গণতন্ত্র একটি মতবাদ। অন্যসব মতবাদের ন্যায় গণতন্ত্রও মানব সভ্যতাকে অর্থবহ করতে চায়। মুসলমান হিসাবে মানবতার স্বার্থে আমরা এ মতবাদকে স্বাগত জানাব কিনা ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় ইসলামের শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে যে হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করছে তার মধ্যে গণতন্ত্র একটি সুদূর প্রসারী, সূক্ষ্ম ও স্বয়ংক্রিয় হাতিয়ার। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মুসলমান ধাপে ধাপে গনতান্ত্রিক আদর্শে উজ্জীবিত হয় এবং কুরআন-সুন্নাহর আদর্শ বিসর্জন দেয়, ঈমান হারায়। এমতাবস্থায় কেউ যদি ইসলামের অনুকূলে গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করেন তাহলে ব্যাপারটি হবে দুখ:জনক। গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা দু’স্বপ্ন মাত্র। গণতন্ত্রে এমন অসংখ্য নীতি রয়েছে যা ইসলামের পরিপন্থী। যেমন-
* সঙ্গা মোতাবেক গণতন্ত্র হচ্ছে- জনেগণের, জনগণের দ্বারা একং জনগণের জন্য। কিন্তু ইসলাম ধর্মে খিলাফত আল্লাহ পাক এবঙ এবং উনার হাবীব ছল্রাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম উনাদের মাধ্যমে, উনাদের জন্য।
এখানে উল্রেখ্য যে, গণতন্ত্রের সাথে হিন্দুদের মুর্তির সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে। যেমন হিন্দুরা নিজেরাই পূজার জন্য মুর্তি তৈরি করে আবার নিজেরাই তা ডুবিয়ে দেয়। তেমনি জনগন নিজেদের জন্য ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করে আবার নিজেরাই সরকারের বিরোধিতা করে বা পতন ঘটায়।
* গণতন্ত্রের বিধান মতে সকল স্বার্বভেৌত্বের মালিক জনগণ’ কিন্তু প্রত্যেক মুসলমান একথা জানে এবং মানে যে সকল স্বার্বভেৌমত্বের মালিক সর্বশক্তিমান আল্রাহ পাক। অর্থাৱ কেউ যদি গণতন্ত্রকে পরিপূর্নভাবে মেনে নেয় সে পরোক্ষভাবে এটাও মেনে নিল যে সকল স্বার্বভেৌমত্বের মালিক জনগণ। নাউযুবিল্লাহ।
* গণতন্ত্রে সরকার বা প্রতিনিধি হয় জনগনের ভোটে বা সমর্থনে। কিন্তু ইসলামে খলিফা নিযুক্ত হয় সিলেকশনের মাধ্যমে ইলেকশন নয়।
* গণতন্ত্রের সমর্থনে কুরআন ও হাদীসে কোন দলিল নেই। বরং বিপক্ষে অনেক আয়াত ও হাদীস রয়েছে। দেখুনঃ সুরা আন-আমঃ ১১৬, সুরা ইউসুফঃ ১০৩, ৩২, ৪৫, সুরা বাক্বারাঃ ২৪৯, সুরা নিসাঃ ৫৯, সুরা মায়েদাঃ ৪৪ এছাড়াও অসংখ্য হাদীস।
* নিজের জন্য ভোট প্রার্থনা করা অর্থাৱ দায়িত্ব বা পদ চেয়ে নেয়া ইসলাম সমর্থন করেনা।
* গণতান্ত্রিক সরকার নিজ খেয়ালখুশি মত আইন প্রনয়ন, পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন সবই করতে পারে। কিন্তু আল্লাহ পাক ইসলাম কে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে অবতীর্ণ করেছেন যা কেয়ামত পর্যন্ত বলবত্ থাকবে।
* নৈতিকতার কোন বালাই নেই গণতন্ত্রে। জরায়ুর স্বাধীনতা, সমকামিতা, বেপর্দা হওয়া কোন মতামতকেই বর্জন করতে বাধ্য নয় গনতন্ত্র।
* গণতন্ত্রে সকল ধর্মের বৈধতা দেয়া হয়েছে কিন্তু আল্লাহ পাক ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং পূর্ববর্তী সকল ধর্ম ও আসমানী কিতাব বাতিল ঘোষনা করে দিয়েছেন।
* অধিকাংশ ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার হতে পারেনা, যদিও প্রচার করা হয় “গনতান্ত্রিক সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার। ধরুন আমার দেশে ১০০ জন মানুষ। তিন জন প্রার্থী । নির্বাচনের ফলাফল হল একজন পেয়েছে ৪০ ভোট, দ্বিতীয় জন ৩৫ ভোট, তৃতীয়জন ২৫ ভোট। তাহলে গনতন্ত্রের বিচারে ৪০ ভোট যিনি পেয়েছে সেই নির্বাচিত। তাহলে সংখা গরিষ্ঠতা কোথায় ? ৪০ এর বিপরীতে যে ৬০। কাজেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বয়ং গণতন্ত্রের বাস্তবতাও নেই।
ইসলাম ও গণতন্ত্র বিপরীতমুখী জীবনাদর্শ। গণতন্ত্র যেহেতু অধিক প্রচলিত এবং বর্তমান পৃথিবীর ক্ষমতাশীনরা এটি পরিচালনা করে, তাই অনেকে মনে করে থাকে এটির সাথে ইসলাম মেশালে ইসলামও শক্তিশালী হবে, অধিক প্রচলিত হবে, প্রতিষ্ঠিত হবে-(নাউযুবিল্লাহ)। এই চিন্তা এবং কর্মকে বলা হচ্ছে হিকমত বা কৌশল। ইসলাম কি দুর্বল যে তাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে হারাম গণতন্ত্রের উপর ভর করতে হবে ? মুলত হারাম থেকে হারাম ছাড়া ভালো কিছুই বের হয় না।
ইসলামী গণগন্ত্র, ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী বীমা, ইসলামী টিভি এ জাতীয় শব্দগুলোর সমার্থক শব্দ হচ্ছে ইসলামী মদ, ইসলামী সুদ, ইসলামী বেপর্দা ইত্যাদি। নাউযুবিল্রাহ!
তাই যারা ইসলামের সাথে গণতন্ত্রের সমন্বয় করতে চান তাদেরকে কিছু চিন্তা-ফিকিরের কিছু খোরাক দিলাম। আল্লাহ পাক ছহিহ সমঝ দান করুন। আমীন।