somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন এক বৃষ্টি ভেজা দিনে ঢাকার রোজ গার্ডেনে...

২৮ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(ছবিঃ সংগৃহীত)

ঢাকা শহরে এখনও যে কয়টি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে রোজ গার্ডেন অন্যতম। তবে এটি খুব বেশি প্রাচীন বললে ভুল হবে। এইতো ১৯৩০-১৯৩১ সালের দিকে ঋষিকেশ দাস নামে এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ি এই বাগান বাড়িটি তৈরি করেন। যদিও দুর্ভাগ্যবশত বেশিদিন তিনি এই বাড়িতে থাকতে পারেননি। জানা যায়, ভবন নির্মানের কিছুদিন পরই তিনি দেউলিয়া হয়ে যান এবং ১৯৩৭ সালের দিকে রোজ গার্ডেন বিক্রি হয়ে যায় খান বাহাদুর আবদুর রশীদের কাছে। এর পরেই এর নতুন নাম হয় ‘রশীদ মঞ্জিল’।

এই বাড়িটি ইতিহাসে বিখ্যাত মূলত রাজনৈতিক কারণে। ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ অর্থাৎ বর্তমান 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ' গঠনের প্রাথমিক আলোচনা সভা এই বাড়িতেই হয়েছিল।



এ বাড়িটি তৈরির পেছনে একটা করুণ ইতিহাসও আছে। উনিশ শতকের বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী একটি বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। যা বর্তমানে বলধা গার্ডেন নামে পরিচিত। ওখানে তখন নিয়মিত গানের আসর বসতো। একদিন বিনা আমন্ত্রণে ঢাকার একজন ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে ঋষিকেশ দাস বলধার এক অনুষ্ঠানে হাজির হন। সনাতন ধর্মানুযায়ী নিম্ন বর্ণের হওয়ায় তাকে সেখানে চরম অপমান করা হয়। আর এই অপমানের শোধ নিতেই ঋষিকেশ দাস বলধা গার্ডেনের আদলে রোজ গার্ডেনটি নির্মাণ করেন। তবে আমার মতে রোজ গার্ডেনের সৌন্দর্যের আশেপাশেও নেই বলধা গার্ডেন। যদিও এখানে একসময় দেশ বিদেশের বিভিন্ন জাতের গোলাপ গাছ ছিল যার কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই। তবে শ্বেতপাথরের কিছু মূর্তি এখনও দৃশ্যমান।


(ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অফরোড বাংলাদেশ)

সেদিন সকাল সকাল বের হয়ে পরেছিলাম ঢাকার এই অসাধারণ প্রাচীন ভবনটির স্বাক্ষী হতে। বাস যোগে গুলিস্তান আসার পর পরই বৃষ্টি শুরু হল, তবে আমরা (আমি আর বন্ধু শাহরিয়ার) টুকটাক ভিজেই রিক্সা ভাড়া করা শুরু করলাম। বহু রিক্সাচালকদের জিজ্ঞাসা করলাম টিকাটুলিতে অবস্থিত রোজ গার্ডেনের কথা। কেউ চিনতে পারছিল না। পরে হটাত একজন রিক্সাচালক বলল টিকাটুলিতে একটাই দেখার মত বাড়ি আছে তা হল 'হুমায়ূন বাড়ি'। কিঞ্চিৎ অবাক হলাম। পরে ইতিহাস থেকে জানতে পারলাম বাড়িটির ক্রয়সুত্রে মালিক আবদুর রশীদ সাহেবের বড় ভাই কাজী হুমায়ুন বশীর ১৯৬৬ সালে বাড়িটির মালিকানা লাভ করেন এবং এর পরেই বাড়িটি 'হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি' বা 'হুমায়ূন বাড়ি' হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

যাহোক, রিক্সা যোগে পৌঁছে গেলাম সেই অপরূপ সৌন্দর্যেভরা রোজ গার্ডেনে। কিন্তু একি, নামব কিভাবে? পুরো রাস্তায় হাঁটু পরিমান পানি জমে গেছে। বলা বাহুল্য, প্রায় ২২ বিঘা জমির উপরে যেই বাড়িটি স্থাপিত হয়েছিল তাতে যেতে হলে এখন ছোট এক গলির মধ্যে দিয়ে ঢুকে যেতে হয়! পরে কোন মতে নামলাম। গেটে দারোয়ান আটকালে বললাম, 'অনেক দূর থেকে এসেছি। একটু দেখেই বিদায় নিব।' ঢোকার সময় খেয়াল করলাম বাড়িটির গেটে এখনও ইংরেজিতে লেখা আছে, "রোজ গার্ডেন"।

বাড়িটির সামনে বিশাল খোলা জায়গা রয়েছে যা পানিতে পুরো টইটুম্বুর। বাড়ির পাশে যে পুকুর রয়েছে তার সীমানাই ঠিক নির্ধারণ করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল পুরো উঠোনটাই যেন এক পুকুর। পরে বহু কষ্টে পানি উৎরিয়ে মূল ভবনের গেট দিয়ে ঢুকতে যাব ওমনি দেখি অনেক গুলো মানুষ শুটিং এর কাজে ব্যস্ত। ঢোকা সম্ভম না। আগেই জানা ছিল এখানে ফিল্মের শুটিং হয়। তাই বলে কি ঢুকতে দিবে না?

যাহোক, তাদেরকে বিরক্ত করলাম না। কিছুক্ষণ সেই পানির মধ্যেই দাঁড়িয়েছিলাম। বসার বেঞ্চে বসেছিলাম।







পরে বাড়ির পেছনের দিকে চলে যাই। মূলভবনের গাঁ ঘেঁষে ছোট একতলা একটা বিল্ডিং রয়েছে। অনেকটা মেসবাড়ির মত। হয়তো শুটিং এর লোকজনদের থাকার জন্যে। ওখানের শুটিং ইউনিটের একলোককে জিজ্ঞাসা করে সেই একতলা বাড়ির ছাদে চলে যাই।



ওখানে কিছুক্ষণ থেকে নিচে নেমে পরলাম। আফসোস হচ্ছিল যে, মূল বাড়িটির ভেতরে আর যাওয়া হল না। কি আর করার। পরে আবার সেই কাদা পানি পেড়িয়ে বাড়ির গেট এর সামনে চলে আসলাম। বের হওয়ার আগেই আবার খেয়াল করলাম গেটের বাম পাশে রয়েছে আরও একটি ভবন। এটি অবশ্য নতুন ভবন। এখনকার আদলেই তৈরি। পরে, দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করতে সে বলল এই রোজ গার্ডেনটির বর্তমান মালিক এখানে বসবাস করেন আর মূল রোজ গার্ডেনটি তারা শুটিং এর জন্যেই ভাড়া দিয়ে থাকেন।

এইতো, অতঃপর কথাশেষে দুই বন্ধু আপন নীড়ের পথে গাঁ ভাসালাম।


-২৮/জুন/২০১৬ইং
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×