somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মেংগো পিপোল
আজ কাল নিজেকে আমার অচেনা লাগে। চেনার জন্য নিজের চেহারায় হাত বোলাই। বোয়সের ছাপ পরা চেহারা জানান দেয়- সময় হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে দিন দিন, একটু একটু করে।

আইটেম গার্ল

১১ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :












হেই ডুড হটস আপ?" বলে হাত নাড়ায় রেয়া। আমি সামান্য মাথা ঝাকাই, ও বলে - "তোমার মতন কুল ডুড যদি ওনলি ওয়ান নাইটের জন্য কাছে রাখতে পারতাম। তাহলে জীবনটা ধন্য হয়ে যেত। এই অন্ধকারে কোনার এই টেবিলে বসে কি করো? চলো লেটস্ ডানস বেইবী। আমি বলি "না থাক তুমি যাও, আমি বসি কিছুখন।" নাইট ক্লাবের ডান্স ফ্লরে উদাম নৃত্ব আরম্ভ হয়ে গেছে, ডি জে এক মেয়ে, সে প্লে করছে একের পর এক বলিউড মুভির গান, "মুন্নি বদনাম হুই ও ইহা ও ইহা ডাররর লিং তেরে লিয়ে গানের মাঝে মাঝে জিক জি ককক জিক টাইপের শব্দ দিচ্ছে, ছোট বেলায় মনে আছে, আমাদের একটা টেপ রেকর্রডার ছিলো সেটাতে গান চালানো অবস্হায় ফিতা টানলে এরকম শোনা যেতো, গান কে বিকৃত লরে শোনার মাঝেও নতুন এক আনন্দ পায় আমাদের জেনারেশন। অবস্য দুনিয়াটাই হয়ে গেছে বিকৃতির, যে যতো বিকৃত ভাবে জীবন-যাপন করবে সে তত আধুনি। ভালো একটা জিন্স প্যান্ট সেটাকে হাটুর কাছে কেটে সুতা বের করলেই সে হলো আধুনিক, হায় আধুনিকতা! হায় কলাবেরী জেনারেশন! আমাদের জেনারেশনের ছেলেরা নাচে গ্যংনাম স্টাইল অর্থহীন বিকৃত এক নাচ।

এসব ভাবনার ফাকে মৌটুসি এসে আমার পাশের চেয়ারে বসে, বলে- কি অবস্হা, আছো কেমন, এরকম ঝিম মেরে বসে আছো ক্যানো?
এই আছি কেটে যাচ্ছে বসন্তে ওড়া ধুলোর মতন, বসন্তের কলংক হয়ে। আর ঝিম মেরে আছি কেন? তাহলে শোনো তোমাকে একটা গল্প বলি। ও বলে চলো বারান্দার দিকে যাই। আমি উঠে দাড়াই। এখন রাত তিনটা, একেবারে মেইন রোড ঘিষে দোতালার উপর এই ক্লাবটা, নাইট ক্লাবের লাল নীল আলো, হৈ-হুল্লুর ছেড়ে আমরা বারান্দার সবচেয়ে নির্জন কোনাটায় গিয়ে দাড়াই। নিচের রাস্তাটা দিয়ে হুস হাস শব্দে করে গাড়ি চলে যায়, গুলশানের দিকে। মাতাল হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে তরুন-তরূনীরা বা আমার মতন নষ্ট পুত্র-কন্যাগন। কেউ কেউ গাড়ীর পিছনে বসে কনসান্ট্রেশন থেরাপী করে। মৌটুসি বলে- হ্যা বলো তোমার গল্প।
আরে ধেৎ, তেমন কিছু না। কলেজ লাইফে আমার এক বন্ধু ছিলো বাংলা সিনেমা দেখত, জায়েন্ট ফিগারের এক একটা মেয়ে নাইকা হতো সিনেমা গুলোয়। আমি হল মুখি হতামনা, ওকে দেখতাম প্রতিটা সিনেমা দুই-তিন বার করে দেখত। একদিন জানতে চাইলাম কিরে ব্যাটা ব্যাপার কি? এত সিনেমা দেখিস ক্যা? ও বলল আরে ধুর আমি তো যাই এসি তে ঘুমাতে, সিনেমা দেখার টাইম কই?
তার মানে তুমি বুঝাতে চাচ্ছ, এখানে আসো কিছুখন চুপ চাপ বসে থাকতে। হ্যা কিছুটা সেরকমই, কি করব বলো? বাবা হঠাৎ আংগুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেলেন, পুরান ঢাকার অলি গলিতে বড় হওয়া একটা ছেলেকে গুলশানে নিয়ে এসে বললেন- স্টাটাস বদলাও নিজের, এখন থেকে তুমি মিশবে কোটি পতির ছেলে মেয়েদের সাথে ঐ সব গলির ছোট লোক দের সাথে কোন যোগা যোগ রাখবেনা। তার পরও চেষ্টা করেছিলাম ওদের সাথে মিশতে, কিন্তু বাবাই আমাকে নির্বান্ধব করে দিলেন। গার্লস স্কুলের একটা মেয়ে, শশির সাথে আমার কিছুটা ভাব ভালোবাসা ছিলো। বিকেলে ওদের বাসার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম। ও ছাদে আসতো, ইশারায় কথা বলতো। এক দিন বিকেলে শশি ছাদে এলোনা, সারা রাত দাড়িয়ে ছিলাম ওর বাসার সামনে, এমনই অবুঝ প্রেম। বাবা সেই শশিকে জোর করে বিয়ে দিলেন তার এক কর্মচারীর সাথে। জীবনটা কি আর ফেইস বুক বলো! যে যখন তখন স্টাটাস বদলাব? মা বাবার ছাড়া ছাড়ি হয়ে গেল। বাবাই ছেড়ে দিলেন মাকে, এই উচ্চবিত্যের দুনিয়ায় গেয় মোমেনার কোন দাম নেই, বাবার কাছে। অথচ সেই হতদরিদ্র আমাদের জীবনে, বাবার মায়ের প্রতি কি অদ্ভুত ভালোবাসই না ছিল। আমরা তখন গ্রামে থাকি বাবা ঢাকায় এক রাতে মাকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখলেন বাবা। বাইরে প্রচন্ড ঝড়, সেই ঝড়ের রাতে কোন রকমে একটা বাসে চড়ে বাবা চলে এলেন গ্রামে। আর আজ সেই বাবা?! কতটা পাল্টে গেছেন। বাবা এখন অফিসের সেক্রেটারির সাথে লান্চ করেন, রাতে সেই মেয়েকে বাসায় পৌছে দিতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননা। আমি কিছু বলিনা, কেবল নির্বাক চেয়ে থাকি। আর নিটোল স্বপ্ন হীন ঘুমাই।
যে জীবন আমি চাইনি। সেই জীবনটা চেয়ে বসল আমাকে। ভালোবাসা হীন এক কাঠ-পাথরের জংগলে ফেসে গেলাম আমি। অথচ কত আনন্দের ছিলো, ছেলে বেলা। ইচ্ছে হলে নদীতে ঝাপ দিতে পারতাম, ফসলের মাঠ কোকিল-কাকের ডাক। ডাহুক ধরা জীবন সব মুছে গেলো। কেবল থেকে গেলো কিছু জমাট কষ্ট, চাপ চাপ রক্তের মতন। আর ভাল্লাগেনা। এই যাদুর শহরের মোহ মায়ায় আটকেপরা জীবনে আমি পিষ্ট হচ্ছি প্রতি নিয়ত। আমার আবেগ অনুভুতী গুলো মসৃন হয়ে গেছে একদম সচ্ছ মার্বেলের মতন।

মৌটুসি আমার কাধে হাত রেখে বলে "গ্রামে চলে যাও মায়ের কাছে।"
আমি কিছু বলিনা, আমি জানি শত চেষ্টা করলেও আমি এই ইট, কাঠ, পাথরের কারাগার থেখে মুক্তি পাবনা। আমি আটকা পড়ে গেছি সংখ্যনীল কারাগারে। মা, আমার সেই চির চেনা মা এখন অন্যের ঘড়ের দারুন স্ত্রী। বিয়ের কিছু দিন আগে মা আমাকে ফোন করে ছিলো, বলে ছিলো বাপ ধন, তোর বাবা এখন একজন প্রচন্ড ক্ষমতাবান মানুষ, আমি কিছুতেই তোকে আমার কাছে আনতে পারব না, তোর মামারা আমার বিয়ে ঠিক করেছে, ওরা বলে তোর তো একটা মাত্র ছেলে, সেই ছেলে কি আর ফিরবে? কি নিয়ে বাচবি তুই....? বলে মা অঝরে কেঁদেছিলো, আর আমি কেঁদেছিলাম নিরবে চুপি-চুপি, একা-একা...।

এসময় মৌটুসির মোবাইলে একাটা কল আসে ও বলে "হ্যালো মৌ স্পিকিং হিয়ার। ইয়াপ, ইয়াপ, ইআহ। দেখুন আমি ফ্যাশন ডিজাইনার, আই এম নট এ ডান্সার। ইআহ ওকে, দখুন আপনি অসভ্যের মতন কথা বলছেন কেন? নো ইটস নট এ ডিল। কত মানে হাউ মাচ? ওকে আই উইল থিংক। ওকে কল ইউ লেটার, বাই। বলে ও কলটা কেটে দেয়।
আমি ওর দিকে তাকাই, ও বলে আর বলো না। এক পরিচালক আমাকে বলে তার ছবিতে আইটেম সং করতে। ওনার ওখানে গিয়েছিলাম কিছু ডিজাইন নিয়ে যদি ওনার বানানো মুভিতে কাজে লাগে। উনি এখন বলছেন আমার যে রূপ তাতে নাকি আমি একটা আইটেম করলেই সুপার হিট হয়ে যাব।
আমি বলি তাহলে কি যেন বললে, অসভ্যের মতন কথা বলছে।
-আরে দেখনা বলে কিনা আমার বুকের যা সা....। মানে ওদের ৩৬, ২৮, ৩৬ দরকার। আর সেটা নাকি আমার আছে, আমাকে দিয়ে নাকি হবে।
আমি বলি কত অফার করল?
-২ লাখ।

আমি আর কিছু বলিনা কেবল তাকিয়ে থাকি, অর্ধেক মেঘে ঢেকে যাওয়া চাঁদ টার দিকে। কোথাও কোন তারা দেখিনা অথচ গ্রামে রাতের আকাশে কত শহস্র তারা যে দেখেছি হিসেব নেই। গরমের দিনে মা রাতের বেলা উঠানে মাদুর পেতে দিতো, আমি বাবার বুকের উপর সুয়ে কুট কুট করে দাত দিয়ে বাবার বুকের পশম কাটতাম। বাবা নানান গল্প বলতেন, বেশী বলতেন পরীর গল্প। ওরা আকাশে ওড়ে, তারার দেশে থাকে এইসব। আমি নিস্বাস ফেলি ঢাকার আকাশে তারা নেই কেন? এই শহর সত্যিই কি যাদু জানে? না হলে কোথায় লুকিয়ে রাখে রাতের তারা দের?
মাঝে মাঝে মৌকে আমার ছোট বেলার কল্পনার পরীর মতন লাগে। অদ্ভুত সুন্দর এক স্বপ্ন নারী, অমল ধবল ছায়ার ওপাসে এসে আমার দিকে অপলক চেয়ে থাকে। ওর সামনে ইদানিং শশির মুখটা কেমন ঘোলাটে লাগে।

মৌ বলে- চলো যেতে হবে রাত অনেক হলো। আমি বলি- হ্যা যাবেই তো, পরীরা তো তারার দেশেই যায়। তুমি তো এখন স্টার হয়ে যাবে। স্ট্রার্ডাম কত কি? হবে এখন তোমার। আমাকে আর মনে থাকবে না তোমার। তুমি হবে হাজার চোখের স্বপ্ন বা নচিকেতার নিন্জনা। ও আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে- ঠিকই বলেছো পর্ন স্টাররাওতো স্টার। শোনো রেয়ান আমি গ্রামের মেয়ে। একটা কিছু কারার আশা নিয়ে ঢাকা এসেছি। বড় খালা সরকারী চাকরী করে, উনি ভর্তি করিয়ে দিলেন ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়ার জন্য। বাবা মারা গেছেন সেই কবে মনে নেই। মা আছেন, একা একা কাটিয়ে দিলেন সারা জীবন। বলে রেখেছেন আমি যাকে বিয়ে করব সেই নাকি তার ছেলে। অদ্ভুত এক আশা নিয়ে বেচে আছেন, মা। উনি জানেন না এই সমাজে এখন মানুষ আর কারো ছেলে হতে চায়না, সাবাই খুড়ে চেটে খেতে চায় নারীর শরির।

আমি বলি আমার তো মাকে কাছে পাবার জন্য মন কেমন করে। কতদিন কাউকে "মা" ডাকিনা। তোমার মাকে যদি আমি 'মা" ডাকি তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। আমি নাহয় হলাম তোমার স্বামি। ও কিছু বলে না কেবল চুপ করে থাকে, আমাবশ্যার রাতে গ্রামের মানুষ গুলো যেমন চুপ করে ঘুমিয়ে থাকে, তেমন।

এর পরও আমি বলি তুমি এখানে আসো কেনো?
- তুমি যে স্টাটাস পেয়ে বিরক্ত, আমি সেটা পাবার জন্য হন্যে হয়ে ছুটছি।

আমি বাসায় চলে আসি। গুলশানে দোতালা বাড়ী আমাদের। বাবা কিনে নিলেন নগদ টাকায়। জানতে চেয়েছিলাম একদিন, কোথা থেকে এলো এত টাকা? উনি বলেন নি। কেনই বা বলবেন? আমাকে বলার কোন দায়ভার ও নেই, ওনার। একটা ডেভিড কার্ড বানিয়ে দিয়েছেন আমাকে। বলেছে- যখন যেখানে খরচ করা লাগে খরচ করতে। আমি খরচ করিনি। নাইট ক্লাবের মালিক বাবার বন্ধু, আমি গেলে বিল নেয়না। বাবা পরে দিয়েদেয়, বিল দিয়ে এসে বলে- কি ব্যাপার ক্লাবে গিয়ে কেউ সফ্ট ড্রিংস খায়! মিনিমাম বিয়ারটা তো খেতে পারো, আমার স্টাটাসটা তাও রক্ষা পায়। বাবা উঠে পরে লেগেছেন আমাকে পুরদস্তুর আধুনিক বানাতে। কিন্তু যার মাথার ভেতর হিমু ঘোরপাক খায়, যে নকশি কাঁথার মাঠে মনের ভেতরে খেলা করে। সে কিভাবে আস্ত মুরগী খাওয়া নাগরিক হবে? গ্রিল, হটডগ, বার্গার ভালো লাগেনা আমার। মায়ের হাতের রাধা ডাটা সাক খাবার জন্য মন কেমন করে? বাবা বুঝবেনা এসব। মদ, নারী আর টাকা বাবাকে দিন দিন অমানুষ করে দিচ্ছে। আর আমি হয়ে যাচ্ছি গলা ছিলা মুরগী এরা কোন গোত্রে পরেনা।

সকাল হয়ে এসেছে। কাছে পিঠে মোরগ ডাকছে কুকুরু কু, আমি চোখ খুলে তাকাই, অনেক দিন পর সকাল বেলা মোরগের ডাকে ঘুম ভাংয়ে, আমার। আবছা অনদ্ধকারে আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই। নাহ এতো গ্রাম না, তাহলে মোরগ?! আমি আমার মোবাইলের দিকে তাকাই, আমার মোবাইল বাজছে। মৌ কল করছে ওই কালকে আমার রিংটোন পাল্টে দিয়ে ছিলো, মনে নেই আমার। আমি ফোন ধরি ওর গলা কাঁপছে, আমি জানতে চাই- কি হয়েছে মৌ? রেয়ান মায়ের অবস্হা নাকি খুব খারাপ। মাকে নিয়ে আমি হাসপাতালে আছি। আজ সকালে মা ঢাকায় রওনা দিয়ে এসেছেন, আমাকে কিছুই জানায়নি বড় খালার বাসায় উঠেছিল, সকাল থেকেই নাকি পটের বাম পাশে ব্যাথা হচ্ছিল। হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার টেষ্ট করে বলল মায়ের নাকি কিডনী ড্যামেজ হয়ে গেছে, ডায়ালাইসিস লাগবে।
আমি বলি ঠিক আছে আমি আসছি। "মা' নামটা মনে পরতেই বুকের ভেতে মুচড়ে ওঠে "মা" অসুস্হ ভাবতেই খারাপ লাগে আমার। বাবার রুমে উকি দেই, বাবা ফেরেনি। আমি সচারাচর বাবার মোবাইলে ফোন করিনা, তবুও ফোন দেই বাবাকে। ওপাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ শোনা যায় ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে- হ্যালো। আমি বলি- বাবা আছে, আমি রেয়ান। বাবাকে মহিলা ডেকে উঠায়, বলে- এই নাও তোমার ছেলে ফোন করেছে।
বাবা বিরক্তি নিয়ে বলে- কি হয়ে ছে রেয়ান?
-আমাকে একটু হাসপাতালে যেতে হবে, আমার এক বন্ধুর মা অসুস্হ।
যাওনা সমস্যা কি? এই জন্য এত রাতে আমাকে ফোন করে বিরক্ত করতে হবে?!
ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি ও তোমাকে দিয়ে আসবে।
লগবেনা বাবা। বলে আমি লাইন কেটে দেই।

হাসপাতালের বেডে জিনি শুয়ে আছেন তিনি আমাকে দেখে কাছে ডাকলেন, তুমি বুঝি মৌয়ের সেই বন্ধু, মৌ তোমার কথা প্রায়ই বলে। বাবারে দুনিয়া বড়ই বিচিত্র জায়গা এখানে কে যে কাকে ভালো বাসে? আর কে যে কার ক্ষতি চায়? কেউ জানেনা। শোন বাবা, সব সময় মন শক্ত রাখবা। মন নরম করবা মানে মানুষ তোমাকে লুট করে দেউলিয়া করেদিবে।

মৌ আমার কথা ওর মায়ের কাছে বলে শুনে কিছুটা অবাক হই আমি। যে মেয়ে জানেনা কে আমার বাবা? আমি কোথায় থাকি? কেবল নাইট ক্লাবের পরিচয়েই কি মেয়েটা আমাকে ভালবেসে ফেলেছে? কি জানি আমি যা ভাবছি হয়তো সবি ভুল। কর্পরেরটের এই দুনিয়ায় যারা সমজের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌছাতে চায়, হোক সে নারী বা পুরুষ। এরা সেই জায়গায় পৌছাতে সব ব্যাবহার করে, ইজ্জত হতে সুরু করে সব। বাবা কে এক দিন বলতে সুনে ছিলাম কথাগুলো, মোবাইলে।

হাসপাতালের সামেনের ক্যান্টিনে বসে আছি আমি আর মৌ। ও কাদছে মায়ের কিডনি রিপ্লসে করতে হবে, অনেক টাকা লাগবে আমার রেয়ান, অনেক টাকা। আমি বলি কি করবে এখন, ভাবছি আইটেম সংটা করব। কিন্তু মৌ আমি যতটুকু জানি একটা গানের জন্য কেউ ২ লাখ টাকা দেয়না। ও বলে ঠিকই জানো। তাহলে তোমাকে এত টাকা অফার করল! ও ক্ষেপে গিয়ে বলে আরে গাধা ছেলে এই জন্য আমাকে ঐ সিনেমার পরিচালকের সাথে শুতে হবে, আমি বলি মানে? ও বলে কোন মানে নেই। একটা কিনডি রিপ্লেস করটে তিন চার লাখ টাকা লাগে মত্র দুই লাখে কিছু হবেনা মৌ। বাবার একটা ডেভিড কার্ড আছে আমার কাছে আমি টাকা তুলে দিচ্ছি, তুমি যাবেনা সেই পরিচালকের কাছে। ও আমার হাতের উপর গাল রেখে অঝরে কাদে, মায়ের শেষ বারের কান্যার মতন।

শেষ কথাঃ আমি এখন ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে, আমার ৪ বছরের জেল হয়েছে, পিতাকে হত্যার দায়ে, মৌয়ের সেই পরিচালক আমার বাবাই ছিলেন। তিনি সম্প্রতী ছবি বানানোর নামে মেয়েদের কে নিয়ে মেতে উঠেছিলেন শরিরের কামনায়। মৌকে তিনি আসতে বলেছিলেন আমাদের বাড়ীতে। বাবা জানতেন আমি বাসায় নেই। বাবার ঘড়ে দস্তা দস্তি সুনে আমি তার ঘড়ে যাই, এরপরের কিছু মনে নেই আমার। সম্বিত ফিরে পাই যখন তখন দেখি মৌয়ের হাতে একটা পিতলের ফুল দানী। বাবা পড়ে আছেন মেঝেতে মাথার কাছ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। মৌ দাড়িয়ে আছে আমাকে আড়াল দিয়ে ওর প্রায় অর্ধনগ্ন শরির টাকে ঢাকার জন্য। বললাম কেন তাহলে এসেছিলে যদি এতই লজ্জা। এই লোক আমার নগ্ন ভিডিও বানাচ্ছিলো আমাকে বাচাও রেয়ান, আমর মা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে আরো টকা দরকার ছিল তুমি আর কত দেবে তাই আমি এসেছিলাম এই লোকটার কাছে আর এই লোক.. বলে ও কেদে ওঠে। আমি মৌয়ের হাত থেক ফুল দানী টা নিয়ে নেই, আদালতের রায়ে নারীর ইজ্জত বাচানোর তাগিদে হত্যা বলে আমাকে ৪ বছরের জেল দিয়েছে। এক সংবাদিকে এসেছিলো রিপোর্ট করার জন্য আমার হাতে বাবার খুনের ঘটনা নাকি দেশে আলোরন ফেলে দিয়েছে। এখন এই খবর নাকি সিনেমার আইটেম সংয়ের মতন খাচ্ছে মানুষ। পুত্রের হাতে পিতার খুনের ঘটনায় নাকি সরকারের কি একটা ব্যাপার ঢাকা পড়ে গেছে, তাই তারা আরো খবর চায় এই ব্যাপারে, আমি কিছুই বলি নি কেবল বলেছি খুনটা আমি করিনি, ধরে নিননা ঘটনাটা একটা আইটেম সং, এটাই ছবির জান একটা দুষ্ট গান। যেটা আপনারা বাজাচ্ছেন আর পাব্লিক সত্য মিথ্যা না ভেবে কেবল গিলছে। উনি কিছুই বোঝননি। কেবল তাকিয়ে ছিলেন ফ্যাল ফ্যাল নয়নে, আমার দিকে।

দুই বছর পরঃ
মৌ বিয়ে করেছে গত বছর, এক কোটি পতির ছেলেকে। ওর অর্থ থাক বা নাথাক ওর ৩৬, ২৮, ৩৬ তো আছে। ওর মা বেচে নেই সেও মারা গিয়েছিলো ওর বাবার সাথেই, ওর বাবা মা একসাথে মারা গিয়েছিলো রোড এক্সিডেন্টে। হাসপাতালের বেডে আমি যাকে দেখেছিলাম তিনি মৌয়ের মা না, তিনি ছিলেন রেয়ার মা। আমার কাছ থেকে টাকা হাতাবার জন্যই মৌ নাটকটা সাজিয়ে ছিলো, জেল গেটে রেয়া এসেছিলো আমার সাথে দেখা করতে ও বলেছিলো হেই ডুড তুমি অনেক সুকিয়ে গেছো। এখন ক্লাবে কম যাই গেলেও, কোনার চেয়ার টার দিকে তাকিয়ে যখন দেখি তুমি নেই। ভালো লাগেনা। মৌটা তোমার সাথে ছলনা করল। ঐ দিন মা হঠাৎ অসুস্হ হয়ে পড়ল তাই হাসপাতালে নিলাম, মৌ কে মায়ের কাছে রেখে গিয়ে ছিলাম বাসায়, টাকা আনতে। আর সেই সুজগেই ও হাতিয়ে নিলো টাকা, তোমার কাছ থেকে। তোমার বাবাকেও খুন করে ছিলো- তোমার বাবার আংগুল ফুলে কলাগাছ হবার প্রতি দন্দিদের ইসারায়, জেল থেকে বের হয়ে মনে রেখো কেউ একজন এখনও তোমার জন্য অপেক্ষা করে, গুলসানের কোন একটা নাইট ক্লাবের কোনের চেয়ারটায়। ভালো থেকো।
মা এসে ছিলো জেলে, আমাকে দেখতে। আমি দেখা করিনি। কি বলব মাকে? কিছুই বলার নেই আমার। পুলিশ বাবার ঘর থেকে ভিডিও করার কোন ক্যামেরা পায়নি। এমন কি তার মোবাইলেও কোন ভিডিও ফুটেজ ছিলো না।

মুখবন্ধঃ এই গল্পের সবগুলো চরিত্রই কাল্পনিক কেবল টাকার চরিত্র ছাড়া। মৌয়েরা সব সময়ই ভালো থাকে, এরা সব পারে, সব। অনেকে ভাববেন আমি কেবল মেয়েদের কেই খারাপ দেখিয়েছি, তারা দয়া করে রেয়ানের বাবার চরিত্র টা নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন। আর একটা কথা বলি কিছুটা ক্ষোভ নিয়েই বলি, আমরা মুসলমানরা দিন-দিন বোবা, কালা ও অন্ধ জাতীতে পরিনত হচ্ছি, আর যারা আমাদের বোবা-কালা বানাচ্ছে তারা যখন আমাদের পিঠ চাপড়ে বলছে- "বাহ তুমি তো উত্তম গাধায় পরিনত হয়েছো, তুমি আধুনিক মানুষ।" তখন আমরা আনন্দের বন্যায় ভেষে গিয়ে আরো উত্তম গাধায় পরিনত হচ্ছি, নাহলে এত কিছু দেখার পরও আমাদের আক্কেল হয় না কেন? হায়রে মুসলমান।




ফেইস বুকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ
View this link

আমার রিসেন্ট আর একটি লেখাঃ
View this link
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৮
৬২টি মন্তব্য ৬২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×