somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্প: গ্রামান্তর

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বসত-ভিটা, গাছ-পালা, গবাদি-পশু সবকিছু ছেড়ে-ছুড়ে একদিন সস্ত্রীক গ্রাম ছাড়ল এক জেলে গোষ্ঠী। তাদের টাকা-পয়সার টান লেগে থাকত, সবসময়। তবে সুখেই দিন-যাপন করছিল। পদ্মার কড়াল গ্রাসে সবকিছু ছাড়তে বাধ্য হল।
মধ্যরাত্রি, হঠাৎ করে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল, এইরকম বৃষ্টিতে নাকি ইলিশের প্রজনন খুব ভাল হয়। বৃষ্টি ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে, মশুল-ধারে পড়তে শুরু করল, এবার সঙ্গে ঝাপটা বাতাস। বাতাসের খেলায় সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল। বাঁশ ঝাড়গুলো দুমরে-মুচরে ভেঙ্গে পড়তে লাগল, একটা ঘরের উপর আস্ত একটা আম গাছ ভেঙ্গে পড়ল। তারা সকলে সময় মত বেড়িয়ে যেতে পেরেছিল বলে রক্ষা। না হলে সাত-আটটা লাশ পড়ে যেত ঘরের ভিতরে।
পদ্মার সঙ্গে তাদের এতদিনের বন্ধুর সম্পর্ক, অথচ তা যেন আজ ভুলে গেছে। ঢেউগুলো এসে পাড়ে বাড়ি খাচ্ছে। বড় বড় মাটির খন্ড ভেঙ্গে পড়ছে পানিতে। সবার যখন ঘুম ভাঙ্গল, এক সঙ্গে পদ্মার পাড়ে এসে দেখল তাদের বাড়ি-ঘর গুলো থেকে একটু দূরেই পদ্মা’র পানি খেলা করছে।
যার যার বাড়িতে পৌছে প্রয়োজনীয় সবকিছু’র পুটলি বাঁধতে শুরু করল। কেউ কেউ বলল, যাম না, আমি। যারা এইকথাটা বলে বসে রইল, তাদের কেউ বাধা দিল না। নিজের জীবন নিয়ে পালাতে শুরু করল। ‘‘যাম না আমি’’ বলে যারা বাড়ি’র মাটি ধরে পড়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন সত্যি সত্যি মাটিতেই মিশে গেল। অন্যান্যরা যখন দেখল, অবস্থা বেগতিক, তখন ঝেড়ে দৌড় দিয়েছিল।
একেকটি গ্রাম ধ্বংস করতে খুবই কম সময় নিয়েছে। রাতের বেলা যাকে এতটা হিংস্র দেখাচ্ছিল, দিনের বেলা তাকে ততটাই সুন্দর ও নীরব দেখাচ্ছে। যাদের ঘর-দোর পদ্মার পেটে চলে গিয়েছিল, তারা সকালবেলা দেখতে এসেছে, কতদূর ধ্বংস হল। পদ্মার পাড়ে সবাই দাঁড়িয়ে আছে, দূরে দেখতে পেল কয়েকটা গবাদি-পশুর লাশ ভেসে যাচ্ছে। একজন হঠাৎ করে বলে উঠল, জানোয়ার নারে, ওইডি তো মানুষ। তোমাগো চোখ আন্ধা অয়ে গ্যাছেগা। সবাই চুপ-চাপ তার কথা শুনে, কেউ কিছু বলে না। সবাই ফিরে যায়, যার যার নতুন গন্তব্যে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×