somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রী শ্রী রমনা কালী মন্দিরের ইতিকথা

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রী শ্রী রমনা কালী (ভদ্রা কালী) মন্দিরের এবং শ্রী শ্রী আনন্দময়ী আশ্রমের অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে জানবার ইচ্ছে অনেকেই মনে করেন. রমনা কালী বাড়ীর নাম থেকে রমনা থানার নামটি হয়েছে, আদৌ ঘটনাটি সত্যি নয়। রমান শব্দের অর্থ ইংরেজীতে ল'ন, বাংলায়া ঠিক এর প্রতিশব্দ আছে কিনা জানি না, তবে রমনা শব্দটি ফার্সী শব্দ এবং এ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ১৬১০ সালে মোঘল সম্রাটের সেনাপতি ইসলাম খাঁ। মোঘল আমলেই বর্তমান রমনায় বিস্তৃত এলাকা নিয়ে তৈলি করা হয় বাগান যা ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছিল। এবং রমনা এলাকায় চিশতিয়ার নামকরণ দিয়ে আবাসিক এলাকা হিসিবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়, যেখানে বসবাস করতেন ইসলাম খঁঅ চিশতির বংশধরের লোকজন। পরবর্তীতে চিশতিয়ার নাম পরিবর্তন পূর্বক নামকরণ করা হয় 'পুরান নাখাস' যার অর্থ পুরনো দাস বাজার। খুব সম্ভবত মোগল আমলে এখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা ক্রীতদাস-দাসী বিক্রি করা হত। মোগল আমলের পুরো সময়টা বর্তমান রমনা এলাকা বাগ-ই বাদশাহী বাগান হিসেবে পরিচিত ছিল এবং তখন থেকে ঢাকার নবাব আমল পর্যন্ত রমনা বাগানে সাধারণ জনসাধারণের প্রবেশ অধিকার ছিল না। মহল্লা সুজাতপুর ও মহল্লা চিশতিয়ার তৎকালে ঢাকার নাম করা জ্ঞঅনী-গুণী,শিল্পী, সাহিত্যিক, আইনজীবী, ডাক্তার প্রমুখ বসবাস করতেন। কলা ভবন, কার্জন হল, শাহবাগ, সিদ্ধেশ্বরী কালী বাড়ী, রমনা থানা সকলই ছিল ১৮৩২ সাল ওয়াল্টারের তথ্য অনুসারে বাগ-ই-বাদশাহী রমনা বাগানের মধ্যবর্তী এলাকা। ঐ সময় রমনা এলাকায় ইটের তৈরী বাড়ী-ঘর ছিল ৩৫টি মাত্র, বাকীগুলো ছিল খড়ের ঘর। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর ইসলাম খাঁর সাথে বাগ-ই-বাদশাহী দর্শনে এসেছিলেন এবং পরবর্তীতে ইসলাম খাঁ ঢাকার ভাওয়াল বনে শিকার করতে যেয়ে মারা গেলে তাকে বাগ-ই-বাদশাহীতে কবর দেয়া হয়। বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পূর্বের রমনা পার্ক তখনকার বাদশাহী বাগরে মাঠ ছিল সবুজ ঘাসে ঢাকা চত্বর। কালক্রমে সুজাতপুর, চিশতিয়া, বাগ-ই-বাদশাহী এলাকার নামকরণ বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং জনসাধারণের নিকট পরিচিতি পায় উক্ত এলাকাটি রমনা হিসেবে। রমনার দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম এলাকা ছিল ১৯৩২ সালের দিকেও ঘন জঙ্গল এবং জনবসতি ছিল না মোটেও।
মোগল সুবেদার মুহাম্মদ আজমের আমলে রমনার দক্ষিণে ১৬৭৯ সালে নির্মিত হয় হাজী শাহবাজের মসজিদ যা এখনও বর্তমান আছে। হাজী শাহবাজ তৎকালে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন এবং বর্তমানে তাঁর মৃতদেহ শায়িত আছে শাহবাজ মাজারে। বর্তমানে উক্ত মসজিদ ও মাজারের খাদেম মোহাম্মদ আবদুল আলী ফকির, পিতা-মৃত মোহাম্মদ আবদুল হাকিম ফকির। মোঘল আমলের শেষ দিকে রমনার উন্নতি বিলুপ্তি পেতে থাকে। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ইসলাম খাঁর মৃতদেহ চিশতি বেহেশতী থেকে উত্তোলন করে ফতেপুর সিক্রিতে সমাহিত করেন যা ইতিহাসবিদ সকলেই জানে।
মোঘল আমলের শেষ দিকে মোঘল সেনাপতি মান সিংহের সহযোগিতা ও বার ভূঁইয়ার অন্যতম কেদার রায় এর অর্থে শাহবাজ মসজিদের উত্তর দিকে হরিচরণ গিরি ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন কৃপা সিদ্ধির আখড়া যা পরবর্তীতে ভদ্রাকালী বাড়ী এবং পর্যায়ক্রমে নামকরণ করা হয় রমনা কালী মন্দির হিসেবে। হরিচরণ গিরি ও কেদার রায় এবং গুরু ছিলেন গোপাল গিরি, গোপাল গিরি স্মরণেই রমনা (ভদ্রা) কালী মন্দির স্থাপন করা হয় মোঘল সম্রাটের পৃষ্টপোষকতায়। ঐতিহাসিক দানীর মতে, রমনা কালী মন্দির এলাকায় মোট ৩টি পুকুর ছিল্ৎ একটি বর্তমান শিশু পার্কের মধ্যে, একটি শ্রী মা আনন্দময়ী আশ্রমের নিকটে এবং তৃতীয়টি বর্তমানে বিদ্যমান আছে যা জনসাধারণ জানে রমনা কালী বাড়ির পুকুর হিসেবে। তখন থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিকট রমান কালী বাড়ী বা ভদ্রা দেবীর বাড়ী একটি তীর্থ ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিতি পায় এবং বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রী লংকা, বার্মা থেকে অসংখ্য ভক্ত ভদ্রা দেবীর মন্দিরে আসতেন প্রার্থনা করতে। তৎকালে রমনা এলাকা শুধু হিন্দু বা মুসলিম সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ছিল না। গ্রীকদের উপসনালয় ও গ্রীক কবর স্থান রমনা এলাকায় ছিল এবং যা বর্তমানে আছে। পাঠকবৃন্দ তিন নেতার মাজার থেকে বাংলা একাডেমীর পাশ দিয়ে কলা ভবনে যেতে দেখবেন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্ররে গ্রীক স্মৃতি সৌধটি, এখনও যা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, যা আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করবে।
মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর রমনা এলাকা হয়ে উঠে নিভৃত জঙ্গল ও বিরাণ অঞ্চলে, শুধুমাত্র মসজিদে ও মন্দিরে লোকজনের আনাগোনা ছিল। ইংরেজ আমলে ম্যাজিষ্ট্রেট চার্লস ডস ১৮৫২ সালে রমনা এলাকার জঙ্গল কেটে পরিস্কার করেন এবং রমনাকে রেসকোর্স ময়দান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ম্যাজিস্ট্রেস চালর্স ডস ঢাকা ত্যাগ করার পর আবার রমনা এলাকার উন্নয়নে ভাটা পড়ে এবং অবহেলিত অঞ্চল হিসেবে দেখা যায়।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×