আমাদের আশেপাশেই অনেক সময় অযত্নে অবহেলিত ভাবে পরে থাকে বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ যার কদর হয়তো আমরা বুঝতে পারি না কখনই। এমন কত জমিদার বাড়ি/ রাজবাড়ি দেখলাম যা শুধু ধ্বংস হয়ে গেছে এই অবহেলার কারণেই। যাহোক, সেদিন হটাত করে ঢাকার মধ্যেই এমন একটি জমিদার বাড়ির খবর পেলাম। যা এখন প্রায় পরিত্যক্ত। তো একদিন সক্কাল সক্কাল ছোট ভাই ফাহিম কে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম সাভারের উদ্দেশ্যে। হ্যাঁ, জমিদার বাড়িটি সাভার উপজেলার আড়াপাড়া নামের একটি জায়গায় অবস্থিত। ইন্টারনেট থেকে এর বেশি তথ্য আর খুঁজে পাইনি। বাসে করে সোজা চলে গেলাম সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে আড়াপাড়া কিভাবে যাওয়া যায় তা বুঝতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। স্থানীয় এক দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করতেই অটোস্ট্যান্ড এর কথা বলে দিল। অটোচালক কে বলে দিলাম আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির সামনে আমাকে নামিয়ে দিতে। তবে অটোচালক যেখানে আমাকে নামিয়ে দিলো সেখানে আমি আশে পাশে কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। স্থানীয় একজনকে জিজ্ঞাসা করতে দেখিয়ে দিল। উনার নির্দেশনা মেনে এগিয়ে যাওয়ার পথে দূর থেকে একটি মন্দিরের গেট দেখতে পেলাম যার সামনে রয়েছে ছোট একটি পুকুর। তবে দূর থেকে আমি এটিকেই জমিদার বাড়ির গেট মনে করেছিলাম। পরে সামনে যাওয়ার পর অবশ্য আমার ভুল ভাঙে।
তো মন্দির থেকে বের হয়ে ডানে কালি মন্দির আর আরও ডানে আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির সিংহদরজা। সিংহদরজা থেকে গলি রাস্তার মতো শেষ হয়েছে মূল প্রবেশ গেট পর্যন্ত। দুই পাশে কিছু নারী মূর্তি রয়েছে। যেগুলোর কোনটার হাত নেই , কোনটার পা নেই। আবার কোনটার চোখ আছে তো নাক নেই। আসলে ঐযে, অবহেলা-অযত্নে পরে থাকলে যা হয় আরকি।
যা হোক, সোজা ঢুকে পরলাম ভেতরে। মুল বাড়ির দরজার উপরের দিকে দেখলাম সিমেন্টে খোদাইকরে লেখা “রাই শশী নিবাস, ১৩০৭ সন”। বাড়িটির এক পাশে দেখলাম নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। সেখানের দেয়ালে আবার ‘রাই নিকেতন, ১৩৪৪ সন’ লেখা। আর পুরো বিল্ডিংটির একেবারে উপরে ইংরেজীতে লেখা আরএম হাউস। এই ব্যাপারগুলো আমাকে একটু কনফিউজ করছিল।
আমাকে দেখে ভেতর থেকে একজন মাঝবয়স্ক লোক বের হল। তার কাছ থেকে জানতে চাইলাম এই বাড়িটি সম্বন্ধে। তেমন কিছুই বলতে পারেনি। তবে বলল তারা বহু কাল ধরেই এখানে বসবাসরত আছেন এবং তারা এই জমিদারের আত্মীয়। আমার কাছে অনেক কিছুই ঘাপলা মনে হচ্ছিল। তবে ব্যাপারটা নিয়ে বেশি ঘাঁটালাম না। পরে আমি অনুমুতি নিলাম বাড়িটির ছাদে যাওয়ার জন্যে। ছাদে যাওয়ার জন্যে যখন বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করলাম তখন খেয়াল করলাম এখানের অনেক ঘরই এখন পরিত্যক্ত যেগুলো কোন গোডাউন হিসেবে ব্যবহিত হচ্ছে।
ছাদ থেকে পুরো বাড়িটা দেখতে খুব ভালো লাগছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। তবে খারাপ লাগছিল এই দেখে যে পুরো বাড়িটার বিভিন্ন জায়গায় উল্টাপাল্টা সংস্কার কাজ। বলার কিছুই নেই। ঐযে, অবহেলা আর অযত্ন!
যাহোক, ছাদ থেকে নেমে চারপাশটা আরও একবার দেখে ছোট ভাইটিকে নিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে পরলাম। পরে বাইরে এক চায়ের টঙে বসে দুই ভাই দুই কাপ চা পান করে বাড়ির পথে রউনা হই।
--৩০/মে/২০১৬ইং
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ২:৪২