ইসলামে জিহাদ ফরজ করা হয়েছে। জিহাদ হলো- ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে সংগ্রাম-সাধনা। সত্য প্রতিষ্ঠায়, কুসংস্কার ধ্বংসে, সুন্দর-শান্তিময় পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে সত্যপথে (আল্লাহর রাস্তায়) সংগ্রাম করা দায়িত্ব। যারা জিহাদ করেন তাদের বলা হয় মুজাহিদ।
বাংলাদেশে সম্প্রতি বেশ ক’টি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। আরো দুঃখজনক ব্যাপার হলো, সন্ত্রাসীরা এখানে ব্যবহার করছে ইসলামি পরিভাষা। এটি কিছুতেই সঠিক নয়। এর অনেক কুফল সমাজ ও রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন সহিংসতা ও জিহাদ আর সন্ত্রাসী বা জঙ্গিকে দেখা হচ্ছে এক করে। গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে জিহাদের মহৎ উদ্দেশ্য।
রাসূল সা:-এর জীবনে ছোট বড় ২৭টি জিহাদ হয়েছিল। তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সব জিহাদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মক্কা বিজয়ের পর হাজার হাজার কাফের-মুশরিক মৃত্যুভয়ে কাঁপছিল। কিন্তু শান্তির দূত রাসূল সা: ক্ষমা করেছেন সবাইকে। এই অভূতপূর্ব মহৎ আচরণ দেখে একে একে ইসলাম গ্রহণ করেন মক্কার সব অমুসলিম।
জিহাদের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- ইসলামের প্রচার ও প্রসার। অথচ এবার দেখা গেলো, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন ঈদগাহে। আর সেখানেই করা হলো রক্তক্ষয়ী হামলা। এটা কিভাবে জিহাদ হতে পারে? এটা কার বিরুদ্ধে? এমন অন্যায়-অপরাধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়। ইমাম মালেক (রহ বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের মধ্যে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে এবং শহরে কিংবা অন্যত্র ত্রাস সৃষ্টি করে, তারা সন্ত্রাসী, শান্তির দুশমন, সীমা লঙ্ঘনকারী।
সাম্প্রতিক এই হামলাগুলো জনমনে ত্রাস সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। তরুণেরা চায় ‘কিছু’ করতে। যা সমাজে তাদের এনে দেবে সম্মান, রাষ্ট্র দেবে স্বীকৃতি। আর এই ‘কিছু’ করতে গিয়েই তরুণরা চলে যাচ্ছে ভুল পথে, কেউবা হয়ে উঠছে আত্মঘাতী। ধর্মীয় অধিকার আমাদের সবার আছে। রাষ্ট্রকে দিতে হবে এর বিশ্বাসযোগ্য নিশ্চয়তা। ম্যাকিয়াভেলিজমের অনুসারী সরকারগুলো উগ্রবাদ থেকে নিচ্ছে সস্তা ফায়দা। সিরিয়ায় আইএস উত্থান স্বৈরাচারী বাশারকে অসুবিধায় ফেলে দিয়েছে। অপর দিকে, কিছুটা সুবিধাও হয়েছে দামেস্ক সরকারের। গণতন্ত্রকামী বিদ্রোহীদের রুখতে জঙ্গি আইএস বাশার আল আসাদকে বেশ সুবিধা প্রদান করেছে।
তরুণ সমাজ যেন বিপথে না যায়, সে জন্য তাকে দেখাতে হবে সঠিক পথ। পথ দেখানোই নয়, তৈরিও করে দিতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে সামাজিক সংগঠন গড়ার কাজে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়াতে হবে প্রতিযোগিতামূলক সাংস্কৃতিক চর্চা। চালু করতে হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ছাত্রদের শিক্ষা দিতে হবে সুস্থ রাজনীতির চর্চা। তখন তরুণরা ‘কিছু’ করার প্লাটফর্ম পেয়ে যাবে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘জিহাদ কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’ সব মুসলমানও সেটা সমর্থন করে। কিন্তু তারা জিহাদ নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা, হত্যা-হানাহানি সমর্থন করে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:০১