার টানাপোড়েনটা এই গানকে সহসাই মনে করিয়ে দেয়। এরপর থেকেই গল্পটা ঝুলে যায়। ফিলার ঘটনার জোড়াতালিতে পূর্ণাঙ্গ ঘটনাটা বিকশিত হয় অপুষ্টির শিকার হয়ে। গল্পটা পড়তে গিয়ে এটাকে একটা খসড়া লেখা মনে হয়েছে, যেখানে লেখক অনেক কিছু ভাবতে গিয়ে শেষে নিজেই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যা হয় হোক ভাবে সমাপ্তি টেনেছেন।

এবার প্রথম দল।
বিজ্ঞাপন ও মানুষের গল্প অসাধারণ একটা গল্প, কেবল মুগ্ধতায় পড়েই যেতে হয়। মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারগুলোর এমন নিখুঁত উপস্থাপনের দৃষ্টান্ত বিরলই বলতে হবে। সাধারণত এধরনের গল্পে কোন একটা পক্ষকে দোষী ধরা হয়, কিন্তু এই গল্পে সেধরনের কোন অবকাশই রাখা হয়নি। একজন গড়পড়তা মানুষ চোখ ধাধানো সুন্দরী বউ বিয়ে করে কিভাবে অন্যদের কাছে মর্যাদাবান হয়ে উঠে, এটা যেমন দেখানো হয়েছে, তেমনি স্ত্রীটিকেও সচরাচর রূপের দেমাগী না দেখিয়ে সচেতন একজন হিসেবে দেখানো হয়েছে। লোকটির বিজ্ঞাপন নির্মাতা বন্ধৃ তার স্ত্রীকে বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব দেয়, নানা দোটানায় সে রাজীও হয়। কিন্তু বিজ্ঞাপনের পর স্ত্রীকে তার অচেনা লাগে, স্ত্রীর বদলে বিলবোর্ডে রাখা মডেল স্ত্রীকেই সে তীব্রভাবে কামনা করতে থাকে, যদিও তারকা ইমেজ স্ত্রীটিকেও একটু্ও বদলাতে পারেনি। এধরনের গল্পে সাধারণত নির্মাতা বা বন্ধুর সাথে স্ত্রীদের বিশেষ সম্পর্ক দেখানোর ঝোক থাকে, কিন্তু এ গল্পে সেধরনের কোন মোড় রাখা হয়নি, তবে দুষ্টু পাঠক চাইলে নিজ দায়িত্বে ভেবে নিতে পারে, যখন তার স্ত্রীর মত একজন আনকোরা মডেলকে একটা বিজ্ঞাপনের জন্য লোভনীয় সম্মানীর প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে এখানেও পেশাদারিত্বের প্রশ্নে এই সম্ভাবনাটি উড়িয়ে দেয়া যায়।
পুরো গল্পেই সম্মোহন। এমনকি শেষে মৃত্যুর যে বর্ণনাটা দেয়া হয়েছে তা এককথায় অভিনব : 'হয়ত সত্যি সেদিন লোডশেডিং ছিলো কিঙবা ছিলোনা, হয়তো সত্যি রাস্তাঘাট জনশূন্য ছিলো অথবা সে ভুলেই গিয়েছিল- গভীর রাতে বাস-ট্রাকগুলো নিয়ন্ত্রণহীন দানবের মত চলাচল করে- আর তাই কখন কোনদিক থেকে কে যে এসে তাকে রাজপথের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে যায়ম সে টেরও পায়না'।

মধুবাবুর আশ্চর্য কান্না আরেকটি অসাধারণ গল্প। একজন মানুণ বিএ পাশ করেও সারাটিজীবন যাত্রার পেছনে কাটিয়ে দিল, এধরনের মানুষকে সাধারণ মানুষ পাগল বললেও এদের মনস্তত্ত্ব আর জীবনবোধকে শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে হয়। মধুবাবু কাঁদেন। একসময় তিনি যাত্রা লিখে দর্শক কাঁদাতেন, কিন্তু যাত্রাশিল্পের দূরবস্থায় এখন আর যাত্রা দেখেনা কেউ, তাই কাঁদানোর সুযোগ পাচ্ছেননা। তার মতে, মানুষ চাইলেও নাকি কাঁদতে পারেনা, কান্না ভারী হয়ে চেপে থাকে। তাই সব মানুসের কান্নার ভার তিনি নিজে নিয়েছেন, নিজে কাঁদছেন। গল্পের অন্তর্নিহিত বোধটা মুগ্ধ করে।

সবশেষে,
ঘুমোবার সব আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যাবার পর। এই গল্পটাকে আমার ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলের মত মনে হয়েছে- প্রতিভা অপচয় করে নিঃশেষিত।
গল্পটার দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে পড়ে যেতে হয়। এরপরই গল্পোচ্ছলে প্রথম আলো সুলভ প্রোপাগান্ডা চালানো, যা গল্পটার সকল সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিয়েছে। একজন লেখক ঘুমুতে পারছেননা, তিনি অল্প বয়সেই অজান্তে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাধিয়ে ফেলেছেন, তিনি ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তার তার লেখা পড়ে তাকে পেসিমিস্ট হিসেবে আখ্যা দেন। তাকে একটা হালকা প্রেমের গল্প লিখতে বলেন। লেখকের তখন একটা মেয়ের কথা মনে পড়ে যার সাথে প্রেমটা হতে হতেও হয়ে উঠেনি। তিনি তাকে গভীর রাতে ফোন করেন তার ভেজা কণ্ঠ শুনতে, অনেক আবেগী কথা হয় দুজনের। কথা শেষের দৃশ্যকল্টা দারুণ : এই এখন যেমন, আমার যাবতীয় দুর্ভাবনা ও দুঃস্বপ্নের মধ্যেও ঘটছে এক আশ্চর্য ঘটনা, একটি মেয়ে এই মধ্যরাতে আমাকে ফোনে গান শোনাচ্ছে! এটাই তো চমৎকার এক প্রেমের গল্প হয়ে উঠতে পারে!- এসব ভাবতে ভাবতে আর গানটা শুনতে শুনতে সে বোধহয় ঘুমিয়েই পড়েছিল, নাকি তখনো শিবাস রিগালের ঘোরেই ছিল সে বুঝতে পারেনি, হঠাৎ সাইরেনের তীব্র শব্দে তার ঘোর কাটে।

গল্পটা এমনকি এখানেও শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু এরপরই ইউটার্ন নিয়ে রাজাকার, যুদ্ধপরাধী, জঙ্গি, স্বৈরাচার, সংখ্যালঘুর মত যাবতীয় সমস্যাগুলোকে ঢুকিয়ে দিয়ে লেখক কী ফিউশন করতে চেয়েছেন বোধগম্য হয়না, হতে পারে গল্পোচ্ছলে মনের ঝাল মেটানো। কিন্তু একজন লেখকের নির্মোহ থাকাটাই প্রধান শক্তি, এই প্রশ্নে লেখককে নিষ্প্রভ বলতে হবে। কারণ এই বিষয়গুলো গল্পটাকে একটা উৎকট জায়গায় নিয়ে গেছে, সত্যি বলতে কি পড়তে গিয়ে পাঠক বিরক্ত হলে তাতে পাঠককে কোনভাবেই দোষ দেয়া যাবেনা। এই বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে চাইলে এন্তার আলাদা নিবন্ধ হতে পারে, কিন্তু গল্পের মধ্যে একে ঠেসেঠুসে চালান করে 'আহা উহা' করে গল্পের টোনটাকে নষ্ট করা ছাড়া বিশেষ কোন ফায়দা হয়েছে বলে মনে হয়না। এই অংশটাকে কেন যেন প্রথম আলোর লোক দেখানো কার্যক্রমের মত মনে হয়েছে। যাইহোক, এটা পাঠক হিসেবে একান্তই আমার নিজস্ব ভাবনা। ভিন্নমত থাকবে সেটাই বাঞ্ছনীয়।

এবং আরও একবার বিজ্ঞাপন ও মানুষের গল্প লেখাটার জন্য লেখককে স্যালুট।।।


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:৩৮
১৭টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৩৯

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৪১

ছবিঃ আমার তোলা।

আজকে সাত রোজা।
সময় আসলে অনেক দ্রুত যায়। গতকাল সুরভি আর ফারাজাকে নিয়ে গিয়েছিলাম শপিং করতে। কারন আমি জানি, ১৫ রোজার পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বাসীকে লজিকের কথা বলার দরকার কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭




হনুমান দেবতা এবং বোরাকে কি লজিক আছে? ধর্ম প্রচারক বলেছেন, বিশ্বাসী বিশ্বাস করেছেন ঘটনা এ পর্যন্ত। তাহলে সবাই অবিশ্বাসী হচ্ছে না কেন? কারণ অবিশ্বাসী বিশ্বাস করার মত কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×