somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামি ব্যাংকিংঃ ধোকাবাজি?

০২ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link

এই লিংক এ ইসলামি ব্যাংক (লেখক ‘ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড’ এর বিপক্ষে লিখেছেন, নাকি ইসলামি ব্যাংকিং পদ্ধতির বিপক্ষে বলেছেন, সেটা নিশ্চিত নয়।)এর বিপক্ষে একটা লেখা দেখে এই লেখাটা লিখতে বসলাম। প্রথমেই বলে নিচ্ছি, আমি ইসলামিক ফাইনান্স বা ফিকহ, কোনটিরই বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু এই লেখার যুক্তিগুলো দেখে দুই একটা কথা শেয়ার না করে থাকাটা ঠিক হবে না মনে হলো। কয়েক বছর আগে হলে এই লেখাটা পড়ে আমিও ভাবতাম যে কথাতো ঠিকই। অবশ্য এখনো লেখকের সাথে আমি অনেকটাই একমত। তবে কিছু কিছু ব্যাপার ক্লিয়ার করা দরকার।
প্রথমেই আপনার ঠিক করতে হবে, ইসলামি ব্যাংক-এ (শুধুমাত্র ‘ইসলামি ব্যাংক প্রাইভেট লিমিটেডের কথা বলছি না) আপনি কেন একাউন্ট খুলতে যাবেন। অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন, আপনার সবচেয়ে কাছাকাছি যে ব্যাংক রয়েছে, সেটি একটি ইসলামি ব্যাংক তাই আপনি সেখানে একাউন্ট খুলবেন, অথবা এই ব্যাংকটি তুলনামুলকভাবে নিরাপদ মনে হয় আপনার কাছে, অথবা তাদের কাস্টমার সার্ভিস অন্য ব্যাংক এর চেয়ে ভাল। এই ধরনের কোন কারণে যদি আপনি ইসলামি ব্যাংক-এ একাউন্ট খোলেন, তাহলে তো কোন সমস্যাই নেই। তখন ইসলামি ব্যাংক এবং ট্রেডিশনাল ব্যাংকের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আপনি দেখবেন ইসলামি ব্যাংক অন্য ব্যাংক এর তুলনায় আপনাকে লভ্যাংশ বেশি দিচ্ছে না কম দিচ্ছে। যেখানে বেশি পাবেন, সেখানেই টাকা জমা রাখুন।
আর যদি যে কোন ইসলামি ব্যাংকে একাউন্ট খোলার পেছনে আপনার উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে বেঁচে থাকা তাহলে আলহামদুলিল্লাহ! আপনি অলরেডি প্রথম ধাপটি পেরিয়ে গেছেন। এরপর আপনি ইসলামি ব্যাংকিং পদ্ধতি ফলো করে, এরকম একাধিক ব্যাংক এর মধ্য থেকে যেটিকে সবচেয়ে ক্লোজলি ইসলামিক পদ্ধতি ফলো করে বলে মনে করেন, সেটিকে সিলেক্ট করুন। এটি ডিটারমাইন করার জন্য আপনাকে তাদের ব্যবসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে হবে। তারা কোথায় টাকা ইনভেস্ট করে, নিজে কি ধরনের ব্যবসা করে তা জানতে চেষ্টা করুন। যেমন, কোন ইসলামি ব্যাংক যদি অন্য ট্রেডিশনাল ফাইনেন্সিয়াল ইন্সটিটিউশনে ইনভেস্ট করে, তাহলে তাদের সেই ইনভেস্টমেন্ট হারাম, কাজেই আপনাকে যে লভ্যাংশ দিচ্ছে, সেটিও হারাম। অথবা, তাদের লোন দেয়ার পদ্ধতি যদি অন্য সাধারণ ব্যাংকগুলোর মতই হয়, তাহলে সেটিও হারাম। এভাবে বিশ্লেষনের পর যে ব্যাংকটি সবচে ক্লোজলি শরিয়াহ ফলো করে বলে মনে হয়, সেটিকে সিলেক্ট করুন।
যে ব্যাংকটি আপনি সিলেকট করেছেন, খুব সম্ভব সেই ব্যাংকটি শরিয়াহ’র অনেক কিছুই ঠিকমত ফলো করছে না, বা করতে পারছে না। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক এর সাথে লেনদেন করতে গেলে তার কিছুই করার নেই, ট্রেডিশনাল পলিসিই ফলো করতে হবে, অর্থাৎ সুদ দিতে এবং নিতে হবে যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকগুলোর সাথে লেনদেনের জন্য আলাদা কোন পলিসি নেই। আবার অনেকে হয়ত নিজের ইনভেস্টমেন্ট এর আশিভাগ সঠিক ব্যবসায় ইনভেস্ট করেছে, বাকি বিশভাগ প্রশ্নসাপেক্ষ জায়গায় ইনভেস্ট করেছে। কিন্তু তারা নিজেকে ইসলামি ব্যাংক দাবি করছে, যাদের একটি শরিয়াহ বোর্ড আছে, যেখানে বেশ বড় বড় স্কলাররা আছেন। সেই সব স্কলাররা বলছেন তাদের ব্যাংক সুদ দেয় না, লভ্যাংশ দেয়। একটা উদাহরণ দেই। অফিসে মাঝে মাঝে দেখা যায় বস একটা কাজ দিয়েছেন যেটা আপনার কাছে ঠিক যুক্তি সঙ্গত মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে পরে এ নিয়ে ঝামেলা হবে। বসকে আপনি সেটা জানালেন। বস বললেন তিনি নিজে এর দায়িত্ব নিচ্ছেন, কাজেই আপনার চিন্তার কিছু নেই। বস যদি সেই কাজের নির্দেশ আপনাকে লিখিত আকারে দেন, তাহলে আরো অনেক সুবিধা, আপনার কাছে প্রমাণ আছে বস আপনাকে এই কাজ করতে বলেছেন। তার বস যদি আপনাকে জিজ্ঞেশ করেন, তাহলে আপনি সেই লিখিত প্রমাণ দেখাতে পারবেন।
এখন ইসলামি ব্যাংকগুলো যেচে দায়িত্ব নিচ্ছে। তারা বলছে তারা ইসলামি পদ্ধতিতে ব্যাংকিং করে। আপনি তাদের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত, নাকি তারা একশ ভাগ ইসলামি ব্যাংকিং ফলো করে না দেখে আপনি সেখান থেকে একাউন্ট বন্ধ করে একটা একশ ভাগ হারাম ব্যাংকে টাকা জমা রাখা উচিত?

গেল ব্যাংকের কথা। এখন আসি নিজেদের কথায়। আপনি যদি ইসলাম ফলো করতে চান, প্রথমেই আপনার যে কাজ করতে হবে তা হল নিয়ত। আপনার নিয়ত যদি আল্লাহকে খুশি করার জন্য হয়, তাহলে আপনি তার প্রতিদান পাবেন, আর আপনার যদি সেই ধরনের কোন চিন্তা ভাবনা না থাকে, তাহলে আপনি যে উদ্দেশ্যে সেই কাছ করেছেন সেটি পাবেন। যেমন প্রথমেই যা বলেছিলাম, ইসলামি ব্যাংক আপনার বাসার কাছে, সেজন্য ইসলামি ব্যাংকে একাউন্ট খুললে আপনি সেই কনভেনিয়েন্সটাই পাবেন। আর যদি আল্লাহর নির্দেশ মানার জন্য রাখেন, কিছুটা হলেও আশা রাখতে পারেন আল্লাহ আপনার নিয়ত দেখে যদি দয়া করেন।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে জ্ঞান। আমরা গাড়ি কিনতে গেলে কি করি? জানার চেষ্টা করি কোন গাড়িটা ভাল। মাইলেজ কেমন, পার্টস পাওয়া যায় কিনা, রিসেইল ভ্যালু কেমন ইত্যাদি। কেউ যদি আপনাকে এসে বলে, আরে টয়োটা র‍্যাভ ফোর আর হোন্ডা সিভিক দুইটাই জাপানি, কাজেই দুইটাই সেইম, তাহলে আপনি সেটা মেনে নেবেন না। কারণ আপনি তখন অলরেডি দুইটার পার্থক্য জানেন। সুদ থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই আপনাকে সুদ কি সেটা জানতে হবে। হালাল হারাম এর বেসিক জ্ঞান অর্জন করা ফরয। নামাজ রোজা যেমন ফরয তেমনি বেসিক ইসলামিক জ্ঞান অর্জনও ফরয। যখন আপনার প্রাথমিক জ্ঞান থাকবে, তখন কেউ এসে যদি বলে, “গ্রাহক শুধু মাত্র টাকা ইনভেস্ট করে এবং লাভ নেয়, তাই তা ব্যাংকের জন্য হালাল হলেও গ্রাহকের জন্য সুদ।" তাহলে আপনি জানবেন এই কথাটা ঠিক নয়।
আরেকটা কথা হচ্ছে দায়িত্ব। যখন আমাদের আইনি পরামর্শ দরকার হয়, তখন উকিলের কাছে যাই। উকিল যেটা বলে সেই অনুযায়ী কাজ করি। একজনেরটা পছন্দ না হলে আরেক উকিলের কাছে যাই। একইভাবে ইসলামিক বিষয়ে যে ব্যাপারে আমাদের জ্ঞান নেই, সেটা জানার জন্য ইসলামিক স্কলারের কাছে যাই (যে কোন হুজুর নয়, যার সেই নির্দিষ্ট ব্যাপারে জ্ঞান আছে তেমন ইসলামিক স্কলারের কাছে।) হুজুর যেটা বলেন সেই অনুযায়ী আমল করি। এখন হুজুর যদি আপনাকে ভুল শিক্ষা দেন সেটার দায়িত্ব হুজুরের। আল্লাহ আপনাকে সেটার জন্য দায়ী করবেন না (যদি না সেটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের জ্ঞান হয়, কারণ প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন আপনার উপর ফরয ছিল।)।
সব শেষে প্রথম কথাটাই রিপিট করছি - চয়েস আপনার। আপনার কাছে যদি আল্লাহ’র কাছে জবাব দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে আপনি সাধ্যমত চেষ্টা করবেন আল্লাহর হুকুম মানতে। আর যদি আপনার কাছে অন্যের ভুল ধরা আর আপনিই সঠিক সেটা প্রমাণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা আপনার ব্যাপার। আপনার কাছে তিনটা শার্ট আছে, তিনটাই ছেড়া। কোনটা একটু বেশি ছেড়া আর কোনটা একটু কম। সাধারণ বুদ্ধিতে বলে আপনি সবচেয়ে কম ছেড়া শার্টটা গায়ে দেবেন। আপনি যদি বলেন যতদিন না আমাকে কেউ একটা সম্পূর্ণ ভাল শার্ট না দেবে, ততদিন আমি খালি গায়ে থাকব, সেই পছন্দটা একান্তই আপনার।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×