somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে ভাবে সামহোয়্যার ইন ব্লগের জন্ম এবং বাংলার প্রতি ভালোবাসা

১৮ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাজার সুযোগ থাকা সত্বেও আমি দেশেই থাকি। দেশের বাইরে আমার বেশিদিন মন বসে না। দৈনিক যুগান্তর এর প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এই কথাগুলো বলছিলেন তথ্যপ্রযুক্তির অন্যন্যা, আমাদের খুব প্রিয় ব্লগ সামহোয়্যার ইন ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা। বাংলাদেশে ‍‍‌"সামহোয়্যার ইন ব্লগের" সূচনা তাঁর হাত ধরেই।
********আজ যুগান্তরে প্রকাশিত হওয়া জানা আপুর সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরলাম এখানে********

সন্তান জন্মের পর মাতৃত্বকালীন ছুটি কম পেয়েছিলেন বলে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেলেন তিনি। তারপর নিজে নিজে কিছু করতে গিয়ে বাংলাভাষী ব্লগারদের জন্য সবচেয়ে বড় এই ব্লগ সাইটি জন্ম দিলেন। পৃথিবীর ১৯৮টি দেশ থেকে আজকে এ ব্লগটিতে মায়ের ভাষা বাংলায় বলা যায় জীবনচর্চা হচ্ছে। এবার শোনা যাক এই তথ্যপ্রযুক্তির অন্যন্যা'র গল্প-------




*সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা* পড়াশোনা করেছেন সমাজ বিজ্ঞান এবং শিল্পকলায়। তবে তার ভালোবাসা আর প্রবল আগ্রহের বিষয় হল মানুষ। ভৌগোলিক মানচিত্রের সঙ্গে মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা, ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ইত্যাদির ভিন্নতা, পার্থক্য এবং সর্ম্পক থাকে ভীষণ আগ্রহী করে তুলে। আর এখন যা নিয়ে কাজ করছেন তা তার এই ভালোবাসা ও আগ্রহকে কেন্দ্র করেই।

জীবনে তেমন বিশেষ কেউ বা কিছু হয়ে ওঠার স্বপ্ন কখনও ছিলনা তার। খুব ছোট বেলায় ভাবতেন বড় হয়ে একদিন ট্রাক বা ট্রাক্টর চালাবেন। কারণ ওগুলোর বিশাল চাকা রয়েছে এবং বেশ বড়সড় একটা কিছু। আরেকটু বড় হওয়ার পর আনেকদিন ভেবেছেন উড়োজাহাজ চালানোর কথা। কারণ ওটার বিচরণ অসীমে। তবু পড়াশোনা শেষ করে জানা ঢুকলেন মৌবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণ ফোনে। নরওয়ের একটি দৈনিক প্রত্রিকাতে কিছুদিন কাজ করেছেন। " সামহোয়্যার ইন " ব্লগের প্রতিষ্ঠার পেছনের সেই উলেখযোগ্য ঘটনাটা বললেন এ প্রসঙ্গে-----
* ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাস। আমার মেয়ের বয়স তখন দুই মাস। মাত্র ৮৪ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটি আমার কাছে অমানবিক মনে হওয়ায় মাতৃত্ব উপভোগ এবং মেয়ের সম্পূর্ণ দেখাশোনা নিজের হাতে করার উদ্দেশ্যে আমি চাকরি ছেড়ে দিলাম। পরে পুরো দুই বছর বাচ্চার দেখাশোনার পাশাপাশি আমি এবং আমার স্বামী আরিল্ড ক্লোক্কেরহৌগ দেশে থেকে এ দেশের মেধাকে কাজে লাগানোর জন্য কিছু করার পরিকল্পনা করতে থাকি। ২০০৪ সালের মার্চ মাসের একটি সকালে কাজের ফাঁকে ম্যানফ্রেড ম্যান'স আর্থব্যান্ডের "সামহোয়্যার ইন আফ্রিকা" গানটি শুণতে শুণতেই মাথায় *সামহোয়্যার ইনঃ* কথাটা গেঁথে যায়। ভাবনা শুরু হয় "সামহোয়্যার ইন" পথচলা। কাজ চলতে থাকে পূর্ণোদ্যমে। ১মে ২০০৫ আমাদের স্বপ্নকে সত্যি করে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গেল সত্যিকারের //সামহোয়্যার ইন// তার নানা কর্মকান্ড নিয়ে। তবে সোস্যাল মিডিয়া, লোকাল কমিউনিটি ইত্যাদি বিষয়গুলি মাথায় রয়েই যায়, যা নিয়ে আমরা দু'জন খুব জোরের সঙ্গে ভাবছি। ব্লগ, মার্কেট পেস, সিটিজেন নিউজ, ট্রাভেল সাইট ইভেন্টস ইত্যাদি নিয়ে নানা পরিকল্পনা চলতে থাকে প্রতিদিন।

২০০৪ সালের জুনে আমরা একটি কমিউনিটি ব্লগ পাটফরমের কথা ভাবি এবং এই কমিউনিটি ব্লগটি বাংলা ভাষাতেই হবে বলে আমি সিন্ধান্দে অনড় থাকি। উলেখ্য, "ব্লগ" ধারনাটি সে সময় এদেশে তখনও তেমন করে পৌঁছেনি এবং হাতেগোনা কয়েকজন যারা ব্লগিং করতেন তা ইংরেজীতে। তাই এরকম একটি বিষয় তৈরীতে ঝুকিও ছিল বৈকি। তবে বাংলা ভাষায় হবে ভেবে এর একটি মোটামুটি ভবিষ্যৎ রুপ আমাদের ধারণায় ছিল। ২০০৫ সালের ১৭ আঘষ্ট দেশজুড়ে ৬৩টি জেলায় একযোগে ৫০০টি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আর সবারমত //সামহোয়্যার ইন// ট্যালেন্টরা এই সংক্রান্ত তাৎক্ষণিক এবং সর্বশেষ সংবাদ জানার জন্য উৎকণ্টিত হয়ে পড়েন। সেই ভয়াবহ দিনটি আজকের এই সামহোয়্যার ইন ব্লগটি দ্রুত তৈরী করতে উদ্বুদ্ধ করে। সিটিজেন জার্নালিজম বা কমিউনিটি ব্লগ প্লাটফরম তৈরীর ভাবনা আরও জোরদার হয়ে গেল "সামহোয়্যার ইন" টিমের অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে।

২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর আমাদের একটি ছোট্ট টিম (হাসিন, আরিল এবং ইমরান) থাতা-কলমে পরিকল্পনা করে একটি কমিউনিটি ব্লগ তৈরি করে যেখানে ব্লগটির একটি কমন ফ্রন্ট পেজ থাকবে। হাসিন গবেষণায় লেগে গেলেন একটি ফোনেটিক বাংলা কী-বোর্ড তৈরী করতে। ইমরান পূর্ণোদ্যমে শুরু করে দিলেন "সামহোয়্যার ইন" ব্লগের প্রথম ভার্সনটি তৈরী করতে। মেধা, শ্রম আর ভালোবাসার এক অসাধারণ মিশ্রন হল। কৃতজ্ঞতাসহ গৌরবের সঙ্গে বলছি, এই অসম্ভব মেধাবী এবং উদ্যমী টিমটি না থাকলে আজকের "সামহোয়্যার ইন ব্লগের জন্ম হতনা। দেখুন ছয় বছর আগে যখন আমরা এই ব্লগ সাইটটি তৈরির উদ্যোগ নেই তখন এদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুব কম ছিল। তার পরেও কোন রকম বিজ্ঞাপন ছাড়াই দ্রুততার সঙ্গে "সামহোয়্যার ইন" ব্লগ পরিচিতি পেতে থাকে। তার সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল "বাংলা" এবং খুব সহজে বাংলায় লেখার পদ্ধতি। আশা এবং আনন্দের কথা হল এর মধ্যে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর কল্যাণে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে উলেখযোগ্যহারে। সে সঙ্গে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে "সামহোয়্যার ইন" ব্লগের রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা। পাশাপাশি অনুপ্রেরণা পেয়ে বাংলায় একের পর এক কমিউনিটি ব্লগের জন্ম হতে থাকে যা খুবই আনন্দের এবং আশার কথা। ব্লগ এখন প্রচলিত মাধ্যমের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর কারণ এখানে যেকোন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ রয়েছে এবং তার প্রতিফলনও খুব শক্তিশালি। ব্লগাররাই এ মাধ্যমটির প্রাণ। সফলতার বিষয়টি আমার কাছে ভিন্নরকম, খানিকটা দূরের বিষয়। বাংলাদেশজুড়ে যেদিন ইন্টারনেট একসেস থাকবে, অবাধ বাক স্বাধীনতার স্বাদ দেশের একটি বড় অংশজুড়ে যেদিন প্রতিষ্ঠা পাবে সেদিন জানব আমরা সফল হয়েছি পুরোপুরি।


তার এগিয়ে চলার পেছনে কাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জানা বললেন, 'আমার জীবণের সবক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা, সহযোগিতা, গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব এবং পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি আমার মা এবং ভাইয়ের কাছ থেকে। কারণ আমার খুব কম বয়সে বাবা মারা যান। ভাইয়া আমার জীবণে প্রিয় বন্ধু এবং শ্নেহশীল বিচক্ষণ পরিচালকের ভূমিকা রেখেছেন। এরপর আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গি, বন্ধু, সহকর্মী আমার স্বামী ও আমার শ্বশুর শাশুড়ির অনুপ্রেরনা ও সমর্থন রয়েছে শতভাগ। আমার মা এবং বাবা দুজনই দৃঢ় টরিত্রের, অজস্র ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, হৃদয়বান এবং ভাষা সচেতন মানুষ। শুদ্ধ উচ্চারণ, বক্তব্য পরিস্কার করে গুছিয়ে বলা এবং লেখা পরিশিলিত বাক্য ব্যাহার ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সচেতনতা আমার জীবনের মূল্যবান অভিজ্ঞতা। আর একজন অসাধারণ বন্ধু আমার স্বামী আরিল্ড ক্লোক্কেরহৌগ এবং ৮ বছর বয়সী আমাদের মেয়ে কিন্নরীকে নিয়ে আমাদের প্রতিদিন। তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক সঙ্গি হয়ে রয়েছে "সামহোয়্যার ইন"।




জানা সমাজ নিয়েও ভাবেন। বললেন, 'একজন নারীর সুস্থ, স্বাভাবিক স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার জন্য পরিবারের ইতিবাচক মানসিকথা সবচেয়ে আগে দরকার। তাতে মেয়োটর জীবনযাত্রার স্বভাবিক গতিতে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়। নারীর যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন হলে, সচেতনতা গড়ে তুলায় প্রাপ্য সুযোগ ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকলে নারী নিশ্চিতভাবে একটি সুস্থ ও গ্রহনযোগ্য জাতী গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী।
***সমাপ্ত***
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:৪০
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×